Monday 11 July 2016

অনির ডাইরি ৮ই জুলাই, ২০১৬


[৭ই জুলাই এর পর থেকে]
রুখতেচলতে আমাদের টয় ট্রেন এসে দাঁড়াল, এক টানেলের মুখে। এক দিকে বিশাল খাদ, অপরদিকে খাড়া পাহাড় আর জঙ্গল। খাদের ওপারে দূরে নয়নাভিরাম মেঘ মাখা মেট্টুপাল্লাম শহর তখনও বোধহয় ঘুম থেকে জাগেনি। যাত্রীরা যে যার ক্যামেরা বার করে খচাখচ ছবি তুলতে লাগলেন। দেবুর গিন্নী অন্বেষা আর কন্যা পুটপুট বাদে আমরা সকলেই নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। ইঞ্জিন গরম হয়ে গিয়েছিল, তাই জল দিয়ে তাকে ঠাণ্ডা করে আবার ট্রেন ছাড়ল। এদিকে ঘড়ির কাঁটা সাড়ে নটা ছুঁইছুঁই করছে, সেই কোন সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ শিঙারা আর কফি খেয়েছিলাম, খিদের চোটে নাড়ি ভুঁড়ি হজম হয়ে যাবার উপক্রম। ব্যাগে রাখা কেক বিস্কুট দেবু বার করতেই দিল না, বরং ওর ব্যাগ থেকে বার করল মালদার প্রজাপতি বিস্কুট। সে যে কি অসাধারণ খেতে তা ভাষায় অপ্রকাশ্য। আদতে স্থানীয় বেকারি বিস্কুট, আগে হাওড়াতেও পাওয়া যেত, প্রজাপতির মত দেখতে, একটু পোড়া পোড়া, ওপরে চিনি ছড়ানো। গোটা দুই বিস্কুট আর জল খেলেই পেট ভরে যায়।
প্রজাপতি বিস্কুট দিয়ে প্রাতঃরাশ সবে শেষ হয়েছে, এমন সময়, বেলা আন্দাজ দশটা নাগাদ ট্রেন এসে থামল একটা অনামি ছোট্ট ষ্টেশনে। ছোট্ট হলে কি হবে তবে তকতক করছে, এবং একটি পরিষ্কার শৌচালয় পর্যন্ত আছে। কেউ আদৌ এই ষ্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠে বা নামে বলে মনে হয় না, কারণ জায়গাটি সম্পূর্ণ পাণ্ডববিবর্জিত। ষ্টেশনের দুএকটি কর্মচারী ভিন্ন কেবল একটি স্থানীয় লোক এক ঝুড়ি আম নিয়ে বসে আছে। দেবু দেখেই চিনেছে, “ কাঁচামিঠে আম রে! খাবি না?” খাব না আবার? দেবু দৌড়ল আম কিনতে, দেবুর গিন্নী অন্বেষা, আর কন্যা পুটপুট আর আমাদের তুত্তুরি ট্রেনেই বসে রইল, আমি আর শৌভিক নামলাম আস-পাশটা ঘুরে দেখতে। কোন প্লাটফর্ম নেই, লাফ দিয়ে মাটিতে নামলাম। একটু দুরেই একটা অগভীর খাদ, খাদের মধ্যে দিয়ে ঝমঝমিয়ে বয়ে যাচ্ছে একটা পাহাড়ি ঝর্না। খাদের ওপর কোন মান্ধাতার আমলে পাতা মোটা মোটা কাঠের পাটাতনের ওপর দিয়ে চলে গেছে সরু রেললাইন। চারদিকে ঘন জঙ্গল, কেবল ঝর্নার ধারে ঢালু পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে চাষ করা হয়েছে। কি চাষ করেছে বুঝলাম না, হয়তো চা অথবা কফি। পরে জেনেছিলাম গুলো নাকি গাজরের ক্ষেত। ক্ষেতের উত্তর- পূর্ব কোণে একটা বিশাল লম্বা ঘন সবুজ গাছ আর সেই গাছের নীচে একটা কাঠের বাড়ি, ঠিক যেন পটে আঁকা ছবি। কে থাকে বাড়িতে কে জানে?
