Thursday 30 April 2015

একটি ঘেঁটে যাওয়া গল্প




মার্চ মাস। প্রচণ্ড কাজের চাপ। হঠাৎ মুঠো ফোনটির প্রবল চিৎকার। তাকিয়ে দেখি রাতুল। এই কর্পোরেট দুনিয়ার লোকজন আমাদের কি ভাবে কে জানে? সরকারি কর্মচারী মানেই যেন অফিসে সংবাদ প্ত্র পড়ে বা গসিপ করে। রাতে ফোন করলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হত কে জানে?
        বেজার গলায় বললাম, “খুব চাপ। যা বলার খুব তাড়াতাড়ি বলে ফেল।” বিদ্রুপ এবং শ্লেষ এর প্রত্যাশা ছিল। আমাকে নিরাশ করে, অদ্ভুত হেরে যাওয়া গলায় রাতুল বলল, “ জানি তুই ব্যস্ত। অসময়ে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু থাকতে পারলাম না রে। এই মাত্র আমার জীবনের চরম সর্বনাশটা ঘটে গেল।
        “মানে?” ধড়াস করে উঠলো বুক। তবে কি কাকু – কাকিমার কিছু হয়ে গেল? রাতুল ওদের একমাত্র আদরের নাড়ুগোপাল। দিদি বিয়ে করে দুবাই চলে যাবার পর থেকে ওদের জগত রাতুলকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। নাকি অরো? রাতুলের এক মাত্র পুত্র। পুরো দেব শিশু। হে ঈশ্বর অরোর যেন কিছু না হয়। “রাতুল!  হতচ্ছাড়া  চুপ করে আছিস কেন? বল? কি হল?”
        রাতুল হতাশ গলায় বলল, “আই আম গেটিং ডিভোর্সড্।” “মানে? কি প্রলাপ বকছিস? অফিস টাইমে গাঁজা খেয়েছিস নাকি?” আড় চোখে ক্যালেন্ডারটা দেখে নিলাম, না এপ্রিল এখনো পড়েনি। এটা আমার বা রাতুলের জন্ম বা বিয়ের দিন ও নয় যে সারপ্রাইজ দেবে, তবে কি????” উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলাম, “বল না শালা। দর বাড়াচ্ছিস কেন?” রাতুল কি কান্না চাপছে? নাহ আমারই মনের ভুল, নাকি???রাতুল, থেমে থেমে বলল, “আমি কলেজ স্কোয়ারে। প্রিয়াঙ্কা ডেকেছিল। বলল এই প্রেসিডেন্সী থেকেই শুরু হয়েছিল, তাই এখানেই শেষ হয়ে যাক সবকিছু।”
        “প্রিয়াঙ্কা ডেকেছিল মানে?” প্রিয়াঙ্কা রাতুলের স্ত্রী। বহরমপুরের মেয়ে। ওরা অবাঙালি। প্রেসিডেন্সীতে রাতুলের সহপাঠিনী ছিল। সেখান থেকেই প্রেম। পরের বছর রাতুল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ব্যাঙ্গালোর চলে গেলেও ওদের সম্পর্কটা টিকেই যায়ঠিক যেমন আমাদের বন্ধুত্ব। রাতুল, সাদিক, রাফিয়া, দ্বৈপায়ন, শ্রেয়সী আর আমি অনি। সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে আমরা একে অপরের ঘনিষ্টতম বন্ধু। সময় ও আমাদের মধ্যে ঢুকতে সাহস পায়নি।
        প্রিয়াঙ্কা কলেজে পড়ায়। ওর কলেজ বহরমপুর থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তাই ও অরোকে নিয়ে নিজের বাবা-মার কাছে থাকে। লম্বা ছুটি পড়লে ওরা কলকাতায় আসে। না হলে রাতুল যায়। কর্পোরেট চাকরি মানেই চাকরগিরি তাই প্রতি সপ্তাহান্তে না পারলেও সুযোগ পেলেই কেটে পড়ে। প্রিয়াঙ্কার ওকে ডেকে পাঠানো ব্যাপারটা আমার বোধগম্য হল না। প্রিয়াঙ্কা কলকাতায় এলে তো রাতুলদের সল্টলেকের বাড়িতেই উঠবে, তা হলে? রাতুল বলল, “ও সকালের ট্রেনে এসেছে, রাতের ট্রেনে ফিরে যাবে।” বুঝলাম জল অনেক দূর গড়িয়েছে। রাতুল কি রকম ভেবলে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “সাদিককে ফোনে পাচ্ছি না। আমি এখন কি করব?”
