আমার এক সহযাত্রী আছেন, সান্যাল বাবু,উনি হলোকাস্টের ওপর একটি উপন্যাস রচনা করছেন। একজন ভেতো বঙ্গসন্তানের পক্ষে হলোকাস্ট নিয়ে এক কলম লেখাও সহজ নয়। শুধুমাত্র কনশেনট্রেশন ক্যাম্প, নির্বিচারে ইহুদী হত্যা আর অ্যান ফ্রাঙ্কের ডাইরি এর বেশি হলোকাস্টের সঙ্গে আমাদের পরিচিতি কই? কিন্তু সান্যাল বাবু তাঁর রচনা নিয়ে অত্যন্ত প্যাসনেট। উনি দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যেও এই নিয়ে প্রভূত পড়াশোনা করেন। জার্মান,পোলিশ না না ভাষার সিনেমা দেখেন, ঐ সময়কালকে অনুভব করার জন্য।
উনি হলোকাস্ট নিয়ে তথা ওণার সদ্যলব্ধ জ্ঞান নিয়ে সদাই জনচর্চা করেন। সাম্প্রতিক উনি একটি গুণমুগ্ধ শ্রোতা পেয়েছেন। ইতিহাসের সঙ্গে আমার আশৈশব প্রেম। যদিও আমি ইতিহাসের ছাত্রী নই। ওণার মুখে সে যুগের গল্প আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি। বাড়ি ফিরে শৌভিক এবং তুত্তুরিকে শোনাই। শৌভিক বাধ্য শ্রোতা বটে তবে তুত্তুরি বড়ই অসহিষ্ণু । হিটলারের নামে কোন অকথা কুকথা শুনতে রাজি নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমার বাবার ডাকনাম হিটলার। শুধু সেই বাচ্চা মেয়েটির প্রতি ওর বড় টান। প্রায় বলে ওকে কেন মেরে ফেলল? অ্যান ফ্রাঙ্কের এমনই যাদু।
উনি হলোকাস্ট নিয়ে তথা ওণার সদ্যলব্ধ জ্ঞান নিয়ে সদাই জনচর্চা করেন। সাম্প্রতিক উনি একটি গুণমুগ্ধ শ্রোতা পেয়েছেন। ইতিহাসের সঙ্গে আমার আশৈশব প্রেম। যদিও আমি ইতিহাসের ছাত্রী নই। ওণার মুখে সে যুগের গল্প আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি। বাড়ি ফিরে শৌভিক এবং তুত্তুরিকে শোনাই। শৌভিক বাধ্য শ্রোতা বটে তবে তুত্তুরি বড়ই অসহিষ্ণু । হিটলারের নামে কোন অকথা কুকথা শুনতে রাজি নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমার বাবার ডাকনাম হিটলার। শুধু সেই বাচ্চা মেয়েটির প্রতি ওর বড় টান। প্রায় বলে ওকে কেন মেরে ফেলল? অ্যান ফ্রাঙ্কের এমনই যাদু।
যাই হোক সাম্প্রতিক সান্যাল বাবু ওণার বিপুল সংগ্রহ থেকে কিছু সিনেমা ধার দিয়েছেন। অবশ্য শর্ত এই যে সিনেমা গুলি দেখতে হবে এবং ঐ সম্পর্কিত ওনার প্রশ্নাবলীর সম্মুখীন হতে হবে। দোনামোনা করে বললাম, এক নাগাড়ে অনেকগুলি সিনেমা দেখার ধৈর্য্য আমার নাই। তাছাড়া তুত্তুরি সে অনুমতি দেবে না। দ্বিতীয়ত ভায়োলেন্স আমার সয় না। শ্লিন্ডডার্স লিস্ট আমি শেষ করতে পারিনি। যেটুকু দেখেছিলাম,সেটাও দীর্ঘদিন আমায় তাড়িত করেছিল।
