Monday 6 August 2018

সব চরিত্র কাল্পনিক

-
দৃশ্য-১
“ম্যাডাম,একজন আপনার সাথে দেখা করবে বলে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে। ”
“দাঁড়িয়ে আছে কেন? আমি তো সকাল থেকেই এখানে। ”
“মিটিং চলছিল তো। তাই আসেনি। একা কথা বলতে চায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন। পাঠাব?”
দৃশ্য-২
-বলুন।
-নমস্কার ম্যাডাম। খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।
-ব্যাপার কি?
-আমি অমুক কোম্পানীতে কাজ করতাম। মানে নৌকরি। হঠাৎ একদিন বলে দিল আর আসতে হবে না।
-কেন? নোটিশ দিয়েছিল?
-না ম্যাডাম। হামি সুপারভাইজার ছিলাম। লেবারদের মধ্যে ঝামেলা সামলাতাম। হামি বাঘ আর গরুকে একসাথে এক মেশিনে কাম করবাতাম। একদিন হল কি,একদল লেবার আমায় যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করল। জাত-ধরম-ভাষা সবকিছু নিয়ে যাতা বলল ম্যাডাম। এতো গালি এ কোম্পানীতে কুনদিন খাইনি ম্যাডাম। শরীল খারাপ হয়ে গেল। প্রায় পচ্চিশ বছরের চাকরী জীবন হামার ম্যাডাম, এ ভাষায় কেউ আমার সাথে কথা বলার হিম্মত পায়নি এতদিন। দুদিন পর যখন জয়েন করলাম অমুক বাবু পুছলেন তুমি তো ছুট্টি নাও না, তাহলে অ্যাবসেন্ট হলে কেনো? আমি উনাকে বলছিলাম ম্যাডাম,মা কসম। সেই সময় প্রোডাকশন ম্যানজার সাহেব আমাদের পিছন দিয়ে যাচ্ছিলেন। হামি জানতামই না,যে উনি সব শুনছেন। উনার কি মনে হল, যে হামি বোধহয় উনাকে গাল দিয়েছি। হামাকে ডেকে বললেন, কাল থেকে তোকে চৌহদ্দির মধ্যে না দেখি। একটা কথাও শুনলেন না ম্যাডাম-

-কি যন্ত্রণা। আপনি কাঁদছেন কেন। আমার যা করার নিশ্চয়ই করব।
-পচাশ বছরের বুড়ো আদমি কুথায় কামধান্ধা পাবে ম্যাডাম। বালবাচ্ছাওয়ালা আদমি ম্যাডাম-
দৃশ্য-৩
-অমুক বাবু, আপনি না ঐ কোম্পানির  এইচ আর ম্যানেজার। আপনি থাকতে এক কথায় কারো চাকরি চলে যায়?
-(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)সত্যি বলছি ম্যাডাম, আমি জানতাম না। আপনার চিঠি পেয়ে খোঁজ নিলাম। ও গালাগাল করেছে শুনলাম। ব্যাপারটা বাবু অবধি গেছে।
-বাবু কে? আপনাদের ব্লকের সভাপতি।
-না। না। ম্যাডাম। বাবু মানে মালিক।
-মালিককে আপনারা বাবু বলেন?
-(দীর্ঘশ্বাস চেপে টাক চুলকে)যস্মিন দেশে যদাচার ম্যাডাম।
-হুঁ। তা গালাগালির গপ্পটা একটু শুনি। কে কাকে গাল দিয়েছে?
-আপনার বাদী,শ্রীমান অমুকচন্দ্র। তার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অমুক তুসুক বলে গালি দিয়েছে। আপনার সামনে সেসব উচ্চারণও করতে পারব না।
-তা বেশ। কিন্তু দিল কেন?
-তা জানি না ম্যাডাম।
-সাক্ষী কে?
-আছে। তমুক বাবু।
-(বাদীর দিকে ফিরে) এই তমুক বাবুই না জানতে চেয়েছিল আপনি আসেননি কেন দুদিন।
-জী ম্যাডাম।
-বাঃ। তিনি তো দেখছি আপনার বিরোধী পক্ষে যোগ দিয়ে, তাঁদের সাক্ষী হচ্ছেন।
-(বাদী) কি করবে ম্যাডাম। সবাই ভয়ে আছে। যদি ওকেও তাড়িয়ে দেয়। (ম্যানেজারের দিকে ফিরে) স্যার আপনি হামাকে এতদিন ধরে চেনেন। হামি কি এটা করতে পারি? কখনও করেছি স্যার?