        সাদিক কোথায়? সেই ভূ-মধ্যসাগরে। জাহাজে চাকরি করে সাদিক। বছরে ন মাসই বাইরে। ফেসবুক আর হোয়াটস্ এ্যাপের কল্যাণে অবশ্য সাদিক সর্বদাই আমাদের সাথী। চিরকাল রাতুলের রক্ষাকর্তা সাদিক। আমাদের মধ্যে সবথেকে রগচটা, সবথেকে ডাকাবুকো। রাফিয়ার মত শান্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে যে কি করে সাদিকের প্রেমে পড়েছিল কে জানে? যাই হোক বিয়ে করে সুখেই আছে দুটোতে।
        মাথা কাজ করছিল না। বললাম, “রাতুল ওখানেই থাক। আমি আসছি।” সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সাদিক বাদে একে একে সবাইকে ফোন করলাম। কেউ কিছু বুঝতে পারছি না। দ্বৈপ্য অর্থাৎ দ্বৈপায়ন আর রাফিয়া বলল এক্ষুনি আসছে। শ্রেয়ার মিটিং চলছে, ৪টের আগে পৌছতে পারবে না। রাতুলকে নিয়ে আমরা সবাই কফি হাউসে গিয়ে বসেছিসেই কফি হাউস রাতুল-প্রিয়াঙ্কা, সাদিক-রাফিয়া, সৌর-আমি না জানি কত সফল প্রেমের সাক্ষী। রাতুলকে দেখে মায়া লাগছিল, উদ্ভ্রান্তের মত তাকাচ্ছে, অপ্রকৃ্তিস্থের মত কথা বলছে। যা বুঝলাম, প্রিয়াঙ্কা আজ সকালে ওকে ডেকে বলেছে, “সব শেষ। তোমার সাথে আমার পোষাচ্ছে না।” “পোষাচ্ছে না মানে?” রাফিয়া আর আমি সমস্বরে চিৎকার করে উঠলাম। শ্রেয়া কঠোর স্বরে বলল, “রাতুল! সত্যি কথা বল। কি বাঁধিয়েছিস?” রাতুলের সুন্দরী নারী দেখলেই ছোঁকছোঁক করার অভ্যেস সুবিদিত।প্রিয়াঙ্কারও তা অজানা নয়। তবে এ নিয়ে কখন ও কোন বিরোধ বা দাম্পত্য কলহের কথা শুনিনি। রাতুল কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “বিশ্বাস কর, আমি কিছু জানি না।”
        সাদিক অনলাইন হয়েই হোয়াটস্ এ্যাপ কাঁপাতে লাগল। রাতুলকে বলল, এখুনি বহরমপুর গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে। প্রয়োজন হলে প্রিয়াঙ্কার পায়ে ধরে মানাতে। প্রিয়াঙ্কার বাবার সাথে বহরমপুরের এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্যাক্তির দহরমমহরম আছে। প্রণয় পর্বে উনি এক বার রাতুলকে হুমকি দিয়েছিলেন, যে বহরমপুরে পা দিলেই গায়েব করে দেবেন। সেই ভয়ে কি না জানি না, রাতুল না না অজুহাত দেখাতে লাগল। বিরক্ত হয়ে শেষে দ্বৈপ্য বলল, “ আমি যাব। তোকে একা যেতে হবে নাকাল সকালেই চল।
পরের দিন, বিকাল বেলায়, দ্বৈপ্যর ফোন। কনফারেন্সে রাফিয়া, শ্রেয়া আর আমি তিন জনেই কানেক্ট হলাম। রাতুল, হাপুস নয়নে কেঁদে যাচ্ছে। দ্বৈপ্যর মত শান্ত ছেলে, যার মুখে কোনদিন অসংস্কৃত শব্দ শুনিনি,অসম্ভব উত্তেজিত হয়ে ষাঁড়ের মত চিৎকার করছে আর অনর্গল খিস্তি খেউর করে চলেছে। প্রিয়াঙ্কার বাবা নাকি দরজা খুলে রাতুলকে দেখেই গালমন্দ শুরু করেন। ছোট্ট অরো পাপা- পাপা