তুত্তুরী উবাচ ১৪ই জানুয়ারী
২০১৬
“হ্যালো মামমাম্।
”
“হ্যাঁ মা। ”
“তোমার মেয়েকে নিয়ে আর পার যায় না। খালি বকে। মারব বলে
ভয় দেখায়। সুযোগ পেলেই
মারে।”
“কেন রে? কিছু অপাট করোনি তো?”
“না। ঐ আর কি মায়ের গয়নাগাটি গুলো সব
ঢেলে আবার গুছিয়ে রেখেছি। ”
“কেন কর মা। মা রেগে যায়। আর কিছু করনি তো?”
“নাঃ। শুধু একটা
টিউব লাইট ধড়াম করে ফেলে দিয়েছি। ”
“তা বেশ করেছ। যেমন তোমার হাতের কাছে রাখে।
”
“না ঠিক হাতের কাছে নয়, ঐ আর কি
আলমারির ফাঁকে রাখাছিল। ”
“হুঁ। ব্যাস? আর কিছু করোনি তো?”
“করেছি তো। মায়ের ঐ কি সব মুখে মাখার স্প্রে
আছে না? ঐ গুলো তুলোয় দিয়ে ঘর মুছেছি।
”
“সর্বনাশ । তোকে আজ মা মেরেই ফেলবে।
”
“মায়ের লিপস্টিক গুলো খুলে দেখতে গিয়ে কি হল জানি না। সব কটা ক্যাতক্যাত করছিল।
”
“উফ কি দুরন্ত মেয়েরে বাবা।
”
“আর মায়ের ল্যাপটপটায় কি সব টিপেছি, বাবা বলছে, ল্যাপটপটা মরে গেছে। যাই হোক তাই বলে আমায় মারবে? তুমি এসে এখুনি তোমার
মেয়েকে নিয়ে যাও। ”
তুত্তুরি উবাচ- ২৬ শে জানুয়ারি ২০১৬
"মা, দুর্গা ঠাকুরের পায়ের কাছে সবসময় একটা মোষ থাকে কেন?"
"মোষ? ও হ্যাঁ মোষ তো থাকবেই, ওটা যে মহিষাসুরমর্দিনীরই মূর্তি । মহিষাসুর তো মোষের ছদ্মবেশেই আক্রমণ করত। গল্পটা বলেছি না?"
"হুঁ। মর্দিনী
মানে?"
" যে মর্দন অর্থাৎ বিনাশ করেছিল। হত্যা করেছিল। "
ক্ষণিক নীরবতার পর, “আমি কি মর্দিনী মা?”
“তুমি তো আমার দশভূজা। জগৎজননী। ”
“ না আমি পিঁপড়েমর্দিনী। আমি পিঁপড়ে মারি। ”
প্রসঙ্গত জগজ্জননী নামটি ওর নিজের বেছে নেওয়া। আমার চার চারটি নাতি নাতনী। লকাই, সরো, কেতো এবং গণা। কেতো আর গণা মহাপাজি। প্রায়শই তাদের মা রেগে গিয়ে তাদের
জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। লকাই, সরো স্কুলে পড়ে।দিদিমা অফিস
থেকে ফিরলে, আগে মায়ের হোমওয়ার্ক, পরে মেয়েদের
হোমওয়ার্ক। যেদিন মা, দিদিমার হাতে ঠ্যাঙানি খায়, সেদিন লকাই সরোর কপালের
দুঃখ থাকে। তাদের মা
সেদিন প্লাস্টিকের গদা নিয়ে তাদের হোমওয়ার্ক করাতে বসেন।
তুত্তুরি উবাচ- ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
“ মা, আমি আর ঈশাণীর পাশে বসব না।
”
“কেন রে?”
“ও বদ। ”
“কি করল আবার? ঈশাণী তো তোর প্রাণের
বন্ধু। এই সেদিন
নিজের হাতে এঁকে তোকে গ্রিটিংস্ কার্ড দিল!!!”
