Saturday 16 January 2021

তুত্তুরী উবাচ, ২০২১


তুত্তুরী উবাচ ৩০শে এপ্রিল, ২০২১


(মাসির সাথে দাবাখেলা নিয়ে সক্কাল সক্কাল তুমুল বিবাদ, বেশ কিছুক্ষণ বাক্যালাপ বন্ধ এবং অবশেষে মায়ের পীড়নে ক্ষমা চেয়ে মিটমাট করার পর)  


👩🏻-দেখছ তো, ক্ষমা চাইলে আর শাস্তি পেতে হয় না। 

👧🏻-(হাসি চেপে) তাই বলে খুন করে ক্ষমা চাইলে কি আর মার্জনা করা হয়?

👩🏻-(জ্ঞান দেবার সুরে) নাঃ তা হ-য়-না। তবে ফাঁসিও হয় না। যাবজ্জীবন  কারাদণ্ড হয় হয়তো, অথবা সাত আট বছরের জেল।  

👧🏻-(খানিক চিন্তা করে) আচ্ছা মা কেউ যদি আমার ছুরির ওপর পেট নিয়ে আসে, তাহলেও কি আমার শাস্তি হবে?

👩🏻-(প্রবল হাসির দমকে, কাশতে কাশতে) এ আবার কেমন প্রশ্ন। কেউ খামোকা তোর ছুরির ওপর পেট নিয়ে আসতে যাবে কেন? 

👧🏻-(বোঝানোর ঢঙে) নাঃ ধর, আমি রাস্তা দিয়ে ছুরি নিয়ে যাচ্ছি, কেউ পেট নিয়ে আমার ছুরির ওপর পড়ল-

👩🏻- (হাসতে হাসতে) তুই খামোকা রাস্তা দিয়ে ছুরি নিয়ে যাবিই বা কেন? আর যদি যাস ও তাহলে এমন ভাবে মুড়ে নিয়ে যাবি,যাতে হোঃ হোঃ হোঃ কেউ তোর ছুরির ওপর পেট না নিয়ে আসতে পারে।  

👧🏻-(খানিক ভাবনা চিন্তা, খানিক পায়চারি যাকে ঠাম্মা বলে ‘হুমহাম’ করে পুনরায় রান্নাঘরের দরজায় আবির্ভূত  হয়ে) আচ্ছা মা, তুমি দৌড় বোম্বাই আম খেয়েছ?

👩🏻-(তাজ্জব হয়ে) অ্যাঁ? সে আবার কি? 

👧🏻-(বোঝানোর ঢঙে) হ্যাঁ গো মা। এক ধরণের আম আছে, যার নাম দৌড় বোম্বাই আম। মাম্মাম (দিদা)  মাঝেমাঝে কিনে আনত, অফিস ফেরত। দাদু বলেছে সেই আম এত টক যে বাঘের পিছনে দিলে বাঘ দৌড়ে পালাবে। 

👩🏻-(হাসতে হাসতে বিষম খেয়ে) কি শুরু করেছিস তোরা বলতো? খামোখা বাঘের পিছনে আম দিতে যাবি কেন?



 তুত্তুরী উবাচ, ৬ই এপ্রিল, ২০২১


👧🏻-(খেতে বসে উত্তেজিত হয়ে) মাসি তুমি আবার শুক্তোতে উচ্ছে দিয়েছ? 

👩🏽‍🍳-(তাজ্জব হয়ে) শুক্তো তো উচ্ছে করলা দিয়েই হয়। উচ্ছে না দিলে আবার শুক্তো হয় নাকি? 

👧🏻-(যুক্তি মেনে খানিক ভাত খেয়ে, পুলকিত স্বরে) মাসি জানো তো আমার মাথায় না সবসময় উল্টোপাল্টা চিন্তা ঘোরে। যেমন ধরো, রসগোল্লার শুক্তো আর উচ্ছের পায়েস রাঁধলে কেমন খেতে হবে? তুমি একদিন রাঁধবে?


(বিশেষ পাত্তা না খেয়ে খানিকবাদে দাদুকে ফোন করে) 


হ্যালো দাদু, জানো তো অামার মাথায় সবসময় নানা উদ্ভট চিন্তা আসে। আচ্ছা তুমি বলো তো, কলাগাছের চারা থেকেই তো কলা হয়, আবার সেই কলার বীজ থেকেই তো গাছ হয়, তাহলে প্রথম কলাগাছের চারাটা এসেছিল কোথা থেকে?