বলে ছুটে আসছিল, প্রিয়াঙ্কার মা তাকে নড়া ধরে হিড়হিড় করে টেনে হিঁচড়ে ভিতরে নিয়ে যান। অরোর প্রবল কান্না, রাতুল- দ্বৈপ্যর অনুনয়- বিনয় কিছুতেই ওদের মন গলেনি। প্রিয়াঙ্কা ঘর থেকেই বের হয়নি। এমনকি রাতুল স্ত্রী পুত্রের জন্য যে উপহার নিয়ে গিয়েছিল, তাও ওনারা গ্রহণ করেননি। দ্বৈপ্য করজোড়ে অনুরোধ করে যাতে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য রাতুলকে প্রিয়াঙ্কা আর অরোর সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়, জবাবে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেন ভদ্রলোক।
        রাতুল হাউহাউ করে কাঁদছিল। পরিণত বয়স্ক কোন পুরুষকে কোনদিন কাঁদতে শুনিনি। হৃদয়বিদারক সে অনুভূতি ভাষায় অপ্রকাশ্য। “কি নরম ও। গায়ে কি সুন্দর গন্ধ জানিস? কি ছোট্ট লাল জিভ, ঠোঁট দুটো কি নালঝোল মাখা ভেজা ভেজা, জানিস? চুমু খেতে গেলেই চেটে দেয়। দু হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে তোতা পাখির মত ডাকত, ‘পাআআপাআআ’। একবার ছুঁতে দিল না জানিস?” রাফিয়া আর আমিও কাঁদতে লাগলাম।
এ নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে একটা শিশুর মাকে যতটা প্রয়োজন, বাবাকে ঠিক ততটা নয়, কিন্তু বাবা তো বাবাই, বাবার স্থান পূরণ করা অস্মভব। সৌর আর তুলতুলির টান কি আমি অনুভব করতে পারি না।
পরিস্থিতি আরও জটিল হল, যখন আদরের খোকার আসন্ন বিবাহ-বিচ্ছেদ রোধ করার জন্য, রাতুলের বৃদ্ধ বাবা-মা কাউকে কিচ্ছু  না জানিয়ে গিয়ে হাজির হলেন প্রিয়াঙ্কাদের বাড়ি। কি হয়েছিল, সঠিক জানি না তবে প্রিয়াঙ্কাদের বাড়ি থেকে বুড়ো-বুড়ি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসেন এবং বৃদ্ধ উপবীত তুলে শাপ-শাপান্ত করতে থাকেন। বৃদ্ধা জ্ঞান হারান। হয়তো ধকল আর মানসিক টানাপড়েন এর জের, তবে প্রিয়াঙ্কা রাতুলকে ফোন করে যাতা বলে। ওদের প্রতিবেশীদের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই নাকি এই নাটক রচনা করা হয়েছে।  অবাঙালী পুত্রবধূকে যে ওনারা মুক্ত মনে গ্রহণ করেননি এটাও সত্যি।
        যাইহোক সাদিকের চিৎকার আরও বেড়ে গেল। লাশ ফেলে দেবে। ওর সাথে নাকি কোন গুণ্ডার জিগরী দোস্তি। রাতুল ও নাচছে, তবে লাশ ফেলতে হবে না। শুধু হারামি শ্বশুরটাকে আচ্ছা করে কেলাতে হবে। প্রমাদ গুনলাম। এই পরিকল্পনার অংশীদার জানতে পারলে আমার বিবাহ-বিচ্ছেদ আসন্ন। রাফিয়া ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিল, “ধুর! ধুর! সাদিকের দৌড় কতদূর জানিস না? ঐ পচা খাল অবধি। কম লোককে জবাই করে খালের জলে ভাসিয়েছে ভুলে গেলি?” সত্যি সাদিক পায়ে পা দিয়ে লোকের সাথে ঝগড়া করত এবং ঐ হুমকিই দিত বটে।