“হুঁ। কিন্তু আজ ওর দুলে হাত দিতে দেয়নি।কি সুন্দর গোল গোল দুল পড়েছিল। ভাবলাম একটু ঘুরিয়ে দেখি ”
“সর্বনাশ । নির্ঘাত
কানে সদ্য ফুটো করেছে। এই সময় খুব
ব্যথা থাকে। তারওপর সোনার
দুল ধরে টানাটানি করলে
যদি হারিয়ে যায়--”
“হুঁ। ”
“ঝগড়া করেছো ? কি বলেছ?”
ক্ষণিক নীরবতার পর“আড়ি। তোর পাশে আর বসব না। সব সম্পর্ক শেষ। ”
“ওরে বাবা। সম্পর্ক শেষ। তা বেশ। তবে যদি মন খারাপ করে,
তাহলে কাল ঈশাণীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিও।
”
“কি চেয়ে নেব? দুল?”
“না। না ক্ষমা রে বাবা। মানে সরি বোলো এন্ড গিভ হার আ
টাইট হাগ। ”
“আঃ। হাগ বোলো
না। সিংহগুলোও শিখে গেছে, এক্ষুণি ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
”
উপস্ ভুলে গিয়েছিলাম, আমার কন্যা যে জগজ্জননী। বাড়িতে সিংহ, ময়ুর, পেঁচা
গিজগিজ করছে।
তুত্তুরী উবাচ- ৬ই মার্চ
২০১৬
“বারোটা বাজছে কিন্তু , এবার মুখ
বন্ধ। আর একটা
কথা বললেই মারব। ”
“ ইঃ শুধু মারব আর মারব”। ওপাশ ফিরে আহ্লাদী স্বরে,
“ বাবা? তোমার ব্যথাটা কমেছে?”
“ না। আছে একটু”
“ এস আমি মা দুর্গার নাম লিখেদি। ব্যথা কমে যাবে। ”
“ তুই! মা দুর্গার নাম লিখবি?”
হাসি চেপে গম্ভীর ভাবে বাবা বলল,“ বানান
জানিস?”
“হ্যাঁ জানি।
”
“ কি বানান বল দেখি?”
“জানি। কাল সকালে বলব। এখন মা কথা বলতে নিষেধ করেছে” ।
তুত্তরী উবাচ ১৪ই মার্চ ২০১৬
“মা, দাদা কি বাজে কথা বলে!!”
“আবার দাদা কি করল?”
“নাঃ কিছু করেনি। শুধু বলছিল ভূত বলে কিছু নেই।
”
“নেই ই তো। ঠিকই তো বলেছে।
”
“নেই?”
“না। ”
“মানুষ মরে ভূত হয় না?”
“উঁ হুঁ। ”
“ব্রহ্মদত্যি? মামদো? ছেঁছো ভূত?কিচ্ছু হয় না?”
“নাঃ। ”
“শাঁকচুন্নী? পেত্নী?”
“ধুস্। ”
“আর লুল্লু? একানড়ে ও হয় না?”
“ধুর। ধুর। ওতো ত্রৈলোক্য--- ”
“হয় না তো?তাহলে তোমরা কেন ভয় দেখাও? ঘুমিয়ে পড়ো না হলে এক্ষুনি একানড়ে এসে জানলায় ঠকঠক করবে? অ্যাঁ? বল? বল?”
তুত্তুরী উবাচ ১৭ই
মার্চ২০১৬
"মা, মা মনসা কি লাউ ডগার পিঠেও
চাপে?"
"চাপতে পারে, এখন কাজের সময়
বিরক্ত করো না।
"
একটু পরেই প্রবল চিৎকার ,“ মনসা! তোর কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই ?
ঐ টুকু একটা লিকলিকে প্রাণীর পিঠে তুই চাপিস?”
প্রবল বকুনি থামার পর আদুরে গলায় আব্দার, “ মা সরস্বতী শাড়ি
ছিঁড়ে ফেলেছে। ওকে একটা
শাড়ি কিনে দেবে?”
“বেশ দেব। তা ওর কি
একটাই শাড়ি?”
