Wednesday 24 February 2016

অনির ডাইরি ১১ই জানুয়ারী ২০১৬


আমার এক সহযাত্রী আছেন, সান্যাল বাবু,উনি হলোকাস্টের ওপর একটি উপন্যাস রচনা করছেন একজন ভেতো বঙ্গসন্তানের পক্ষে হলোকাস্ট নিয়ে এক কলম লেখাও সহজ নয় শুধুমাত্র কনশেনট্রেশন ক্যাম্প, নির্বিচারে ইহুদী হত্যা আর অ্যান ফ্রাঙ্কের ডাইরি এর বেশি হলোকাস্টের সঙ্গে আমাদের পরিচিতি কই? কিন্তু সান্যাল বাবু তাঁর রচনা নিয়ে অত্যন্ত প্যাসনেট উনি দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যেও এই নিয়ে প্রভূত পড়াশোনা করেন জার্মান,পোলিশ না না ভাষার সিনেমা দেখেন, সময়কালকে অনুভব করার জন্য 
উনি হলোকাস্ট নিয়ে তথা ওণার সদ্যলব্ধ জ্ঞান নিয়ে সদাই জনচর্চা করেন সাম্প্রতিক উনি একটি গুণমুগ্ধ শ্রোতা পেয়েছেন ইতিহাসের সঙ্গে আমার আশৈশব প্রেম যদিও আমি ইতিহাসের ছাত্রী নই ওণার মুখে সে যুগের গল্প আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি বাড়ি ফিরে শৌভিক এবং তুত্তুরিকে শোনাই শৌভিক বাধ্য শ্রোতা বটে তবে তুত্তুরি বড়ই অসহিষ্ণু হিটলারের নামে কোন অকথা কুকথা শুনতে রাজি নয় প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আমার বাবার ডাকনাম হিটলার শুধু সেই বাচ্চা মেয়েটির প্রতি ওর বড় টান প্রায় বলে ওকে কেন মেরে ফেলল? অ্যান ফ্রাঙ্কের এমনই যাদু 

যাই হোক সাম্প্রতিক সান্যাল বাবু ওণার বিপুল সংগ্রহ থেকে কিছু সিনেমা ধার দিয়েছেন অবশ্য শর্ত এই যে সিনেমা গুলি দেখতে হবে এবং সম্পর্কিত ওনার প্রশ্নাবলীর সম্মুখীন হতে হবে দোনামোনা করে বললাম, এক নাগাড়ে অনেকগুলি সিনেমা দেখার ধৈর্য্য আমার নাই তাছাড়া তুত্তুরি সে অনুমতি দেবে না দ্বিতীয়ত ভায়োলেন্স আমার সয় না শ্লিন্ডডার্স লিস্ট আমি শেষ করতে পারিনি যেটুকু দেখেছিলাম,সেটাও দীর্ঘদিন আমায় তাড়িত করেছিল

ওনার নির্দেশ মোতাবেক প্রথম সিনেমা দেখলাম, “ডাউনফল হিটলারের জীবনের অন্তিম কয়েকদিনের গল্প ২৪শে এপ্রিল ১৯৪৫ থেকে গল্পের শুরু লাল ফৌজ বার্লিন থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে আছে রাশিয়ান আর্টিলারির গোলায় বার্লিন প্রায় ধ্বংসস্তূপ জার্মান বাহিনী পর্যুদস্ত অথচ পিছু হটার অনুমতি নেই মহান ফুয়েরার নখদন্তহীন সিংহ, তবু তেজ একটুও কমেনি এখানে হিটলারের অসহায় মানবিক রূপ অধিক দৃশ্যমান একদিকে জেদী একনায়ক, সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতাদের কথা কানেই তুলছেন না, ওপরদিকে নিজের তরুণী সেক্রেটারির সঙ্গে স্নেহশীল পিতার মত আচরণ করছেন পরাজয় আসন্ন বুঝে ওণার বিশ্বস্ত সেনানায়করা ওণাকে বারংবার অনুরোধ করে বার্লিন ত্যাগ করার জন্য উনি রাজী হননি সেনাপতি মঙ্কে ওণাকে আশ্বস্ত করে যে শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও বার্লিনকে রক্ষা করা হবে, শুধু মহিলা, শিশু,বৃদ্ধ এবং আহতদের বার্লিন ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হোক উনি তাতে রাজি হননি হিটলারের মতে যুদ্ধে কোন সিভিলিয়ান থাকে না জার্মান জাতি তাদের এই পরিণতি নিজেরা ডেকে এনেছে যুদ্ধে আহত জার্মান সৈন্যদের নির্বিচারে হত্যা করা হয় ১২-১৪বছরের বালক বালিকাদের হাতে বাজুকা কামান তুলে দেওয়া হয়, রাশিয়ান সৈন্যদের মোকাবিলা করার জন্য 

