Saturday 1 September 2018

“গুলাববাগান”


এটা পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খণ্ডের সীমানা। মাঝখান থেকে উঁকি মারছে একখণ্ড উড়িষ্যা। স্টেশন থেকে আসার পথে সামসূল মিঞা রানিং কমেন্টারি দিয়ে চলেছেন, “এই আমরা আছি পশ্চিমবঙ্গে, এই পা রাখলুম ঝাড়খণ্ড, এই এই এই মাথা গলালো ওড়িশা। ” ভাদ্র মাসের চোখ ধাঁধানো স্বচ্ছ নীল আকাশে ইতি উতি পুঞ্জ পুঞ্জ সাদা মেঘের জটলা। সূর্যের প্রখর প্রতাপে তাকানো যাচ্ছে না। গাড়ি বলতে পাতি জিপ। তাও কবেকার কে জানে। জিপের বয়স বেশী না ড্রাইভারের বোঝা দায়। ড্রাইভারের নাম ইন্দিরা গান্ধী সোরেন। মহিলা নয়, দিব্যি গুঁফো বুড়ো একটা। সক্কাল সক্কাল মহুয়া না হাঁড়িয়া কি টেনেছে যম জানে,হাল্কা একটা মিষ্টি মিষ্টি পচা গন্ধে ম ম করছে জিপের ভিতরটা। গাড়ি প্রায় হাওয়ায় উড়ে চলেছে।
বাড়ির নাম, “গুলাব বাগান”। আমাদের কাছে এটা পশ্চিমের বাড়ি। বাবাদের ছোট বেলায় কারো তবিয়ৎ বিগড়োলে তাকে পশ্চিমের বাড়িতে পাঠানো হত। এখানকার টাটকা বাতাস, তরতাজা সব্জিপাতি আর সিড়িঙে অথচ সুস্বাদু দিশী মুরগির গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি আমরা চার খুড়তুতো জেঠতুতো ভাইবোন।  বাড়িটা আদতে আমার ঠাকুমার পিসেমশাই এর। উনি পরাধীন ভারতে বিশাল বড় সরকারী আমলা ছিলেন। দেশবিদেশ ঘুরে থিতু হয়েছিলেন এই গুলাব বাগানে এসে। গুলাব বাগান নাকি কোন উত্তর ভারতীয় ঠাকুরের রঙ মহল ছিল। এত লাম্পট্যের  সাক্ষী এ বাড়ি যে ঠাকুর সাহেবের এন্তেকাল হওয়া মাত্র তাঁর বিধবা স্ত্রী ঠাকুর সাহের এক ডজন রাখেইল (উপপত্নী) সমেত দিলেন এ বাড়ি বেচে। কিনে নিলেন ঠাকুমার পিসেমশাই।যতদিন ঠাকুমার পিসি পিসেমশাই জীবিত ছিলেন বছরে অন্তত একবার সবৎসা ঠাকুমা দাদু আসতেন এবাড়িতে। তারপর কি যে হল, পিসতুতো ভাইদের কোন আচরনে ভয়ানক ক্রদ্ধ হলেন ঠাকুমা,ব্যাস তারপর আর পিসির বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি ঠাকুমা। কারণটা কেউ জানে না। এমনকি দাদুকেও কখনও বলেনি ঠাকুমা। এদিক থেকেও যোগাযোগ রাখার কোন চেষ্টা কখনও কেউ করেনি। এর মাঝে মারা গেছেন ঠাকুমা-দাদু। মারা গেছে জেঠু-কাকুও। আচমকা মাস তিনেক আগে উকিলের চিঠি, ঠাকুমার শেষ পিসতুতো ভাইটিও মারা গেছেন এবং মৃত্যুর পূর্বে সমস্ত সম্পত্তি দানপত্র করে গেছেন ঠাকুমা এবং তাঁর অবর্তমানে তাঁর সন্তানদের।

পড়ে পাওয়া এই সম্পত্তি আপাততঃ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে আমার বাবা-দিদিভাই আর খুড়তুতো দুই ভাইয়ের। মগের মু্লুকে কে দেখভাল করবে এই সম্পত্তি। রোজ মিটিং হচ্ছে, বিনদাস একমাত্র আমি।এত খাটাবার মত মাথার জোর আমার নেই। তবে পশ্চিমের বাড়িকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে,  হঠাৎ পাওয়া তিনদিনের ছুটিতে তাই পাড়ি দিয়েছি গোলাপ বাগান। 
