অনির দোলের ডাইরি ১৬ই মার্চ, ২০২২
#তাম্রলিপ্তকড়চা
সত্যি কথা বলতে কি,বিগত সোম এমনকি মঙ্গলবার সকালেও জানতাম না, আমাদের দোল কেমন কাটবে। শাশুড়িমাতা তখনও হাসপাতাল বন্দী। বিগত শুক্র-শনিবারই ছেড়ে দেবার কথা ছিল, কিন্তু বয়সজনিত নানা জটিলতার জন্য আরো কিছু টেস্ট লিখে বসলেন যে ডাক্তারবাবু। জানালেন নিশ্চিন্ত হয়ে তবেই ছাড়বেন ভদ্রমহিলাকে। সত্যিই তো, বাড়ি নিয়ে যাবার পর যদি দেখা দেয় নতুন কোন উপসর্গ, তাহলে তা সামাল দেওয়া হয়ে দাঁড়াবে কঠিন চাপের ব্যাপার।
সোমবার দিন একখান মহাযন্ত্রণাদায়ক পরীক্ষা অন্তে হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানালেন, তাঁদের মতে সম্পূর্ণ সুস্থ বৃদ্ধা। কারণ অপুষ্টি ছাড়া তেমন কিছুই মেলেনি। এবার প্রয়োজন দিন কয়েকের ভরপুর বিশ্রাম আর অনেক অনেক পুষ্টিকর খানা। এটা খাব না, ওটা খাব না, সবার শেষে হাঁড়ি চেঁচে খাব, চিকেন খাব না, দুধ খাব না, ডিম খাব না মার্কা বায়নাক্কা আর চলবেনি। খেতে হবে জম্পেশ করে তাহলেই চাঙ্গা হয়ে উঠবেন পূর্বের মত। ফিরে পাবেন হারানো বিক্রম।
শাশুড়ী মাতার গৃহপ্রবেশের পর মিটিং এ ডাকলাম সবকটাকে, বক্তব্য একটাই, তোমরা কি আদৌ বসন্তোৎসবে আগ্রহী? চুঁচুড়া হলে এ প্রশ্ন ছিল নিছক বাতুলতা মাত্র, করতেই হত না, ওরা নিজেরাই হল্লা করে সবকিছু ঠিক করে এসে আমায় শুধু জানিয়ে দিত।
এদের সঙ্গে প্রথম দোল, না এরা আমায় ভালো চেনে, না আমি এখনও তল খুঁজে পেয়েছি। তাছাড়াও এদের এ প্রশ্ন করার অন্য কতগুলি কারণ আছে, একে তো এই আপিসে রঙ-আবির সুদূর অতীতে কখনও এসেছে বলে কেউ দাবী করে না, তদুপরি কিছুদিন আগেই আমরা সাধ্যমত সমারোহে বিদায় জানিয়েছি আমাদের তিন প্রিয় ইন্সপেক্টর সাহেবকে। তার পক্ষকালের মধ্যে এমন আয়োজন, তাও এতজনকে নিয়ে,মোটেই মুখের কথা নয়।
সিকেসিও শান্তনু তো একগাল হেসে বলল,‘ হ্যাঁ হবে ম্যাডাম।’ ইন্সপেক্টর সৌরভ বলল,‘ম্যাডাম, আমরা আপনার বাড়ির কথা ভেবে ভয় পাচ্ছি একটু।’ আশ্বস্ত করলাম, বাড়ির কথা ভেবে চাপ নেবার দরকার আপাততঃ নেই, শাশুড়ীমায়ের পুরানো জোর ফিরে পেতে সময় লাগবে বটে, তবে তিনি তো ঠিকই আছেন। শৌভিক আর আমার পাঁচ বুড়োবুড়ির সংসার, উভয়ের মা-বাবা তো আছেনই,সর্বোপরি আছে আমার পিসি, কিছু না কিছু তো আমাদের নিত্যসঙ্গী। তাই আমরা দুজনেই কালকের চিন্তা না করে কেবল আজকের ওপর বাঁচি।