করুণ স্বরে “লাল শাড়ি চাইছে মা।হ্যাঁ একটাই শাড়ি। ওর বাবা তো শিব। গরীব লোক। গাঁজা খায়, সিদ্ধি খায় আর ধ্যান করে। আমি বলেছি
চিন্তা করিস না। মা কিনে দেবে। ”
“ আচ্ছা । তা মনসাকে
এত বকলি কেন? ”
“ সব সময় সাপ নিয়ে ঘোরে। লক্ষ্মী ভয় পায় যে। গোখরোর গায়ের রঙ তো হলুদ কালো,লক্ষ্মী ভাবে বাঘ এল
বুঝি! ওমনি প্যাঁচায় চেপে উড়ে পালিয়ে যায়। হিঃহিঃ।
”
জগজ্জননীর সংসার-
তুত্তুরী উবাচ ২৪শে মার্চ
২০১৬
- “বাবা, লক্ষ্মী আর সরস্বতী বলছে ভোটের পর ঊনকোটি যাবে।”
- “বাঃ তা যাওয়াই যায়।”
- “আমি বলেছি না মরুভূমি দেখতে যাব। সেখানে সিংহটাকে বেশ বালির মধ্যে লুকিয়ে রাখা যাবে।”
- “মরুভূমি! মানে রাজস্থান? ভেরি গুড।”
- “বোকা গণেশটা বলছে মরুভূমিতে গিয়ে ঊটের জল খাবে।”
- বাবা প্রায় বিষম খেয়ে, “ঊটের জল? মানে?”
- “হ্যাঁ গো বাবা, ঊটের পীঠে একটা বিরাট জলের কি যেন থাকে, গণেশ বলছিল।”
- “ওঃ ঊটের কুঁজ!!! সেটা থেকে শুধু ঊট জল খেতে পারে, তাও বিশেষ পরিস্থিতিতে। না হলে জল খেতে হলে ঊটটাকে কাটতে হবে। তাও পাবি না। ওটা চর্বি হয়ে জমে থাকে।”
- “ঊটটাকে কাটতে হবে?” প্রচণ্ড ধমক দিয়ে, “ গণেশ! সাধে কি তোকে বোকা বলি? দিদিরা কবে পড়তে শিখে গেল। তুই এখনও অ আ লিখতে শিখলি না। দাঁড়া তোর শুঁড়টাই কেটে দেব। ” আমাদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে, “চিন্তা করো না। শিব আবার জুড়ে দেবে।” কয়েক মুহূর্ত পরে স্বাভাবিক স্বরে, “ বাবা, গণেশ বলছে, সিংহটা বালি খুঁড়ে জল বার করে দেবে। কোন চিন্তা নেই। ”
তুত্তুরী উবাচ, ২৯শে মার্চ ২০১৬
- "মা, রাবণের কটা হাত?গণেশ বলছে ওর ও নাকি দশটা হাত?"
- "দুটোই তো জানি। "
- "দশটা মাথা আর দুটো হাত? তাহলে রাবণ দাড়ি কামাতো কি করে?"
- "উফ। কি প্রশ্নের ছিরি। যা বাবাকে জিজ্ঞাসা কর গিয়ে। "
- "বাবা বল না? রাবণ কি করে দাড়ি কামাতো?"
- "গুড কোয়েশ্চন। কামাত না। রাবণ মাকুন্দ ছিল। "
- "মাকুন্দ মানে কি বাবা? "
- "মাকে জিজ্ঞাসা কর?"
- "মা মাকুন্দ মানে কি?"
- "জানি না যা। সক্কাল সক্কাল কি সব অনাসৃষ্টি কথাবার্তা । "
তুত্তুরী উবাচ, ২রা এপ্রিল ২০১৬
- “মা, বলছি যে, বাঁদর থেকে যেমন মানুষ হয়, মানুষ থেকে কি হয়?”