তুত্তুরী উবাচ ২রা এপ্রিল, ২০২১


👧🏻-(ঘুম চোখে, দুধের কাপে চুমুক দিয়ে) হ্যালো দাদু, একটা গল্প বলো না। 

👴🏻-  (প্রাতকালীন চিনি ছাড়া চায়ে চুমুক দিয়ে, ক্লান্ত সুরে) সকাল সকাল কি গল্প শোনাই বলো তো। বুড়ো হয়েছি, মাথা কি আর অত চলে। তুমিই বরং একটা গল্প শোনাও। 

👧🏻-(খুশি হয়ে,তরল গলায়) আচ্ছা দাদু, শ্রীকৃষ্ণের যে ১৬১০৮টা বউ ছিল তুমি জানতে?

👴🏻- বেশ।  শুনলাম। অত জন একসাথে থাকত?

👧🏻- আরে নাঃ। অষ্ট ভার্যার আটটা মহল ছিল-

👴🏻- অষ্ট ভার্যা?

👧🏻- হ্যাঁ, রুক্ষ্মিণী, জাম্ববতী, সত্যভামা, কালিন্দী,মিত্রাবিন্দা,নাগনাজীতি, ভদ্রা আর লক্ষ্মণা। 

👴🏻- (ক্লান্তি চেপে)অ। আর বাকি ১৬১০০?

👧🏻- তারা? তাদের গল্প আলাদা। তুমি শুনবে?

👴🏻-(আঁতকে উঠে) না। না। এতজনের কথা বলতে গিয়ে তোমার আমার চার-পাঁচদিন কেটে যাবে। 

👵🏼-(দিদা থুড়ি মামমাম পাশ থেকে মিনতির সুরে) সকাল থেকে কেন এসব কেষ্টবিষ্টু নিয়ে পড়েছ মা। একটু পড়তে বসো না মায়ের কাছে। 

👧🏻-(ঠক্ করে দুধের কাপ নামিয়ে ঝাঁঝালো সুরে) কারো ঠাকুমা-দিদিমা যে তাদের ঘুম থেকে উঠেই পড়তে বসতে বলে, এ আমি জীবনেও শুনিনি।  (অতঃপর কিঞ্চিৎ শান্ত হয়ে দাদুর উদ্দেশ্যে) শোননা, এক অসুর ছিল, তার নাম ছিল নকাসুর। 

👴🏻-( মধ্যস্থতার সুরে) নকাসুর! কি অদ্ভূত নাম। শুনে খুউব ভালো লাগল। 

👧🏻-(তুরীয় মেজাজে) নকাসুর ১৬১০০জন সুন্দরী মেয়েকে ধরে এনেছিল। সবাই অভিজাত বাড়ির মেয়ে। তাদের বাড়ির লোকেরা শ্রীকৃষ্ণের কাছে নালিশ করল, শুনে শ্রীকৃষ্ণ তো গেল ক্ষেপে,বলল, ‘এই নকা, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।’ তারপর যুদ্ধ হল আর শ্রীকৃষ্ণ নকাসুরকে বধ করল। তারপর হল কি, শ্রীকৃষ্ণ ঐ ১৬১০০জন কন্যাকে তাদের বাবামায়ের কাছে ফেরৎ দিতে গেল-‘একে কি আপনারা নেবেন? তারা বলল,‘ না নেবো না। ’

👴🏻- (দুঃখী স্বরে) কি অবিচার!

👧🏻- হ্যাঁ তো। তখন  শ্রীকৃষ্ণ কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে তাদের বিয়েই করে নিল। 

👴🏻-(হতভম্ব স্বরে) একসাথে?

👧🏻-(মাথা চুলকে) হ্যাঁ তাই বোধহয়। একটা একটা করে বিয়ে করতে তো পাঁচ ছয় বছর কেটে যেত- 

👴🏻-(দুষ্টুমির সুরে) তাহলে একটা কাপড়ে এতগুলো গাঁটছড়া বাঁধা হল কি করে? শ্রীকৃষ্ণ কি মালায় ঢেকে গিয়েছিল? একদিনে এতজনকে মালাই বা পরাল কি করে? 

