Wednesday 25 January 2017

তুত্তুরী উবাচ জানুয়ারী-মার্চ ২০১৭

তুত্তুরী উবাচ ২৫শে জানুয়ারী ২০১৭


-(রাত ৯টা নাগাদ বাবা বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই) বাবা বারাঙ্গনা কাদের বলে?
-(ঢোঁক গিলে) ঐ আর কি।  যারা সেজে গুজে বসে থাকে। গানবাজনা করে পয়সা উপার্জন করে আর কি।
-বারাঙ্গনারা কি খুব খারাপ মেয়ে হয়?
-না তা নয়।  তোকে কে বলল-
-মা তো। বেতাল পঞ্চবিংশতি পড়ে শোনাচ্ছিল।  তাতে একটা দুষ্টু বারাঙ্গনা ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মা বলল ঐ যারা অনেক গুলো বিয়ে করে। বারাঙ্গনারা কি হাজার জনকে বিয়ে করতে পারে বাবা?
-না।  তা বোধহয় পারে না।
-তবে ওরা কি করে?
- ঐ তো বললাম, নাচ-গান, সাজ- গোজ এই সব।
- কিন্তু গল্পে তো একজন বারাঙ্গনা এক সাধুর তপস্যা ভঙ্গ করল।যেমন শকুন্তলার মা মেনকা করেছিল? মেনকা তো অপ্সরা ছিল বাবা।  বারাঙ্গনারা কি মর্ত্যের অপ্সরা?
-তুই বরং দাদুকেই ফোন কর---


তুত্তরী উবাচ, ২৯শে জানুয়ারী২০১৭


-মা? আমার বিয়েটা কালই দিয়ে দাও। 

-কালই? ১৮ বছরের আগে বিয়ে করলে পুলিশে ধরবে বাবু। আর তাছাড়া পাত্র ও তো খুঁজতে হবে-

-খুঁজতে হবে না। খুঁজতে হবে না। আমি তো বাবাকেই বিয়ে করব। 

-(বাবা পাশ থেকে আতঙ্কিত স্বরে) নাআআআ।  আমি আর বিয়ে করছি না। ন্যাড়া বেলতলায়--

-ওঃ। (বিমর্ষ হয়েই পরক্ষণে উৎফুল্ল হয়ে) তাহলে দাদা--

-দাদাকেও বিয়ে করা যায় না। পুলিশে ধরবে--

-পুলিশ মহাপাজি তো। 

-তুই এত বিয়ে পাগলাই বা হয়েছিস কেন?

-বিয়ে করলে কত সাজা যায় কাকিমার মত। কি সুন্দর লাল টকটকে বেনারসী। কত গয়না। কত ফুল। মুকুট। চন্দন। কোমরবন্ধনী--কি সুন্দর লাগছিল কাকিমাকে। আচ্ছা মা সালোয়ার পরে বিয়ে করা যায়?সেদিন টিভিতে দেখাল-

-হুঁ। যায়। এখন তো সই সাবুদ করলেই বিয়ে হয়ে যায়। সে বেনারসীই পর আর যাই পর। 

-তাই বলে সালোয়ার? 

- হ্যাঁ রে বাবা নাইটি পরেও বিয়ে করা যায়( বলেই প্রমাদ গুনলাম)

- নাইটি পরেও?

-হুঁ। 

-লুঙ্গি পরে?

-হ্যাঁ । চাইলেই যেতে পারে-

-মা, গামছা পরে বিয়ে করা যায়?

-(প্রবল হাসি চেপে) না বাবু। গামছা পরে রাস্তায় বেরোলে পুলিশে ধরবে কি না--


তুত্তুরী উবাচ ১৩ই মার্চ ২০১৭
-মা, কেউ লম্বা হয় কেউ বেঁটে হয় কেন?
- জানতে গেলে সাইন্স পড়তে হবে বাবু। সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে জিনের মধ্যে।
-জিন? ও জিনি!!
-না না আলাদিনের জিনি নয়। এ অন্য জিন। যা মানুষ বাবা-মার থেকে পায়। যেমন যদি বাবা-মা দুজনেই লম্বা হয়, সাধারণত বাচ্ছারা লম্বা হয়। আবার উল্টো হলে---
-যদি একজন লম্বা আর একজন বেঁটে হয়---
-সেটা জানতেই তো মেণ্ডেল সাহেব একটা পরীক্ষা করেছিলেন। একটা লম্বা মটর গাছের সাথে একটা বেঁটে মটর গাছের ইয়ে মানে বিয়ে দিয়ে দেখেন--
-গাছের বিয়ে কি করে হয় মা? দুটো গাছকে পাশাপাশি বসিয়ে, মঙ্গলঘট পেতে তার গায়ে স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে?
- (প্রবল হাসির দমক সামলে) না। না। একটা গাছের ফুলের রেণু আর একটা গাছের ফুলের ওপর ফেলে।
-বাঃ। গাছেদেরও বিয়ে হয়। (অবাক তথা উল্লসিত  স্বরে) প্রজাপতিদেরও বিয়ে হয় মা। জানো তো, দুটো প্রজাপতি পাশাপাশি বসে, এ ওর কাঁধে হাত রেখে বলে ,‘আজ থেকে তুই আমার বর, আর তুই আমার বউ। ’ তাই না মা?
- হুঁ। তা হবে এবার ঘুমোও।
-মা কাঠবিড়ালির  বিয়ে কি করে হয় শুনবে?
-না। আমি ঘুমোব।
-শামুকের বিয়ে কি করে হয়--
-জানি না। শামুকের বিয়ে হয় না। এবার মুখবন্ধ করে ঘুমোও।
-আরেঃ। কেন হবে না?বিয়ে না করলে বাচ্ছা হবে কি করে?তাহলে নতুন শামুক হবে কি করে?

