Monday 28 May 2018

চুম্বন

চুম্বন-

ঢং ঢং করে বেল বাজিয়েই যাচ্ছি,খুলতে কেন যে এত দেরী করে?অপদার্থ একটা। এই যদি আমার দেরী হত,ব্যাস আমার চেহারা নিয়ে ঠিক কতগুলো কটাক্ষ যে শুনতে হত, তার ইয়ত্তা নেই।কেন জানি না, আজ এক মুহূর্ত তর সইছে না।
দরজা খুলল,দুহাতে সাবানের ফেনা। এই এক হয়েছে,বাবু রোজ রাতে অফিস থেকে ফিরে জামাকাপড় কাচবেন। বলতে গেলাম অনেক কিছু কথাই,কিন্তু তার বদলে আচমকা জড়িয়ে ধরলাম,এত বছরের পুরানো বরটাকে। আলিঙ্গনের জবাবে আলিঙ্গনই প্রত্যাশিত,ওবাবা, বদলে শুনতে হল,“ছাড়। ছাড়। দরজা বন্ধ করি। পাড়ার লোক দেখিয়ে আদিখ্যেতার কোন মানে হয়?” ভাবলাম শোনাই দুটো কটু কথা,নিজেতো ভালবাসতে জানে না-
বদলে দিলাম একটা আলগা চুমু। ওবাবা নাক টিপে ছিটকে গেল, “কি খেয়ে এলি বলতো?মদ?গাঁজা? এমন ভয়ানক তিতকুটে গন্ধ তোর মুখে?” যা বাব্বা!সেই দুপুরে রুটি তরকারি আর কয়েক কাপ চা খেয়েছি। মুখে গন্ধ হতেই পারে, তাই বলে চুম্বনে আপত্তি? অভিমানী স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম,“জানতে চাইলে না তো?কেন এত দেরী হল?” জবাব পেলাম,“এ আবার জানতে চাইবার কি আছে?নিশ্চয় কোন কাজে আটকে গিয়েছিলি। বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলাম,ধরলিও না। ” যাঃ বাবা। কখন করল ফোন? শুনতে পাইনি তো। ওর পনেরো মিনিট দেরী হলে আমি অন্ততঃ তিনবার ফোন করি। ওর কোন অনুভূতিই নেই ভালোবাসার।
ঘড়ির কাঁটা নয়ের ঘর ছাড়ালো। শেষ বারের মত জামাকাপড় জলে ধুচ্ছে মেশিনে, আমি পিছন থেকে জড়িয়েই আছি। শত আপত্তিতেও ছাড়িনি। প্রাণ ভরে নিচ্ছি ওর আঘ্রাণ আর মন উজাড় করে বলছি কতটা ভালোবাসি আমি আমার বরকে। বিরক্ত হবার ভান করলেও আসলে বোধহয় অতটাও বিরক্ত হচ্ছে না। বললাম,“খুব ভালোবাসি তোমায়। আই লাভ ইউ গো। ”জবাব পেলাম,“হুঁ প্রথম বার শুনলাম।” বললাম,“তুমি ভালোবাসো না?” জবাব পেলাম,“ধুৎ।” বললাম,“জানো তো আমি না তুমি ছাড়াও অমুক অমুককে ভালোবেসেছি।” জবাব পেলাম,“তো কি করব? উদ্বাহু নৃত্য?” সাড়ে নটা নাগাদ বলল,“এসে থেকে হাত মুখ ধুসনি। জামাকাপড় ও ছাড়িসনি। এবার দয়া করে হাত পাটা ধো। আমার খুব খিদে পাচ্ছে। আমি খাবার বাড়ছি,জলদি আয়। ” ও খাবার বাড়ছে,ঠুং ঠাং আওয়াজ পাচ্ছি,কলটা না খুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, ভয় করছে। প্রচণ্ড ভয়। কি যেন একটা ঘটতে চলেছে। প্রলয় আসছে-
আচমকা টিং টিং করে বেজে উঠল মোবাইল। ও খাবার বাড়তে বাড়তে চিৎকার করে উঠল,“কার ফোন দেখতো?”আমি ভয়ে নড়তে পারছি না। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না।ফোনটা কেটে গেল। আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে উঠেছে। জানি আবার আসবে,এখুনি বেজে উঠবে। বাজল ফোন।  ও গজগজ করতে করতে এসে ধরল। আমার মাথা টলছে। কোন মতে হাত বাড়িয়ে চেপে ধরলাম বাথরুমের দরজাটাকে। ওর গলা পাচ্ছি,“আপনি কে বলছেন? ফোন তো আপনি করেছেন। ও। হ্যাঁ। করেছিলাম। কি বলছেন যা তা। অ্যাক্সিডেন্ট? মারা গেছে? ও তো বাড়িতে। আপনাদের কোন ভুল হচ্ছে।” ওর গলা ক্রমেই উচ্চে উঠছে। দুম করে ফোনটা কেটে দিয়ে ও আমায় ডাকতে লাগল, ও চিৎকার করে আমায় ডাকছে,এ ঘর ও ঘর খুঁজছে। অথচ আমি তো বাথরুমে। আমি তো চিৎকার করে বলছি,“এই তো আমি এখানে। কে ফোন করেছিল? কে মারা গেছে?”- ও শুনতে পাচ্ছে না। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল ধাক্কা মেরে অথচ তাকিয়েও দেখল না। দরদর করে কাঁদছি আমি। কাঁদছে সেও। দুজনে একই কথা বলছি-শেষ চুম্বনটাও করতে দিলে না?
©Anindita's blog ©Anindita Bhattacharya
চুম্বন-২
কপালে নরম উষ্ণ স্পর্শে মৌতাত ভাঙল তপ্তপর্ণা ওরফে তাপ্তির। এতক্ষণ প্রবল শ্বাসকষ্টের সাথে অসম লড়াই চালাচ্ছিল তাপ্তি।
হাল্কা আমেজ চুরমার করে সামনের গাড়িতে ধাক্কা মারল তাপ্তির বাতানুকূল ট্যাক্সি।মুহূর্তে গুঁড়ো হয়ে গেল উইণ্ড স্ক্রিন। অবাঙালি ড্রাইভারের প্রাণহীন দেহ আছড়ে পড়ল তুবড়ে যাওয়া বনেটের ওপর।  অজস্র হিরের কুচির মত কাঁচের টুকরো সপাটে ঢুকে গেল তাপ্তির নরম সুচর্চিত ত্বক ভেদ করে। থেতলে গেল ফুসফুস।
তারপর জ্ঞান ফিরল এই স্পর্শে। আলতো করে চোখ খুলে ধাঁধিয়ে গেল চোখ। কে তুমি? এত সুদর্শন কোন মানব হতে পারে? গাত্রবর্ণ প্রগাঢ় নীল। কপালে শিখিপুচ্ছ,মুখে ভুবন ভোলানো হাসি।মেঘলা রঙের উত্তরীয় কোমরে রত্নখচিত কোমরবন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ তাতে আটকে আছে মোহনবাঁশি।
“তুমি?” অস্ফুটে বলল তাপ্তি,“তুমি এসেছো?” স্মিত হাসল সে। স্ফীতোদর তাপ্তি রক্তাক্ত হাতে জড়িয়ে ধরল তাকে,প্রগাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হল উভয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলল তাপ্তি,“প্রভু আমি তোমার দাসী। ” মৃদু হেসে ললাট চুম্বন করল সে,“দেবী আমিও তব দাসানুদাস। কিন্তু তুমি না নারীবাদী?কেউ শুনলে কি বলবে?” দুই চোখে মৃদু দুষ্টুমি খেলে গেল তার। তাপ্তি সজল নয়নে বলল,“ আমি নারীবাদী। কিন্তু পুরুষবিদ্বেষী নই। এবার কি তোমায় নারীবাদের পাঠ দিতে হবে কেশব?” আলতো করে তাপ্তীর মুখ চুম্বন করে কেশব বলল,“ পাগল নাকি?প্রকৃতি ভিন্ন পুরুষ হয়? প্রকৃত পুরুষ সর্বদা সাহসিনী নারীর অনুরক্ত হয়। রাধাকৃষ্ণ না বলে কৃষ্ণরাধা বললে যে অখণ্ড নরকবাস, তা কি আমি বলে যাইনি?”
হাঁপাতে হাঁপাতে প্রিয়তম পুরুষের গায়ের গন্ধ প্রাণ ভরে নিল তাপ্তি,“তোমায় আজো গভীর ভাবে ভালোবাসি প্রভু। ” সে হেসে বলল,“আমি তো চিরকাল তব দাসানুদাস। ”তাপ্তি আবার বলল,“তুমি ছাড়া কেউ বোধহয় কখনও আমায় ভালোবাসেনি, কেশব-”। কেশব হেসে বলল,“আমায় ছাড়া তুমি বোধহয় কখনও কাউকে ভালোবাসোনি সখী। ভালোবেসে দেখো,বিনিময়ে শুধু ভালোবাসাই পাবে-। ”