- “মানুষ থেকে?----- এখনও কিছু হয়নি। ”
- “ হ্যাঁ হয় তো। মানুষ থেকে ভূত হয়” মুচকি হেসে আহ্লাদী স্বরে, “ তুমি ভয় পেয় না। ভূত বলে কিছু হয় না। তোমাকে এপ্রিল ফুল বানালাম। ”
- “ এপ্রিল ফুল? ২ তারিখ রাতে এপ্রিল ফুল? সে তো পয়লা---”
- “ সবার মন খারাপ ছিল যে--” (** ৩১ শে মার্চ বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের পতন)
তুত্তরী উবাচ ৩রা এপ্রিল ২০১৬
- “মা। মা। মহাসমস্যা হয়েছে। ”
- “কি করেছো?”
- “আমি না। বোকা গণেশ। খেলতে খেলতে বেগুনী রঙের বালতিতে পড়ে গেছে। এখন সাফ করবো কি করে?”
- “ওঃ এই। চান করিয়ে দে।”
- “ সানলাইটের জলে চুবিয়ে, কলিন আর ডেটল দিয়ে ধোব? ”
- “যা খুশি কর। আমায় কাজ করতে দাও আর খবরদার! কলিন, ডেটলে যেন হাত দিতে না দেখি। ”
- একটু পরে,“ মা একটা দাড়িওলা ভগবানের নাম বল তো?”
- “ কেন? গণেশের দাগ ওঠার সঙ্গে দাড়িওলা ভগবানের কি সম্পর্ক? যাই হোক একটাই তো জানি। ”
- “ কি?”
- “ প্রজাপতি ব্রহ্মা । ”
- “ কেন লোকনাথ বাবা। ”
- “ওঃ। উনি তো মানুষ হয়ে জন্মেছিলেন। ”
- “সে যাই হোক। পুজো তো করি। ”
- আবার কিছুক্ষণ পরে, “ মা কোন সম্পর্ক নেই মানে কি?”
- “ মানে- ইয়ে- কোন যোগাযোগ নেই। দুটো জিনিসের মধ্যে অনেক ভেবেও কোন যোগসূত্র না পাওয়া গেলে-”
- “ওঃ। বুঝেছি। যেমন মা লক্ষ্মী আর দিদি নং ওয়ানের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই?”
- “ আঃ কি গাঁজাখুরি কথাবার্তা। আর একটাও প্রশ্ন নয়। সকাল থেকে বকেবকে--”
- “না সম্পর্ক আছে মা। দুটো একই চ্যানেলে হয়। দুর্গা আর বিগবস্ যেমন। ”
- “ আর একটাও কথা নয়। সকাল থেকে বকে বকে মাথাখারাপ করে দিল- ”
- “বেশ। চলে যাচ্ছি । শুধু বল গাঁজাখুরি মানে কি। ”
- তুত্তরী উবাচ ৪ঠা এপ্রিল ২০১৬
- ট্যাক্সিওলাদের মতে উড়াল পুলের পতনের দৌলতে হাওড়া নাাকিপ্রায় দুর্ভেদ্য । এয়ারপোর্ট থেকে ভিআইপি রোড ধরে কাঁকুড়গাছি হয়ে, ফুলবাগান, বেলেঘাটা স্পর্শ করে সুরেন ব্যানার্জী রোড হয়ে ধর্মতলা বাসস্টান্ডের মধ্যে দিয়ে কার্জন পার্ক হয়ে রেসকোর্সের পাশ দিয়ে রবীন্দ্র সেতু টপকে বেলেপোল দিয়ে ইছাপুর জলট্যাঙ্কে পৌছে করজোরে বললাম,“ দাদা অনেক হয়েছে কলকাতা ভ্রমণ । আমাদের অনুগ্রহ করে এখানেই নামিয়ে দিন।”
- পথে তুত্তরী উবাচ-
- “মা। জানো তো আমাদের স্কুলে দুটো হিন্দু পড়ে!!!”
- “ মানে? হিন্দু তো তুইও, ঈশানী, অদ্রিজা সবাই। এতে আশ্চর্য কি আছে?”
- “ আরে নানা ঐ হিন্দু না। অন্য ”
- “ সে আবার কি? আবার শুরু করেছিস গাঁজাখুরি গপ্প?”
- “আঃ। মিস্ যখন বলে প্রেপ কপি বার কর, তখন কি আমরা বলি, নেহি হ্যায়?”