👧🏻-(চিন্তিত সুরে) তা জানি না। (বিজ্ঞ ভাবে) কিন্তু বিয়ের পর শ্রীকৃষ্ণ কখনও তাদের সাথে থাকেনি। বা কথা বলেনি,বা সম্পর্কও রাখেনি। 

👴🏻-তারা কোথায় থাকত?

👧🏻- দ্বারকামহলেই হবে।

👴🏻-অ।  অষ্ট ভার্যা ছাড়া তাহলে আর কারো সাথেই সম্পর্ক রাখেনি শ্রীকৃষ্ণ?

👧🏻- নাঃ। (আহ্লাদী সুরে) তোমার কেমন লাগল গল্পটা দাদু। 

👴🏻-(ক্ষ্যামা চাওয়ার সুরে) খুউব ভালো লেগেছে। সকাল সকাল এত বিয়ের গল্প শুনে তো আমারই আর একটা বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।

তুত্তুরী উবাচ ১৯শে মার্চ, ২০২১


👧🏻-(সকাল সকাল দুধের কাপ হাতে গম্ভীর গলায়) হ্যালো, ইলেকশন কমিশন থেকে বলছি। সরমা চ্যাটার্জী বলছেন?

👴🏻-(হাসি চেপে)হ্যাঁ বলছি। 

👧🏻-(আরো গম্ভীর গলায়,ধমকের সুরে) না বলছেন না। তিনি তো মহিলা। 

👴🏻-(কৌতুকের সুরে) উনি আমার বউ। বেবিকটে শুয়ে শুয়ে এখন কাঁদছেন। 

👧🏻- (উত্তেজিত হয়ে) অ্যাঁ? ওণার এত বড় সাহস? উনি আবার জন্মেছেন? ওণার ভোটে নাম কেটে গেছে দ্বিতীয়বার জন্মানোর অপরাধে। (কিঞ্চিৎ ধাতস্থ হয়ে) আচ্ছা সরমা চ্যাটার্জিকে দিন। 

👵🏼-( স্নেহাদ্র কণ্ঠে) হ্যাঁ সন্তু বলো। (প্রসঙ্গতঃ তুত্তুরীকে তার দিদা আদর করে সন্তু বলেও ডাকেন। )

👧🏻-(পুনরায় ধমকে) কে সন্তু? আমি ইলেকশন কমিশন থেকে বলছি। ধ্যারঃ, আপনি দ্বিতীয়বার জন্মেছেন কোন সাহসে? এই অপরাধে ভোট থেকে আপনার নাম কেটে গেছে জানেন?

👵🏼-(আদর মাখা কণ্ঠে) ও আচ্ছা। এবার কি হবে?

👧🏻-(হাসি গোপন করে, উত্তেজক কণ্ঠে) কি আর হবে? আবার নাম তুলতে হবে। আপনি শীঘ্রই আপনার পাখি কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড বানিয়ে নিয়ে আসুন। 

👵🏼- ও আচ্ছা। তা পাখিটাকেও কি ভোট দিতে নিয়ে যাব?

👧🏻-হ্যাঁ। আপনার পাড়ার সব লোককে বলুন, তাদের পোষা পশুপাখি নিয়ে যেন ভোট দিতে আসে। আপনারা ভোট দেবেন আর আমরা ওদের গায়ে দাগ কেটে দেব। 

👵🏼-(ক্ষ্যামা দেওয়া সুরে) আ-চ-ছা। 

👧🏻-(মজার সুরে) তা আপনি তো একটা ছোট বাচ্ছা,বেবি কটে শুয়ে কাঁদছেন, আপনার দুধ টুধ কম পড়েনি তো? 

👵🏼-না না কিচ্ছু কম পড়েনি। তুমি বরং এবার আমার পাকা চুলো বুড়ো বরটার সাথে কথা বলো।  

👴🏻-(দাদুর গলা পেয়ে, পুনরায় ধমকে) এই যে, আপনার বউ দ্বিতীয়বার জন্মেছে, এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আপনাকে একখানা কুকুর পুষতে হবে। 

👴🏻-কেন? আমাকে কি এবার কুকুরটাকেও বিয়ে করতে হবে?