পরাজয় সমীপে বুঝে ফুয়েরার সিদ্ধান্ত নেন উনি আত্মহত্যা করবেন সঙ্গী চিরসাথী ইভা ব্রাউন মৃত্যুর পূর্বে মিনিস্টার ডেকে বিবাহজালে আবদ্ধ হলেন দোহে আগে হিটলারের প্রিয় কুকুর ব্লন্ডিকে সাইনাইড ক্যাপসুল খাওয়ানো হল এবার হিটলার আর ইভার পালা ফুয়েরারে পছন্দ গলায় পিস্তলের নল ঢুকিয়ে আলতো করে ট্রিগার দাবানো, ইভার তাতে ভয়ানক আপত্তি মৃত্যুর পর সুন্দরি থাকতে চান তাই পটাসিয়াম সায়নাইড বিশ্বাসী বডিগার্ডকে হিটলার নির্দেশ দিলেন মৃত্যুর পরও ওণার দেহ যেন রাশিয়ানরা স্পর্শ করতে না পারে, দাহ করা হয় যেন ওণাদের নশ্বর শরীর ইতিমধ্যে অস্ত্রের ভাঁড়ার খালি একে একে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন ওণার প্রিয়পাত্রেরা হিমলার আত্মসমর্পণ করেছে মিত্রপক্ষের কাছে এমনকি হিটলারের বাঁ হাত গোয়েরিং অবধি এই সুযোগে ক্ষমতাদখল করতে উদ্যোগী হয়েছে ক্ষুব্ধ আহত হিটলার নির্দেশ দিলেন গোয়েবল্সকেও সপরিবারে বার্লিন ত্যাগ করতে কাঁদতে কাঁদতে গোয়েবলস্ জানালেন ফুয়েরারের সব নির্দেশ তিনি আঁখি বন্ধ করে শুনেছেন, কিন্তু এই দুর্দিনে তিনি তাঁর ফুয়েরারকে পরিত্যাগ করতে নাচার গোয়েবলসের স্ত্রী মাগদা নিজ হাতে তার ছয় শিশু সন্তানকে বিষপান করালেন অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ হিটলার আর ইভা সকলকে বিদায় জানিয়ে বাঙ্কারে ঢুকলেন ছবি এর পরও কিছুটা এগোয় বার্লিনের সম্পূর্ণ পতনের সাথে ছবি শেষ হয় 
নেশাগ্রস্তের মত আড়াই ঘন্টা হাঁ করে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে রইলাম বহুদিন বাদে এত ভাল সিনেমা দেখলাম যে জার্মান অভিনেতা হিটলারের চরিত্রচিত্রণ করেছেন তাকে শত কুর্ণিশ ভাললাগার রেশটা রয়েই গেছে