ফিরে যাই টিম তাম্রলিপ্তর বসন্তোৎসবে, ঠিক হল প্রতিটা ব্লক/মিউনিসিপ্যালিটির জন্য বরাদ্দ হবে একটা বিশেষ রঙের আবির। বললাম, এক প্যাকেট করেই আনতে বলো, গতবছর বলাগড়ের শ্যামল দশ কেজি লাল আবির আর দশকেজি পলাশ ফুল আনবে বলে আমাদের হেবি চাপে ফেলে দিয়েছিল। কে কোন রঙ আনবে এটা টিম চুঁচুঁড়ার লোকজন নিজেরাই ঠিক করে নিত। প্রিয়াঙ্কার ওপর দায়িত্ব থাকত, এক রঙ যেন দুটো LWFC থেকে না আসে তার ওপর নজর রাখা। প্রিয়াঙ্কা সত্যিই বাঘ থুড়ি বাঘিনীর মত নজর রাখত। এখানে তো আর রমেশ, শ্যামল বা প্রিয়াঙ্কা নেই, তাই কোন সাব টিম কি রঙ আনবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব সৌরভ আর জসুয়া নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিল। 'আমরাই বলে দিই এ বছর ম্যাডাম। পরের বার দেখা যাবে।'
এরপর আসে খাবার, তহবিলের যা সাংঘাতিক অবস্থা, মেন্যু তাই একেবারে পকেট তথা চাঁদা ফ্রেণ্ডলি। মঠ-ফুটকড়াই-লস্যি আর সিন্নি। গত বছরও এই মেন্যুই হয়েছিল টিম চুঁচুড়ার বসন্তোৎসবে। সিন্নি মাখা, ফল কোচানো, লস্যি বানানো সব করেছিল আমাদের পোলবার মিঠুদি-দেবী দি আর বাঁশবেড়িয়ার মহুয়াদিরা।প্রিয়াঙ্কা,ঝুমা, চন্দ্রা, পূজারা তো ছিলই, সর্ব ঘটে কাঁঠালি হয়ে, সর্বত্র বিরাজমান। বাড়ি থেকেই সব বাসনকোসন এনেছিল আমার পুরানো টিমের মেয়েরা। এখানে মেয়ে কোথায়? মেয়ের সংখ্যা ভয়ানক সীমিত তার থেকেও সীমিত তাদের উৎসাহ।
শুভদীপ্তর বাড়ি সবথেকে কাছে,থালা বাসন আনার দায় পড়ল শুভদীপ্তর ওপর। আর সিন্নি মাখবে কে? সৌম্যজিৎকে ধরা হল,‘ তুই মাখ না ভাই। তুমি এই আপিসের সবথেকে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি, কনুই থেকে সাবান না দিয়ে কিছু খাও না। তুমিই পারবে।’ প্রথম চোটে সৌম্যর ঘোর আপত্তি ছিল অবশ্য, সত্যনারায়ণ পুজো ভিন্ন সিন্নি মাখায়। চুঁচুড়ার বিগত চার পাঁচ বছরের দোলের গল্প শুনিয়ে, ছবি দেখিয়ে আশ্বস্ত করলাম, পুজো ছাড়াও দিব্যি সিন্নি মাখা হয়েছে, খাওয়া হয়েছে, তাও ঈশ্বরের কৃপায় সবাই ঠিকই আছি।
সৌম্যর লিস্টি মোতাবেক সিন্নির উপকরণ কেনাকাটার দায়িত্ব ভাগ করে নিল সকলে। মুস্কিল হল আমার মঠ-ফুটকড়াই বোঝাতে। আমি-সৌরভ আর জসুয়া হাওড়ার লোক,আমরা ব্যতীত কেউ বুঝতেই পারে না যে মঠ কারে কয় আর ফুটকড়াইটাই বা কি। শেষে আমাদের রবিবাবুর ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ল, বাগনান থেকে মঠ-ফুটকড়াই কিনে আনার। ওগুলো ছাড়া আবার বাঙালীর দোল হয় নাকি। মঙ্গলবার রাত আটটায় রবিবাবুর ফোন,‘ম্যাডাম বুঝতে পেরিছি। তাহলে কি এখনই কিনে নেব?’ না না পাগল নাকি, বুধবার রাতের আগে কিনবেন না, পিঁপড়ে ধরে যায় যদি।