👧🏻-(হেসে কুটোপুটি হয়ে) উফঃ আমি আর পারছি না। ইলেকশন কমিশন সেজে নতুন ডায়লগ বানানো আর সম্ভব নয়। দাদু আমি আবার তোমার সোনার তুত্তুরী হয়ে গেছি। একটা গল্প বলো-

তুত্তুরী উবাচ, ১৫ই মার্চ ২০২১


👧🏻-আচ্ছা বাবা, ইনস্যাশিয়েবল সেক্সুয়াল অ্যাপেটাইট মানে কি? ( অফিস টাইমের ভাত খেতে বসেছে শৌভিক, পাশেই বসে ইংলিশ লিটারেচর পরীক্ষা দিচ্ছে তুত্তুরী। এক পলক আমার দিকে অসহায ভাবে তাকিয়ে পুনরায় ভাত খাওয়ায় মন দিল। অগত্যা-)

👩🏻- (ভালো মানুষের মত মুখ করে) পরীক্ষায় এসেছে? কোন চ্যাপ্টার থেকে বল তো?

👧🏻- (লেখা থামিয়ে, চোখ তুলে) নাঃ পরীক্ষায় আসেনি। একজনের সম্বন্ধে পড়লাম। তাই জানতে চাইছি- 

👩🏻-পড়লি? আচ্ছা কোথায় পড়লি? কনটেক্সটটা একটু  বল, তবে না মানে বলতে পারব- 

👧🏻- দ্রৌপদীর সম্বন্ধে পড়লাম। গুগল বলল। আগের জন্মে দ্রৌপদী একজন ঋষির বউ ছিল। গুগল বলছে ইনস্যাশিয়েবল সেক্সুয়াল অ্যাপেটাইটের জন্য তার বর তাকে অভিশাপ দিয়েছিল, পরের জন্মে তোমার একটা নয়, দুটো নয়, পাঁচ পাঁচটা বর হবে। সবটা বুঝতে পারলাম, শুধু ঐটুকু বুঝিনি। তাই বাবার কাছে জানতে চাইছি-

👩🏻-(বেচারী বাবার করুণ মুখ দেখে হাসি গোপন করে) তার মানে হল একটা বরে সে সন্তুষ্ট ছিল না। 

👧🏻-মানে? বরের ওপর অসন্তুষ্ট কেন ছিল?

👩🏻- তার আরও চাহিদা ছিল (বলেই প্রমাদ গুণলাম)

👧🏻- কিসের চাহিদা ছিল মা? আরোও গয়নার- 

👩🏻-(স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে) হ্যাঁ আরো ভালো ভালো শাড়ি,  আরোও গয়না, খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া এইসব আর কি।  

👧🏻-আচ্ছা। (তরল স্বরে) জান তো মা, দ্রৌপদীর ছেলেদের নামগুলো কি শক্ত, আমি তো উচ্চারণ করতেই পারলাম না। বেচারী দ্রৌপদী, দ্রৌপদী শুধু অর্জুনকেই ভালোবাসত। ( বিজ্ঞ স্বরে) অর্জুন কিন্তু দ্রৌপদীকে ভালোবাসত না। অর্জুন শুধু সুভদ্রা আর চিত্রাঙ্গদাকেই ভালোবাসত। 

👨🏻-(গম্ভীর মুখে)কথা হয়েছে? 

👧🏻-(থতমত খেয়ে) কার সাথে অর্জুনের সাথে? (হাসিতে ফেটে পড়ে) নাঃ অর্জুন পিসের সাথেও হয়নি। তবে গুগল কাকার সাথে হয়েছে।

তুত্তুরী উবাচ ১১ই মার্চ ২০২১

-আরেঃ।  কি করছিস? এই অন্ধকারে ছবি তুলছিস কেন? 

-(দৃঢ় স্বরে) আমি এই মশাটার ভিডিও তুলে ভাইরাল করে দেবো। তখন থেকে পোঁ পোঁ করে জ্বালাচ্ছে। মা

-(হাসি চেপে) মশার ভিডিও ভাইরাল করলে কি হবে?

-(দাঁতে দাঁত চেপে) তখন ওকে সবাই চিনে যাবে, আর পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেবে। 

-কাকে?

-(তিক্ত স্বরে) মশাটাকে। আবার কাকে? (অতঃপর তরল স্বরে) মা জানো তো মশাদের জেল কেমন হয়? আমাদের জেলের মত হয় না। তাতে ছোট ছোট ফুটো থাকে। যাতে মশারা না পালাতে পারে। (আচমকা তেড়ে ফুঁড়ে উঠে) এই মশা জেলে যাবি? 