- “ওঃ। হিন্দি তে কথা বলে। ”
- “হ্যাঁ তাই তো বলছি হিন্দু। ”
- “ ওদের হিন্দিভাষী বলে।”
- কয়েক মিনিটের নীরবতার পর, “ মা দাদু বলেছে মুখোশ কিনে রাখবে। রাবণের মুখোশ। কিন্তু পরব কি করে?”
- “উফ্। মুখোশ পরতে তুই জানিস না বুঝি? আগে যেন কখনত্ত পরিসনি?”
- “ পরেছি তো।” চিন্তান্বিত হয়ে, “কিন্তু রাবণেরটা--- কি করে যে পরি? আমার তো আর দশটা মাথা নেই। ”
- “ উফ্ মুখোশে একটাই মাথা থাকে। চুপ করে বসো তো আর একটাও কথা বোল না। ”
- পাঁচ মিনিটের নীরবতার পর ,“ উঃ। বড্ড মশা ট্যাক্সিতে। খালি কামড়ায়।”
- “কোথায় ? আমায় তো একটাও কামড়াচ্ছে না। চুপ করে বস। এত নড়ছ কেন?”
- “ হুঃ। আমার বোধহয় চুলকুনি হয়েছে মা। ঈশ্ জানো তো জানোয়ার গুলো না গিয়ে গাছে গা ঘসে। ওদের তো হাত নেই যে ঘসঘস্ করে ইয়ে করবে। মা, ওরা না ” এক ঝলক ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে, স্বর নামিয়ে, “ ইয়ে করেও ইয়েটা গাছে ঘসে নেয়। ইয়ে মানে বুঝলে কি না?”
তুত্তুরী উবাচ ১৪ই এপ্রিল ২০১৬
- “আজ পয়লা বৈশাখ,সকাল সকাল পড়তে বসো। জান তো, আমাদের ছোটবেলায় কি বলত, আজ যা করবে সারা বছরই তাই করতে হবে।”
- “তাহলে তো রোজ পড়তে বসতে হবে, ওরে বাবা আজ আমি কিছুতেই পড়ব না।”
- “বেশ, তবে আজ ঠ্যাঙানি খেলে কিন্তু সারা বছরই-”
- “এই শুরু হল। খালি মারব আর মারব। আমাকে কি সারা জীবন ঠ্যাঙাবে?”
- “যত দিন বড় না হচ্ছ।”
- “শোন মা, বাচ্ছাদের ঠ্যাঙাতে নেই। জান না শিশু নারায়ন! ছ বছর অবধি বাচ্ছারা নারায়ন থাকে, তারপর ছয় থেকে পনেরো তারা শিব হয়ে যায়, তখন তাণ্ডব করে।”
- প্রবল হাসি চেপে, “এটা আবার কোথা থেকে আমদানি করলি?”
- “হাওড়া থেকে। দাদু বলেছে, পনেরো বছরের পর চিত্রগুপ্ত খাতা খুলে পাপ পুণ্যের হিসেব টোকে। এখন তুমি যতই মায়ের লিপস্টিক নষ্ট কর আর দেওয়ালে ছবি আঁক, চিত্রগুপ্ত কিছুই লিখছে না।”
- “যেমন তুই, তেমনি দাদু। একে রামে রক্ষে নেই -”
- তুত্তুরী উবাচ ১৮ই এপ্রিল ২০১৬
- - হ্যালো বুকু, বাড়ি পৌঁছেচ?
- - বাড়ি না পৌছলে তোমার সাথে কথা বলতাম কি করে?
- - তাও বটে! তা আজ স্কুলে কি শিখলে?
- - আজ হাঁসজারু আর বকচ্ছপের বিয়ে হবার কথা ছিল, ওমা গিয়ে দেখি ঘোড়াহাতি আর টিয়াবুলবুলির বিয়ে হচ্ছে।
- - গল্প বটে কিছু বানাতে পারো তুমি। ঘোড়াহাতি আর টিয়াবুলবুলি আবার কোথায় পেলে? পড়াশোনা কি করলে?