আবার ট্রেন ছাড়ল, পরবর্তী স্টেশন কুন্নুর। কুন্নুর বেশ বড় ষ্টেশন। কুন্নুরে কয়লার ইঞ্জিন পালটে ডিজেল ইঞ্জিন লাগানো হয়। আপ এবং ডাউন দুটি টয় ট্রেনের মোলাকাত হয় কুন্নুরে। পরে জানা গিয়েছিল, যারা গাড়িতে মেট্টুপাল্লাম থেকে উটি যায়, তারা টয় ট্রেনের মজা নেবার জন্য একটা ছোট্ট সফর করে, উটি থেকে কুন্নুর পর্যন্ত। উটির প্রতিটি হোটেলের ট্রাভেল ডেস্ক থেকেই আপনাকে ট্যুরটা করতে বলবে, ওটা উটির স্থানীয় সাইট সিয়িং এর মধ্যেই পরে। কুন্নুরে পৌঁছে ডাউনের যাত্রীরা আবার আপের ট্রেনে উঠে পরে। কি ভাগ্যি কেউ আমাদের কামরায় হামলা করতে আসেনি। নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ বেলা বারোটা নাগাদ আমাদের ট্রেনটা উটি পৌছাল। ততক্ষণে বেশ ঝমঝমিয়ে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, সাথে সাথে কনকনে হাওয়া। বাচ্ছা গুলো কে আপাদমস্তক গরম জামায় মুড়ে আমিও আচ্ছা করে চাদর জড়ালাম। উটি ষ্টেশনটা সম্পর্কে বলার মত কোন বিশেষত্ব নেই, যদিও এটাও নাকি সাহেব দের হাতে বানানো।
আমি আর অন্বেষা মালপত্র আর মেয়েদের নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। শৌভিক আর দেবু গেল গাড়ি খুঁজতে। আমাদের হোটেলের নাম ফার্ন হিল স্টার্লিং রিসর্ট। স্টেশন থেকে তো বটেই এমনকি উটি শহর থেকেই বেশ দূরে। একটা অটো পাওয়া গেল, লটবহর নিয়ে তাতেই সওয়ার হলাম আমরা। বৃষ্টি আবার শুরু হওয়াতে, অটোটি প্লাস্টিকের পর্দা দ্বারা আবৃত। তারই ফাঁক দিয়ে যতটা দেখতে পেলাম বেশ ভাল লাগল শহরটাকে। ছিমছাম পরিষ্কার সাজানো- গোছান শহর। দেবু শুধু একবার ঘাড় ফিরিয়ে বলল, “ভাব, আমরা ফার্ন হিল স্টার্লিং রিসর্টে যাচ্ছি, অটো করে-ওঁদের সিকিউরিটি গুলো চমকে যাবে মাইরি।শৌভিক পিছন থেকে বলল, “সেটাই তোদ্যাটস্ দা স্পিরিট।যদিও ফার্ন হিলে পোঁছে বোঝা গেল, যে আমাদের মত বহু অথিতিই এখানে অটো করে আসে, সিকিওরিটি যথাবিহিত খাতির করেই অটোটাকে রাস্তা দেখিয়ে দিল।
ফার্ন হিলে পৌঁছে চোখ ধাধিয়ে গেল, একটা একক টিলার (পাহাড় বলাই সঙ্গত) ওপর অবস্থিত, ঝকঝকে শ্বেত অট্টালিকা। চতুর্দিক রামধনু রঙের ফুলগাছ আর ক্যাকটাস দিয়ে সাজানো। আমি ফুল বড় ভালবাসি, কিন্তু ফুলের নামের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। বিশ্বাস করুন, পদ্ম, গোলাপ, গাঁদা জবার মত হাতে গোনা কয়েকটা ফুল বাদে বাকিদের নামই জানি না। দূর থেকে এক গোছা হলুদ ফুল দেখে বলেই ফেললাম, “ গুলো ঠিক কুমড়ো ফুলের মত দেখতে, দেখলেই বড়া খেতে ইচ্ছে করে।দেবু পাশ থেকে সবজান্তার মত বলল, “ গুলো গ্ল্যাডিওলা।