তুত্তুরী উবাচ ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২১

👧🏻-(বাড়ি ঢোকার সাথে সাথে অত্যুৎসাহী হয়ে) মা, আমি আজ মিসকে বলেছি, বাবা তো ইলেকশন নিয়ে ভীষন ব্যস্ত, আর মায়েরও খুব চাপ। সকালে আমায় একটু খানি পড়িয়েই মা অফিস বেরিয়ে যায়-

👩🏻-(ক্লান্ত স্বরে) মোদ্দা কথাটা বল। 

👧🏻- তাই বললাম আর কি, যদি আমি আর আমার মাসি যাই প্রজেক্ট জমা করতে? মিস বলল সরি চাইল্ড। আই কান্ট অ্যালাও। প্লিজ টক টু ইয়োর পেরেন্টস্। 

👩🏻-ঠিকই তো বলেছে। তোকে এত কথা বলতে কে বলেছে? প্রজেক্টটা ডেকরেট করতে হবে কি না শুধু এইটুকু জানতে বলেছিলাম। 

👧🏻-হ্যাঁ করতে হবে তো। ম্যাম বললেন ইয়েস চাইল্ড। ডেকরেট ইট উইথ স্টোন স্টিকারস্। 

👩🏻-(ভ্যেংচি কেটে)ডেকরেট উইথ স্টোন স্টিকার্স! যেই বড়মামা কিনে দিল, অমনি মিস বলল, ঐটা দিয়েই ডেকরেট করতে হবে?

👧🏻-(নিষ্পাপ মুখে) তা আমি কি জানি? জানো তো মা, সেদিন বড়মামা আমাকে আর দাদাকে নিয়ে কদমতলা বাজার গেল না, ওই যে গো স্টোন স্টিকার কিনতে, ফেরার পথে একটা বাজারওলার কাছ থেকে কি যেন একটা কিনল। বেশী না পাঁচশ গ্রাম মাত্র। কেনার সময় বড় মামা আমায় প্রশ্ন করল, ‘এটা কি বলতো?’ আমি বললাম বরবটি। শুনে বড় মামার কি হাসি। বলল,‘তুই নাকি তোর বাবার সাথে রোজ বাজার যাস? এই তুই বাজার চিনিস?’ তারপর দাদাকে প্রশ্ন করল, ‘তুই বলতো দেখি?’ দাদা বলল, ‘ঢ্যাঁড়শ’। ওটা আসলে কি ছিল জানো? ডাঁটা। 

বড়মামা তাই হাসতে হাসতে  কি বলল জানো? বলল,‘এরা সব এক গোয়ালের গরু।  একটা বোকা গরু আর একটা চালাক গরু। ’ 

👩🏻- (হাসি চেপে) বোকা গরুটা কে? 

👧🏻-( দুষ্টু  দুষ্টু মুখে) দাদা।


তুত্তুরী উবাচ ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১


👧🏻-হ্যালো এষা পিসি! (আদুরে গলায়) কি করছ?

👩🏻‍🎓-এই তো সবে বাড়ি ঢুকলাম। তুই কি করছিস?

👧🏻- তেমন কিছু না। এবার মাছেদের খেতে দেবো। 

👩🏻‍🎓- হ্যাঁ আমিও দেবো।

👧🏻- তোমাদের অ্যাকোরিয়ামে কটা মাছ আছে?

👩🏻‍🎓- আপাততঃ একটা। বাকি গুলো মরে গেছে। 

👧🏻-এ বাবা। মাত্র একটা? আরোও কয়েকটা কেনো না শিগ্গির। 

👩🏻‍🎓-(নালিশের সুরে) তোর পিসেকে বল। যখনই বলি, একই কথা-‘ওটা আগে মরুক। তখন কিনব’। 

👧🏻-(হতভম্ব হয়ে) ওটা কি চাল নাকি, যে শেষ হলে তবে কিনে আনবে?

তুত্তুরী উবাচ ১৬ই জানুয়ারী, ২০২১


👧🏻-(দরজা খোলার সাথে সাথে) মা জানো আজ কত বড় বিপদ হচ্ছিল? আমি তো ঠাম্মা দাদুর কাছে যাচ্ছি, পথে বড় মাঠটার কাছে দেখি কয়েকটা তুলোর বলের মত কুকুর ছানা গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ ওদের খেলা দেখলাম। তারপর দেখি ওরা কোথায় যেন চলে গেল। আর ওদের মা’টা এতক্ষণ দূর থেকে আমায় দেখছিল, সে এসে আমায় শুঁকতে লাগল। তারপর আমার গায়ে দুধের গন্ধ পেয়ে সটান আমার বুকে পা তুলে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। 

👩🏻-সে কি রে বাবু। কি সর্বনাশ। তারপর?