সাদিক একাই দাপাদাপি করতে লাগল। রাতুল বেপাত্তা। ফোন পরিসীমার বাইরে, অফিস যায় না। বাড়িতে ফোন করাতে কাকিমা এমন কান্নাকাটি জুড়ে ছিলেন, যে ভয়ে আমরা আর সাহস পাই না।  শ্রেয়া একদিন সাহস করে, প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করেছিলতিন বার প্রিয়াঙ্কা ধরেনি, চতুর্থ বারে ফোন তোলে এবং অভিযোগের ঝুড়ি উপুর করে দেয়- রাতুল একটা অপদার্থ (এ ব্যাপারে অবশ্য আমরা একমত), মাতৃ- স্তন্যপানকারী বালক (ঠিক), প্রিয়াঙ্কা আর অরোকে সময় দেয় না ( হতে পারে, কাজের চাপ, তায় রাতুলটা বিশ্বকুঁড়ে) প্রিয়াঙ্কা আর অরোর কোন দায়িত্ব নেয় না ইত্যাদি ইত্যাদি। এত সব স্বামী- স্ত্রীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ডিভোর্স কি এই সব কারণে হয়?  যাইহোক শ্রেয়ার ওর সাথে কথা বলে দৃঢ় ধারনা হয়েছে, যে রাতুলটা বিছানায় একেবারেই ঢ্যাঁড়শ। যৌন অতৃপ্তিজনিত ক্ষোভ জমতে জমতেই আজ এই বিস্ফোরন। শ্রেয়া অবশ্য পৃথিবীর সব সমস্যার মূলেই এই এক্তি জাগতিক কারণ দেখতে পায়। হতেই পারে, তবে সহমত হতে পারলাম না। রাফিয়া বলল, “কি বোকা মেয়ে রে? স্বচ্ছন্দে রাতুলের অগোচরে চুটিয়ে প্রেম করতে পারত। রাতুল যা গামবাট, জানতেও পারত না। আর পারলেই বা কি? কিছু বলত না। এরকম হামেশাই হয়। বিবাহ বহির্ভূত প্রেম। এই কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ?” সত্যি কথা বলতে কি, প্রিয়াঙ্কার ওপর আমাদের কোন অসূয়া নেই। শুধু রাতুলটাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ দিল না, এই যা আফসোস। বেচারা জানেই না কোন অপরাধে ফাঁসি হচ্ছে।
        রাতুল ফিরে এল। কামাক্ষ্যা গিয়েছিল। রাতুল আর পুজো? কবে পুষ্পাঞ্জলি দিতে শিখল?  বিদ্রুপ গায়ে না মেখে রাতুল ঘোষণা করল, ও খুব শীঘ্রি তিরুপতি যাচ্ছে। সাদিকের রক্তচাপ বেড়ে গেল, আর ওর গালি-গালাজের ঠেলায় আমাদের। রাতুল নির্বিকার। ওর কোন সহকর্মী নাকি তারাপীঠের এক মহাতান্ত্রিককে চেনে, তাঁর বশীকরণ মোক্ষম। এক মন্ত্রে প্রিয়াঙ্কা অরোকে নিয়ে সুড়সুড় করে ফিরে আসবে রাতুলের কাছে, পূর্বস্মৃতিও লোপ পাবে। অমাবস্যার দিন রাতুল চলল তারাপীঠ মহাশ্মশান। আমাদের অনুনয়-বিনয়, সাদিকের খিস্তি, দ্বৈপ্য- শ্রেয়ার যুক্তি কিছু কাজে এল না। বাবাজী নাকি কথা বলেন না। ওনার চ্যালা মহারাজ গুরুর নির্দেশ ব্যাখ্যা করে যা বললেন, তা হল,  মেয়েটা ভাল। কিন্তু বাপটা রাম ঢ্যামনা। কানে ফুস মন্তর দিয়েছে। পরিস্থিতি খুব জটিল। যজ্ঞ করা আশু প্রয়োজন, না হলে বিবাহ-বিচ্ছেদ তো হবেই এমনকি রাজদ্বার দর্শন ও হতে পারে। খরচ মাত্র দেড় লক্ষ টাকা। রাতুল পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