বুধবার সন্ধ্যায় আবার ফোন করে যখন রবি বাবু জানতে চাইছেন 'কতটা নেব ম্যাডাম', তখনই অন্য ফোনে শুভদীপ্ত জানাচ্ছে, কাল ডেপুটেশন দিতে যাবে সব CKCOরা। ফলে আমাদের বসন্তোৎসবে থাকতে পারবে না কেউই। তবুও বললাম, যদি পারো, কাজ মিটিয়ে জলদি ফিরো অন্তত চেষ্টা করো। অফিস টাইমের পরও নাহয় খানিক অপেক্ষা করব আমরা। আমার CKCO দের ছাড়া, আমার বসন্তোৎসব ভালো লাগবে কি একটুও? ঠিক তখনই ইন্সপেক্টর সঞ্জয় বলছে, 'ম্যাডাম কাল হয়তো আমিও থাকতে পারব না।' রঞ্জিত বলল, 'ম্যাডাম আমি তো ময়না যাব, জানি না সময় মত ঢুকতে পারব কি না!' ইত্যাদি প্রভৃতি। একবার ভাবলাম দিই সব বাতিল করে। তারপর মনে হল, থাক। দেখাই যাক না। কি নিয়ে আসে আগামী কালের সকাল।
অনির দোলের ডাইরি, ১৭ই মার্চ, ২০২২
#তাম্রলিপ্তকড়চা
প্রতি বছর দোলে একটা করে হলুদ শাড়ি নষ্ট হয় আমার। আপিস থেকে রঙ আবির মেখে এমনি ভূত হয়ে বাড়ি ফিরি যে বাবা হাজারবার কেচে, ভ্যানিশ দিয়ে ধুয়েও মুছতে পারে না, গায়েব করতে পারে না শতরঙ্গী দাগছোপ গুলো। এবারে অবশ্যি কি হবে জানি না। সিকেসিওরা তো বলেই দিয়েছে থাকতে পারবে না। সংগঠনের ডাকে, ছুটি নিয়ে দল বেঁধে নবান্ন অভিযানে যাবে সব। দুজন ইন্সপেক্টর সাহেব বলেছেন, তাঁরা ব্লকের কাজ মিটিয়ে হাজিরা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। এসএলও/সিএদের তরফ থেকেও মেলেনি তেমন সাড়া। এদিকে আমাদের রবি বাবু যে বাগনান থিকে এক না দেড় কেজি ফুট কড়াই আর পাঁচশ মঠ কিনে আনতেছেন। তার কি হবে? কে খাবে? কে জানে?
বেলা এগারোটা, অন্য দিনের থেকে আজ যেন একটু বেশিই ফাঁকা আঞ্চলিক শ্রমদপ্তর তাম্রলিপ্ত। ঢুকতেই বাঁদিকে গম্ভীর মুখে কাজ করছেন হক বাবু, গুনগুন করে কীর্তন ধরেছেন জহর বাবু। জহর বাবু অবশ্যি গুনগুন করে গাইতে পারেন না, উদাত্ত স্বরেই গান,তবে আমায় দেখলেই শুনেছি কমে যায় গানের ভল্যুম। দুয়ারে সরকারের সময়, আমার অনুপস্থিতিতে ফাঁকা অফিসে ওনার গানের বহর শুনে নাকি ছুটে আসত আশেপাশের দপ্তরের লোকজন। সেদিন ক্যাম্প থেকে বেখাপ্পা সময়ে আপিসে ফিরে দেখলাম কারা যেন রেকর্ড করছিল জহর বাবুর টপ্পা।
ইন্সপেক্টর বলতে আজ কেবল জসুয়া আর সৌরভ। বদলির পর্ব মিটে অবশিষ্টই তো আছে চারজন, তার মধ্যেও সঞ্জয় আর রঞ্জিত ভুগছে দোলাচলে। এ ব্যাটারা দেখি আনন্দ করতেই জানে না। বিলের পাহাড় পড়ে আছে বলে রয়ে গেছে শুভাশিস, আর আছে অরূপ আর রবিবাবু। এমনকি চঞ্চলও আজ ছুটি নিয়ে মায়াপুর গেছে।আর আছি, সৌম্যজিৎ আর আমি।
বেলা একটা নাগাদ সৌম্য একবার মুখ গলিয়ে প্রশ্ন করল,' ভেবে দেখ দিদি,সিন্নি কি সত্যিই মাখা হবে? তোমার লোক কোথায়?' সত্যিই লোক কোথায়? সৌরভ যদিও আশ্বস্ত করল, সঞ্জয় বলেছে আসবে। আর ময়নার কাজ মিটিয়ে রওনা দিয়েছে রঞ্জিত। তাহলেও দেড় কেজি ফুটকড়াই আর পাঁচশ মঠ, একটু কেন, অনেকটা বেশি হয়ে যাবে নি?