👧🏻- তারপর আর কি? আমি তো প্রবল চিৎকার করতে লাগলাম, বাঁচান! বাঁচান! একটা লোক দৌড়ে এল, ‘কি হয়েছে?’ আমি বললাম, ‘এই যে কৌটোটা দেখছেন এতে গুড়ের পায়েস আছে। আমার মা দিয়েছে ঠাম্মা-দাদুর জন্য। এই পায়েসের লোভে কুতুয়াটা আমায় আক্রমণ করছে-। ঐ সামনেই তো দাদুর ফ্ল্যাট। আমাকে একটু ঐ বিল্ডিং অবধি এগিয়ে দিন না প্লিজ’। 

👩🏻-বাপরেঃ। তুই তো বীরাঙ্গনা রে। কি সুন্দর বিপদে থেকে নিজেকে উদ্ধার করেছিস। প্রাউড অব ইউ। 

👧🏻- হ্যাঁ জানো তো, দাদু বলল, ‘আমি তোমাকে আর একা ফিরতে দিচ্ছি না।’ শেষে কাকিমা সাইকেলে চাপিয়ে পৌঁছে দিল। 

👩🏻-বাঃ। খুব ভালো। 

👧🏻- জানো তো মা, লোকটা ঠাম্মা দাদুর বাড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে বলল,‘তুমি রোজ ফ্লাওয়ার শো দেখতে আসো না? ডালিয়ার কুঁড়িটা কি তুমি ছিঁড়েছ?’ আরেঃ আমি ছিঁড়ব কেন? তুই ব্যাটা অপদার্থ। অামাদের ডালিয়া গাছে কুঁড়ি এসে গেল আর তোদের এল না?  

👩🏻- আচ্ছা এবার থাম। আর বড়দের অপদার্থ বলতে নেই । বিশেষতঃ উপকারীকে তো নয়ই। 

👧🏻-বড়রা ছোটোদের বলতে পারে?

👩🏻-হ্যাঁ। 

👧🏻- আজব নিয়ম তো? (মা নিরুত্তর দেখে, ফাজিল সুরে) মা হাতিদের টুথপিক লাগে?

👩🏻-(বিরক্ত সুরে) আমি জানি না। যত উৎকট কথাবার্তা। 

👧🏻-(আরো খানিকবাদে,রহস্যের সুরে) মা বলোতো কোন ভারতীয় মহিলা প্রথম বিদেশে গিয়েছিলেন?

👩🏻-(চিন্তার সুরে) মাদাম কামা? না না দাঁড়া। সম্রাট অশোকের কন্যা সংঘমিত্রা। 

👧🏻-(ফাজিল সুরে) হল না। প্রথম বিদেশ যাওয়া ভারতীয় মহিলা  হলেন সীতা। শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিল না? অার তার পিছন পিছন গিয়েছিল রাম। 

👩🏻-(তিক্ত সুরে) কোথা থেকে শিখিস এই পচাপাতকো জোকস্? হানিবানি থেকে?

👧🏻-(বিজ্ঞের সুরে)না না। আমি ইয়ে মানে ভেবে ভেবে বার করেছি। (খানিকপরে, আহ্লাদী সুরে) কি করছ বাবা? এপিক জেনারেট করছ? দাও না আমিও একটু করি?

👨🏻-(বিরক্ত সুরে) আর বাজে বকিস না তো। তুই করলে আমার চাকরী থাকবে?

👧🏻-(অবাক সুরে) আরে? এপিক জেনারেট হলেই তো হলো নাকি? শৌভিক ভট্টাচার্য করল না পুরোযা ভট্টাচার্য তাতে ওদের কি? 

(কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক থেকে) আচ্ছা বাবা,কেউ যদি কানের ফুটোতে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে চালায়, তাহলে কি সে খুব জোর আওয়াজ শুনবে?

