Friday 28 October 2022

অনির ডাইরি ১৪ই অক্টোবর, ২০২২

 



পূর্ব মেদিনীপুর জেলার লোকজনের এই এক বৈশিষ্ট্য, যতক্ষণ না ফোন ধরছি, করতেই থাকে। ভীষণ টেনশনে আছি, প্রথম বার কেটে দিলাম, আবার করছে। টেনশনে হাবুডুবু খাচ্ছি বিগত আধেক ঘন্টা ধরে। তার মধ্যে আচ্ছা জ্বালা মাইরি।  


সেদিন পঞ্চমী, সময় মধ্যাহ্ন। কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই আমার মা এবং আমার কন্যা যুগলে হাত ধরাধরি করে গেছেন পেনশন তুলতে। যাবার আগে সোহাগ করে ফরমাইশ করে গেছে মা, একটা ভালো কাপের সেট কিনে দিতে হবে। ভালো মানে দামী নয় কিন্তু, স্বচ্ছ টলটলে। এর আগেও অমন একটা সেট কিনে দিয়েছিলাম অ্যামাজন থেকে। ডেলিভারি পেয়ে গজগজ করছিল বাবা, ‘যত চিনে মাল।’ তা সেই চিনে মালকেও এক বছরের ওপর টিকিয়ে রেখেছে আমার মা। নিজে হাতে মেজে ধুয়ে ঝকঝকে করে রেখেছে। ইদানিং মায়ের মনে হয়েছে কাপগুলো আর ততোটা টলটলেও নেই বুঝি। হাল্কা ঘোলাটে হয়ে গেছে যেন। তাই আর কি-


পাক্কা দিশী কোম্পানির ভালো রিভিউ ওয়ালা কাপের সেট বাছাই করে পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখি, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি। সদ্য বদলে ছিলাম বটে। আন্দাজে যেটা মারলাম, সেটা ভুল। সতর্কীকরণ ভেসে উঠল ফোনের স্ক্রিনে, আর মাত্র দুটো সুযোগ দেবে। তারপর লক হয়ে যাবে গরীবের অ্যাকাউন্ট খানা। ওরে বাপরে, পুজোর মাসে খাব কি? 


অনেক ভেবে চিন্তে, স্থির চিত্ত হয়ে দ্বিতীয়বার পাসওয়ার্ড দিলাম, আবার ভুল। আর একটাই সুযোগ দেবে কেবল, উত্তেজনায় হৃদপিণ্ড গলার কাছে চলে এসেছে। তারই মধ্যে একের পর এক সিগারেট ধরিয়েই যাচ্ছে বাবা। বলি তোমার এত টেনশন কিসের? এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বৃদ্ধ বলল,‘ তোমার গর্ভধারিণী। আবার কি? সেই কখন গেছে, একটা ফোন করে খোঁজ নাও দেখি।’ মা বেরিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হল সত্যি, তবে এত দুশ্চিন্তা করার কি আছে বুঝলাম না। সঙ্গে তো শ্রীমতী তুত্তুরী আছেনই। তাও পিতৃবাক্য অবজ্ঞা না করে ফোন করলাম, ওপাশ থেকে ভেসে এল তুত্তুরীর বিরক্ত স্বর,‘আঃ বারবার ফোন করছ কেন?’ কি জ্বালা, এই তো সবে করলাম। বলতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, বাবা নির্ঘাত এর আগেও বার কয়েক লুকিয়ে ফোন করেছে, ধরেনি দেখে, এবার আমার কাঁধে বন্দুক রাখার ধান্ধা। 


শুনলাম একে তো পোস্টাফিসে মাত্রা ছাড়া ভিড়,তারওপর মা আবার ফর্ম ফিলআপ করতে কি সব গড়বড় করেছে। নতুন করে ফর্ম তুলে এবার পূরণ করছে স্বয়ং তুত্তুরী। তাই আর কি। ফোন রেখে দেবার আগে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হ্যাঁ রে বাবু তুই আমার ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং এর পাসওয়ার্ডটা জানিস?’ হালুমবুড়ো না ভিকি কৌশল কিসব উল্টোপাল্টা বকল তুত্তুরী, যেগুলো কস্মিনকালেও  আমার পাসওয়ার্ড হতে পারে না। ফোন রেখে শ্রীমতী তুত্তুরীর বাবাকে ফোন করলাম, হ্যাঁ গো, তুমি কি জানো?