আমি কিছু বলার আগেই অন্বেষা ঝাঁজিয়ে উঠল, “দেবু কিচ্ছু চেনে না। গুলো লিলি। হলুদ লিলি। আর লাল রঙের ফুল গুলো হল স্যাল্ভিয়া, কমলা রঙের বড় বড় ফুল গুলো ক্যানা।কত যে ফুল চিনলাম এক দিনে, স্যাল্ভিয়া, ক্যানা ছাড়াও হলুদ লিলি, সাদা লিলি, গেজেনিয়া আরও কত কি। সবথেকে চিত্রাকর্ষক ছিল এক ধরণের ছোট ছোট ঘাস ফুলের মত ফুল, যাদের রঙ কোথাও পার্পল, কোথাও বা ধপধপে সাদা যাদের নাম আমার দিদিমণি জানতেন না। আর ছিল প্রচুর গাঁদা আর গোলাপের মত দেখতে ক্যাকটাস। সব মিলিয়ে বাইরে থেকে হোটেল কম, পুষ্প উদ্যান বেশি মনে হচ্ছিল।

[চলবে

Thursday 7 July 2016

অনির ডাইরি ৭ই জুলাই, ২০১৬


[৬ই জুলাই এর পর থেকে]
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভূয়সী প্রশংসা শুনেছিলাম বহুজনের মুখে, এ ট্রেন নাকি কখনও বিলম্বে পৌছায় না। নিজের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই চেন্নাই সেন্ট্রালে পৌঁছে দিল করমণ্ডল। আমাদের মস্তকে বজ্রাঘাত, পরবর্তী ট্রেন নীলগিরি এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা রাত সোয়া নটায়। এতক্ষণ আমরা করব কি? চেন্নাই পৌঁছে কি করা যায়, এই নিয়ে অবশ্য জল্পনাকল্পনা সেদিন সকাল থেকেই চলছিল। একবার ভাবা হল, যে কোন হোটেলে একটা ঘর নিয়ে আপাত সন্ধ্যা যাপন করা হবে, পরে ঠিক হল, একটা গাড়ি ভাড়া করে মেরিনা বিচটা ঘুরে আসা যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হল না। বাতানুকূল প্রিপেড ওয়েটিং রুমেই আমরা কাটিয়ে দিলাম সন্ধ্যাটা। ঝকঝকে ওয়েটিং রুম, মুহূর্তে মুহূর্তে সাফাই কর্মীরা সাফ করে দিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি শৌচাগারও তকতক করছে। মহিলা শৌচাগারের সামনে একটা লম্বা খোলা বারন্দা, সেখান থেকে এক নজরে অনেকটা শহর দেখা যায়। আপাত দৃষ্টিতে বেশ গোছান শহর, বাস-অটো এবং তাদের আরোহীগণ সকলেই বেশ নিয়মানুবর্তীই মনে হল। কোন ভাবেই অফিস টাইমের কলকাতার সাথে এই শহরকে মেলাতে পারলাম না। আমার মুগ্ধতা দেখে দেবু পত্নী অন্বেষা বলেই ফেলল, “ দক্ষিণ ভারত খুব পরিষ্কার অনিন্দিতা দি। উত্তর ভারতের সাথে একে মেলাতে চেষ্টা কর না।”
দক্ষিণ ভারতের আর একটা বড় সমস্যা হল ওঁদের খাদ্যাভ্যাস। যা শুনেছি ঐ টক ইডলি-ধোসা-ভন্ডা খেয়েই কি কাটাতে হবে আগামী কয়েক দিন। সেদিন রাতে অবশ্য আমরা বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। চেন্নাই স্টেশনের বিরিয়ানি রীতিমত দেবভোগ্য বস্তু। তবে আদতেই কলকাতার বিরিয়ানির মত নয়। আর পরিমাণেও একটু কম। ওঁরা দেখলাম বিরিয়ানির সাথে রায়তা, স্যালাড এর সাথে সাথে কৌটো করে একটা গ্রেভি দেয়। ভেবেছিলাম রায়তা হয়তো মাত্রাতিরিক্ত টক হবে, আশ্চর্য হলাম, বেশ মিষ্টি মিষ্টি খেতে। যদিও সেরাতে কেউই গ্রেভিটা চেখে দেখার সাহস দেখায়নি।