Thursday 31 December 2015

বিনি


ফাঁকা মাঠ, মিষ্টি শিরশিরে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। দূরে নিওন জ্বলা রাজপথ। বাবা পকেট থেকে এক প্যাকেট বিস্কিট আর এক বোতল জল বার করে মাটিতে রাখল। বাবার গায়ে লেপটে আছি। খুব ভাল লাগছে। কি মিষ্টি গন্ধ বাবার গায়ে, মায়ের মত মূল্যবান পারফিউম লাগায় না, পাউডার পর্যন্ত লাগায় না, তাও কেমন যেন অদ্ভুত ভালবাসার গন্ধ বাবার শরীরে। খানিকক্ষণ নীরব থাকার পর, বাবা বলল, “ ফ্রিসবি খেলবি বিনি?” উল্লাসে লাফিয়ে উঠলাম, ঈশ কতদিন ফ্রিসবি খেলিনি। উফ বিলুটা থাকলে খুব মজা হত। বিলু আমার ভাই। সহোদর নয়, তাঁর থেকেও অনেক বেশি। হুশ করে বাবা ছুঁড়ে দিল, দৌড়লাম ধরতে, মোটা হয়ে গেছি নির্ঘাত, আগের দ্রুততা আর নেই। হাঁফ ধরে যাচ্ছে, অব্যবহারে জঙ ধরে গেছে গাঁটে গাঁটে। চোখটাও গেছে, অন্ধকারে ঠাওর করতে সময় লাগছে। বেশ কয়েক দান খেলা হল, ক্লান্ত লাগলেও মজা লাগছে খুব, নাচছি আমি। এই রে এবারেরটা বেশ জোরেই ছুঁড়েছে, বাবা, এক ঝলক বাবার দিকে তাকিয়ে দৌড়ালাম ওটা ধরতে। ফ্রিসবিটা কুড়িয়েছি সবে, হঠাত দেখি, আমাদের গাড়িটা স্টার্ট দিল। এইরে, এখুনি ফিরতে হবে নাকি? কি ভাল লাগছিল! মাথা নিছু করে গুটগুট করে হাঁটা লাগালাম গাড়ির দিকে, একি? গাড়িটা যে আমায় না নিয়েই চলে যাচ্ছে? “বাবাআআআআ” খুব জোরে হাঁক পাড়লাম। গাড়িটা দাঁড়ালো না তো। হে ঠাকুর এ কি হল? প্রাণপণে দৌড়ালাম গাড়ির পিছনে। “বাবাআআ! ড্রাইভার কাকুউউউউ।” গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছি রাজপথ ধরে, দৌড়তেই থাকলাম, যতক্ষণ গাড়িটা চোখে পড়ল। চোখের আড়াল হবার পরও উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়চ্ছিলাম, দম ফুরিয়ে আসছিল, কে যেন বলল, “আরে?? গাড়ি চাপা পড়ে মরার শখ হয়েছে না কি রে??”  
বাবা তাহলে আমায় রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে গেল? ডুগরে ডুগরে কাঁদতে লাগলাম। এই ছিল আমার কপালে? অবশ্য যার নিজের মাই তাকে বেচে দেয়, সে পরের থেকে কি প্রত্যাশা করবে? জন্মদাত্রীর কথা আর মনেই পড়ে না। কতদিনই বা পেয়েছি তাকে? আমার বয়স যখন সাত দিন, মায়ের বাবু আমায় বেচে দেয়। এই বাবা মা, কম্বলে মুড়ে আমায় নিয়ে আসে আমাদের বাড়ি। কি ভাল বাসত এরা আমায়। বাবা মায়ের বিয়ের চার বছর পরেও ওদের কোন সন্তান হয়নি, মা নাকি একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছিল ডিপ্রেশনের চোরাবালিতে। আমিই নাকি মাকে তুলে আনি, সেই অতল চোরাবালি থেকে। কি ভাল কেটেছিল কটা বছর। রাতে বাবা মার মাঝে শুতাম। সারা রাত ওদের ওমে তফা ঘুম হত। হটাত একদিন খেয়াল করলাম, মা বেশ মোটা হয়ে গেছে। অল্পেই হাঁপিয়ে পড়ছে। আমাকে আর কোলে নিচ্ছে না। গায়ে হাত দিলেই আঁতকে উঠছে, “বিনি দূরে থাক।” মাস্টার বেডরুমে আমার শোয়া