জীপটা প্রায় ভল্ট খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। জীপ থেকে নেমে জুড়িয়ে গেল চোখ। বিশাল দোতলা বাড়ি, তিনদিকে বাগান, আর পূবদিকে একটা মরা নদীর লালচে খাত। যা আপাততঃ জোয়ান হয়ে কুলকুল করে বইছে। সামসূল মিঞাই দেখভাল করেন। কোন কালে ওণার ঠাকুরদা, আমার ঠাকুমার পিসেমশাইয়ের খাস বাবুর্চী ছিলেন। সেই সময় থেকেই মুখোপাধ্যায় পরিবারের সাথে এদের আত্মীয়তার সূত্রপাত। সামসূল মিঞা অবিবাহিত। কাছেই থাকেন। বয়স সত্তরের মাঝামাঝি, তবে ভীষণ কর্মঠ। স্টেশনে উনি আমাদের ব্যাগ বইবার জন্য ঝোলাঝুলি করছিলেন, কিছুতেই শৌভিককে বইতে দেবেন না।“ জামাই মানুষ বলে কতা”। সেখানে একচোট শৌভিকের ধমক থেকে ঠাণ্ডা হন। আবার জিপ থামতেই দৌড়লেন ব্যাগ বইবেন বলে। দৌড়ল শৌভিকও,যথারীতি ওই জিতল।
দোতলায় আমাদের ঘরটা পূব মুখো। একটা জিনিস দেখলাম এত বড় বাড়ি, ঘর সাকুল্যে জনা ছয়েক। একতলায় তিন, দোতলায় তিন। বিশাল বারন্দা, সাদা কালো মার্বেলের নক্সা করা। ঘরগুলো বেশ বড়,চুনকাম করা। আবলুস কাঠের পালিশ চটা বিশাল খাটের পায়ের দিকে সুন্দরী পরীর হাতে ধরা প্রমাণ সাইজের আয়না। খাস বেলজিয়াম গ্লাস। শৌভিক বলল,“নাঃ ঠাকুর সাহেব বেশ রঙ্গীন মেজাজ ছিলেন। খাটেও আয়না?” ঘরে মানুষ সমান তিনটে জানলা। জানলা দিয়ে মরা নদী আর জঙ্গল দেখা যায়। এককালে কাপড়ের পাখা ছিল, এখন অবশ্য সাবেকী ডিসি পাখার গায়ে কনভার্টার লাগানো।
দুপুরে মাংস ভাত খেয়ে ছোট্ট একটু গড়িয়ে নিয়ে পড়ন্ত রোদে একটু হেঁটে এলাম। গরম বেশ ভালোই। তবে ঘাম তেমন হচ্ছে না। গ্রামটা বেশ কিছুটা দূরে। ফিরে এসে চা আর পকোড়া খেয়ে সামসুল চাচার গল্প শুনতে শুনতেই রাত ঘনিয়ে এল। রান্নার মাসির নাম মঙ্গলা। তিনি রান্নাবান্না করে, খাবার টেবিলে রেখে চলে গেলেন সন্ধ্যা ছটার মধ্যেই। চাচার গপ্প আর থামে না। বুঝলাম কথা বলার কাউকে পাননা। শৌভিক উঠে গেল দোতলায়। মোবাইলে কোন টাওয়ার নেই। তুত্তুরীকে রেখে এসেছি মা বাবার কাছে। খবর নেবার কোন উপায় নেই। উসখুস করছি দেখে উঠে পড়লেন চাচা, “চললাম গো বেটি। তুমি বারন্দায় তালা দিয়ে দাও। এদিকে চোর ছ্যাঁচড় তেমন নেই। তবু বলা যায় না। কাল সকাল হলেই চলে আসব। আমার কাছে চাবি আছে। উঠোন টপকে এগিয়ে দিলাম চাচাকে। চাচা সাইকেলে প্যাডেল শুরু করতেই, বন্ধ করে দিলাম সদর দরজা। ভারি খিল লাগিয়ে দেওয়া মাত্রই যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম বাকি দুনিয়া থেকে। বিশাল উঠোন,দুপাশের বাগানে চাপ চাপ দম বন্ধ করা অন্ধকারে জ্বলছে নিভছে পুঞ্জ পুঞ্জ জোনাকী। আকাশে মরা চাঁদের আলোয় দমবন্ধ-করা নিস্তব্ধতা। আচমকা ঘাড়ের রোম খাড়া হয়ে উঠল,পলকের জন্য মনে হল, আমি একা নই। ঠিক আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে কেউ। প্রতীক্ষা করছে আমার পরবর্তী পদক্ষেপের। বিনবিন করে ঘেমে উঠল কপাল, কি অপরিসীম আতঙ্ক যে গ্রাস করল বলে বোঝাতে পারলাম না। প্রাণ চাইছে চিৎকার করে ডাকি শৌভিককে, গলা শুকিয়ে কাঠ।
কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না, আচমকা চটি ফটফটিয়ে নেমে এল শৌভিক,“কি ব্যাপার?তখন থেকে ভূতের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?” দৌড়ে বারন্দায় গিয়ে উঠলাম,শৌভিককে জড়িয়ে কাঁপুনী আর কমে না। সব শুনে আমার বরের কি হাসি। “আরেঃ আমি তো ওপরের বারন্দায় পায়চারি করছিলাম। দেখলাম গপ্পে বুড়ো চলে গেল। তুই দরজা বন্ধ করলি, তারপর দেখি আর নড়েও না চড়েও না। বারন্দা থেকে বার দুয়েক চিৎকার করলাম,এই,চলে আয়। নট নড়নচড়ন। তখন নামতেই হল। ” হাউমাউ করে উঠলাম, আমি এখানে আর থাকব না। শৌভিক পাত্তাই দিল না। “দারুন জায়গা। আমার তো আর ফিরতেই ইচ্ছে করছে না। এত নিস্তব্ধতা, কানের আরাম। এই পরিবেশ তো স্বপ্ন। শুধু ড্রাই আসা উচিত হয়নি। কাল দেখি গপ্প দাদুর সাইকেলটা নিয়ে বেরোব। মহুয়া যদি পাই। ”
