Saturday 17 September 2016

অনির (পুজোর) ডাইরি ২০১৬, ১৭ই সেপ্টেম্বর


পুজো নিয়ে আমার উন্মাদনা বরাবরের, তারা সুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের এ সেকশন খুব ভালো ভাবেই পরিচিত ছিল সেই উন্মাদনার সঙ্গে। আর হবে নাই বা কেন মশাই? বিশাল যৌথ পরিবার, জেঠু, কাকু, দিদিভাই, তিন মাসি, বড়দা আর সবার ওপরে বাবা সব মিলিয়ে জামাই পেতাম গোটা দশেক। বাবার বোনাসটা গোটা টাই বোধহয় খরচ হত আমার পিছনে, কম করে পাঁচটা জামা তো দিতই বাবা। অগস্ট মাস নাগাদ বোনাস পেত বাবা, তারপর কোন একটা রবিবার দেখে সপরিবারে হামলা করতাম নিউ মার্কেটে। তখন কোথায় সুপার মার্কেট আর কোথায় মল। নিউ মার্কেট ছিল একাই একশ। কি না কেনা হত, কাপড় শুকানোর ক্লিপ,জামা, চুড়ি, হার, মাথার ক্লি্প‌, হেয়ার ব্যান্ড, ব্যাগ, জুতো ইত্যাদি ইত্যাদি। হাওড়া থেকে বাসটা যখন প্রেস ক্লাবের সামনে নামাতো, আনন্দে মনটা টলটলিয়ে উঠত। মনে হত জীবনের সব সুখ বোধহয় এখানেই লুকানো আছে। বাবার হাত ধরে অবাক বিস্ময়ে তাকাতে তাকাতে পার হয়ে যেতাম মনোহর দাস তড়াগ। ওপারে চৌরঙ্গী পেরিয়েই গ্র্যান্ড হোটেল। গ্র্যান্ডের তলা দিয়ে হাঁটাই দায় হত, এত ভিড় হত, আজো হয় হয়তো। থরে থরে ইংরাজি বই (আজ জানি যার অধিকাংশই পাইরেটেড কপি), ফ্লিম স্টারদের বড় বড় পোস্টার, ঢেলে বিক্রি হওয়া জামাকাপড়, সস্তা হাত ঘড়ি যার ডিজাইন যে কোন দামি ব্র্যান্ডকে টেক্কা দিতে পারে, তার সাথে মিশে থাকা রোল আর ধোসার গন্ধ। আহা! শেষের দিকে একটু মুস্কিল হত এই, যে নিউ মার্কেটের জামা আমার গায়ে আর গলত না।
যাক গে, সে দুঃখের কথা আর বলে কি হবে। মোদ্দা কথা হল পুজো এলেই আমার মনটা নেচে ওঠে, সাথে সাথেই নাচতে থাকি আমিও এবং নাচাতে মানে জ্বালাতে থাকি আমার সব বন্ধু বান্ধবদের। আমার একটা বিশেষ শখ আছে, সেটা হল, প্রতি বছরের একটা পুজো অ্যালবাম থাকবে, এবং তাতে আমার সব বন্ধুদের ছবি থাকবে। মাঝে মধ্যেই সেই অ্যালবাম গুলো আমি দেখি আর নস্টালজিয়ায় ভুগি। ফেসবুকে বিগত চার বছরের অ্যালবাম আছে, তার আগের চার পাঁচ বছরের অ্যালবাম অরকুটের সাথে সাথে উড়ে গেছে। সব বন্ধুদের এই অল্প সময়ে একত্রে এনে হাজির করা অসম্ভব। তবু চেষ্টা করি, অন্তত যারা কাছাকাছি আছে। এর জন্যও বিশাল পরিকল্পনা করতে হয়, কার কবে সময় হয়, কে কোথায় আসবে নাকি আমি যাব পুরো ছক কষতে হয়। অন্যান্য বছর এর মধ্যে আমার পুজোর অ্যালবাম তৈরি হয়ে গোটা পাঁচেক ছবিও লেগে যায়। এবার কিছুই করিনি। ইচ্ছেই হয়নি। একে তো বাড়ি শুদ্ধ লোকের অসুখ- বিসুখ গেল। তার ওপর আমার প্রিয় বন্ধুর সাথে মনোমালিন্য।
আঠাশ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। অন্তত হাজার খানেক বার বিচ্ছেদ হয়েছে আবার পুনর্মিলনও ঘটেছে। আমার একটাও অ্যালবাম নেই যেখানে সঞ্চিতার ছবি নেই। বিগত ষোল বছরে আমরা একে অপরকে ছাড়া ঠাকুর দেখতে বের হয়নি। একে অপরকে ছাড়া পুজো অকল্পনীয়। কি নিয়ে যে ঝগড়া সেটা বলে নিজেদের মানসিক নাবালকত্বের প্রমাণ দিতে চাই না। তবে আমাকে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ সর্বত্র ব্লক করে দিয়েছিল শয়তানটা। এবারও পুজোয় হাওড়া যাব অথচ সঞ্চিতার সাথে দেখা হবে না? পঞ্চমীর দিন সারা রাত জেগে দক্ষিণের ঠাকুর দেখব না? আর ষষ্ঠীর দিন টোটো চেপে হাওড়া? আর সপ্তমীর দিন ফিস্ট? অষ্ঠমীর দিন আমাদের ত্রিভুজের তৃতীয় কোণ পম্পার সাথে দেখা হবে না? নবমীর দিন রাস্তার আধ পোড়া রোল আর ফুচকা হবে না? ধুস বেঁচে থেকেই আর লাভ নেই।
পুজোর আর তিন সপ্তাহও বাকি নেই, শপিং হয়েছে শুধু মাত্র তুত্তুরির আর আমার দুই বাবার তাও অনলাইন। মনের দুঃখে ঠিক করেছি এবার আর কিছু কিনবই না। শৌভিকও তাতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে রেখেছে, “হ্যাঁ হ্যাঁ। তোর অনেক শাড়ি আছে। ওগুলো পড়িস। আর জামা কাপড় কিনলে এবার রাখার জন্যও আর একটা ফ্ল্যাট কিনতে হবে।” মনের দুঃখে একটা বিষণ্ণ, বিদঘুটে পুজো কাটাব মনস্থির করেই রেখেছি, এমন কি আনন্দমেলা ছাড়া কোন পূজাবার্ষিকীও কিনিনি। পুজোয় ই-বুকই পড়ব, যাঃ। তাও ইংরাজি।
সব যখন ঠিকঠাক, আজ সকালে সঞ্চিতার মেসেজ- “ভাব করবি?”
[চলবে গোটা পুজো জুড়ে। আশা করি ;) ]
#PujorDiary #AnirDiary
https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/

No comments:

Post a Comment