Thursday 6 September 2018

চার-ইয়ারি কথা-


#2
চার ইয়ারি কথা- #২
-“ ভাবছি ন্যাড়া হব। টাকে চুল গজানোর ট্রিটমেন্টে আন্দাজ কত খরচা হয়? কমসম হলে ভালো, নাহলে ন্যাড়াই থাকব। ”
-সত্যি বাবা। চুলের থেকে বিশ্বাসঘাতক কেউ নেই। যতই যত্ন নাও, সেই ঝরে পড়ে ব্যাটারা। ”
- সাধে হতভাগাদের বা- ইয়ে মানে, ইয়ে বলে?”

#1
কি বিকট বিচ্ছিরি একটা মিটিং এ বসে বসে বোর হচ্ছি। জনগণ বকেই যাচ্ছে,একদল মন দিয়ে শুনছে, একদল নোট নিচ্ছে, একমাত্র আমিই বোধহয় পেঁচোয় পাওয়া মুখ নিয়ে বসে আছি। দুচারটে মশাও তো কামড়াতে পারে, তকতকে ঠাণ্ডা মিটিং হলে শালা একটা মশাও নেই। আটটায় ঘর ছেড়েছি, কি খেয়ে বেরিয়েছিলাম যেন? মিটিংএ ইটিং বলতে এখনও অবধি পুঁচকে কাগজের কাপে চা আর শুঁটকো ক্রীম ক্রেকার। চা যেমন মিষ্টি তেমনি দুধের গন্ধে ভরা। ওপরে পুরু সর দেখে আর ঠোঁট ছোয়ানোর ইচ্ছে হল না। সময় কাটবে কি করে?অগ্রবর্তীনীর ছবি এঁকে ফেললাম লুকিয়ে,  ধরা পড়লে নির্ঘাত ক্যালানি, অবশ্য যদি বুঝতে পারে। জনৈক অপছন্দের আধিকারিকের একটা খোক্ষস মার্কা ছবি আঁকলাম।
তাও শালা সময় আর কাটে না। ফেসবুক খুলতেই পাশের বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রলোক ইঙ্গিতে বললেন,“করছ কি?” লে হালুয়া। বসে বসে হোয়াটস্ অ্যাপ খুললাম। সাড়ে তিনশ অপঠিত মেসেজ সাগ্রহে প্রতীক্ষারত। সবই ঐ আরকি গুড মর্নিং, গুড নাইট,মায়ের দয়া হোক, বাবার চুলকানি মার্কা ফালতু মেসেজ আর না হলে রদ্দি জোক। কেন পাঠায় কে জানে? আমার ঘুম ভেঙে উঠে কোন মর্নিংকেই গুড বলে বোধ হয় না। জনৈক ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকে একবার এটা শুনিয়েছিলাম, তারপর থেকে উনি অন্তত আর সুপ্রভাত জানান না। বরং হরেক রঙের অভিবাদন জানান। জানান সাথী আমাদের লড়তে হবে। সেদিন করিডরে দেখা,বললাম,“ফের যদি ঐ রঙের অভিবাদন জানিয়েছেন- আপনাকে ব্লক করেই দেব। ” ও বাবা তিনি বিগলিত হয়ে বললেন,“আপনি তাইলে আমার মেসেজ পড়েন ম্যাডাম?”
হোয়াটস্ অ্যাপ খুলে চমচমকে মেসেজ করলাম,“আমায় কেন লোকে মিটিং এ ডাকে রে বাপ?আমি সভ্য সমাজের অনুপযুক্ত। ”
চমচম,আহা আমার প্রাণের ইয়ার চমচম জবাব দিল তৎক্ষণাৎ,“কে জানে বাবা। আমার মানুষ জাতটাকেই আর সহ্য হচ্ছে না। একগাদা ফাইল নিয়ে সওয়ারি করছি,পিছনে এক আবাল বসে বসে কখন থেকে নকল অ্যাকসেন্টে কার সাথে হেজিয়েই চলেছে। আধ ঘন্টা হয়ে গেল।  আর নেওয়া যাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে দি শালার গলা টিপে। ”
আহা বাতানুকূল যন্ত্র বোধহয় হঠাৎ করে মলয় পবন বইয়ে দিল। মিটিং এর কচকচির তুলনায় নকলি অ্যাকসেন্টওলার গলা টেপা অনেক বেশী চিত্তাকর্ষক । বললাম,“দাও। দাও। এখুনি ব্যাটার গলা টিপে।” তারপর মনে হল আহা আমি যদি ভ্যাম্পায়ার হতাম, তাহলে কি ভালই না হত। সবই ভ্যাম্পায়ার ডাইরি আর দা অরিজিনালের প্রভাব আরকি। তাহলে নিঃশত্রু  হতাম আরকি। যাকেই অপছন্দ হত তারই রক্তশোষণ- আর কি। চমচমের এতে কোন উৎসাহ নেই বুঝতে পারলাম, ও নীরব হল। ওমা লাফিয়ে পড়ল পমেটম। “হ্যাঁ। হ্যাঁ। আমিও যদি ভ্যাম্পায়ার হতাম-তাহলে আমার অফিসে আজ হয়ে যেত একটা ম্যাসাকার। টোটাল এক্সটারমিনেশন হাঃ। ”কাল্পনিক লিস্ট বানাতে বসবার আগেই ধমকে দিল ঝকমক।  “এই তোমরা কার রক্ত খাবার পরিকল্পনা করছ? খবরদার নেংটির রক্ত খেও না কিন্তু। ওর রক্ত খেলেই কিন্তু এইডস্ হবে। ” নেংটি বাবুকে দুর্ভাগ্যবশত আমরা চারজনেই চিনি। অতি নচ্ছার,হাড়ে বজ্জাত। ব্যাস পাওয়া গেল একটা  কমন এজেন্ডা। চমচমের প্রত্যাবর্তন ঘটল, “শুধু কি নেংটি?শালা নেংটির পুরো বংশ, গুষ্টির রক্ত খেলে এইডস্ হবে। নোংরা, হাতিগুম্ফা---”বাকি মিটিংটুকু কখন যে কেটে গেল নেংটির গুষ্টি উদ্ধারে বুঝতেই পারলাম না। শুধু মিটিং শেষে খুব ইচ্ছে করছিল জানতে,নেংটি সত্যি কটা বিষম খেল- কে আর সে শালার তত্ত্বতালাশ করে?জাতে তাঁতি,কি দরকার বাপু এঁড়ে কিনে।

(সব কল্পনা। সবটুকু কল্পনা। বাস্তবের সাথে মিল পেলে,কিন্তু আসছি চমচম,পমেটম আর ঝকমককে নিয়ে, হ্যাঁ-)
©Anindita Bhattacharya

No comments:

Post a Comment