সেই মুহূর্ত থেকে শৌভিককে একদণ্ড ছাড়িনি। ও যেখানে আমি সেখানে। বার পঁচিশেক শৌভিক বলেছে,“ঘাড়ে পড়বি না। ”আমি নিরুপায়।
কত রাত কে জানে। লোডশেডিং। পাখা বন্ধ। তাতে সমস্যা নেই, ফুরফুরে হাওয়া আসছে নদী থেকে। তার সাথে পচা ভ্যাপসা একটা গন্ধ। শৌভিক অকাতরে ঘুমোচ্ছে,তাকে ধাক্কা মেরে জাগালাম,“কিছু কি পচেছে?” শৌভিক ঘুম চোখে কান্না জুড়ল,“উফ্ বাবারে!শান্তিতে ঘুমোতে দে অন্তত। কি পচবে এত রাতে?বৃষ্টি নেমেছে বোধহয়। সোঁদা গন্ধ পাচ্ছিস হয়তো। ”
আবার শুলাম। শৌভিকের আপত্তি সত্ত্বেও ওর হাতটা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছি। ঘুম আসছে না। পচা গন্ধ আবার ফেরত এসেছে। ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক জোড়া জোনাকী। এমন ভাবে ঘুরছে যেন কারো আগুন জ্বলা দুই চোখ। আচমকা কানের কাছে কার যেন নিশ্বাস পড়ল। গরম নিশ্বাস।
গায়ের সব রোম খাড়া হয়ে উঠল। তীব্র আতঙ্কে ছাপিয়ে উঠল দুই চোখ। কোথাও কোন শব্দোচ্চারিত হল না,অথচ মাথার ভিতর কে যেন গুনগুনিয়ে উঠল।
কখন যে বারন্দায় উঠে এসেছি জানি না। শৌভিক এখনও ঘুমোচ্ছে। বাইরে নিকষ কালো আঁধার। নিজের হাত পাও দেখা যায় না। দুই দিকের বাগানেও কোন জোনাকী নেই। সব জোনাকী যেন উড়ে এসছে দোতলার বারন্দায়। থোকা থোকা জোনাকীর আবডালে যেন কার অবয়ব। আমার পাশে উড়ে বেড়ানো এক জোড়া জোনাকী উড়ে গেল ঐ দঙ্গলের মাঝে। তারপর ঝুপ করে নিভে গেল সব জোনাকী।
এই তো দিব্যি দেখতে পাচ্ছি তাকে। বেশ সুদর্শন পুরুষ। বয়স কত হবে?তিরিশের কোটায় মনে হয়। মাথায় বাবরি চুল কাঁধ পর্যন্ত নেমেছে। চোখে গোল সোনালী চশমা। পরনে ধুতি পাঞ্জাবি। গায়ে কাশ্মীরি  দোশালা। টকটকে ফর্সা রঙ। তীক্ষ্ণ নাসা। এই অন্ধকারে এত কিছু দেখা সম্ভব নয়। তাহলে কি করে দেখছি জানি না। দুচোখে সৌম্য অথচ দিশেহারা দৃষ্টি।
উনি চুপ। চুপ আমিও। চুপ গোটা ঐরাচর। অথচ সিনেমার মত ঘটে যাচ্ছে না না ঘটনা। বাবু ঋষিকেশ বন্দোপাধ্যায়। কাশীর ধনাঢ্য বাঙালী পরিবারের কনিষ্ট পুত্র। বড় দুই ভাই বিলেত ফেরত ব্যারিষ্টার। ঋষি বাবু হলেন গান্ধীজীর অনুগামী। সাহেবী পোশাক ত্যাগ করে ধরলেন খাদি। বিলেত ফেরৎ নয় বলেই বোধহয় পসার তেমন জমল না। বড় দুই ভাই তারকা। ঋষি বাবু ঢুব দিলেন জ্ঞানের সাগরে। শুধু বই আর বই। মাঝেসাঝে বন্ধুবান্ধবদের ডাকাডাকিতে যোগ দেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। অচীরেই বুঝে যান এই দলাদলির নোংরা রাজনীতি আর ক্ষমতা দখলের লড়াই ওণার জন্য নয়। বাবার সঞ্চিত অর্থ আর নিজের সীমিত উপার্জনে দিব্যি চলে যায় ঋষি বাবুর। একে একে চলে গেলেন বাবা এবং মা। মার মৃত্যুর মাস তিনেকের মাথায় একদিন বড়দা আর মেজদা এসে হাজির ঋষির ঘরে। সঙ্গে এক অবাঙালী ডাক্তার। বই থেকে মুখ তুললেন ঋষি,একে?এবাড়ির বাঁধা ডাক্তার তো ডঃ ঘোষাল। আর তার ঘরে কেন? তিনি তো দিব্যি আছেন। এই মাত্র শরীরচর্চা করে উঠলেন।