- - মা তুমি আজ শাড়ি পরে গেছ তো?
- - এই গরমে শাড়ি?
- - তুমি এত শাড়ি পড়তে কেন অপছন্দ কর বলতো? জগৎজননীর মা তো শাড়িই পরে নাকি?
- - হু। সে সত্য যুগে পরতো।
- - জানো তো মা দুর্গা আমায় কাল কি বলেছে? বলেছে, আমি যেমন স্বর্গের দুর্গা, তুই তেমনি মর্তের দুর্গা। তোর মা যদি তোকে মারে, আমায় বলিস, আমি তোর মাকে অভিশাপ দিয়ে দেব।
- - হাঁ, মা দুর্গা আমায় ও বলেছে, ওটা একটা বাঁদর, ওকে মানুষ করতে হলে, হাত খুলে ঠ্যাঙাবি।
- - (চিন্তান্বিত হয়ে) মা দুর্গা আবার তোমায় কখন বলল? তুমি ভুল শুনেছ।
- - না। ঠিকি শুনলাম তো।
- - না। না। তুমি ভুলে গেছ। কালই বাবাকে বলছিলে না, আজকাল সব ভুলে যাও।
তুত্তুরী উবাচ ১৯ই এপ্রিল ২০১৬
- -মা, ছাগল কে কাজল পরাতে পারবে?
- - উফ ভগবান।
- -কোন ভগবানকে ডাকছ? আচ্ছা মা, অভিযোগ করাটাকে তো কমপ্লেন করা বলে, যেটা খায় সেটাকে কি বলে গো?
- - কমপ্লান!
- - কমপ্লান?
- - হুঁ।
- - খালি কমপ্লান করো।কমপ্লান করো। হরলিক্স করো হরলিক্স করো। মাঝে মাঝে বোর্ণভিটা ও তো করতে পারিস লক্ষ্মী। (গলা নামিয়ে) জানো তো মা লক্ষ্মীটার খালি নালিশ আর অভিযোগ, কান ঝালাপালা হয়ে গেল।
তুত্তুরী উবাচ ২২শে এপ্রিল ২০১৬
- - ওমা, দেখ দেখ কি সুন্দর পতাকা নিয়ে যাচ্ছে। চল না আমরাও ওদের সাথে হাটি।
- - ঐ রঙের পতাকাধারীদের সাথে হাঁটলে আর বাবার আমার চাকরী থাকবেনা বাবু।
- - কেন? আমিও ভোট দেব মা।
- - তোমাকে ভোট দিতে দেবে না।
- - কেন? আমি মা লক্ষ্মী চিহ্নে ছাপ দেব মা।
- - ঐ সব চিহ্ন হয় না বাবু। আর তোমার আঠারো বছর বয়স না হলে তোমায় ভোট দিতে দেবে না।
- - সেদিন যে বললে আঠারো বছর না হলে বিয়ে করতে দেয় না? ভোটও দিতে দেয় না?
- - না।
- - যাঃ। তুমি কিছু জান না, আমি ভোট দিতে গিয়েছিলাম তো দাদুর সাথে। দাদু শুধু একটা বোতাম টিপল। বোতাম টেপা আর কি শক্ত মা? আমিও পারব। জান তো ভোট দিলে নেলপালিশ পরতে দেয়! আগের বার হাওড়ায়, দাদুকে যখন পরাচ্ছিল, দাদু বলাতে লোকটা আমাকেও পরিয়েছিল।
- - বেশ।
- - আচ্ছা মা, বোতাম টেপার আওয়াজে কি বোঝা যাবে, যে আমি কোন চিহ্নটা টিপলাম?
তুত্তুরী উবাচ ২৪শে এপ্রিল ২০১৬
- মা, মা লক্ষ্মীর ছেলের নাম কি গো ?
- মা লক্ষ্মীর ছেলে-মেয়ে আছে কি না জানি না। নেই সম্ভবত। আমাদের বাড়ির
লক্ষ্মী পুজোয় লক্ষ্মী- নারায়নের সাথে কুবেরের মূর্তি গড়া হয় বটে, তবে কুবের
লক্ষ্মীর নিজের ছেলে নয়।
- সেকি? লক্ষ্মীর বিয়ে হয়েছে, অথচ--, ব্যাপারটা তো ভাল নয়?
