জনৈক গ্রুপে একটি পোস্ট দেবার ছিল, বিষয়টা বেশ জটিল এবং বেশ অনধিগত শিরোনাম ছিল #বেড়ানোর_কেনাকাটা_কান্নাকাটি।
বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটা মাইরি বলছি তেমন করি না। যেখানেই যাই, সেখানকার সৌন্দর্যে এমন বিমোহিত হয়ে যাই, যে “স-সে-মি-রা” মত একটা কথাই মুখ দিয়ে বের হয়, “উফ্ কি অপরূপ সুন্দর। ” তাছাড়া কিছু কিনতে গেলেই আমার বর,(শ্রীমান শৌভিক) শর্তারোপন করে, ক্রীত দ্রব্যাদি আমাকেই স্বস্কন্ধে বহন করে আনতে হবে। আমি প্লাস কেনাকাটা যদি অতিরিক্ত শুল্ক প্রদান করতে হয়,এই ভয়েও তেমন কিছু কিনি না।
তবে বেড়াতে যাবার সঙ্গে কেনাকাটার এক অবিচ্ছেদ্য যোগাযোগ আছে এটা মানি। সেই করে নব্বইয়ের শুরুতে মুসৌরি থেকে বিস্তর দর করে ২০টাকা দিয়ে মায়ের কিনে দেওয়া লাল পুলওভার, আজও এতটুকু টসকায়নি। আজকাল আমার মেয়ে পরে। তারও আগে,সেই কবে, আসাম থেকে বড় মেসোমশাইয়ের এনে দেওয়া ছালের কাপড়(ব্যাপারটা কি আমিও জানি না) পরে আজও মা সন্ধ্যা দেয়।২০০৭এ প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাতাসিয়া লুপ থেকে ৮০টাকা দিয়ে বাবার কিনে দেওয়া উইণ্ডচিটার,এখনও বর্ষা কালে স্টাইল স্টেটমেন্ট। হায়দ্রাবাদ থেকে বিভিন্ন সময় মাসিদের কিনে আনা কয়েক ডজন মুক্তার সেট,আজও আমার সাজার টেবিল সাজিয়ে রেখেছে। কুর্গ থেকে বছর দুয়েক আগে কিনে আনা খাঁটি চন্দনবাটার মাখন মাখন ফেসপ্যাক আজও গোল্ড ফেসিয়ালকে আড়াই গোল দেয়। তেমনি মন মাতানো সুগন্ধ। চন্দনের পারফিউমও কিনতে যাচ্ছিলাম। সাথে স্থানীয় এলাচ আর গ্রীন কফি। কিনেও ফেলতাম,যদি না সেলসম্যানটা না ঠেট দক্ষিণ ভারতীয় অ্যাকসেন্টে অবোধগম্য ইংরেজিতে বলত,“শুধু গ্রীন কফি খেলে কিন্তু রোগা হবেন না, সাথে পরিমিত আহার আর শরীরচর্চাও প্রয়োজন।” তাও আবার আমার বরের সামনে! এ হেন অপদস্ত করার কোন মানে হয়? মূর্তিমান আপদ একটা। যদি কুর্গে যান, বলে দিলাম ভুলেও কর্ণাটক এম্পোরিয়ামের ঐ দোকানটিতে ঢুকবেন না কিন্তু।
শেষ করব লোকাল ট্রেনে আনারদানা বিক্রি করা এই দাদুর গল্প দিয়ে, অফিস যাবার পথে ট্রেনে আমার অন্যতম দোসর, হুগলী জেলার তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের এক আধিকারিক।নামটা উহ্যই থাক। ট্রেনেই আমাদের আলাপ এবং ট্রেনেই জমে ওঠা বন্ধুত্ব। অফিস টাইমে দৌড়তে দৌড়তে বিধাননগর স্টেশনে পৌঁছে যেদিন সখীর দেখা না পাই, সেদিন সক্কাল থেকেই মেজাজটা যায় তেঁতো হয়ে। মুখে অবশ্য স্বীকার করি না, বরং প্রায়ই বলি, “এই শেষ আর তোমার সঙ্গে যাচ্ছি না।“ আসলে আমরা এককাট্টা হলেই কত কি যে কিনি তার ইয়ত্তা নেই। ঝুটো গয়নার প্রায় মিউজিয়াম হয়ে গেছে আমাদের বাড়িটা। বেশ কিছুদিন আগের কথা,আমরা একসাথে যাচ্ছি, হঠাৎ তিনটে বল লাগানো লাঠি হাতে বৃদ্ধের আগমন। আগেও দেখেছি, চলন্ত ট্রেনে উনি আমলকি, আনারদানা ইত্যাদি ফিরি করেন। পোশাকআশাক বলতে ধোপদুরস্ত সাদা হাফ শার্ট আর প্যান্ট। প্রবল শীতই হোক বা প্রখর গরম অথবা ঘোর বর্ষাকাল, দাদুর পরণে একই পোশাক। বেচেন কি জানি না,তবে, জনে জনে ফ্রি স্যাম্পল বিলি করে বেড়ান। আমাদেরও দিতে এলেন, আমরা দুজনে হাত নেড়ে জানালাম, চাই না। ও বাবা, বৃদ্ধের কি গোঁসা, সখী ধারে বসেছিল, তাকে লাঠি দেখিয়ে বললেন, “কি রে মা? খাবি না? খা বলছি! নাহলে এই লাঠি দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেব!“ হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। থুড়থুড়ে বুড়ো, লাঠি ঠুকঠুক করে হাঁটে, বলে কি না মারবে। এবার আমাকে বললেন, “তুই ও খারে মা। এই দাদুভাই নে ধর। খা বলছি।“ দাদুভাই বলতে আমার পাশে বসা একজন দিদিমণি।মুখে মুখ টিপে হেসে আমরা তিনজনই বাধ্য ছাত্রীর মত হাত বাড়িয়ে দিলাম। বুড়ো বিগলিত হয়ে সখীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “রাগ করলি মা? বুড়ো ছেলেটা তোকে লাঠি দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেবে বলেছে, তাই কি রেগে গেলি মা?” মুখে কাঁচা আম দেওয়া আনারদানা চুষতে ব্যস্ত সখীর হয়ে জবাব দিলাম,” রাগ করবে কি? ও তো পুলকিত হয়ে গেছে। কি তাই না?” প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণে মাথা বেঁকিয়ে সম্মতি জানালো সখী। সেই শুরু,তারপর থেকে বুড়োর ভালোবাসার অত্যাচারে আমি জর্জরিত। এবং বর্তমানে একটি পাক্কা গুলিখোর। সবসময় ব্যাগে মিষ্টি গুলি নিয়ে ঘুরি।বিশেষতঃ তুত্তুরীকে পড়াতে বসালে তো গুলির ডাব্বাটা নিয়েই বসি, দাদু ঠিকই বলে,“গ্যাস থেকে গোঁসা যাই হোক দুটো মুখে ফেলে দিবি।” দেখা হলে আপনাদেরও দেবো খন-
ইয়ে আপনাদের জন্য দাদুর একখান ছবি তুলে এনেছি, কেমন পোজ দিয়েছেন দেখুন না। তুলতে হয়েছে অনেকগুলো,তারপর দেখাতে হয়েছে, শেষ পর্যন্ত এটাই বুড়োর পছন্দ-
No comments:
Post a Comment