পিছন পিছন ঢুকল চারচারটে মুস্কো বেহারী পহেলওয়ান। চারজনে মিলে চেপে ধরল ঋষি বাবুকে, কি যেন একটা ইনঞ্জেকশন প্যাঁক্  করে ফুটিয়ে দেওয়া হল ঋষি বাবুর শরীরে। আর তারপর নিকষ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হল ঋষি বাবুর চরাচর।
ঘুম ভাঙল গুলাব বাগানের দোতলার দক্ষিণের ঘরে। দুই হাত,দুই পায়ে মোটা লোহার বেড়ি। গালে দিন কয়েকের না কামানো দাড়ি। ঋষি বাবু গুলাব বাগান চিনতেন না। প্রথমে বুঝতেই পারলেন না কোথায় আছেন,বিস্তর টানাটানি করেও ছিঁড়ল না শিকল। বেশ খানিকক্ষণ বাচ্ছাদের মত হাউমাউ করে কাঁদলেন ঋষি বাবু। চিৎকার করলেন কেউ শুনল না। দরজা খুলল না। দুপুরে একপাল্লা দরজা খুলে ঢুকল মেজদার ছোট শালা। সাক্ষাৎ মহিষাসুরের মত চেহারা। ঠক করে নাবিয়ে রাখল অ্যালুমিনিয়ামের শানকিতে খানিক ভাত আর ডাল। আর একটা বাটিতে জল। মনকষ্টে দিন দুয়েক অভুক্ত রইলেন ঋষি বাবু। চিৎকার করে করে গলা চিরে ফেললেন। বদলে মহিষাসুর পিঠে বসিয়ে দিল দুচার ঘা লাঠির বাড়ি। “চুপ কর পাগল। নইলে মেরে মাটিতে পুঁতে দেব। কেউ জানতেও পারবে না। ” ভয়ে চুপ করে থাকেন ঋষি বাবু। শৌচাগারে যাবেন কি করে?ফলতঃ ঐ অবস্থাতেই ত্যাগ করতে বাধ্য হন মলমূত্র। ক্ষুধা চেপে কদিন থাকবেন?প্রাণধারনের তাগিদে ঝাঁপিয়ে পড়ে খান একবেলা একমুঠো চালের ভাত। শুধু বোঝেন না কেন?কেন এই যাতনা দেওয়া হচ্ছে তাঁকে? একদিন মেজদা এল,ঘরে ঢুকেই নাকে দামী রুমাল চাপা দিতে বাধ্য হল। ঋষি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,“মেজদা আমি পাগল নই। বিশ্বাস কর মেজদা আমি পাগল নই।”মেজদার সাথে সাথে ঢুকল তার তিন শালা। মেজদা তাচ্ছিল্যপূর্ণ ভাবে বলল, “দলিলে সই করে দে। তোর ভাগের সবটুকু টাকা পয়সা আমার আর দাদার নামে লিখে দিলে,ভেবে দেখা যাবে।”এত দিনে বোকা ঋষি বাবুর মাথায় ঢুকল, তাই। তাই জন্যই ওকে এভাবে পাগল প্রতিপন্ন করা। ছোটভাই পাগল বলে সব সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নিতে চায় বড় দুভাই। নিজের মায়ের পেটের দুভাই। দুচোখ দিয়ে দরদর করে ঝরে পড়ল জল। এই ছিল তোদের মনে?টাকা?টাকা জমিই সব। নিয়ে আয় দাদা, সই করেদি। মুখে বললেই তো পারতিস। এত যাতনা দেবার কি প্রয়োজন ছিল? নোংরা হাতে খসখস করে সই করলেন বাবু ঋষিকেশ বন্দোপাধ্যায়। এবার তো ছেড়ে দে। কিচ্ছু না বলে বেরিয়ে গেল তিন শালা আর মেজদা। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ঋষিকেশ, আচমকা হ্যাঁচকা টানে ঘুম ভাঙল।চতুর্দিকে চাপ চাপ অন্ধকার। গভীর নিশুতি রাত, মহিষাসুর টানতে টানতে নিয়ে চললেন ঋষি বাবুকে। “চলরে পাগল। আজ তোর মুক্তি। ”নিজের কানকেই বিশ্বাস হয়না যে। মুক্তি। আহঃ মুক্তি। আগে স্নান করতে হবে। নিজেরই মলমূত্রে আবৃত ঋষিকেশ। তারপর একজোড়া কাচা ধুতিচাদর চাই। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাবেন না। এসব বলতে বলতে অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে নামলেন।নিচের দালানকে আড়াআড়ি পেরিয়ে নামলেন উঠোনে,তারপর সদর দরজার দিকে না এগিয়ে,মহিষাসুর টানতে টানতে নিয়ে চলল বাগানের দিকে। ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন প্রথমে তারপর বুঝলেন ব্যাপার কি। বাগানের দখিন পূব কোণে খোঁড়া হয়েছে বিশাল গর্ত। তারপাশে দাঁড়িয়ে আছে বড়দা আর মেজদা। ঋষি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন,দীর্ঘ অনাহারে দুর্বল দেহ। পারলেন না। দমাদম লাঠি আর মুগুরের বাড়ি। চিৎকার করতে পারলেন না। মুখে গুঁজে দেওয়া হল দলা পাকানো গামছা। জ্ঞান লোপ পাবার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঋষিবাবু ফুসফুসে ভরে নিলেন কামিনী আর হাস্নুহানার সৌরভে, আর দুই নয়নে পুঞ্জ পুঞ্জ জোনাকীর মায়াময় আলো।
কখন দুচোখ দিয়ে ঝরতে শুরু করেছে প্লাবন বুঝিনি। এতক্ষণ যাঁর উপস্থিতি জাগাচ্ছিল সীমাহীন আতঙ্ক, আচমকা তার জন্যই করুণায় আচ্ছন্ন আমার হৃদয়। তিনি ডান হাত তুলে দেখালেন,পূব দক্ষিণকোণের বিশাল স্থলপদ্ম গাছের তলে নিদ্রিত আছেন বাবু ঋষিকেশ বন্দ্যো। সম্পত্তির ওপর সত্ত্বাধিকার ত্যাগ করা সত্ত্বেও যাকে বিশ্বাস করতে পারেনি তারই আপন সহোদরেরা। যদি কাল আদালতের শরণাপন্ন হন তিনি?তাই জোর করে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কোন মতে জানতে চাইলাম,“কি চান?” উনি অন্যমনস্ক ভাবে বললেন,“আর বাস্তুচ্যুত  হতে চাই না। ”
ফিরে চলেছি বাড়ির পথে, কথা দিয়েছি ঋষি বাবুকে আবার আসব ফিরে। আর আমি জীবিত থাকতে আর বাস্তুচ্যুত হতে হবে না তাঁকে। আমি বোঝাব। আপ্রাণ বোঝাব আমার আপনজনকে। বেচতে দেব না গুলাব বাগান কিছুতেই।
©Anindita  Bhattacharya  ©Anindita's Blog

Sunday 26 August 2018

রাখী -

সকাল থেকে রিন্টির মেজাজ সপ্তমে। বার চারেক বরকে খেঁচিয়েছে, বার দুয়েক মেয়েকে। একে রাখি, তায় রবিবার। সপুত্র ননদ এসে হাজির সকাল সকাল, তারপর থেকে শুধু ফরমাইশের বন্যা। মুচমুচে সোনালী আলু ভাজা করে দাও, লাঞ্চে মুড়ি ঘণ্ট করো, বাচ্ছা গুলোর ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন চাই। শুধু চাই,চাই আর চাই। সামান্যতম বিরক্তি প্রকাশ করলেই আহ্লাদী ননদ নকল সহানুভূতির সুরে শোনায়, “আহারে বেচারীর ভাই নেই তো। তাই ভাইবোনের টান বুঝবে কি করে?” শুনে রিন্টির কান ঝাঁ ঝাঁ করে, কে বলেছে? কোন শালা বলেছে রিন্টির ভাই নেই? এই লাইনটা ভাবা মাত্রই অসীম বিষাদে ডুবে যায়। হাঁপিয়ে ওঠা প্রাণ চায়, ছুটে চলে যায় সোবাসপুর। হাওড়া জেলার সীমানা বরাবর রূপনারায়ণের ধারে রিন্টিদের গ্রাম সোবাসপুর। নিকটবর্তী রেল ষ্টেশন দেউলটি। সোবাসপুর যেন এক স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন জুড়ে রাজত্ব করে তিন ভাইবোন রিন্টি-মিন্টি আর সোনা। ছোট বেলায় কেউ রিন্টিকে বলেইনি যে সোনা আর মিন্টি আসলে ওর জেঠতুতো দাদা-দিদি। তিন ভাইবোন যেন হরিহর আত্মা। সোনা ওরফে দাদাভাই ছিল রিন্টির জান,রিন্টির সুপারহিরো। কি না পারতো দাদা, বাতিল সাইকেলের চাকাকে একটা তারের আঙটার সাহায্যে কি সুন্দর গোটা গাঁয়ে ঘোরাত সোনা। পাড়ে বেঁধে রাখা জেলে ডিঙি খুলে দুই বোনকে সওয়ারি করে  এপাড় ওপাড় করত দাদা। উঁচু গাছের মগডাল থেকে সটান ডাইভ মেরে জলে ঝাঁপাত দাদা। পিঁপড়ের ডিম দিয়ে চার করে মাছ ধরত দাদা। আবার হাইস্কুল থেকে ফিরে এসে, দুই বোনের সাথে পুতুল খেলত দাদা। দাদা আর দিদিময় জগত ছিল রিন্টির। জেঠিমাকে মা বলে ডাকত আর নিজের মাকে চম্পা বলত রিন্টি।