-(ম্যানেজারের দুই চোখে মায়ার ঘোর কৃষ্ণ মেঘ) তুই একটু বাইরে যাবি ভাই?ম্যাডামের সাথে দু মিনিট কথা বলি।
-(ঘর ফাঁকা হতে) কি আর বলবেন? কেউ কান শুনতে ধান শুনলেও আপনারা তার চাকরী খেয়ে নেন। কত ক্ষমতা মশাই আপনার।
-ম্যাডাম, আপনি আমাকে এত মাস ধরে চেনেন। কতবার কত কেসে এসেছি আপনার ঘরে, আমি হুকুমের চাকর,কিন্তু শ্রমিক অদরদী বলতে পারলেন? আমি কিচ্ছু জানতামই না ম্যাডাম। এইচ আর সেকশন্ জানে না,প্রোডাকশন কাকে তাড়াচ্ছে। এ মৎসন্যায় পূর্বে ছিল না ম্যাডাম। নতুন মালিক সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে নতুন চামচা বাহিনী। পুরাতন চাকর যারা ছিল,তাদেরও অনেকে তৈল মর্দনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে এদের সাথে। ঐ ম্যানেজারটা ম্যাডাম, এখানকার প্রাক্তন অমুক নেতার ভায়রা ভাই। এরা কি মনে করে নিজেদের কে জানে? এক কথায় লোকের চাকরী খেয়ে নেয়। আমি দেখছি ম্যাডাম কি করতে পারি।
দৃশ্য-৪
-বলুন ম্যানেজার সাহেব। কি বলবেন।
-ম্যাডাম ওর চাকরী আর ফেরৎ দেওয়া সম্ভব নয়। মালিক হেব্বি চটে গেছে ওর ওপর। অমুক নেতা বাবুকে ফোন করে বলেছে, ওর কেসটা দেখতে।
-হুঁ। ইগোয় নিয়ে নিয়েছেন?
-হ্যাঁ। ম্যাডাম। অমুক বাবু এটা কি করলেন। আমার ওপর ভরসা নেই। যাঃ বাবা কাঁদছেন কেন?
-ম্যাডাম। পোড়া কপাল আমার। বিকালে চায়ের দোকানে গিয়ে বসেছিলাম। দুচারজন বন্ধু যারা জানে, জানতে চাইল কি হচ্ছে। আমি আপনার গল্প করছিলাম। খেয়াল করিনি যে গাট্টু বাবু কখন এসে বসেছে।
-গাট্টু বাবু?ও হেরে যাওয়া সভাপতি।
-জী ম্যাডাম। উনি আমার কাঁধ চাপড়ে বললেন, নো চিন্তা। আমি ম্যাডামকে বলে দেব। বললেন আমি দেখছি কি করে তোমায় তাড়ায়।
-উফ্ অমুক বাবু, আপনি একটা রত্নধারণ করুন মাইরি। লোকের সাথে খোশ গপ্প করার সময় এবার থেকে চোখটা অনুগ্রহ করে খুলে রাখবেন। একবার এই কারণে আপনার চাকরী গেল। দ্বিতীয় বার সাজানো খেলা বিগড়ে গেল। গাট্টু বাবু,নিজের ছাড়া কোন জম্মে কার কাজে এসেছেন?আমায় ফোন করেছিল। আমি পাত্তা দিইনি। মালিককে খুঁচিয়ে দিয়েছেন। এবার কি হবে?
-(ম্যানেজার)ম্যাডাম, যদি আপনি চাপ দেন,ওকে নেবে হয়তো,কিন্তু দুদিন বাদে আবার-
-সে কি আর জানি না। এত রাগ হচ্ছে আপদ গাট্টুর ওপর। সাজানো বাগান শুকিয়ে দিল শালা। বলুন বাদী বাবু এবার কি করি?
-ম্যাডাম আমি একটা কথা বলি?
-আপনি আর কি বলবেন?বাবুর কথার ওপর আপনি যেতেই পারবেন না।
-ম্যাডাম, আমিও নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে ম্যাডাম। রবি ঠাকুর নজরুল পড়ে বড় হয়েছি। কোন বড় কোম্পানীতে এইচ আর ম্যানেজার হতে পারিনি। এই কোম্পানীতেও কোনদিন এক নম্বর হতে পারব না। কারণ শ্রমিকের মেরে মালিকের অস্থানে তৈলমর্দন করতে আমি অপারগ।
জানেন তো ম্যাডাম একবার চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে গেছি, আমার পরিচিত আর একজনও গেছে। সে ইন্টারভিউ দিয়ে বেরোবার পর জানতে চাইলাম,“কেমন দিলি?” বলল, দারুন। জানতে চাইলাম,“ওরা কি জানতে চাইল?” বলল,“আমার অ্যাচিভমেন্ট। আমি বললাম,এতজন শ্রমিকের এতটাকা গ্রাচুইটি মেরে দিয়েছি। ” আমি হতবাক। এটা অ্যাচিভমেন্ট-
-হ্যাঁ জানি। তারপর আপনি ইন্টারভিউ না দিয়েই কেটে পড়লেন। পঁচিশ বার শুনেছি। এই কেসে কি হবে?কি রিলিফ দিতে পারেন?