👨🏻-(কম্পুটার চালাতে চালাতে প্রায় বিষম খেয়ে) সে কোন অাওয়াজই আর শুনতে পাবে না।

তুত্তুরী উবাচ ২৮শে জানুয়ারী, ২০২১


👧🏻-হ্যালো মামমাম। (আদুরে সুরে) হ্যাঁ মামমাম, চটি পরেছি। হ্যাঁ মা'ই তো এনে দিয়েছে কালকে। চটিটায় না কালকে দেখছিলাম সুগন্ধী তেল মাখানো ছিল। পরলেই পা হড়কে যাচ্ছিল। আজ ঠিক হয়ে গেছে মামমাম। কি নরম চটিটা। তুমি সেদিন বলছিলে না, তোমার ঐ আকুপ্রেশারওয়ালা চটিটা পরলে পায়ে লাগে, মাকে বলব তোমায়ও একটা কিনে দিতে। এই চটিটা পরলে পায়ের সব ময়লা উঠে যায়- পাটা ঝকঝক করে।

👩🏻-( পাশ থেকে ভেংচি কেটে) হ্যাঁ। কারণ পায়ের সব কালিঝুলি গিয়ে চটিতে লাগে। একদিনেই চটিটার হাল করেছে দেখো। 

👧🏻-উফ্। বড় বিরক্ত করো মা তুমি।(পুনরায় আবদারের সুরে) তোমার মেয়ে বড্ড জ্বালাতন করে মামমাম। সারাদিন শুধু (ভেঙিয়ে) 'পড়-পড়' করে পিছনেই পড়ে থাকে।(মায়ের থেকে একটু সরে গিয়ে,অভিমানী সুরে) জানো তো মামমাম, বাবাও আজ আমায় বকেছে। 

👵🏽- বাবা তো বকে না মা। কেন বকেছে? 

👧🏻- কেন আবার? আমি আঙুল চাটছিলাম তাই। 

👵🏽- খামোকা আঙুল চাটছিলে কেন? 

👧🏻- আরেঃ আমি মাছের ঝোলের সাথে লেবু মেখে ভাত খেয়েছিলাম। তারপর দই দিয়ে ভাত খাবার আগে ভাবলাম, লেবুর রসে যদি দুধ কেটে যায়, তাহলে দইটাও তো কেটে যাবে। তাই ভালো করে হাত চাটছিলাম। বাবা ধমকে বলল, ‘দুধ কেটেই তো দই হয়। দই খামোকা কাটতে যাবে কেন?’

(প্রসঙ্গ বদলে) দাদু আবার কবে রেশন আনতে যাবে? আমিও যাব তাহলে-। সেদিন খুব মজা হয়েছিল। দাদু তো আমায় রিক্সায় বসিয়ে আর কুড়িটাকার নোটটা দিয়ে রেশন তুলতে গেছে, বলে গেছে ,‘তুমি রিক্সাটাকে ধরে রেখো তুত্তুরী। ’ আমি তো রিক্সাটাকে চেপে ধরে বসেই আছি, বসেই আছি। রিক্সাওয়ালাটা বলে কিনা, ‘ বাবু একবার নামো তো।’ আমি ভাবলাম,পিছনের কাপড়টা ঠিক করবে বুঝি। যেই নামলাম, ওমনি অন্য একটা বুড়োকে বসিয়ে পোঁপাঁ দৌড়। আমি বোকার মত খানিক দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর গুটি গুটি দাদুর কাছে গিয়ে হাজির হলাম। দাদু তো হতবাক। ‘তোকে রিক্সাটাকে ধরে রাখতে বললাম যে-।’ ভাগ্যিস টাকাটা দিয়ে দিইনি।  তারপর রেশন নিয়ে রাস্তায় এসে আবার অন্য একটা রিক্সা ধরলাম আমরা। রিক্সায় ওঠার সময় দাদু বলল ,‘তুত্তুরী তুমি ঐ দিকটায় বসো। আমি একদিকে বসব। এদিকে রোদ আসছে,।  আমি রোদ পোহাতে পোহাতে যাব। ’শুনে তো আমি হেসে বাঁচি না। দাদু কি কুমীর নাকি? যে রোদ পোহাবে? 

যাই বলো। খুব মজা হয়েছিল সেদিন। জানো তো মামমাম, রেশন দোকানে প্যাকেটের মাল পাওয়া যায় না। সব গোটা গোটা। সব বিনা পয়সায় পাওয়া যায় রেশনে। 

👴🏼-(দাদু পাশ থেকে গলা তুলে) বিনা পয়সায়? ওটা কি আমার শ্বশুরমশাইয়ের দোকান নাকি রে?

No comments:

Post a Comment