কি সব দিন ছিল। দাদা কলেজে ভর্তি হল। ফিরে এসে কি সব রোমহর্ষক গল্প। প্রথম বার বিপরীত লিঙ্গের সাথে অবাধ মেলামেশা, উফ দাদার গপ্প শুনে গায়ে রীতিমত কাঁটা দিত। কলেজ ভর্তি মেয়ে, যার সাথে খুশি, যেখানে খুশি, যতক্ষণ খুশি কথা বলা যায়। দাদার বান্ধবীদের নাম রীতিমত মুখস্থ ছিল রিন্টি-মিন্টির। অথচ দাদা প্রেমে পড়ল, গাঁয়েরই পিয়ালীদির। কত রাত যে তিনজনে এইসব গল্প করে কাটিয়েছে। তারপর আর্মিতে চাকরী পেয়ে গেল দাদা। পিয়ালীদি গেল মাস্টার্স করতে বর্ধমান। একা রয়ে গেল রিন্টি আর মিন্টি। সেরাতের কথা আজো ভোলেনি রিন্টি, দুই বোনে জড়াজড়ি করে ঘুমচ্ছিল, আচমকা মা ঢুকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল রিন্টিকে। সেই রাতেই বাবা ঘোষণা করল, মিন্টিকে একদম বর্জন করতে হবে। জেঠিমাকে আর মা বলে ডাকা চলবে না। ওদের ঘরে টিভি দেখতে যাওয়া চলবে না। কারণ? বাবা নাকি পঞ্চায়েত থেকে জানতে পেরেছে, সব সম্পত্তি গোপনে সোনাদার নামে করে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে জেঠু, বংশের একমাত্র ছেলে বলে কথা।
এর পরের দিন গুলো মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন। বাড়ির উঠোনটা হয়ে দাঁড়াল আখড়া। দিনরাত খেস্তাখিস্তি, ঝগড়া- ঝগড়ি। স্কুলেও মিন্টি আর কথা বলে না রিন্টির সাথে। সিঁড়িতে দেখা হলে রিন্টি হ্যাংলার মত তাকায় দিদি- জেঠিমা-জেঠুর দিকে। কেউ ফিরেও তাকায় না। রান্নাঘর বরাবর কাপড় টাঙানো হল, যাতে মা আর জেঠিমাকে একে অপরের মুখ না দেখতে হয়। এদের রান্নাঘরে মাংসের সৌরভ তো ওদের ডিমের ঝোল। ওদের ইলিশ তো এদের সিদ্ধ ভাত। কান্না পেত রিন্টির, ইচ্ছে করত কোথাও হারিয়ে যেতে। এরই মধ্যে সোনাদা ফিরল ছুটিতে। কি গম্ভীর বাপরে। কি সব নিয়ে এল,চকলেট লজেন্স। মিন্টি বারন্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেত, এদিক থেকে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে থাকত রিন্টি। দাদা একটাও কথা বলল না, একদিন রাতে খেয়ে দুজনেই সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, রিন্টিই সাহস করে ডাকল, “দাদা!” সোনা থেমে গেল, পিছন ফিরে তাকাল না। রিন্টি কোনমতে কান্না গিলে বলল, “ কেমন আছিস দাদা? কথা বলবি না?” সোনা কোন কথা বলল না, পিছনে ফিরেও তাকাল না। গটগট করে উঠে গেল নিজের ঘরে। দড়াম করে বন্ধ হয়ে যাওয়া দরজা, যেন চাবুক হয়ে পড়ল ক্লাস সিক্সের রিন্টির মুখে। 
সেবারে ফিরে যাবার আগেই সোনাদার উদ্যোগে সম্পত্তি তিন ভাগে ভাগ হল। সনা-মিন্টি আর রিন্টির নামে।দু ভাগ পেল জেঠু, আর এক ভাগ বাবা। এত অশান্তি,করে পাওয়া সম্পত্তি বাবার কপালে সইল কোথায়? ক্যান্সার ধরা পড়ল। বাবা যেদিন  মারা গেল, রিন্টির টেস্টের রেজাল্ট বেরিয়েছে। মৃত বাবার বুকের ওপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতেও রিন্টি শুনতে পেল, জেঠিমা কাকে যেন বলছে, “ভগবান ঠিকই আছেন। দেবতুল্য দাদার নামে মিথ্যা অপবাদ? সইল এই সম্পত্তি তোর?”
