Wednesday 24 October 2018

পায়ের তলায় সর্ষে

আগরতলা থেকে উনকোটির দূরত্ব গুগল খুড়ো বলছে  ১৪৫কিলোমিটার।  আদতে আর একটু বেশী।গুগল নির্ধারিত সময়ের থেকেও আরো পৌনে এক ঘন্টা বেশী সময় লাগল যেতে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা। দেখে পরিতৃপ্ত হয়ে গাড়িতে উঠে, জলটল খেয়ে খেয়াল হল, ও হরি ফিরতেও তো ঘন্টা পাঁচেকের গপ্প। শৌভিক বলল,“আর কি লাঞ্চ করার দরকার আছে?” আমি আর দেবু সমস্বরে বললাম,“দরকার কি? খিদে তো তেমন পায়নি। ” সত্যি বলতে কি আসার সময় ঐ প্যাঁচালো রাস্তায় বার তিনেক বমি করে এমনিতেই পাকস্থলীর অবস্থা কেরোসিন।
ড্রাইভার এতক্ষণ এক মনে পান মশলা চিবুচ্ছিল,এবার আর থাকতে না পেরে বলল,“আমি কিন্তু ভাইত খামু।” বাঃ তাহলে আমরাও বরং খেয়ে নেব। তা খাবেন কোথায়?পথে তো কোন দোকান বাজার দেখতে পেলাম না। ড্রাইভার বলল,“আপনারা কি উখানে খাইতে পারবন?ট্রাইবাল হোটেল আইজ্ঞা। তেমুন কিছু না। ” হোক না। ক্ষতি কি?
গাড়ি থামিয়ে একলাফে ড্রাইভার দৌড়ল হাত ধুতে। বাবারে মারে করতে করতে আমরাও নামলাম। সাত আট ঘন্টা ঘন্টা গাড়িতে বসে থাকা,তারওপর ঘন্টা দেড়েক দৌড়োদৌড়ি। কোমর, পিঠ, পা বাবারে মারে করবে না?
হোটেল লাম্প্রাই। মাটির মেঝে। টালির চাল। কাঠের বেঞ্চ। বেঞ্চের ওপর স্টীলের চকচকে থালা আর গ্লাস উল্টে রাখা। দেবু,শৌভিক আর আমি একটা বেঞ্চে বসলাম। সব কিছুতে অসম্ভব পরিচ্ছন্নতার ছাপ। একজন আদিবাসী ছোকরা এগিয়ে এল, আমরা ঠিক করেছিলাম ডিম ভাত খাওয়াই ভাল। জিজ্ঞাসা করা হল, কি আছে? আধো আধো বাংলায় বলল,“শুয়োর,মোরগ আর মাছ আছে। ” মোরগ দিতে বলা হল। সর্বপ্রথমে থালায় পড়ল ভাত,কাগজী লেবুর টুকরো,এক টুকরো পেঁয়াজ আর একটা কুঁচি কাঁচা লঙ্কা। একনজরে দেখে মনে হবে,চিঁড়ে ভিজিয়ে নিকড়ে মণ্ড করে দিলে যেমন লাগে। তারপর যেটা এল দেখেই আমরা বললাম শুক্তো। জবাব পেলাম “কুটো কুটো।” পরে শুনলাম ঐটাকে ভুদকও বলে।  ছিঁটে ফোঁটা তেল দিয়ে রান্না করা। প্রচণ্ড ঝাল।মুখে দিতেই কি যেন একটা মুখে পড়ল। চিবিয়ে গিলতেই পারি না,ছিবড়েটা কেমন যেন মরা উচ্চিংড়ে টাইপ। তেমনি বিকট গন্ধ। পরে জানতে পেরেছিলাম ওগুলো আসলে শুঁটকি মাছ। পাশে শৌভিক আর দেবু দেখলাম গবগব  করে খাচ্ছে। বললাম আর কি আছে? সব্জি এল। পাতলা জলের মত সব্জি,তেল ছিটিয়ে, হাল্কা হলুদ, নুন আর গুচ্ছ গুচ্ছ ঝাল দিয়ে বানানো। তরকারীর সব্জির মধ্যে খোলা সমেত আলু আর স্কোয়াশ চিনতে পারলাম। আর একটা কি যেন ছিল ছিল। সাদা সাদা,গোল গোল,কচকচে খেতে। শৌভিক জিজ্ঞাসা করল ,“এটা কিসের তরকারী গো?” জবাব পেলাম “বাঁশ।” ব্যাম্বু  এর আগে খেয়েছিলাম বটে চাং ওয়া রেঁস্তোরায়।  বাঁশের সব্জি আরও একবার খেলাম দিন দুয়েক বাদে ছবি মুড়ায়। মন্দ না। তবে স্থানীয় খাবারে ঝাল বড় বেশী। আর তেল ততোধিক কম। শেষে এল মোরগের মাংস । চার টুকরো , শুকনো খটখটে। ঝোল নেই।আমাদের কসা চিকেনের মত নয়, একেবারেই খটখটে শুকনো। তবে এই দিনের তারকা ছিল কাঁচা লঙ্কা। বাপরে এই টুকু লঙ্কার কি ঝাল! এক কামড় দিতেই মনে হল রীতিমত কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। দেবু আবার সাইজ দেখে তাচ্ছিল্য করে গোটাটা এক কামড়ে মুখে পুরেছিল- খেয়ে হাত ধুয়ে গাড়ি যখন আগরতলার দিকে ল্যাজ তুলে দৌড়চ্ছে তখনও জিভ অসাড় হয়ে আছে ঝালে। ড্রাইভার হাসতে হাসতে বলল,“এমন লঙ্কা শুধু ট্রাইবালদের লগেই পাবেন। গরীব মানষের খাবার। ” আগরতলা থেকে যখন প্লেনে উঠছি, দেখলাম সিকিউরিটি ধরে ধরে ব্যাগ চেক করছে, লঙ্কা বা লঙ্কার আচার পেলেই কেড়ে নিচ্ছে।মাইরি বলছি,মা কালীর দিব্যি, একটা প্লেন হাইজ্যাক করার জন্য এক ডজন ত্রিপুরী কাঁচা মরিচই যথেষ্ট ।

No comments:

Post a Comment