-ম্যাডাম ও সব টাকা পয়সা আগে তুলে নিক। না হলে ছুঁতোনাতায় ওর ন্যায্য প্রাপ্য আটকে দেবে।
-সে তো বেশ বুঝতে পারছি। আপনি একটু বাইরে যাবেন প্লিজ। বাদীর সাথে একান্তে একটু কথা বলি? দেখুন বাদীবাবু, আপনি ভেবে বলুন। আপনি কি চান। যদি চাকরী ফেরৎ চান, তাহলে আরও কটা দিন কেস গড়াবে। আমার ক্ষমতায় মিটবে না, হয়তো আমার বড় সাহেবের কাছে যেতে হবে। যা বুঝছি, ওণার সাথে কথা বলেও এটা মিটবে না।ফলে ফেলিওর রিপোর্ট পাঠাতে হবে সদর দপ্তরে। সেখান থেকে কোর্ট। কেস চলবে। মালিকের কোটি টাকা আছে,কেস চালাতে সমস্যা নেই। আপনি কি চান মনঃস্থির করুন। ব্যাপারটা আর আমার হাতে নেই। যদি আপনি লড়তে চান, আমি পাশে আছি। আমার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। আমার রিপোর্ট পুরোপুরিভাবে আপনার পক্ষে থাকবে। বড় সাহেবের ঘরে ডেট ফেলি?
দৃশ্য -৫
-বলুন বাদী বাবু কি সিদ্ধান্ত নিলেন।
-লড়তে পারব না ম্যাডাম। ছেলের দিল্লী মে অ্যাডমিশনের জন্য কিছু টাকা লোন চেয়েছিলাম ওটা জলদি পাইয়ে দিতে পারেন?ছেলেটার বছর বরবাদ হোয়ে যাবে।
-বিবাদী বাবু শুনছেন?ওর চাকরী চাই না। টাকা পয়সা গুলো মিটিয়ে দিন।
-ম্যাডাম বাবু খুব খেপে আছে। বলছে কোর্টে গেছে যখন ওখানেই বুঝে নিক।
-বাঃ। তাহলে তো এবার আমাকে বুঝতে হয়।আপনি ভালো করে বোঝান, ওর প্রাপ্যগুলো যেন আমার সামনে মিটিয়ে দেওয়া হয়।
-(বাদী কাঁদতে কাঁদতে)ম্যাডাম কোয়ার্টার খালি করে দিতে বলছে। আমি বেকার বসে আছি। কিছু টাকা না দিলে বাড়ি কোথায় পাব? আর ছেলের অ্যাডমিশন?
দৃশ্য-৬
-নাও হে,বুঝে নাও। ম্যাডামের সামনে তোমায় ক্যাশ দিলাম ষাট হাজার টাকা। সই করে নাও।
-এই বিবাদী বাবু,এই না আপনি সেদিন বললেন, আপনার বাবু ক্ষেপে আছে। তাহলে টাকা দিলেন কি করে?
-(তোতলাতে তোতলাতে)ম্যাডাম এটা একটু লিবার্টি নিলাম। এটা ওর কোঅপারেটিভের টাকা। আমি সামলাই কোঅপারেটিভ। মালিক জানতে পারলে আর আমার গর্দান থাকবে না। ভুল টিমে খেলি বটে,তবে শিরদাঁড়া বাঁচিয়ে। বেকার মানুষের জ্বালা আমি বুঝি। একদিন অফিসে গেছি, আমার মেন্টর বলল,“তুমি রিজাইন করো। আজই। ”সন্দেহ করত যে আমি ওর পাওয়ারে ভাগ বসাতে চাই, তাই। আমির বউ সরকারী বাড়ির মেয়ে। শ্বশুর,শালারা সবাই সরকারী চাকুরে। ভাবতেই পারত না, সকালে ভাত খেয়ে অফিস বেরোলাম আর বিকালে আমি বেকার। নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে গেল বউয়ের। ছেলেকে সবে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। কি করি? (ধরা গলা ঝেড়ে) তো যাই হোক, আপনি ম্যাডাম আসলে আপনাদের প্রজন্ম বড় অধৈর্য । জীবন কি এখানে শেষ নাকি। বড় মানুষদের রাগ এই আছে,দুসপ্তাহ বাদে আর নেই। আমি রইলাম, বাবুর মাথা ঠাণ্ডা হলে জানাব। ও যেন তখন গিয়ে আবার চাকরী চায়।
-এই আমি ওসবে ভুলছি না। ওর প্রাপ্য টাকা-
-দেব ম্যাডাম দেব। আপনার সামনে সব দেব। ও শুধু মালিকের দাবী মত বাড়িটা খালি করে দিক।
দৃশ্য-৭
- আরে ম্যানেজার বাবু? আজ কি কোন কেস আছে নাকি?