বেলা দুটো নাগাদ ক্যান্টিন থেকে ফরমায়েশ মোতাবেক এককেজি আটা, পাঁচশ দুধ, আর একছড়া কলা দিয়ে গেল। সৌম্যজিতের ফরমায়েশ মোতাবেক দু একটা আপেল, একটা বেদানা, অল্প একটু আঙুর, কাজু আর কিশমিশ ভাগ করে কিনে এনেছেন হক বাবু আর শুভাশিস।
লস্যিটা ক্যান্টিনকেই করতে বলা হয়েছে। ওরা প্রস্তাব দিয়েছিল আমূল লস্যির প্যাকেট কিনে সরবরাহ করবে। এক কথায় উড়ে গেছে সে প্রস্তাব। একে তো দাম অনেক বেশী পড়বে, আর দ্বিতীয়তঃ ডাল ঘোঁটা আর টক দই দিয়ে বানানো বরফ ভাসা লস্যির কোন তুলনাই হয় না।
বেলা তিনটে, পাঁশকুড়া থেকে চলে এল বৈদ্যনাথ। যাক তবু তো একটা লোক বাড়ল। বাকি সিকেসিওদের খবর কি? ওরা নাকি এখনও ফিরতি বাসেই চাপেনি।
বেলা সাড়ে তিনটে, চণ্ডীপুর থেকে সাত জন এসএলও এল, আর পাঁশকুড়া থেকে ছায়া। তাও হলুদ শাড়ি পরে। আমার আনন্দ দেখে কে? যাক্ আরও একটা অন্তত মেয়ে পাওয়া গেল। পাঁশকুড়া আর ময়না থেকে কাজ মিটিয়ে এসে হাজির হল দুই ইন্সপেক্টর সাহেব ও। অরূপের আনা মস্ত পিতলের পরাতে ঢালা হতে লাগল একের পর রঙ। এবার তাহলে সিন্নি মাখা হোক।
মাখবে কে? যাঁর ঘাড়ে সিন্নি মাখার গুরু দায়িত্ব তিনিই তো নিরুদ্দেশ। ধুত্তোরি বলে হক বাবু আর শুভাশিস সুতো কাটার ছুরি দিয়ে আপেল কুচাতে নেমে পড়ল। ক্রমেই ভিড় বাড়ছে, এসএলও সিএদের মধ্যে যে এমন সাড়া পড়েছে তা ছাতা আমরা সকাল থেকে টেরই পায়নি। রঙের থালার কাছে ঘুরঘুর করা কটা ছেলেকে জোর করে পাঠালাম শুভাশিস আর হকবাবুকে হেল্প করতে। ওরে সৌম্য, এবার এসো ভাই, এদের যে আর সামলে রাখা যায় না। ব্যাটারা না হলে সিন্নি মাখার আগেই সব রঙ মেখে ভূত হয়ে যাবে।
বিকেল চারটে, অরূপের আনা মস্ত পিতলের গামলায় এক কেজি আটা ঢেলে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছে সৌম্য, কি রে ভাই, মাখ? ক্ষুব্ধ স্বর ভেসে আসে, 'এক কেজি আটা আর পাঁচশ দুধ? আরও অন্তত দেড় লিটার দুধ লাগবে দিদি।' আশিস আর রবি বাবু দৌড়লেন দুধ আনতে। দোলের ছুটির আগের দিন বিকালের অফিস পাড়া, দুধ কোথায় মিলবে কে জানে? গুড়ের ও আব্দার ছিল বটে, বদলে পাওয়া গেছে এক প্যাকেট গুড়ের বাতাসা। সে সমস্যা না হয় জহর বাবুর চায়ের চিনি মেটালো, দুধটার যে কি হবে?
