Saturday 21 January 2017

সুজয়---

-হ্যালো!
- নমস্কার ম্যাডাম। আমি সুজয় বলছি এবিসিডি ব্যাঙ্ক থেকে।
- হ্যাঁ বলুন।
-আমাদের ব্যাঙ্কে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট আছে----
-একটু-একটু-একটু ধরো তো ভাই। জাস্ট এক মিনিট ।
(বেশ কিছুক্ষণ পর) হ্যাঁ হ্যালো?হ্যালো?হ্যালো? যা বাবা কেটে গেছে।
-(পরের দিন দ্বিপ্রহর ) হ্যালো ম্যাম। আমি সুজয় বলছি, আপনার ব্যাঙ্ক থেকে--
-হ্যাঁ বলুন। আপনি কাল ও ফোন করেছিলেন না?
-ইয়েস ম্যাম। আপনার অ্যাকাউন্টে একটু প্রবলেম হয়েছে।
-প্রবলেম?হে ভগবান । আমাদের তো ঐ একটাই অ্যাকাউন্ট। কি প্রবলেম ভাই? যেতে হবে কি? যাওয়াটা এই মুহূর্তে --- ঐ যাঃ। পড়ে গেল। ভাই একটু ধরুন প্লিজ।
- (পরের দিন)ম্যাডাম আমি সুজয় ব্যাঙ্ক থেকে। আপনি ফ্রি আছেন কি?
-ফ্রি? হ্যাঁ আমি তো চাকরী বাকরী করি না ভাই। ছাপোষা গৃহবধু । আমার আর কিসের ব্যস্ততা । তবে দোকান হাটবাজার ব্যাঙ্ক সব করতে হয় কি না। তারওপর ---

-ম্যাডাম। ম্যাডাম আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে আপনার অ্যাকাউন্ট শীঘ্র লক হয়ে যাবে।
-লক?মানে? কেন ভাই? ঐ সব কেআইসি না কি তো করানো আছে। আধারটাও কি সব করতে বলল করা হল। আবার কি?
-ম্যাডাম আপনার এটিএম কার্ড--
-কার্ড?হ্যাঁ আছে তো একটা। সেটা তো ব্যবহার করি না ভাই?বছরে একবার কিছু টাকা তুলি যাতে ওটা বন্ধ না হয়ে যায়।
-আপনার অ্যাকাউন্ট ফ্রীজ হয়ে যাবে ম্যাডাম।
- হে ভগবান। প্লিজ এরকম করবেন না। আমি একা, স্বামী অসুস্থ । ঐ টাকায় সংসার চলে। দশবার ব্যাঙ্কের চক্কর কাটতে পারব না ভাই।
-আমরা দেখছি কি করতে পারি। আপনার কার্ড নম্বরটা বলবেন প্লিজ।
-এখুনি? খুঁজতে হবে যে ভাই? কাল-__
-দেখুন ম্যাডাম উই আর ট্রাইং টু হেল্প আপনি যদি কোঅপারেট না করেন---
-না ভাই। তা নয়। সব তো তোমার দাদা রাখতেন।ওনাকে জিজ্ঞাসা করে তো লাভ নেই।  একটু খুঁজে---
-কেন?ওনাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই কেন?
-(ক্ষণিক নীরবতার পর) উনি কথা বলতে পারে না বাবা। ছয় মাস হল -
-সে কি? কেন? ডাক্তার?
-দেখিয়েছি।  আমি অবলা বৃদ্ধা নারী আমার সীমিত সামর্থ্যের  মধ্যে যা পেরেছি করতে বাকি রাখিনি।
-কিন্তু হঠাৎ  হল কি? আপনি বলছেন ছয় মাস আগে?
- কি আর বলি বাবা।  সবই অদৃষ্ট । ছেলেকে গাড়ি চালানো শেখাচ্ছিল-- ।
- অ্যাক্সিডেন্ট? আর আপনার ছেলে?
- নেই(ডুকরে কেঁদে উঠে)। নেই বাবা। কেউ নেই। আমি একটু কাঁদতেও পারিনি গো। ওদিকে ছেলে চলে গেল। এদিকে লোকটা পঙ্গু । শোকে পাথর। চিকিৎসা করাতে সর্বস্বান্ত হলাম।
-মাসিমা।
-হ্যাঁ বাবা অফিস টাইমে তোমার সাথে কি ভ্যাজভ্যাজ করতে বসলাম দেখ। সত্তর হয়নি তবু বাহাত্তুরে ধরে গেছে।  আসলে কি জান তো আমার কথা বলার কেউ নেই। সারাদিন  --- যাক। ছাড়ো। কাল কার্ডটা খুঁজে রাখব বাবা।
-মাসিমা দাঁড়ান। আপনি কাগজ পড়েন না?
-কাগজ? না বাবা বন্ধ করে দিয়েছি। ফালতু খরচা।  আমি কোনদিনই পড়তাম না।  তোমার মেসোমশাই পড়তেন খুঁটিয়ে।  উনি প্রয়োজনীয় খবরাখবর দিতেন।  বড় ভালবাসতেন গো কাগজ পড়তে।  ঐ ঘটনার পরও দুমাস নিয়েছি। তোমার মেসোমশাইকে পড়ে শোনাতাম। যদি কিছু আর কি। তারপর থেকে আর---
-হুঁ। বুঝেছি। তাই আমরা বেছে  বেছে  আপনাদের মত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের ফোন করি। যাদের প্রচুর মালকড়ি কিন্তু খবরাখবর  কিছু রাখে না। আপনি জানেন না যে আপনার ব্যাঙ্ক কোনদিন আপনাকে ফোন করে কার্ড নম্বর পিন নম্বর চাইবে না।
-মানে? কি বলছ বাবা আমি তো ঠিক---
-বলছি ভুলেও কোনদিন কাউকে নিজের কার্ড নম্বর দেবেন না। পিন ও না। দিলে যে কেউ ঐ টাকা তুলে নেবে।
-তাই নাকি?তাই তোমার মেসোমশাই কোনদিন কার্ডটা আমায় দেয়নি গো।
-ঠিক করেছেন।ঐ কার্ড আপনার না খুঁজে পাওয়াই মঙ্গল । আর শুনুন যে কেউ ব্যাঙ্ক  থেকে বলছি বললেই তার সাথে খোশগল্প জুড়বেন না। বলবেন আমি ব্যাঙ্কে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলছি।
-আচ্ছা বাবা। আচ্ছা। সোনা ছেলে। আমি যখন ব্যাঙ্কে যাব তোমার সাথে অবশ্যই দেখা করে আসব। তুমি ঠিক আমার নান্টুর মত করে কথা বল(গলা ধরে এল)
-সেটাই তো সমস্যা। আপনি ও একদম আমার মায়ের মত কাছাখোলা। এখনও বোঝেননি ব্যাঙ্কে গেলে আমায় পাবেন না? ভাল থাকবেন মাসিমা। সাবধানে থাকবেন। তিনদিনের মেহনত জলে গেল শা---।
#Aninditasblog

No comments:

Post a Comment