মাধ্যমিক হয়ে যাবার পরপরই মা মেয়ে চলে এল মামার বাড়ি। বাকি পড়াশোনা এখান থেকেই। এরপর দুবারই মাত্র সোবাসপুর গেছে রিন্টি, দাদা আর দিদির বিয়েতে।  দাদার বিয়ের সময় জেঠু নিজে নিমন্ত্রণ করতেও আসেনি, কূল পুরোহিত নিমাই কাকার হাতে কার্ড পাঠিয়ে দিয়েছিল। মা যেতেও চায়নি। রিন্টির আগ্রহেই যাওয়া। রিন্টির ধারণা ছিল এতদিনে নিশ্চয় সবাই সব ভুলে গেছে। গিয়ে বেদম আহত হয়েছিল রিন্টি। কতখানি অনাহুত ওরা মা আর মেয়ে প্রতি পদক্ষেপে বুঝেছিল সেদিনের রিন্টি। তখনও উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোয়নি। ওর সামনে জেঠিমা নতুন বউয়ের সাথে মিন্টিদির আলাপ করিয়ে দিল, “তোমার তো এই একটিই ননদ। দুজনে মিলে মিশে থেকো।“ রিন্টির সাথে কেউ কারো আলাপ করালো না।
মিন্টির বিয়ের আগে অবশ্য জেঠু স্বয়ং এসেছিল।সঙ্গে সোনাদাও। কি সৌভাগ্য যে ঠিক সেই সময়ই কলেজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট ভিজিটে নিয়ে গিয়েছিল রিন্টিদের। ততদিনে কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর। ইতিমধ্যে গাঁয়ের  বাড়ি জমির অংশ সব জেঠুকেই বেচে দিয়েছে মা। কে যাবে? কে তত্ত্বতলাশ করবে? কি আশ্চর্য ভাবে ওদের ক্ষমা করে দিয়েছিল মা। বারবার বলত, “আমি না থাকলে ওরাই তো থাকবে। ওরাই তো তোর আপনজন।“ হাসি পেত রিন্টির আজও পায়। নিয়মিত ফোন করত জেঠু শেষের দিকে। এখন মাও করে। খবরাখবর দেওয়া নেওয়া চলে।
মিন্টির বিয়েতে কিছুতে যেতে চায়নি রিন্টি। দাদার বিয়ের কথা ভাবলে আজও বুক টনটন করে। দাদা আর পিয়ালীদির মধ্যে কম চিঠি দেওয়া নেওয়া করেছে রিন্টি? অথচ কেউ চিনল না সেদিন ওকে? মা জবরদস্তি নিয়ে গিয়েছিল দিদির বিয়েতে। রিন্টির শর্ত মেনে বিয়ের দিন সন্ধ্যায় গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া হয়েছিল। যাব- খাব- চলে আসব, এই শর্তে গিয়েছিল রিন্টি। লাল বেনারসি, ফুল আর সোনার গয়নায় ঝলমল করছিল মিন্টি। দিদি তুই চলে যাচ্ছিস? বুক চিরে এই কথা গুলো বেরিয়ে আসতে চাইছিল আর চোখ ফেটে জল। মিন্টির মুখটা কি শুকনো লাগছিল। রিন্টিকে দেখে এক গাল হেসে ডাকল, “এই তোর সময় হল, বোন?” রিন্টির ইচ্ছে করছিল কাঁদতে কাঁদতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিদির বুকে। ক্লাস সিক্স অবধি যাকে জড়িয়ে ঘুমাত, সে আজ চিরকালের মত পর হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পারল কই? হাল্কা মাথা নেড়ে, অনেক দূরে একটা চেয়ারে গিয়ে বসল। মিন্টির দুচোখে কি সেদিন ঘনিয়ে এসেছিল ব্যথার বাদল?কে জানে?রিন্টি তখন ব্যস্ত ছিল নিজের ঝাপসা দৃষ্টিকে অগোচরে রাখতে।
খেয়ে বেরোচ্ছে, গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে, দৌড়ে এল দাদা।“কাকিমা? চলে যাচ্ছ?” মা দাদাকে বুকে জড়িয়ে কত কথা বলল। রিন্টির অবাক লাগছিল, মা’ই না বুঝিয়েছিল, এরা আমার নিজের না জেঠতুতো দাদা-দিদি? দাদা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিল, “ওকে যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে দিও না।“ রিন্টির বিয়েতে ওর আপত্তি সত্ত্বেও মা জেঠুদের ডেকে ছিল। কন্যা কর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জেঠু। দাদা- বৌদি আর দিদির অথিতি আপ্যায়নের সুখ্যাতি রিন্টির শ্বশুর বাড়ির লোক আজও করে। সবই হল, শুধু রিন্টি কাউকে ক্ষমা করতে পারল কই?