-না ম্যাডাম। এমনি এলাম দেখা করতে। কতদিন আপনার বকাঝকা  খাইনি।
-কেন আপনার বাবু বকছে না বুঝি।
-এঃ কার নাম করলেন? ও ভালো কথা সেই বাদী বাবুর কথা মনে আছে?সেই যে কথায় কথায় কাঁদত।
-হুঁ। তার তো সব পাওনাগণ্ডা  আপনারা মিটিয়ে দিয়েছেন। ফাইলও বন্ধ। বছর ঘুরে গেল। আজ হঠাৎ  তাঁর কথা কেন?
- (দরজা খুলে) আয় হতভাগা। আয়। ম্যাডামকে প্রণাম কর।
-এই এসব কি?
-ম্যাডাম হামার ছেলে কম্বাইনড্ ডিফেন্স পেয়েছে।
-বাঃ। অভিনন্দন।
-ম্যাডাম আমিও চাকরী ফিরে পেয়েছি।
-সেকি? কনগ্রাচুলেশনস্। ওখানেই? কি করে?
-(ম্যানেজার বাবু)বলেছিলাম না আপনাদের প্রজন্ম বড় অধৈর্য। ঘা শুকোতে সময় দিতে হয়। আমার গল্পটা বলতে গেলাম, শুনলেন না তো। চাকরী হারিয়ে কি কষ্টে যে কাটিয়েছি। এক জায়গায় ইন্টারভিউ দিলাম, মালিক বলল, “আপনার আগের মালিক আপনার খুব তারিফ করছিল। তবে উনি ক্যাটেগোরিক্যালি বললেন, যে আপনি যে স্যালারি পেতেন বলে জানিয়েছেন, তার থেকে অনেক কম দিতেন আপনাকে। ” লজ্জায় ব্রিফকেস নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমায় মিথ্যাবাদী বলল?তবে বউ বটে একটা আমার। সব স্যালারি স্লিপ গুছিয়ে রেখেছিল। নিয়ে গিয়ে দেখালাম,বললাম,“আমি চাকরী ছাড়তে বাধ্য হয়েছি বটে, তবে আমার মালিককে নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আর হ্যাঁ উনি আমি তো দূরের কথা আমার বসের বস্ কত বেতন পান তাও বলতে পারবেন না। ” শালা -অ্যাল্ মাপ করবেন ম্যাডাম। তো যা বলছিলাম, আমি ধৈর্য ধরেছি, চেষ্টা করে গেছি। তারপর পেলাম এখানে চাকরী। প্রাক্তন মেন্টর, যে আমায় খেদিয়েছিল, একদিন ফোন করে বলল,“অমুক ফরগিভ এন্ড ফরগেট?” বলল, “তোমার কোয়ার্টারে যাব”। বললাম আসুন। উনি এলেন। এখনও আসেন। আমার বউ ওণাকে দেখে ঘেন্নায়  মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি কিন্তু সদাহাস্যময়। আপনি উঁচু চেয়ারে বসে আছেন তো কি, কন্যাসমা। বড় ভালোবাসি আপনাকে। তাই বলি ধৈর্য ধরে খেলুন, জীবন বড় মধুর। দেখবেন প্রতিপক্ষেও কোন না কোন বন্ধু পেয়েই যাবেন।  আর এই ব্যাটা প্রাক্তন বাদী, মিষ্টি কে খাওয়াবে?