- বিয়ে হলেই বাচ্ছা হতে হবে? তুই তো দাদুর পিসিমাদের মত কথা বলছিস!
- হ্যাঁ। যেমন আমি, তোমার বিয়ে হয়েছে, তারপর আমি হয়েছি।
- শোন বুকু, বিয়ে হলেও বাচ্ছা নাও হতে পারে, আবার বিয়ে না হলেও হতে পারে। এটা
বাবা এবং মায়ের ইচ্ছা। কর্ণের গল্প ভুলে গেলে?
- কর্ণ বলতে মনে পড়ল, মা, সূর্য
দেবের গোঁফ থাকে? না দাড়ি থাকে?
- জানি না। যত ফালতু প্রশ্ন। তবে গোঁফ দেখেছিলাম মনে হচ্ছে কোন একটা ছবিতে।
- গোঁফ দাড়ি তো কেবল রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর আর ব্রহ্মার ছিল বলো।
- আঃ। কিসের সাথে কি। সকাল থেকে খালি ঠাকুর আর দেবতা, পাগল করে দিল।
- আচ্ছা মা, কি করলে যেন, কালীঘাটের কুকুর হয় গো?
- এটাই শেষ প্রশ্ন তো?কাউকে কিছু দিয়ে ফেরত নিলে।
- কেন? কুকুর হব কেন? আমার কাউকে ভাল লাগল, ভালবেসে কিছু দিলাম, কাল রাগ হল,
ফেরৎ নিতেই পারি।
- (পাশ থেকে বাবা সহাস্যে) ঠিক বলেছিস। কাউকে কিছু দিস না।
- (বাবার দিকে ফিরে) বাবা আর কি করলে পুরির কুকুর হয়?
- (বাবা গম্ভীর স্বরে) রাতে না ঘুমোলে।
- আঃ। ঘুম পেলে তবে তো ঘুমোব। বলো না, কি করলে বৃন্দাবনের কুকুর হয়?
- রাতে না ঘুমোলে।
- আর কাশীর?
- রাতে না ঘুমোলে।
- ধুৎ। তুমি জান না, মাই ভালো।
তুত্তুরী উবাচ ২৯শে এপ্রিল ২০১৬
- - মা, মাসি একটা মন্ত্র শিখিয়েছে, শুনবে?
- - না! রাত বারোটায় আমি কোন মন্ত্রতন্ত্র শুনতে রাজি নই।
- -শোনই না।
- - মন্ত্র পড়লে কি হবে? বকবক বন্ধ হবে? ঘুম আসবে?
- - না। তবে সাধুবাবার স্বপ্ন দেখবে।
- - আমি কোন সাধুসন্তর স্বপ্ন দেখতে চাই না।
- - আঃ শোনোই না।
- - না বলে ছাড়বি না যখন অগত্যা -
- - সাধুবাবাজী দুটো মুরগী পুষেছি,
- মুরগী দুটোর নাম রেখেছি গরম পেঁয়াজী। হিঃ হিঃ হিঃ
- - মাগো। ঈশ্। ছিঃ। ওয়াক্।এটা কি? কি জঘন্য জিনিসপত্র শিখিস।
- তুত্তুরী উবাচ ৮ই মে২০১৬
- -(সাংঘাতিক গম্ভীর স্বরে)ভয়ানক রকমের দেব চমকে,
- ভয় পেয়ে তুই যাবি ব্যোমকে।
- -( বাবার তালে তাল মিলিয়ে, ততোধিক গম্ভীর স্বরে)হঠাৎ করে মুণ্ডুটা তোমার ঘচ্ করে ফেলব কেটে।
- - এসব কি হচ্ছে রে সাতসকালে?
- - উফ্ মা। একটু গান গাইতে ও দেয় না।
- - এটা গান!!! হে ভগবান্ । আজ যে ২৫শে বৈশাখ।