        মাস দুয়েক নির্বিঘ্নে কাটে। আমাদের সবার অনুরোধে রাতুল সাহস সঞ্চয় করে আর এক বার প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা করতে যায় বহরমপুর, সাথে প্রচুর উপহার, স্ত্রী, পুত্র এমন কি শ্বশুর- শাশুড়ি, শালীর জন্যও। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে থাকি আমরা। রাতে রাতুলের কোন ফোন আসল না। ভাবলাম নির্ঘাত সব ঠিক হয়ে গেছে। মান-অভিমানে ব্যস্ত তাই খবর দেবার হুঁশ নেই বাবুর।
        পরদিন সকাল নটা নাগাদ রাতুলের ফোন, জয়গুরু বলে ফোন ধরলাম। ফোন ধরতেই রাতুলের অসহায় কণ্ঠস্বর, “চলে গেল যে? কে করি?” “অ্যাঁ? মানে? কে চলে গেল? কোথায় তুই?” রাতুল ঢোঁক গিলে বলল, “প্রিয়াঙ্কা রে। আমার সামনে দিয়ে একটা লোকের সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেল। তার বাইকে চেপে।” রাতুল অসংলগ্ন ভাবে যা বলল, তার সারমর্ম হচ্ছে, রাতে রাতুল আর যায়নি। একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে সকাল বেলায় প্রিয়াঙ্কাদের গলির মোড়ে থলে ভর্তি উপহার নিয়ে হাজির হয়, প্রিয়াঙ্কাকে রাস্তায় ধরবে বলে, যাতে  শ্বশুর মশাই ঝামেলা বাঁধাতে না পারে, কিন্তু সব থেকে বড় উপহারটা প্রিয়াঙ্কাই ওকে দিয়ে যায় আজ।
        বিশ্বাস হয়নি। বন্ধু হতে পারে, সহকর্মী হতে পারে, আত্মীয় বা প্রতিবেশী হলেও আশ্চর্য হব না। হয়ত ঐ দিকেই যাচ্ছিল। হতেও তো পারে। রাতুল ফিরে আসে। সাদিক খোঁজ নিয়ে জানায়, আমার সন্দেহ অমূলক। ওরা পরস্পর প্রেমাষ্পদ এবং সম্ভবত বাগদত্ত। প্রিয়াঙ্কার এই বিয়েটা ভাঙলেই ওরা বিয়ে করতে চলেছে।
        অনেক গুলো মাস কেটে গেল। মা দুর্গা এসে চলেও গেলেন। রাতুলের ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আর কথা বলি না। সবাই ভয়াবহ ব্যস্ত যে যার জীবনে। আমাদের বন্ধনও অটুট। সাদিক দেশে ফিরে ভালো আইনজ্ঞের সন্ধানে ব্যাপ্ত। রাতুল রাফিয়াকে আর আমাকে মাঝেমাঝেই ফোন করে জিজ্ঞেস করে, আমাদের ছানাগুলো কি করছে। অরোর বয়সে ওরা কি কি করত। খারাপ লাগে। কিন্তু বাস্তব বড়ই নির্মম।
        আজ বহুদিন বাদে রাতুল আমার অফিসে এল।আমাদের শ্রম কমিশনারেটের ভাঙা বাড়ি, খারাপ লিফট, অপরিচ্ছন্ন করিডোর, পচা চেম্বার, ঠাণ্ডা না করতে পারা বাতানুকূল সব নিয়ে আগের মত তামাশা করতে লাগল। আরও জ্বালাত, যদি না সাদিক ফোন করে ডেকে নিত। প্রিয়াঙ্কা নোটিশ দিয়েছে, তাই নিয়েই আইনজ্ঞের সাথে পরামর্শ করবে। দুজনের সম্মতিতেই ডিভোর্স হচ্ছে। রাতুল প্রিয়াঙ্কার আনা কোন অভিযোগ খন্ডন করার চেষ্টাও করেনি। উকিল বাবুর ইচ্ছে ছিল লম্বা টানার, রাতুল শান্তি চায়। শুধু অরোকে নিয়ে হাল্কা বাগবিতণ্ডা হতে পারে।