পুজোর ছুটি পড়ে গেছে, বউ বাচ্ছা বিদেয় নিয়েছে, তুত্তুরীর বাপ মনের আনন্দে বইপত্রের পাহাড় নিয়ে বসেছিল, হয়তো জড়িয়েও এসেছিল চোখের পাতা। এমন সময় আমার বেখাপ্পা প্রশ্নে অত্যন্ত বিব্রত হল বুঝতে পারলাম। তবে একটা ভালো বুদ্ধি দিল, ‘পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে  নে না।’ এতক্ষণ এই বুদ্ধিটা কেন মাথায় আসেনি? ফরগট পাসওয়ার্ড করে যখন পাসওয়ার্ড বদল করতে বসেছি, এমন সময় থেকে ফোন করতে শুরু করেছে লোকটা। এর আগেও গোটা দুয়েক মিসড্ কল আছে, তখন অন্য ফোনে ব্যস্ত ছিলাম আমি। 


প্রথম বার কেটে দিলাম। দ্বিতীয় বার যখন করল তখন মোক্ষম অবস্থায় আছি, এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ডটা সবে মেরেছি, আবার কাটলাম। তৃতীয় বার আর ধৈর্য রাখতে পারিনি, তিন সেকেণ্ডের জন্য ফোনটা ধরে খিঁচিয়েই দিলাম,‘বার বার করছেন কেন? ব্যস্ত আছি বলেই তো ধরতে পারছি না, নাকি? বুঝবেন তো। একটু পরে করুন।’ ওপাশ থেকে জনৈক পুরুষ কণ্ঠ মিনমিন করে, ‘হেলো ম্যাডাম-’ সবে বলতে শুরু করেছে, ফোনটা কেটে দিলাম। পুজোর মাস, অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলে খাব কি? 


পাসওয়ার্ড বদলালাম, নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্টে ঢুকে ভির্মিও খেলাম। কি সব যেন টাকাপয়সা, কে যেন আমার অ্যাকাউন্ট থেকে কাদের সব পাঠিয়ে দিয়েছে। পুজোর মাস আমার চলবে কি করে? সেই নিয়ে একচোট হাঁউমাউ করলাম শৌভিকের কাছে। তারপর বুঝতে পারলাম, ওগুলো আমিই পাঠিয়েছি। সেই নিয়ে একচোট গালমন্দ খেলাম বরের কাছে। মা আর তুত্তুরী ফিরেও এল ঠাকুর দেখে, কিন্তু লোকটা আর ফোন করল না। সাধারণতঃ কারো সাথে ফোনে দুর্ব্যবহার করি না।মাঝে মাঝে পরিস্থিতিটাই এমন হয়ে যায়, কিছু করার থাকে না। খুব খারাপ লাগছিল মনটা। 


শ্রীমতী তুত্তুরী ব্যস্ত হয়ে পড়ল তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে। কেমন ভাবে রিক্সাওয়ালার সাথে অবাস্তব দরদস্তুর করেছে আমার গর্ভধারিণী, কেমন ভাবে মামমাম (দিদা)এর হাত ধরে মোড়ের মাথায় নিয়ে গিয়ে টোটোয় তুলেছে তুত্তুরী। কেমন ভাবে ফেরার পথে রিক্সা পেলেও একটাও প্যাণ্ডেলে নামেনি মা। তুত্তুরী একাই নেমেছে আর ছবি তুলে এনেছে ইত্যাদি প্রভৃতি। ভালোবাসায় জবজবে পরিস্থিতিতেও মনটা খচখচ করছিল লোকটার জন্য। অচেনা নম্বর, এর আগে কখনও ফোন করেনি, ভাবলাম কপাল ঠুকে একবার ফোন করেইনি। তখন আমি মেজাজ দেখিয়েছিলাম, এবার না হয় উনি দেখাবেন। 


