Monday, 28 March 2016

কিছুটা ব্যক্তিগত


ডং । মেসেজ এল। বুবু দৌড়ে গেল, সৌর’র মেসেজ- মন খুশি খুশি হয়ে উঠল । খুলে দেখে,“ Nape Napier kvetch Krugman pooch jewel calc post psi petty”। এ কি লিখেছে রে বাবা। যা আঁতেল। জ্ঞান বৃদ্ধ একেবারে । নিজের বিদ্যে-বুদ্ধি নিয়ে মাঝেসাঝেই হীনমন্যতায় ভোগে বুবু , বিশেষত সৌরর পাশে। একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল,“ উত্তর আসবে না। তুমি আসবেই আমি জানি- কার লেখা?”বুবু পড়েছিল মহাফাঁপরে। গুটি কয়েক রবীন্দ্র সংগীত, এক আধটা নজরুল গীতি অবধি ওর দৌড়। এর বাইরে শুধু “যেতে পারি কিন্তু কেন যাব” আর “ ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত” এই দুটো কবিতা কার লেখা জানত। কপাল ঠুকে বলেই দিল “র-বী-ন্দ্র-নাথ ঠাকুর”। কিছুক্ষণ সৌর মৌন হয়ে বসে রইল। তারপর চশমাটা খুলে দু আঙুলে চোখ ঘষল, তারপর ক্লান্ত স্বরে বলল, “ কবির সুমন- যিনি এককালে সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে গান গাইতেন?” লজ্জায় বুবু প্রার্থনা করছিল, হে ধরণী দ্বিধা হও। জীবনে প্রথমবার এমন এক পুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি, যাকে দেখতে সুদর্শনই শুধু নয় মগজে যে ধুসর বর্ণের পদার্থটি আছে, সেটি বাস্তবিকই গ্রে ম্যাটার। অন্যান্য আবাল গুলোর মাথায় যা ছিল সেগুলো দেখতে গ্রে হলেও কি গন্ধ। দুদণ্ডেই বোঝা যায় মগজ ভরা গোময়। ওর স্তব্ধতাকে ভুল বুঝে কিনা জানি না, সৌর হাত পা নেড়ে বুঝিয়েছিল,“সুমন? গানওয়ালা? সেই যে প্রথমত আমি তোমাকে চাই?” লজ্জায় হড়বড় করে বুবু বলে উঠেছিল, “ হ্যাঁ ঐ গানটা শুনেছি। ক্যাসেটটা ছিল। ” বলেই বুঝেছিল ধরিত্রী দ্বিধা না হলেও ও নিজের কবর খুঁড়েই ফেলেছে। সম্পর্ক ছাড়ো নূন্যতম বন্ধুত্ব হওয়াও আর হল না। পরপর দু তিন দিন কেটে গেছে। কেউই ফোন বা মেসেজ করেনি। এমনও নয় যে ওরা রোজ কথা বলত, তবু মাঝেসাঝে বুবু হ্যাংলার মত কথা বলতে ফোন করত। ভদ্রতাবশতই হবে হয়তো সৌর ও করত, করে অবশ্য নিপাট জ্ঞান দিত।
যাই হোক আজ এই মেসেজটার মানে ও কিছুতেই বার করতে পারল না। নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশন সকলই ব্যর্থ হল। তবে কি অন্য কোন ভাষা? ধাঁধা? হ্যাঁ নির্ঘাত ধাঁধা । সমাধান করতে হলে সূত্র লাগবে । নিজেকে বোকা, গাধা ইত্যাদি গালি দিতে দিতে বুবু মেসেজ পাঠাল, “কিছুই বুঝলাম না। কি ছাতার মাথা লিখেছো? সূত্রটা কি?”
মেসেজ ডেলিভার হতেই, ফোনের ঘন্টি বেজে উঠল। সৌরর ফোন। কল্পচক্ষে বুবু দেখতে পেল, সৌর একই রকম ভাবে, দুআঙুলে চোখ টিপে একরাশ হতাশা নিয়ে ওকে ফোন করছে। কাঁপা কাঁপা হাত, কাঁপা কাঁপা বুকে ফোন ধরল বুবু, “ হ্যালো?”
ওদিক থেকে সৌরর প্রাণখোলা হাসি শোনা গেল,“ এর কোন মানে নেই। মনের খেয়ালে ফোনের চাবি গুলিতে আঙুল চালাচ্ছিলাম। যা লেখা হল পাঠিয়ে দিলাম। ”
ওঃ। শান্তিতেও যে দীর্ঘশ্বাস পড়ে আজই আবিষ্কার করল বুবু। সৌর থামেনি,“ মাঝে মাঝে আমার পছন্দের লোকেদের আমি ওমনি মেসেজ পাঠাই। ” পছন্দের লোক বলল কি? ঠিক শুনল কি বুবু?

No comments:

Post a Comment