Thursday 21 June 2018

আমি আর ইয়াসিন


সবে তানিয়াদি ফোন করেছে,“কিরে, ফাঁকা আছিস?কথা বলা যাবে?” আর সবে আমি বলেছি,“হ্যাঁ। হ্যাঁ বলো। ঘর শুনশান। গড়ের মাঠ। ” ব্যাস্ ওমনি ধড়াম করে দরজা ঠেলে ঢুকল ধীমান,“ম্যাডাম। ম্যাডাম শিগ্গির আসুন। ইয়াসিনদা কেমন করছে। ” ইয়াসিন আমার ইন্সপেক্টর। বয়স সদ্য ত্রিশ পেরিয়েছে। বেশ হাসিখুশি  মিষ্টি দেখতে। অত্যন্ত বাধ্য।পরিশ্রমী ।  সবদিক দিয়ে যাকে বলে তুলনাহীন। শুধু একটাই সমস্যা। মাথায় যাকে বলে সলিড ছিট আছে।
দৌড়ে গিয়ে দেখি, ইয়াসিন টেবলের তলায় ঢুকে বসে আছে। দুহাতে চোখ ঢেকে একটাই কথা চিৎকার করে বারবার বলে যাচ্ছে,“ না। না। না। ” আমার অন্য তিন ইন্সপেক্টর রীতিমত ভয়ে জড়োসড়ো।কৌশিক হাঁটু মুড়ে বসে সভয়ে ডাকছে,“ইয়াসিন। এই ইয়াসিন বেরিয়ে আয়। ” সঞ্চিতার মুখ শুকিয়ে আমসি। কোনমতে বলল,“দেখুন না ম্যাডাম। কি রকম করছে। আপনার ঘর থেকে বেরিয়ে এল দিব্যি হাসিমুখে,তারপরই চিৎকার করতে করতে টেবিলের তলায় সেঁদিয়ে গেল। ” অরিন্দম বাবু বোধহয় টিফিন সারছিলেন। কাঁপা গলায় বললেন,“ম্যাডাম, এরকম কি আগে হয়েছে?ইয়ে মানে ডাক্তার ডাকবেন কি?”
ডাক্তার তো ডাকব। আগে ছেলেটাকে টেবিলের তলা থেকে বার তো করি- “ইয়াসিন কি হয়েছে?”উদ্বিগ্ন স্বরে জানত চাইলাম। ইয়াসিনের না-না-না থামল বটে কিছু জবাব পেলাম না। আবার শুরু হল কাঁপন আর চিৎকার। এতো মহাজ্বালা। বললাম,“বেরিয়ে আয় বাবা। কি হয়েছে?আমাদের খুলে বলো। শরীর খারাপ লাগছে?” ইয়াসিন যখন মুখ তুলল, দুই চোখে নির্ভেজাল আতঙ্ক। “ম্যাডাম। ম্যাডাম আবার দেখলাম তাকে-”।
“তাকে” অর্থাৎ এক ভয়ংকর  রোগা এবং কৃষ্ণকায় ব্যক্তি, যার দুই চোখ টকটকে লাল।পরণে চেক লুঙ্গি আর স্যাণ্ডো গেঞ্জি। গলায় আড়াআড়ি একটা বিশাল কাটা দাগ। মাঝেমাঝেই ইয়াসিন তাকে দেখতে পায়। সে আচমকা উদয় হয়, উদয় হবার সাথে সাথেই বাসি মড়ার চিমসে গন্ধে ভরে ওঠে চারদিক। ইয়াসিনের গা গুলিয়ে ওঠে। লোকটা একদৃষ্টিতে ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় অন্য কারো দিকে। তার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বার করে তার শুকিয়ে কালো হয়ে যাওয়া পচা জিভ। তারপর ঐ আড়াআড়ি কাটা বরাবর মাথাটা একদিকে হেলে যায়। তারপর আর তাকে দেখতে পায় না ইয়াসিন। শুধু যার পিছনে দাঁড়িয়ে কাটা মুণ্ডটা হেলে পড়ে, তার মেয়াদ নাকি ২৪টি ঘন্টা।
এই গল্প ইয়াসিন বহুবার আমায় শুনিয়েছে। তার আগে অবশ্য দিব্যি গেলে নিয়েছে,“কাউকে বলবেন না ম্যাডাম।” আমিও বলিনি। ইয়াসিন যখন সাত আট বছরের তার আব্বুর সাথে গিয়েছিল দাদীর বাপের বাড়ি। সেটা পূর্ব মেদিনীপুরের এক অজ গাঁ।বাবার মামার বাড়িতে দুটি ছোট ছোট মেয়ে ছিল, ডাক নাম অলি আর পলি। ইয়াসিনের সাথে খেলছিল ওরা। আচমকা এক তলার এক তালাবন্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে এল এই ভয়াল লোকটা। অলির পিছনে দাঁড়ানো মাত্রই কাটা মাথাটা হেলে পড়ল। ঐ ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠে অজ্ঞান হয়ে যায় ইয়াসিন। জ্ঞান হতে প্রবল কান্নাকাটি। শেষ পর্যন্ত ইয়াসিনকে নিয়ে ঐদিনই বাড়ি ফিরে আসে বাবা-মা। দিন কতক পর খবর আসে,ওরা চলে আসার পরদিনই জলে ডুবে মারা গেছে অলি।