ওনার নির্দেশ মোতাবেক প্রথম সিনেমা দেখলাম, “ডাউনফল” । হিটলারের জীবনের অন্তিম কয়েকদিনের গল্প। ২৪শে এপ্রিল ১৯৪৫ থেকে গল্পের শুরু। লাল ফৌজ বার্লিন থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে আছে। রাশিয়ান আর্টিলারির গোলায় বার্লিন প্রায় ধ্বংসস্তূপ । জার্মান বাহিনী পর্যুদস্ত অথচ পিছু হটার অনুমতি নেই। মহান ফুয়েরার নখদন্তহীন সিংহ, তবু তেজ একটুও কমেনি। এখানে হিটলারের অসহায় মানবিক রূপ অধিক দৃশ্যমান । একদিকে জেদী একনায়ক, সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের কথা কানেই তুলছেন না, ওপরদিকে নিজের তরুণী সেক্রেটারির সঙ্গে স্নেহশীল পিতার মত আচরণ করছেন। পরাজয় আসন্ন বুঝে ওণার বিশ্বস্ত সেনানায়করা ওণাকে বারংবার অনুরোধ করে বার্লিন ত্যাগ করার জন্য। উনি রাজী হননি। সেনাপতি মঙ্কে ওণাকে আশ্বস্ত করে যে শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও বার্লিনকে রক্ষা করা হবে, শুধু মহিলা, শিশু,বৃদ্ধ এবং আহতদের বার্লিন ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হোক। উনি তাতে রাজি হননি। হিটলারের মতে যুদ্ধে কোন সিভিলিয়ান থাকে না। জার্মান জাতি তাদের এই পরিণতি নিজেরা ডেকে এনেছে। যুদ্ধে আহত জার্মান সৈন্যদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১২-১৪বছরের বালক বালিকাদের হাতে বাজুকা কামান তুলে দেওয়া হয়, রাশিয়ান সৈন্যদের মোকাবিলা করার জন্য।
পরাজয় সমীপে বুঝে ফুয়েরার সিদ্ধান্ত নেন উনি আত্মহত্যা করবেন। সঙ্গী চিরসাথী ইভা ব্রাউন। মৃত্যুর পূর্বে মিনিস্টার ডেকে বিবাহজালে আবদ্ধ হলেন দোহে। আগে হিটলারের প্রিয় কুকুর ব্লন্ডিকে সাইনাইড ক্যাপসুল খাওয়ানো হল এবার হিটলার আর ইভার পালা। ফুয়েরারে পছন্দ গলায় পিস্তলের নল ঢুকিয়ে আলতো করে ট্রিগার দাবানো, ইভার তাতে ভয়ানক আপত্তি। মৃত্যুর পর ও সুন্দরি থাকতে চান। তাই পটাসিয়াম সায়নাইড। বিশ্বাসী বডিগার্ডকে হিটলার নির্দেশ দিলেন মৃত্যুর পরও ওণার দেহ যেন রাশিয়ানরা স্পর্শ করতে না পারে, দাহ করা হয় যেন ওণাদের নশ্বর শরীর। ইতিমধ্যে অস্ত্রের ভাঁড়ার খালি। একে একে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন ওণার প্রিয়পাত্রেরা। হিমলার আত্মসমর্পণ করেছে মিত্রপক্ষের কাছে। এমনকি হিটলারের বাঁ হাত গোয়েরিং অবধি এই সুযোগে ক্ষমতাদখল করতে উদ্যোগী হয়েছে। ক্ষুব্ধ আহত হিটলার নির্দেশ দিলেন গোয়েবল্সকেও সপরিবারে বার্লিন ত্যাগ করতে। কাঁদতে কাঁদতে গোয়েবলস্ জানালেন ফুয়েরারের সব নির্দেশ তিনি আঁখি বন্ধ করে শুনেছেন, কিন্তু এই দুর্দিনে তিনি তাঁর ফুয়েরারকে পরিত্যাগ করতে নাচার। গোয়েবলসের স্ত্রী মাগদা নিজ হাতে তার ছয় শিশু সন্তানকে বিষপান করালেন। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ হিটলার আর ইভা সকলকে বিদায় জানিয়ে বাঙ্কারে ঢুকলেন। ছবি এর পরও কিছুটা এগোয় বার্লিনের সম্পূর্ণ পতনের সাথে ছবি শেষ হয়।
নেশাগ্রস্তের মত আড়াই ঘন্টা হাঁ করে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বহুদিন বাদে এত ভাল সিনেমা দেখলাম। যে জার্মান অভিনেতা হিটলারের চরিত্রচিত্রণ করেছেন তাকে শত কুর্ণিশ। ভাললাগার রেশটা রয়েই গেছে।
No comments:
Post a Comment