        খুব স্বাভাবিক স্বরে কথা বলছিল রাতুল, হাসছিল হা হা করে। কতদিন বাদে। আমার তো খুশি হবার কথা। তাও এত বিষণ্ণ লাগছে কেন? এত দিনের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব হয়তো বা ভালবাসা ও ভেঙে যাচ্ছে তাই কি? “চলি রে” বলে ও উঠে পড়ল। রাতুলকে সিঁড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে এলাম। রাতুল নেমে যাচ্ছে, আমার কানে বেজেই চলেছে, ““কি নরম ও জানিস......। গায়ে কি সুন্দর গন্ধ জানিস......? কি ছোট্ট লাল জিভ, ভেজা ঠোঁট, চুমু খেতে গেলেই চেটে দেয় জানিস......। দু হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে তোতা পাখির মত ডাকে………”

Thursday 9 April 2015

ভাল থেকো চয়ন



মন ভাল নেই। কিচ্ছু ভাল লাগছে না চয়নের। অফিসের সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে এক টা সিগারেট ধরালো। বুক ভরে পড়ন্ত বিকালের ঠাণ্ডা হাওয়া টানলো, তাও যেন চাপটা কাটছে না।
সিঁড়ির দেওয়ালের না না দেব-দেবীর ছবি, যাতে এই ঝকঝকে দেওয়াল কেউ থুথু ফেলে নোংরা না করে। ঐ হাসি মুখের অভয় দেওয়া ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে রাগ আরও বেড়ে গেল। কেন? এত লোক থাকতে কেন চয়নের সাথেই এত অন্যায় করলেন ভগবান। দম বন্ধ হয়ে আসছে, মাথা ছিড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।
চয়নিকা মধ্য তিরিশ, অবিবাহিত, মাঝারি উচ্চতা, ছোটো করে কাটা চুল, পরনে ডেনিম আর কুর্তা, সেক্টর ফাইভের এক নামি বেসরকারি সংস্থায় মোটামুটি ভাল পদে কর্মরতা। মাইনে পত্র খারাপ পায় না। আপন বলতে দুই বোন আর এক কাকা। দুই বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। কাকা এক চূড়ান্ত বাউন্ডুলে লোক। তবু এই কাকাই চয়নের একমাত্র অবলম্বন।
দুই বোনেরই শ্বশুর বাড়ির লোকজন অত্যুৎসাহী চয়নের বিয়ের ব্যাপারে, কৌতুহল পাড়াপড়শির ও কিছু কম না। সবার ওপর অফিস কলিগেরা তো আছেই। সবার প্রশ্ন একটাই চয়ন কেন বিয়ে করছে না? আর কবে করবে? চয়ন সব সময় কাকাকেই শিখণ্ডী খাড়া করে, দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলে, “ আমি তো বিয়ে করে চলে যাব, কাকাকে দেখবে কে?”।
খুড়ো মশাই অতি ধুরন্ধর। অন্য লোক হলে, নির্ঘাত বলত, “আমার জন্য কেন নিজের জীবন বরবাদ করছিস? আমার ঠিক চলে যাবে।” কিন্তু কাকা কিছুই বলে না। শুধু মিটিমিটি হাসে। চয়ন প্রচুর খোঁটা দেয়, মাঝে মাঝে মুখঝামটাও মারে। কিন্তু কাকা যেন সর্বংসহ। কাকার উপস্থিতি আর ভালবাসাই চয়নের বেঁচে থাকার রসদ।