এরপর বহুবার তার দেখা পেয়েছে। প্রাণাধিক বন্ধু আব্দুলের বাড়ির উঠোনে খাটিয়া পেতে ঘুমোতে শুয়েছিল দুই বন্ধু। মাঝরাতে পচা গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠায় ঘুম ভেঙে যায় ইয়াসিনের। দেখে ঘুমন্ত আব্দুলের মাথার সামনে দাঁড়িয়ে সে। পরদিন কলেজের ইলেকশনের মারামারিতে জড়িয়ে বেঘোরে মারা যায় আব্দুল। তারপর ইয়াসিনের শক্তপোক্ত চাচা। দাদী। বাবা। এক অল্পবয়সী ভাইঝি, যার সাথে খুব ছোট বেলায় আশনাই ছিল ইয়াসিনের তার মৃত্যুও আগেভাগেই বুঝতে পেরেছিল ইয়াসিন। ভাইঝির মৃত্যুটা আমার জমানাতেই। বাচ্ছা হবার জন্য চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল মেয়েটি। অল্পক্ষণের জন্য ছুটি নিয়ে তাকে দেখতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেরে ইয়াসিন। আমাকে বলেছিল,“একি অভিশাপ ম্যাডাম?মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে নিজের চোখ দুটো গেলে দি। তাহলে ঐ হতচ্ছাড়াকে তো আর দেখতে পাবো না। গিয়ে দেখি আমারই জন্য দাঁড়িয়ে ছিল হারামজাদা আসমার মাথার কাছে। মেয়েটা আর বাঁচবে না ম্যাডাম। কিই বা বয়স ওর?কলেজে পড়ার কথা-। ”সেদিন সান্ত্বনা দিয়েছিলাম,বিশ্বাস করিনি। ছেলেটা একটু ছিটেল কিন্তু বড় ভালো। বড় সাদাসিধে। আজ কি হল? হাত বাড়িয়ে টেবিলের তলায় ইয়াসিনকে ঠেলা দিয়ে কর্তৃসুলভ ভঙ্গীতে বললাম,“ইয়াসিন। বেরিয়ে এস। কি হয়েছে?” হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল ইয়াসিন,“ম্যাডাম। ম্যাডাম তাকে আবার দেখেছি। আপনার ঘরে ঢুকেছিলাম গাড়ির বিল সই করাতে। ঢুকেই গন্ধটা পেলাম। আপনি মাথা নীচু করে ফাইল করছিলেন, আর সে আমারই প্রতীক্ষায় আপনার পিছনে ঘাপটি মেরে ছিল। আমায় দেখা মাত্রই- ম্যাডাম--”।
©Anindita's blog ©Anindita Bhattacharya

Monday 28 May 2018

চুম্বন

চুম্বন-

ঢং ঢং করে বেল বাজিয়েই যাচ্ছি,খুলতে কেন যে এত দেরী করে?অপদার্থ একটা। এই যদি আমার দেরী হত,ব্যাস আমার চেহারা নিয়ে ঠিক কতগুলো কটাক্ষ যে শুনতে হত, তার ইয়ত্তা নেই।কেন জানি না, আজ এক মুহূর্ত তর সইছে না।
দরজা খুলল,দুহাতে সাবানের ফেনা। এই এক হয়েছে,বাবু রোজ রাতে অফিস থেকে ফিরে জামাকাপড় কাচবেন। বলতে গেলাম অনেক কিছু কথাই,কিন্তু তার বদলে আচমকা জড়িয়ে ধরলাম,এত বছরের পুরানো বরটাকে। আলিঙ্গনের জবাবে আলিঙ্গনই প্রত্যাশিত,ওবাবা, বদলে শুনতে হল,“ছাড়। ছাড়। দরজা বন্ধ করি। পাড়ার লোক দেখিয়ে আদিখ্যেতার কোন মানে হয়?” ভাবলাম শোনাই দুটো কটু কথা,নিজেতো ভালবাসতে জানে না-