ভাবনাচিন্তার মধ্যেই ফোনটা এল। সেই অচেনা নম্বর। গলাটা যতদূর সম্ভব মোলায়েম অনুশোচনাপূর্ণ করে ফোনটা ধরলাম, ওদিকের পুরুষ কণ্ঠ চিল্লিয়ে বলল ‘হ্যালো ম্যাডাম, আপনি কি আজ আপিসে নেই?’ লে হালুয়া। ছুটির দিন আমি অফিসে থাকব কেন? গলাটা যথাসম্ভব ভদ্র করে জবাব দিলাম। উনি বললেন,‘ম্যাডাম আমরা যে আপনার জন্য ফুল, মিষ্টি এনেছিলুম গো। আপনার বাড়ি কোথায় বলেন, আমরা ওখানেই চলে যাব-’। 


সর্বনাশ, কোন পাগলের পাল্লায় পড়েছি! কোন মতে, ’কোন দরকার নেই। আপনারাই খেয়ে নিন’ বলে সে যাত্রা রেহাই পেলাম। তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। ভুলেও গেছি ব্যাপারটা। আজ যখন হঠাৎ এণারা এসে হাজির ফুল আর মিষ্টি নিয়ে, তখন গিয়ে রহস্য উদ্ঘাটিত হল, আমাকে পুষ্পস্তবক প্রদানকারী ভদ্রলোকই তাহলে সেদিন ফোন করেছিলেন। 


তাহলে গল্পটা একটু আগে থেকেই বলি, এই ভদ্রলোক এবং তাঁর দুই সঙ্গিনী পেশায় সাফাইকর্মী। হঠাৎই একদিন এক পাতার একটা চিঠি নিয়ে একডজন নারী ও পুরুষ এসে হাজির হয়েছিলেন আমার কাছে। শুনলাম কোন এক নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওনারা সাফাই এর কাজ করেন। ওনাদের চিঠির বক্তব্য খুব সরল, দীর্ঘদিনের অপূর্ণ দাবীদাওয়া পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।  সেই দাবীর তালিকা পাঠিয়ে দিলাম ওনাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দিন পাঁচেক কাটতে না কাটতে এণারা আবার এলেন আরও বর্ধিত দাবীতালিকা নিয়ে। কি যেন কারণে মাথা গরম ছিল, দিলাম উদোম ঝাড়। ইয়ার্কি নাকি? কত বার, কত দফা দাবী  জানাবে বাপু তোমরা। আর কতবার, কতগুলো চিঠি পাঠাব আমি? 


বকুনি খেয়েও গেল না লোকগুলো। কাচুমাচু মুখে কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে রইল। মাথা ঠাণ্ডা হতে জহর বাবুকে বললাম, আমার বকুনি তো খেয়েছে, এবার একটু আপনার চা খাওয়ান। বুঝিয়ে বললাম, চার্টার অব ডিমাণ্ড এমনি বারবার দেওয়া যায় না।বা বদল করা যায় না। ওরা কেউ রাগ করল না। জুলজুল করে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ, তারপর হাত জোড় করে বলল, ‘ আপনি মাই বাপ। এর আগে এরকম কোন সাহেব মেমসাহেবের সাথে তো আমরা কথা বলিনি। তাই নিয়মকানুন মোরা কিছু জানি না। আমরা বড় আশা নিয়ে এইছি আপনার কাছে। আপনি মায়ের মতন-’।  


হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। হেসেই ফেললাম। ওরাও একটু হাসল। সামান্য প্রশ্রয় পেতেই, জহর বাবুর হাকুচ কেলে চায়ের সাথে শুরু হল ওদের গল্প। 