তুত্তুরী উবাচ ১৪ই মার্চ ২০১৭
-উফ্ প্লাস্টিকের তরোয়াল দিয়ে বার বার দেওয়ালে খোঁচা মারছো কেন? ভেঙে যাবে যে!!
-(গম্ভীর ভাবে) আঃ। আমি ওয়ার্ল্ড অব ইমাজিনেশন এ আছি।
-হুঁ। সে তো বুঝলাম। তা কার মুণ্ডুচ্ছেদন করছ?
-ছোট ছোট ভাইবোন গুলোর।
-কি সর্বনাশ। খামোকা ভাইবোনেদের মুণ্ডু কাটছ কেন? তুমি কি ঔরঙ্গজেব?
-ঔ-ঔ-জে-ব? সে কে?
-কার মুণ্ডু কাটছ শুনি? কোন ভাইবোন?
-আঃ। বললাম না আমি ওয়ার্ল্ড অব ইমাজিনেশন এ আছি।
-তা তারা তোমার কি বিগড়ালো?
-ওরা জন্মালে তুমি আমাকে আর ভালবাসবে না।
-যাঃ বাবা। একি কথা?ঠাম্মা কি বাবাকে ভালবাসে বলে কাকাইকে ভালবাসে না? আমি সবসময় তোমাকেই ভালবাসব। শুধু তোমাকেই। বুঝলে?
-বুঝলাম। (ক্ষণিক নীরবতার পর) কিন্তু বিশ্বাস করলাম না।

তুত্তুরী উবাচ ২৯শে মার্চ ২০১৭
- না। না। না। তুমি বাজে। বাজে মাসি।
(প্রবল কান্না এবং চিৎকার  শুনে ছুটে গেলাম)
-কি হয়েছে? কাঁদছ কেন? আর এরকম ষাঁড়়ের  মত চেঁচাচ্ছোই বা কেন?
-তুমি এখুনি মাসিকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও। বাজে মাসি। অন্য মাসি রাখো।
-এ আবার কি কথা? মাসি ছোট থেকে কোলে পিঠে করে এত বড় করল---
-(প্রবল অশ্রুপাত সহ) বাজে মাসি। তুমি এই ধনুকটা নাও। এটা দিয়ে মাসিকে দুঘা দাও।
-প্লাস্টিকের ধনুক দিয়ে মারলে মাসির কি হবে জানি না, ধনুকটা ভেঙে যাবে, এটুকু বলতে পারি।
-(পাশ থেকে মাসি মিনমিন করে বলল) এর মধ্যে অবশ্য সোনামা ই আমাকে ধনুক দিয়ে দুঘা দিয়েছে ।
-যাঃ বাবা। দাদু তোকে কেন তীর ধনুক কিনে দিল বলতো? বারণ করলাম, কথা শুনল না। লোকে তীর ছুড়ে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করে। বাপের জন্মে শুনিনি কেউ ধনুক দিয়ে মারামারি করে--(মাসি এবং আমি প্রবল হাসিতে ফেটে পড়লাম।
-(আমাদের হাসি দেখে আরো ক্রুদ্ধ হয়ে,আরো প্রবল অশ্রুপাত সহ)বাজে বাজে। তোমরা দুজনেই বাজে। হ্যাঁ ধনুক দিয়েই মারো মাসিকে।
-বাজে তো ঠিকই। মা মাসিরা বাজেই হয়। কিন্তু তুই বল, রাম রাবণের যুদ্ধ হচ্ছে, দুজনেই তীর দিয়ে একে অপরকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করবে   তো নাকি? না তোর মত, তুণীর  ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, ধনুক নিয়ে হাতাহাতি করবে---(কান্নার মাঝেও খিলখিল হাসি ছিটকে বেরোল) এবার বলো তো মাসির অন্যায়টা কি?
-মাসি বাজে।
-(মাসি হাসি চেপে গম্ভীর ভাবে বলল) মাসির দোষ হল, মাসি ফোন ঘাঁটতে দেয়নি। ফোনটা চাইছিল ফোন করবে বলে, কাকে না কাকে ফোন করে বসে?আমি  আলমারির মাথায় ফোন তুলে রেখেছি তাই।
-ওঃ। এই ব্যাপার? কাকে ফোন করবে বলো? আমি ধরে দিচ্ছি-
-মামমামকে(দিদা)। মামমাম সকাল থেকে ফোন করেনি।আমার বুঝি  মন খারাপ লাগে না। তাই ফোনটা চাইলাম মাসি দিল না। মাসিকে ধনুক দিয়েই মার---
#AninditasBlog

No comments:

Post a Comment