বন্ধ হয়ে গেল। কিছুদিন বাদে, মা কোথায় যেন গেল। বাবাও আর আমার দিকে ধ্যান দিত না। কাজের মাসি অবশ্য যত্ন নিত খুবই। জানতাম সবই মায়ের নির্দেশ। আমার সব কিছুই মায়ের নজরে থাকে। তবু, মায়ের জন্য রাতে কাঁদতাম। পাঁচ সাত দিনের মধ্যেই মা ফিরে এল, কোলে একটা পুটু। বাবা কোলে করে নিয়ে গিয়ে আলাপ করিয়ে দিল, “তোমার ভাই। বিলু।” ভাই? আমার ভাই? এত ছোট্ট? যে তুলোর পুতুল গুলোকে আমার ছিঁড়তে হেব্বি মজা লাগে, ঠিক তাদের মত দেখতে। পুটুস পুটুস চায়, খিলখিলিয়ে হাসে। গায়ে হাত দিতে গেলাম, মা আঁতকে উঠল, “বিনিইইই। ছিঃ। গায়ে হাত দিও না। দূরে থাক।”একটা চুমু খাবার অদম্য ইচ্ছে দমন করে মাথা নিচু করে চলে আসছিলাম, বাবা অট্টহাস্য করে আবার কোলে তুলে নিল। “বিনি ও বড্ড ছোট বাবু। একটু বড় হলেই তোর সাথে খেলবে। মন খারাপ করে না সোনা।”
আমি বাবার সাথে শুতাম, আর বিলু মায়ের সাথে। বিলুর দু বছর হতেই, আমরা দু ভাইবোন এক ঘরে শোয়া শুরু করলাম। কি যে অসম্ভব ভালবাসতাম বিলুকে। সারা ক্ষণ বিলুর ছায়াসঙ্গী ছিলাম আমি। বিলু যে আমার ভাগের আদর ভালবাসা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে, সেটা বুঝতাম। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস ছিল না। ছোট্ট বিলু কেমন দিনে দিনে বড় হয়ে উঠল। স্কুলে যেতে লাগল। একটা পুঁচকে বান্ধবীও হল। সব গোপন কথা শুধু আমাকে বলত, আমার ভাই বিলু।
কিছুদিন হল, হাতে পায়ে তেমন জোর পাচ্ছিলাম না। অল্পেতেই হাঁপিয়ে পড়ছিলাম। বিলুর সাথে তাল মিলিয়ে দস্যিপনা করতে পারছিলাম না। মা খালি বলত, “বিনি দিনদিন এত অলস হয়ে পরছিস কেন?” খালি শুয়ে থাকতে ভাল লাগত। আর কি চুল উঠছিল, বাপরে বাপ। গোটা বাড়ি ময় আমার চুল। সাথে সাথে পেটের গণ্ডগোল। যত্র তত্র হয়ে যেত। ছোট এবং বড় উভয়ই, মা আর কাজের মাসি পাগল হয়ে যেত সাফাই করতে করতে। বাবা ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গেল, মুখপোড়া ডাক্তার ঠিক করতেই পারল না। মায়ের ভালবাসা ক্রমশ কমে আসছিল। বোঝা হয়ে পড়ছিলাম আমি। আমাকে দেখলেই মা আজকাল মুখ ঝামটা মারত।আজ তো লাঠির বাড়ি এক ঘা বসিয়ে দিল। বিলু স্কুলে যাবে, তাই ওকে গরম ভাত, মাখন আর ডিম সিদ্ধ করে তাড়াতাড়ি খাওয়াতে বসেছিল মা, মুহূর্তের জন্য উঠেছে, ফোন এসেছে বলে, অমনি আমি গিয়ে ভাতটা খেয়ে নিয়েছি। কেন যে খেলাম? বিলুর মুখের ভাত। গোটাটা খেতেও পারলাম না। শুধু শুধু এঁটো করলাম। মাখন, ডিম পেটেও সইল না, ড্রয়িং রুমটা নোংরা করলাম।
মায়ের হাতে মার খেয়ে চুপ করে মাটিতে বসেছিলাম। বাবা অফিস থেকে ফিরল। ফিরতেই মা এক গাদা নালিশ করল আমার নামে। খানিক ক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বাবা বলল, “চল বিনি। একটু ফ্রেশ হাওয়া খেয়ে আসি।” ভয়ে ভয়ে তাকালাম, মা রান্নাঘরে, বিলু পড়ছে, বাবার সাথে বেড়িয়ে পরলাম।