বিয়ের পর কেটে গেছে এক দশক। মেয়ের বয়স প্রায় আট। একটি বারও দাদা- দিদিকে ফোন করেনি রিন্টি। যোগাযোগও রাখেনি। জেঠু মারা যেতে যায়ও নি। কেঁদে ছিল খুব। কিন্তু যায়নি। কখন যে চোখ দিয়ে জল ঝরতে শুরু করেছে খেয়াল করেনি রিন্টি। সুপ্রতিম এসে হাতটা বাড়িয়ে দিল। চোখ মুছে, ভ্রূ কুঁচকে রিন্টি বলল, “কি?” সুপ্রতিমের অন্য হাতে একটা রাখি। “নে। বেঁধে দে।“ রিন্টি চোখ মুছে বলল, ন্যাকামি হচ্ছে? নিজের বরকে কেউ রাখি পরায়?” “কেন? স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তো এমনি তেই গাধার ইয়ে, যাই হোক, আর নেই। তোমার গায়ে হাত দিলেই তোমার ঘুম পায়, না হলে হাড় মড়মড়ি ব্যামো হয়। রাখি বাঁধলেই দোষ? কেউ তো দেখছে না, বেঁধেই দাও। আর কাউকে না কাউকে বাঁধার জন্য এমনি তেই ছটপট করছিস, তো আমিই সই।“ রিন্টি ঠোঁট বেঁকিয়ে ফোঁৎ করে একটা শ্বাস ফেলে, এক ধাক্কা মারল বরকে। সুপ্রতিম হাসতে হাসতে বলল, “এত ইগো কিসের? যার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছিস, তাঁকে নাহয় একবার ফোনই করলি?” “নম্বর জানি না। তাছাড়া দাদাও তো কখনও ফোন করেনি।” কান্না চেপে বলল রিন্টি। সুপ্রতিম হাসি চেপে ব্রেনি।সে দ্যাখ তোকে ভয় পায় নির্ঘাত। যা রাগী তুই। আমিই ভয় পাই, গায়ে হাত দিতে।তাই রাখি নিয়ে এসেছি-“ যুগলে হেসে উঠল। সুপ্রতিম কিছু ভেবে টুসকি মেরে বলল, ফেসবুকে আছে তো? মেসেজ কর।“ রিন্টি গলা ঝেড়ে বলল, “আমায় তো রিকোয়েস্ট পাঠায়নি।“ সুপ্রতিম অধৈর্য হয়ে বলল, “ঐ রোগেই মরেছে বাঙালী। কি সস্তা ইগো মাইরি। দাদা তো বড়। গুরুজন। উনি কেন পাঠাবেন? যাতে তুই নাকচ করে দিতে পারিস? মর শালা। তোকে ভালো বুদ্ধি দিয়েও লাভ নেই। গাড়ল কাহিকা।“ সুপ্রতিম রেগে ঘর থেকে চলে গেছে, মিনিট পনেরো হল। রিন্টি কিছুক্ষণ গুমরে বসে রইল, তারপর বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। তারপর দৌড়ে ফিরে এল। পাগলের মত মোবাইলে ঘেঁটে বার করল দাদাকে,তারপর কাঁপা হাতে লিখল,” সোনা দা” মুছে দিয়ে আবার লিখল, “দাদা। দাদারে, কেমন আছিস দাদা? কথা বলবি না?” বহুদূরে আম্বালায় সৈন্য ছাউনিতে এক প্রৌঢ়ের চোখে নামল অকাল প্লাবন, অনভ্যস্ত হাতে টাইপ করতে লাগল,” রিন্টি? কেমন আছিস বোনু? আমি এতদিন ভালো ছিলাম না রে, হঠাৎ মনে হচ্ছে খুব ভালো আছি।“ রিন্টি আবার লিখল, “তোর জন্য অনেক গুলো রাখী জমিয়ে রেখেছি রে দাদা, কবে আসবি?” আসবে। সোনা জলদিই আসবে তার রিন্টি আর মিন্টির কাছে।
©Anindita's blog