পরদিন ভোর বেলায় নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগেই নীলগিরি এক্সপ্রেস আমাদের পৌঁছে দিল মেটুপাল্লাম স্টেশনে। ছটা বাজব বাজব করছে, তখনও সূর্য ওঠেনি, মেঘলা প্রভাতের ঘোলাটে আলোয় মনটা ভরে গেল। আগের দিন রাতেই বোধহয় বৃষ্টি হয়েছে, ভেজা ভেজা স্টেশন, সদ্যস্নাত ঘন সবুজ গাছপালায় ঘেরা, দূরে নীলগিরি পাহাড়ের অবয়ব ক্রমেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। মেট্টুপাল্লাম থেকে টয় ট্রেনে যেতে হয় উটি। দূরত্ব মাত্রই ৪৬ কিলমিটার। গাড়িতে যেতে লাগে দুঘণ্টা। আর টয় ট্রেনে প্রায় সোয়া পাঁচ ঘণ্টা। ১৯০৮ সালে ব্রিটিশরা বানিয়েছিল এই লাইন। তারপর থেকে এর যথাবিহিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়নি। এমনকি স্টেশনগুলিও সেই ঔপনিবেশিক জমানার ঐতিহ্যবাহী। ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে। নীলগিরি পাহাড়কে বেষ্টন করে, অজস্র ছোট বড় টানেলের মধ্যে দিয়ে কু-ঝিকঝিক করতে করতে গজেন্দ্রগমনে চলে এই রেলগাড়ি। সবথেকে মজার ব্যাপার হল, এই গাড়ির ইঞ্জিন এর সামনে থাকে না। পিছন থেকে ঠেলে নিয়ে যায়, একদিকে ঘনজঙ্গল, ওপর দিকে খাদের মধ্যে দিয়ে। কপাল ভাল থাকলে পথে বেশ কিছু জীবজন্তুরও দেখা মিলতে পারে। আর একটা মজার ব্যাপার আছে, আরোহীদের সামান্য অনুরোধেই দাঁড়িয়ে যায় এই ট্রেন। আপনি নেমে নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহণ করে, প্রাণ খুলে ছবি তুলে যতক্ষণ না আবার সওয়ার হচ্ছেন, দাঁড়িয়েই থাকে এই খেলনা রেলগাড়ি। আজ্ঞে হ্যাঁ, প্রতিটি আরোহী যতক্ষণ না ট্রেনে উঠছেন এক পাও নড়ে না এই গাড়ি। যাত্রীদের সেলফি তোলার আদিখ্যেতা দেখে শুধু মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে হুইসিল বাজায়। কুন্নুর পর্যন্ত কয়লার ইঞ্জিন, কুন্নুর থেকে উটি ডিজেল ইঞ্জিন টানে। এই ট্রেনে গার্ড সাহেবের কোন খাস কামরা নেই, ট্রেনের একদম অগ্রে আছে কেবল একটি বারন্দা, প্রায়শই সেখানে আরোহী বিশেষত আরোহিণীরা উঠে সেলফি তোলেন, এবং গার্ড সাহেব বিনা বাক্যব্যয়ে নেমে দাঁড়ান।