বদলে দিলাম একটা আলগা চুমু। ওবাবা নাক টিপে ছিটকে গেল, “কি খেয়ে এলি বলতো?মদ?গাঁজা? এমন ভয়ানক তিতকুটে গন্ধ তোর মুখে?” যা বাব্বা!সেই দুপুরে রুটি তরকারি আর কয়েক কাপ চা খেয়েছি। মুখে গন্ধ হতেই পারে, তাই বলে চুম্বনে আপত্তি? অভিমানী স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম,“জানতে চাইলে না তো?কেন এত দেরী হল?” জবাব পেলাম,“এ আবার জানতে চাইবার কি আছে?নিশ্চয় কোন কাজে আটকে গিয়েছিলি। বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলাম,ধরলিও না। ” যাঃ বাবা। কখন করল ফোন? শুনতে পাইনি তো। ওর পনেরো মিনিট দেরী হলে আমি অন্ততঃ তিনবার ফোন করি। ওর কোন অনুভূতিই নেই ভালোবাসার।
ঘড়ির কাঁটা নয়ের ঘর ছাড়ালো। শেষ বারের মত জামাকাপড় জলে ধুচ্ছে মেশিনে, আমি পিছন থেকে জড়িয়েই আছি। শত আপত্তিতেও ছাড়িনি। প্রাণ ভরে নিচ্ছি ওর আঘ্রাণ আর মন উজাড় করে বলছি কতটা ভালোবাসি আমি আমার বরকে। বিরক্ত হবার ভান করলেও আসলে বোধহয় অতটাও বিরক্ত হচ্ছে না। বললাম,“খুব ভালোবাসি তোমায়। আই লাভ ইউ গো। ”জবাব পেলাম,“হুঁ প্রথম বার শুনলাম।” বললাম,“তুমি ভালোবাসো না?” জবাব পেলাম,“ধুৎ।” বললাম,“জানো তো আমি না তুমি ছাড়াও অমুক অমুককে ভালোবেসেছি।” জবাব পেলাম,“তো কি করব? উদ্বাহু নৃত্য?” সাড়ে নটা নাগাদ বলল,“এসে থেকে হাত মুখ ধুসনি। জামাকাপড় ও ছাড়িসনি। এবার দয়া করে হাত পাটা ধো। আমার খুব খিদে পাচ্ছে। আমি খাবার বাড়ছি,জলদি আয়। ” ও খাবার বাড়ছে,ঠুং ঠাং আওয়াজ পাচ্ছি,কলটা না খুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, ভয় করছে। প্রচণ্ড ভয়। কি যেন একটা ঘটতে চলেছে। প্রলয় আসছে-
আচমকা টিং টিং করে বেজে উঠল মোবাইল। ও খাবার বাড়তে বাড়তে চিৎকার করে উঠল,“কার ফোন দেখতো?”আমি ভয়ে নড়তে পারছি না। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না।ফোনটা কেটে গেল। আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে উঠেছে। জানি আবার আসবে,এখুনি বেজে উঠবে। বাজল ফোন।  ও গজগজ করতে করতে এসে ধরল। আমার মাথা টলছে। কোন মতে হাত বাড়িয়ে চেপে ধরলাম বাথরুমের দরজাটাকে। ওর গলা পাচ্ছি,“আপনি কে বলছেন? ফোন তো আপনি করেছেন। ও। হ্যাঁ। করেছিলাম। কি বলছেন যা তা। অ্যাক্সিডেন্ট? মারা গেছে? ও তো বাড়িতে। আপনাদের কোন ভুল হচ্ছে।” ওর গলা ক্রমেই উচ্চে উঠছে। দুম করে ফোনটা কেটে দিয়ে ও আমায় ডাকতে লাগল, ও চিৎকার করে আমায় ডাকছে,এ ঘর ও ঘর খুঁজছে। অথচ আমি তো বাথরুমে। আমি তো চিৎকার করে বলছি,“এই তো আমি এখানে। কে ফোন করেছিল? কে মারা গেছে?”- ও শুনতে পাচ্ছে না। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল ধাক্কা মেরে অথচ তাকিয়েও দেখল না। দরদর করে কাঁদছি আমি। কাঁদছে সেও। দুজনে একই কথা বলছি-শেষ চুম্বনটাও করতে দিলে না?