কিছুই পায় না ওরা, সাবান,ডাস্টার,গ্লাভস্, কোদাল,বেলচা। কিচ্ছু না। কয়েকজন মেয়ে বলল, ‘হাতে করে নর্দমা সাফ করি দিদি।’ জনৈক ঘোর কৃষ্ণবর্ণ নাদুসনুদুস চেহারার ছেলে বলল, ‘ঘাস কাটার ছুরিকাঁচিও বাড়ি থেকে আনতে হয় আমাদের। কার্বলিক অ্যাসিডও দেয় না ম্যাডাম। সেদিন তো অমুক ভাইকে সাপে কেটে ছিল।’ যাকে কেটেছিল, তিনি হাত উড়িয়ে বললেন, ‘ওটা ঢোঁড়া ছিল। তবে বড় জব্বর কামড়ে ছিল বটে, টেনে ছাড়াতে পারছিলুম নি।’শুনে আঁতকে উঠলাম।


 বাপরেঃ। মেয়েরা সম্মিলিত ভাবে বলল,‘আমাদের গামবুটও দেয় না ম্যাডাম। কেবল ছেলেদের দেয়।’ এছাড়াও আরো দাবীদাওয়া ছিল বটে, বোনাস দিতে হবে,দীর্ঘ দিন কাজ করছে পিএফ, ইএসআই দিতে হবে, কাউকে বসানো যাবে না ইত্যাদি প্রভৃতি। 


দাবী তো ছিল, কিন্তু সব দাবীর ওপর জল ঢেলে দিল প্রতিষ্ঠান। এক লাইনের চিঠি পাঠিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলল, ‘ওরা আমাদের কর্মচারী নয়।’ প্রশ্ন পাঠালাম, তাহলে কার লোক ওরা? কন্ট্রাক্টরের? সেই কন্ট্রাক্টরকে লাগিয়েছে কে? জবাব নেই। মিটিং ডাকি। কন্ট্রাক্টর আসে না। প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসেন বটে, তাকেই বুঝিয়ে বলি আমি। খুব বেশী তো কিছু চায় না। এগুলো তো ন্যূনতম দাবী। হাতে করে বাথরুম কি আমরা আমাদের বাড়িতে সাফ করি বলুন তো? আর আপনার আমার কপাল ভালো ওটা ঢোঁড়া সাপ ছিল। না হলে আপনার আমার দড়ি টানাটানিতে একটা পরিবার তো ভেসে যেত মশাই। আর এটা কি? ছেলেদের গামবুট দেবেন, মেয়েদের দেবেন না? কোথায় আপনারা লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী পাঠ দেবেন তা নয় উল্টো পুরাণ? 


উনি সব শোনেন, গভীর সহমরমী হয়ে মাথা নাড়েন, অতঃপর ভালো করে চেপে নেন মুখের মাস্ক, হাতে স্প্রে করেন স্যানিটাইজার। দেখলাম বসার আগেও চেয়ারে স্প্রে করেই বসলেন। একে তো ল্যাবার দপ্তর তায় আবার সাফাইকর্মীদের নিয়ে মিটিং। 


দিন যায়। পরিস্থিতি বদল হয় না। খবর আসে কন্ট্রাক্টর কাজ ছেড়ে দিয়েছে। দৌড়ে আসে লোকগুলো, ‘ম্যাডাম ওরা আমাদের কাজ থেকে বসিয়ে দিয়েছে। খাব কি?’ জানতে চাই, লিখিত নির্দেশ দিয়েছে কি?জবাব আসে, নাঃ। বলি তাহলে আপনারা যেতে থাকুন। হাজিরা দিন নিয়মিত।  তারপর দেখি কি করতে পারি। সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে জমায়েত হতে থাকে ওরা পর পর কয়েকটা দিন। ঐ প্রতিষ্ঠানেরই অন্য এক দল শ্রমিকের হাতে হাত মিলিয়ে, ‘কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’  মার্কা পোস্টার লিখতে থাকে ওরা। প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে এবার নালিশ আসে খোদ ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে। 