টেনশনে গুটি কয়েক ভাঙা কাজুই খেয়ে নিলাম আমি। কটা আঙুরও খাবার ইচ্ছে ছিল, ঊপস্থিত জনগণের সমালোচক দৃষ্টি অনুভব করে গুটিয়ে নিলাম হাত।
সিকেসিও গুলোই বা কতদূর পৌঁছালো? কেউ ফোনই তোলে না ব্যাটা। তাঁদের মধ্যে আবার শুভদীপ্ত, সৌমেন,নন্দন আর শান্তনু এই চারজন নাকি আসছেন বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর ট্রেনে আসছে সুরজিৎ। যাতে পারিস আয় বাবা, এসে আমাদের ধন্য কর।
দুধ এসে পৌঁছায়, সাথে আসে এক টিন কনডেন্সড মিল্কও। উফঃ কি বুদ্ধি মাইরি। যা জমবে না আজকের সিন্নিটা। জমেই উঠেছিল সবকিছু, মাঝখান থেকে যদি কনডেন্সড মিল্কের ক্যানে হাতটা না কাটত সৌম্য। শুভাশিস নিষেধ ও করল, 'স্যার ছেড়ে দিন, যতটা পড়তেছে পড়ুক, বাকিটা সামান্য জল দিয়ে গুলে নিলেই হবে।' কিন্তু ততক্ষণে ক্যানে হাত ঢুকিয়ে চাঁচতে শুরু করে দিয়েছে যে সৌম্য।
উফঃ সে কি রক্ত। ধুয়ে আসা হল, চিনি দিয়ে চেপে ধরা হল, ব্যান্ডেড দেওয়া হল, রক্ত আর বন্ধ হয়ই না। সেলাই করতে হবে নাকি?বাইরে বিদায় নিচ্ছে দোলের আগের বিকাল, এখুনি নামবে সন্ধ্যা। এই ভুষুণ্ডির মাঠে ডাক্তার পাব কোথায় আমরা? ওই অবস্থাতেই হাতটা চেপে ধরে আশিস দৌড়ল,ওদের স্যারকে নিয়ে কাছের ওষুধের দোকানে, মাসির আপিস পোঁছা ন্যাতা দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত মুছতে মুছতে লিফট্ অবধি গেল দুজন এসএলও। কি যে হবে, হয়ে গেল আমাদের দোল।
বাকিদের অবশ্য উৎসাহের ঘাটতি নেই, বহু দূর দূর থেকে এসেছে সবাই,এখনও আসছে। সঙ্গে এনেছে এবং আনছে পছন্দের রঙ, এসে গেছে লস্যি, রেডি হয়ে গেছে সিন্নিও। কোলাঘাটের দীপালি দিও এসে গেছেন হলুদ শাড়িতে সেজে গুজে, কোমর বেঁধে আমাদের মেয়েরা বাটিতে বাটিতে তুলছে সিন্নি। গ্লাসে গ্লাসে ঢালছে লস্যি। বেশ একচোট রঙও মেখে ফেলল জনগণ। যে যার ইন্সপেক্টর সাহেবের মাথায় আর গালে ভালো করে রঙ মাখাচ্ছে, রঙের থালা নিয়ে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন জহর বাবু। গান গাইছেন, এ আমার গুরুদক্ষিণা। জিজ্ঞাসা করতে গেলাম, আজকের দিনে এমন গান কেন, উল্টে আমায় বললেন, ‘ম্যাডাম রঙ মাখবেন নি?’
মাখব তো। সৌম্যর হাতটা কি হয় আগে দেখি। যে ছেলেটা সাধ করে সিন্নি মাখল, তাকে বাদ দিয়ে কি করে মাখি বা খাই। আর শুভদীপ্ত-নন্দনরাই বা কখন আসবে? ফোনও ধরে না কেন আপদগুলো। অতিকষ্টে নন্দনকে পাওয়া গেল, ‘ম্যাডাম আমরা নিমতৌড়ি বাসস্টাণ্ডে নেমেছি।’ সন্ধ্যা প্রায় ছটা। আনন্দ আর উত্তেজনা চেপে জানতে চাই, আপিস আসছ তো? নাকি সারাদিনের ধকল শেষে বাড়ির পথ ধরছ সবাই? পাশ থেকে শুভদীপ্ত বলে,‘না ম্যাডাম। এতটা পথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এলাম, আপিস যাব বলেই কি না।’
অতঃপর হাত সেলাই না করে, ভালো করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে ফিরে আসে সৌম্য আর আশিস। ক্যামেরা নিয়ে রেডি থাকে অরূপ। চার মক্কেল আপিসের চৌহদ্দিতে পা রাখতেই-‘হোলি হ্যায়।’ যতই বলি, ওরে বাপ, এটা দোল। হোলি নয়কো। কে শোনে কার কথা।
No comments:
Post a Comment