“হ্যালো- ”
“হ্যালো ম্যাডাম, কি
করছ? নামবে
নাকি?আমি
হেড অফিসে
এসে ছিলাম
বেনিফিটের টাকার তত্ত্বতালাশে।”
“ নামতে পারি, একটি শর্তে, আজ আমি খাওয়াব। ”
“সে দেখা যাবে। জলদি নামো। তোমার বাস তো আবার ছটায়। ”
মিনিট দশেক পর, “বলুন কি খাবেন?আজ আমার পালা-”
“হুঁ। তা তোমার ডায়েটের আজ কি অবস্থা?”
“ডায়েট? নো ডায়েট আজ। ”
“ মানে আজকে ডায়েট করছ না?”
“কদিন ধরেই--”
“কেন? কেন?”
“ যা বাব্বা। আপনার হল কি? অন্যদিন তো ডায়েট করছি বললে কুমন্ত্রণা দেন। ‘পরের পয়সায় একদম খাদ্যকৃচ্ছতা করবে না। খাও খাও। আমি খাওয়াচ্ছি। একটা জিলিপি না দুটো খাও। দুটো কচুরি খেয়ে লজ্জিত কোর না,চারটে খাও, আরে হাফ প্লেট চাউমিন কেন? ফুল প্লেট নাও। ’আর আজ বলছেন--- ”
“ আহা চটছো কেন। ”
“কি খাবেন বলুন? মুসাম্বীর রস, পেয়ারা?”
“ফোৎ।“
“অ পছন্দ হল না। কচুরি, সিঙারা,লাড্ডু, তাহলে পরোটা আর আলুর দম? মশলা মুড়ি?মিষ্টি?”
“তুমি খাবে?”
“অ পছন্দ হল না। কচুরি, সিঙারা,লাড্ডু, তাহলে পরোটা আর আলুর দম? মশলা মুড়ি?মিষ্টি?”
“তুমি খাবে?”
“সময় নেই। আপনি খান প্লিজ। ”
“নারে বাপু। এই এবেলায় চা খাব খালি। ”
“চা? নিজে খাওয়ালে স্টার্টার,মেনকোর্স,ডেসার্ট। আর আমি খাওয়ালে চা? মহা বাজে লোক মশাই আপনি। ”
“বৃদ্ধ বড়দারা বাজেই হয়। চা’ই খাওয়াও না বাপু। ”
-ডালহৌসির ব্যস্ত ঘরমুখী সরু ফুটপাতে পেতে রাখা তেঠ্যাঙওলা নড়বড়ে বেঞ্চে বসে, মাটির ভাঁড়ে, ফোটানো, এলাচ দেওয়া চা আর কিটকিটে মিষ্টি স্লাইসড্ আটার কেক সহযোগে সুখ দুঃখের গল্প করছিলাম আমরা। গল্প এক শুধু চরিত্র ভিন্ন, “কি ঝগড়া করে!”
“সত্যি বাবা। একটা মিষ্টি কথাও বলে না। আগে ঝগড়া করতে জানতই না। এখন পাল্লা দিয়ে হুলো বেড়ালের মত ঝগড়া করে। ”
“তুমি থামো তো বাপু। শৌভিক খুব ভাল ছেলে। যেন কে ঝগড়া করে আমি বুঝি না। ”
“অ । শৌভিক খুব ভাল ছেলে? কেন আপনাকে সুন্দর বলেছিল তাই?”
“ হেঁ হেঁ। বলেছিল সম্ভ্রান্ত দেখতে। যাই হোক তেমনি আমার মেয়েটা। ”
“ “যা বলেছেন তেমনি আমার মেয়েটাও। কি রাগ-”
“ওর আবার রাগ কি? এ যুগের বাচ্ছারা কোন জিনিসের মূল্য বোঝে না। ”
“ ঠিক বলেছেন। আমারটাও বোঝে না। ”
“ আমারটাও না।আর আপনি বললে শুনবেও না। ” চমকে উঠে দেখি আমাদের বেঞ্চের পাশে একটি ততোধিক নড়বড়ে টুলে বসে এক সৌম্য দর্শন প্রৌঢ় চা খাচ্ছেন আর গভীর সহমর্মিতার সঙ্গে আমাদের বাক্যালাপ শুনছেন। আর থাকতে না পেরে তিনিও অংশগ্রহণ করেছেন। আমি মৃদু হেসে সামান্য ঘুরে বসলাম অঞ্জনদার দিকে, শারিরীক বিভঙ্গে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, নিজের চরকায় তেল দিন না বাপু। প্রৌঢ় আদৌ দমলেন না, উল্টে ঝুঁকে বসলেন, যাতে অঞ্জনদার মুখ দেখা যায়।
চা খাওয়া শেষ, আমরা উঠে পড়েছি, ভদ্রলোক হঠাৎ ডেকে বললেন, “এই যে স্যার। মানে দাদা কিছু মনে করবেন না, আপনি কি ভাবে সমস্যার সমাধান করলেন? ”
অঞ্জনদা হেসে বললেন, “কি আর করব? বোঝাবার চেষ্টা করব, তবে ওর মতামতকেও তো গুরুত্ব দিতে হবে। ”
ভদ্রলোক বিষন্ন ভাবে বললেন,“ জানেন আমার বাড়িতেও এই অশান্তি । গিন্নী আর মেয়ের মাঝে ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলে আছি মশাই । ”
কথা বলতে বলতে এতক্ষণে উনি আমায় লক্ষ্য করলেন,কিঞ্চিৎ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, “ আপনার মেয়ের বয়স কত?”
ঢোঁক গিলে বললাম, “এই পাঁচ, সাড়ে পাঁচ আরকি। ”
“তাকে নিয়ে আপনার সমস্যা? ধ্যাৎ । ”
অঞ্জনদা দুঃখী দুঃখী হেসে বললেন,“ ব্যাজস্তুতি মশাই। ব্যাজস্তুতি। মেয়েরা যা ভাবে, ঠিক তার উল্টো বলে। সেই যে ঈশ্বরী পাটনী - সেই কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন। ”
No comments:
Post a Comment