©Anindita's blog ©Anindita Bhattacharya
চুম্বন-২
কপালে নরম উষ্ণ স্পর্শে মৌতাত ভাঙল তপ্তপর্ণা ওরফে তাপ্তির। এতক্ষণ প্রবল শ্বাসকষ্টের সাথে অসম লড়াই চালাচ্ছিল তাপ্তি।
হাল্কা আমেজ চুরমার করে সামনের গাড়িতে ধাক্কা মারল তাপ্তির বাতানুকূল ট্যাক্সি।মুহূর্তে গুঁড়ো হয়ে গেল উইণ্ড স্ক্রিন। অবাঙালি ড্রাইভারের প্রাণহীন দেহ আছড়ে পড়ল তুবড়ে যাওয়া বনেটের ওপর।  অজস্র হিরের কুচির মত কাঁচের টুকরো সপাটে ঢুকে গেল তাপ্তির নরম সুচর্চিত ত্বক ভেদ করে। থেতলে গেল ফুসফুস।
তারপর জ্ঞান ফিরল এই স্পর্শে। আলতো করে চোখ খুলে ধাঁধিয়ে গেল চোখ। কে তুমি? এত সুদর্শন কোন মানব হতে পারে? গাত্রবর্ণ প্রগাঢ় নীল। কপালে শিখিপুচ্ছ,মুখে ভুবন ভোলানো হাসি।মেঘলা রঙের উত্তরীয় কোমরে রত্নখচিত কোমরবন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ তাতে আটকে আছে মোহনবাঁশি।
“তুমি?” অস্ফুটে বলল তাপ্তি,“তুমি এসেছো?” স্মিত হাসল সে। স্ফীতোদর তাপ্তি রক্তাক্ত হাতে জড়িয়ে ধরল তাকে,প্রগাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হল উভয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলল তাপ্তি,“প্রভু আমি তোমার দাসী। ” মৃদু হেসে ললাট চুম্বন করল সে,“দেবী আমিও তব দাসানুদাস। কিন্তু তুমি না নারীবাদী?কেউ শুনলে কি বলবে?” দুই চোখে মৃদু দুষ্টুমি খেলে গেল তার। তাপ্তি সজল নয়নে বলল,“ আমি নারীবাদী। কিন্তু পুরুষবিদ্বেষী নই। এবার কি তোমায় নারীবাদের পাঠ দিতে হবে কেশব?” আলতো করে তাপ্তীর মুখ চুম্বন করে কেশব বলল,“ পাগল নাকি?প্রকৃতি ভিন্ন পুরুষ হয়? প্রকৃত পুরুষ সর্বদা সাহসিনী নারীর অনুরক্ত হয়। রাধাকৃষ্ণ না বলে কৃষ্ণরাধা বললে যে অখণ্ড নরকবাস, তা কি আমি বলে যাইনি?”
হাঁপাতে হাঁপাতে প্রিয়তম পুরুষের গায়ের গন্ধ প্রাণ ভরে নিল তাপ্তি,“তোমায় আজো গভীর ভাবে ভালোবাসি প্রভু। ” সে হেসে বলল,“আমি তো চিরকাল তব দাসানুদাস। ”তাপ্তি আবার বলল,“তুমি ছাড়া কেউ বোধহয় কখনও আমায় ভালোবাসেনি, কেশব-”। কেশব হেসে বলল,“আমায় ছাড়া তুমি বোধহয় কখনও কাউকে ভালোবাসোনি সখী। ভালোবেসে দেখো,বিনিময়ে শুধু ভালোবাসাই পাবে-। ”

“আরো প্রেমে, আরো প্রেমে,মোর আমি ডুবে যাক নেমে-” গানে চটকা ভাঙল তাপ্তীর,অবাঙালী ড্রাইভার বলছে,“নামবেন না ম্যাডাম?” সস্নেহে ড্রাইভারের হাতে ভাড়া দিয়ে বলল তাপ্তী,“সাবধানে যেও ভাই। বেশী স্পিড তুলো না। সামনের ট্যাক্সি আচমকা ব্রেক কষলে যেন তাকে গোঁত্তা  মেরো না। ” মৃদু হেসে গড়িয়ে গেল গাড়ি। দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে কলিং বেল বাজাল তাপ্তী,দরজার ওপারে সে, যার গাত্রবর্ণ গৌর,না মস্তকে শিখিপুচ্ছ, না কোমরবন্ধে মোহনবাঁশি,তবু যার ওষ্ঠাধরে মাখামাখি শুধুই প্রেম- ঝাপিয়ে পড়ল তাপ্তী, গভীর চুম্বনে নিষিক্ত ধরণী, কানের কাছে গুনগুনিয়ে যায় প্রথম প্রেম,“ ভালোবাসো সখী। উজার করে দাও মনপ্রাণ। শুধু ভালোবাসাই হোক তোমার ধর্ম। তোমার পূজা। উপাসনা। ভালোবেসে খুঁজে নাও আমায়-তোমার আশ্লেষে বেঁচে থাকি আমি।আই লাভ ইউ টু সখী।  ”
©Anindita's blog ©Anindita Bhattacharya