          আজ দুদিন হয়ে গেল, কিছু খাইনি। কি খাব? বাবার রেখে যাওয়া বিস্কুট আর জল, খুঁজে পাইনি। দৌড়তে দৌড়তে অনেক দূর চলে এসেছিলাম, সেই জায়গাটা আর চিনতে পারিনি। সেদিন কেন যে ফুটপাথে এসে উঠলাম? গাড়ি চাপা পড়ে মরলে ভাল হত। খালি মাঝে মাঝে ডুগরে ডুগরে কাঁদি। কে যেন মাথায় হাত বোলাচ্ছে, চোখ খুললাম, এক জোড়া কালো মোটা পা, মুখ তুললাম, সুইটি দিদি। এককালে বিলুকে পড়াতেন। মুখ নামিয়ে নিলাম, সুইটি দিদি ছোট্ট স্কার্ট সামলে উবু হয়ে বসল, “এটা কে রে? বিনি নাকি রে?” স্নেহাদ্র কণ্ঠ শুনে, আবার কান্না পাচ্ছে। সামলাতে গিয়েও ডুগরে উঠলাম। বুক ফাটা কান্না বেড়িয়ে এল, মুখ চোখ দিয়ে। “ তোকে এ ভাবে, অসহায় অবস্থায়, রাস্তায় ছেড়ে গেছে, বিনি? ছিঃ। এরা ভদ্রলোক?” সুইটি দিদির পুরুষ বন্ধুটি বলল, “ সুইটি, ফর হেভেন সেক, ডোন্ট স্টার্ট অল দিস। এসব ঝঞ্ঝাটে পরার দরকার কি সোনা? মনে নেই আগের বার কাকিমা কি রকম ক্ষেপে গিয়েছিলেন”  সুইটি দিদিও চলে গেল। যাবার সময়, একটু বিস্কুট রেখে গেল। আমি খাইনি। আশে পাশের কুকুর গুলোকে দিয়ে দিয়েছি। আধঘণ্টা পর,মাথা নিচু করে শুয়ে আছি, দূর থেকে কে যেন ডাকল, “বিনি।” মায়ের মত গলা। জানি মা নয়। আমার কান ভুল শুনছে। থাক, এই স্বপ্নের ঘোরেই থাকি। কিছুতেই চোখ খুলব না।  “বিনিইই” আবার যেন ডাকল মা, মাথায় এ কার হাত। চমকে তাকালাম, মা। মাই তো। অঝোরে কাঁদছে। পিছনে বিলু দাঁড়িয়ে, এক গাল হাসছে। দূরে বাবা ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে। বাবার পাশে, জেলারের মত, কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সুইটি দিদি।  মা –আমি এক সাথে কেঁদে উঠলাম। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে আমার নোংরা ধুলি মাখা মাথায় মুখ ঘষছে, আর বলছে, “ নালিশ করলাম, তো অমনি রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। যেন ও আমার মেয়ে নয়, রাস্তার কুত্তা। তোকে খুঁজে না পেলে আমিও বাঁচতাম না বিনি।” আমি চরম আবেগে বলে উঠলাম, “মাআআ।” লোকে অবশ্য শুনল, ভৌ ভৌভৌভৌ। ওমা আমি তো কুকুরই, তবে দিশি নেড়ি নই। খাস জার্মান শেফার্ড মশাই।    
#AmiAni #AninditasBlog