“আরো প্রেমে, আরো প্রেমে,মোর আমি ডুবে যাক নেমে-” গানে চটকা ভাঙল তাপ্তীর,অবাঙালী ড্রাইভার বলছে,“নামবেন না ম্যাডাম?” সস্নেহে ড্রাইভারের হাতে ভাড়া দিয়ে বলল তাপ্তী,“সাবধানে যেও ভাই। বেশী স্পিড তুলো না। সামনের ট্যাক্সি আচমকা ব্রেক কষলে যেন তাকে গোঁত্তা  মেরো না। ” মৃদু হেসে গড়িয়ে গেল গাড়ি। দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে কলিং বেল বাজাল তাপ্তী,দরজার ওপারে সে, যার গাত্রবর্ণ গৌর,না মস্তকে শিখিপুচ্ছ, না কোমরবন্ধে মোহনবাঁশি,তবু যার ওষ্ঠাধরে মাখামাখি শুধুই প্রেম- ঝাপিয়ে পড়ল তাপ্তী, গভীর চুম্বনে নিষিক্ত ধরণী, কানের কাছে গুনগুনিয়ে যায় প্রথম প্রেম,“ ভালোবাসো সখী। উজার করে দাও মনপ্রাণ। শুধু ভালোবাসাই হোক তোমার ধর্ম। তোমার পূজা। উপাসনা। ভালোবেসে খুঁজে নাও আমায়-তোমার আশ্লেষে বেঁচে থাকি আমি।আই লাভ ইউ টু সখী।  ”
©Anindita's blog ©Anindita Bhattacharya

No comments:

Post a Comment