আমাদের মত যারা কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেনে গেছেন, তারা এই দুই টয় ট্রেনের মধ্যে কোন মিল পাবেন না। সিমলার টয় ট্রেন অনেক বেশি রাজকীয়। হয়তো সিমলা উপনিবেশিক ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল বলেই, ওখানে প্রথম শ্রেণীতে চা এবং প্রাতরাশ তথা রাতের ট্রেনে নৈশাহার সরবরাহের অত্যন্ত সুব্যবস্থা থাকে। সিট গুলিও রিক্লাইনিং কৌচ, অর্থাৎ আপনি আরাম করে বসতে পারবেন। কিন্তু এখানে শক্ত সোফার মত লম্বা লম্বা সিট, প্রতিটিতে সিট নাম্বার ফেলা আছে। প্রতিটি সোফায় চার (নাকি পাঁচ?) জন করে বসার কথা। কামরায় উঠেই মন খারাপ হয়ে গেল, আমাদের অংশে মুখোমুখি আট (নাকি দশ?) জনের বসার কথা। এত গাদাগাদি করে বসা যায়? তারওপর এত ভোরে উঠলাম, সকাল সাত টায় ছাড়ার কথা, এরা কি কিছুই খেতে দেবে না? লক্ষণ সুবিধের লাগল না, সবাই দেখলাম স্টেশন থেকে ইডলি-ভণ্ডা কিনেই খাচ্ছে, শেষে দেবু আর শৌভিক গিয়ে রেল ক্যান্টিন থেকে শিঙারা আর কফি নিয়ে এল। আজব দেখতে শিঙারা গুলো, অনেকটা তেকোনা প্যাটিসের মত চ্যাপ্টা, আমাদের শিঙাড়ার প্রায় দুগুণ, কিন্তু ভিতরে আলু পেলাম না, কেবল পেঁয়াজ ভাজা ভর্তি। মনে হচ্ছিল পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে কড়কড়ে করে ভাজা পরোটা খাচ্ছি। শত অনুরোধেও অন্বেষা ঐ শিঙারা দাঁতে কাটল না। পাগল, পাঁচ ঘণ্টা পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, পথে কোথাও শৌচাগারের চিহ্ন ও পাব কি না সন্দেহ।
কাঁটায় কাঁটায় সাতটায় ট্রেন ছাড়ল, দক্ষিণ ভারতে কি কোন ট্রেন লেট করে না? কে জানে? ঈশ্বরের দয়ায় আমাদের কামরায় কেবল এক সদ্য বিবাহিত তামিল দম্পতি ছাড়া আর কেউই উঠল না। আমাদের কামরাটা ঠিক গার্ডের বারন্দার পিছনেই ছিল, অর্থাৎ সবার আগে। নিজ নিজ আসনে না বসে আমরা প্রায়ই উঠে দাঁড়িয়ে সেই অবর্ণনীয় নিস্বর্গের স্বাদ নিচ্ছিলাম। চারদিকে ঘন এলাচের জঙ্গল, মাঝে একাকিনী সরু রেল লাইন। কত যে অজস্র বর্ণের ফুল ফুটে আছে, মনে হবে যেন কোন দক্ষ মালির হাতে লাগানো। ঝিকঝিক করে হেলতেদুলতে চলছে ট্রেন, পথে একটা ময়ূর কোথা থেকে উড়ে চলে গেল, গাছে গাছে অজস্র বাঁদর, অবহেলা ভরে তাকাচ্ছে আমাদের ট্রেনের দিকে, এমনকি পাখি গুলো ও পাত্তা দিচ্ছে না। সকলেই নিজ নিজ প্রাত্যহিক কর্মে নিরত।মাঝে মাঝেই কামরার আলো জ্বলে উঠছে, আর মুহূর্তের মধ্যেই ট্রেন ঢুকে পড়ছে এক গহিন অন্ধকার টানেলের মধ্যে। আবার কোথাও ঝমঝমিয়ে ট্রেনের পাশ দিয়ে ছুটে চলে যাচ্ছে পাহাড়ি ঝোরা। উত্তর বঙ্গের ঝোরা গুলির সাথে এদের কোন মিল নেই। হিমালয়ের গাম্ভীর্য বা আভিজাত্য নীলগিরির নেই। এখানের পাহাড়, ঝোরা, জঙ্গল কিছুই আপনার মনে ভয় বা সম্ভ্রম জাগায় না, বড় বেশি লাস্যময়ী নীলগিরি, নীরবে আপনাকে ভালবাসতে বাধ্য করে।
[চলবে]
#AnirDiary #AninditasBlog
https://amianindita.blogspot.in