বড়সাহেবের নির্দেশ মত, ম্যানেজমেন্টকে আশ্বস্ত করি, আপনাদের পোস্টার আমি আধা দিনের মধ্যে খুলিয়ে দেব, আপনারা গরীবের দপ্তরে, আলোচনার টেবিলে তো আসুন। তেনারা রাজি হলে, এণাদের রাজি করাতে হয়,‘খুলে দাও বাবারা। বড় মুখ করে বলেছি।“ পোস্টার গায়েব হয়ে যায়। আলোচনা চলে। বড় প্রতিষ্ঠানের সম্মানীয় ডাইরেক্টর সাহেব খোদ আসেন এবার আলোচনার টেবিলে। সাথে আরোও কয়েকজন হোমরাচোমরা সাহেব। 


বেশ জমিয়ে একটা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিই আমি, কোভিডের বিরুদ্ধে যে লড়াই তাকে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলেন, তো সেই যুদ্ধ আমরা যাদের জন্য জিতেছি, তাদের মধ্যে যেমন ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী-পুলিশ-প্রশাসন-ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা আছেন তেমনই আছেন এণারা। পর্দার পিছনে সাফাইকর্মীদের নিরলস লড়াইকে তো এই ভাবে মুছে ফেলা যাবে না। যারা আমাদের স্বাস্থ্যের এত খেয়াল রাখেন, তাদের ন্যূনতম খেয়াল রাখব না আমরা?   সাবান-গামছা-গামবুট- ব্লিচিং- অ্যাসিড তৎক্ষণাৎ পাস হয়ে যায়। বাতানুকূল চেম্বারেও ঘাম মোছেন ডাইরেক্টর সাহেব, ছিঃ ছিঃ এরা এতদিন এসব পেত না? ছুটকো দুশো পাঁচশ নয়, রীতিমত ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস দেবারও প্রতিশ্রুতি পাই আমরা। 


মহালয়ার দিন দুই পরে জনৈক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ফোন করে জানান, ‘ওরা বোনাস পেয়ে গেছে ম্যাডাম।’ উৎসবের মরশুমে মানুষগুলো কটা অতিরিক্ত টাকা পেয়েছে শুনে যে কি আনন্দ হয়েছিল কি বলব। হকের টাকা আদায় করে দেবার আনন্দই আলাদা। তবে সত্যিই ভাবিনি ওরা বোনাস পেয়ে ফুল মিষ্টি সহ সবাই মিলে আমার সাথে দেখা করতে আসবে। আজ শুনলাম, সবাই এসেছিল। পাক্কা বারো জন। অফিসের বাইরে তালা দেখে দীর্ঘক্ষণ প্রতীক্ষা করে, প্রবল দুরু দুরু বক্ষে আমায় ফোন করে। বার কয়েক বিজি পায়। তাতেও দমে না, পূর্ণ বিক্রমে আবার করে। কেটে দিই। আবার করে। এবার ধমকাই। ধমকে বলি ব্যস্ত আছি। তখন বারো মাথা এক হয়ে প্লান করে বোনাস তো পেয়েছে,সবার পকেটে টাকা আছে। স্টান্ড থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে ম্যাডামের বাড়িই চলে যাবে ওরা। যার পা কামড়ে ঝুলছিল ঢোড়া সাপটা,সে দৌড়য় গাড়ি খুঁজতে। কিন্তুু সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিই আমি। 


আজ সেই গল্প বলতে বলতে খুব হাসছিল ওরা। হাসছিলাম আমিও। ওদের পরিকল্পনার দৌড় দেখে। তার সাথে সাথে কেন যে করকর করছিল চোখদুটো। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার লোকজনের এই এক বৈশিষ্ট্য, যাই বলেন।


পুনশ্চ - লড়াই এখনও বেশ খানিকটা বাকি আছে। তাই মুখ গুলো একটু ঝাপসা করে দিলাম। আর ইয়ে কাপের সেটটাও শেষ পর্যন্ত আর কেনাই হয়নি 😞। ভুলেই গেছিলাম।



No comments:

Post a Comment