কষ্ট হয় চয়নের, ভীষণ কষ্ট হয়। ভয় করে। ভুলে থাকার চেষ্টা করে। ভুলেও যায়। মেতে ওঠে জীবনের রঙে। সাধ্যাতীত পরিশ্রম করে। দশ জনের কাজ একা করার চেষ্টা করে, ক্লান্তির শেষ সীমানায় টেনে নিয়ে যেতে চায় নিজেকে। যাতে করে, রাত্রে বিছানায় গা দিলেই অতল ঘুমে তলিয়ে যেতে পারে। রাতকে চয়নের বড় ভয়। কিন্তু চয়নের দেহ এক্ষেত্রেও বিশ্বাসঘাতকতা করে।
দেহ-মনের এই দ্বৈরথে আজ বড় ক্লান্ত, নিঃস্ব, রিক্ত চয়ন। যখন শিশু ছিল, অবোধ ছিল তখনই ভাল ছিল। জীবনের এক মাত্র সুখের সময়। নারীত্বের লক্ষন যেমন যেমন প্রকাশ পেতে লাগলো, আতঙ্কে ভুগতে লাগলো চয়ন।স্কুলে ওর প্রিয় বান্ধবী ছিল তিস্তা। কতদিন ওরা হাত ধরাধরি করে ঘুরেছে। মেয়েদের স্কুলে বাচ্ছারা তাই করে। আদপে দৃষ্টিকটু না। কিন্তু আঙ্গুলে আঙ্গুলে যে এত কথা হতে পারে, প্রতিটা স্পর্শ যে এত বাঙময় হয় আগে তো বুঝত না চয়ন। তিস্তার আলিঙ্গন এত মোহময় আগে কখনও লাগেনি। কথায় কথায় তিস্তার ওকে জড়িয়ে ধরা, সে শিহরণ আজো চাইলেই অনুভব করতে পারে চয়ন। তিস্তার সাথে ওর শারীরিক নৈকট্য বোধহয় শালীনতার সীমা স্পর্শ করব করব করছিল, মৃদু গুঞ্জন কানে আসতেই চয়ন নিজেকে সরিয়ে নেয়। সবথেকে বেদনাদায়ক ছিল তিস্তার আচরণ,ও কোনদিনই কিছু বোঝেনি। চয়ন শুধুমাত্র ওর প্রিয় বান্ধবী ছিল। আজো যেমন আছে।
তিস্তার পর দোলা। দোলনচাঁপা। কথায় কথায় বলত, “চয়ন, তোকে আমি বড্ড ভালবাসি রে।” চয়ন, ঘরপোড়া গরু, বলতো, “ভাগ শালা।” কিন্তু দোলার সেই স্ফুরিত অধর, ব্যথা-বিদুর চোখ, তাড়িত করতো বিশ্বাস করতে। আজকাল তো লোকে ধন্যবাদ না বলেও “আই লাভ ইউ” বলে। কি করে বিশ্বাস করতো চয়ন? চয়নও  অবশ্য কোনদিন বলে উঠতে পারেনি। ক্ষুব্ধ দোলা বলতো, “দেখিস, যে দিন আমি থাকব না, সেদিন তুই বুঝবি।”
আজ দোলা কোথায়? দিব্যি মায়ের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে উঠেছে। কি যেন বলছিল বিয়ের আগে, “ মন থেকে সাড়া পাচ্ছি না। বিয়ে না করলে দাদার বিয়ে হচ্ছে না।” ইত্যাদি ইত্যাদি। ও রকম সবাই বলে। দোলার বিয়েতে কি খাটাই না খেটেছে চয়ন, দোলা এক বার তাকায়নি পর্যন্ত। ঘাড় শক্ত করে মুখ ঘুরিয়ে বসে ছিল। অন্য বন্ধুদের সাথে দিব্যি মিষ্টি হেঁসে কথা বলেছে, চয়ন ওর হাত ধরে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিল, ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়েছে। কিসের এত ক্ষোভ ওর? বিয়ের পর দোলার একটা ফোন ধরেছে? আছে অথচ নেই। ফেসবুক থেকে জানতে পারে ওরা কোথায় বেড়াতে গেছে, চয়ন অনাহুতের মত কমেন্ট, ইনবক্স মেসেজ করে, দোলা নিরুত্তর। প্রতি পদে অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথে বুঝিয়ে দেয় দোলা ওর পরোয়া করে না। ঞ্জানতঃ চয়ন কারো মনে কোনদিন কষ্ট দেয়নি, অথচ দোলা যেন ওর হৃদপিণ্ডটাই ফুটো করে দিয়েছে। কাঁদতে পারে না, এটাই ওর সবথেকে বড় দুর্বলতা।
ফেসবুকে লোকে সমকামীদের নিয়ে কত কিছু লেখে, প্রচণ্ড রাগ হয় চয়নের, “ শালারা আয়, আমার জুতোয় পা গলিয়ে দেখ। যত ভণ্ডের দল। কটা গল্প, উপন্যাস লেখা হয় চয়নদের নিয়ে? একটা সিনেমা ওঠে? আর যা তোলা হয়, টা দেখে ওর হাসি পায়। ওর এক সুন্দরী সহকর্মী তার পুরুষ বন্ধুর দেওয়ালে একবার লিখেছিল, “উফ! ভাল ছেলে পাওয়া এত কষ্টকর জানলে আমি লেসবিয়ান হতাম।” সাঁটিয়ে একটা চড় কসাতে ইচ্ছে করছিল চয়নের। আজ যেমন অফিসে দীপক আর রণিত, দুই মেয়েবাজ গল্প করছিল, “ও সব সমকাম-টাম কিস্যু না। ছেলে গুলোকে চাবকানো উচিত, আর মেয়েদের জন্য তো আমরা আছিই।” আজ আর সহ্য করতে পারলো না চয়ন, বাথরুমের নিভৃতে উগরে দিল নিজের সমস্ত ক্ষোভ। বহুদিন বাদে কাঁদল চয়ন, ঝরঝর করে ঝরে পড়তে লাগলো সব ব্যথা – বেদনা, নিস্ফল আক্রোশ, অক্ষম রাগ। তীব্র ধিৎকারে ভরে ওঠে ওর মন, প্রতিবাদ না করতে পারার অক্ষমতার গ্লানিতে নিজেকে কৃমিকীটের অধম বলে মনে হয়।  
ইএম বাইপাসের এক নামি বেসরকারি হাসপাতালের ওপিডিতে মাথা নীচু করে বসে আছে চয়নিকা। অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে আজ এখানে এসেছে ও। শেষ চেষ্টা, জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার। ওর ডাক আসতে দরজা ঠেলে ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকল চয়ন, ডাঃ ইশারায় ওকে বসতে বললেন। ডাঃ সুতপা সেন, মনোবীদ, প্রায় পঞ্চাশ, উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ, দোহারা চেহারা, হেনা করা লালচে চুল, রিমলেস চশমার আড়ালে এক জোড়া সহমর্মী চোখ, কালো দামি সুতির শাড়িতে সোনার ব্রোচ আটকানো দেখে মায়ের কথা মনে পড়ে গেল চয়নের। ডাক্তার উৎসুক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছেন, হঠাৎ ওর মনে হল, এখানে আসাটা খুব ভুল হয়ে গেছে। কি চায় ও? কেন এল? কি বলবে ডাক্তারকে? অস্ফুটে নিজেকে অশ্রাব্য গালি দিতে লাগল চয়ন। মাথা নীচু করে ফোনটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগল, এক, দুই, তিন মিনিট কাটছে না ঘণ্টা? ডাঃ ও কিছু বলছে না কেন? নাঃ আর বসা যায় না। “দুঃখিত, আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য। চলি” উঠে দাঁড়িয়ে বলল চয়ন। ডাঃ এর ভ্রূ দ্বয় সামান্য কোঁচকাল, খর হল চোখের দৃষ্টি। পরিষ্কার বাংলা এবং ইংরাজি উচ্চারনে কেটে কেটে বললেন, “ মাঝে মাঝে দু এক জন অপোগণ্ড আসে তাদের কিশোর পুত্রকন্যা কে নিয়ে, আমি তাদের ঘাড় ধরে বার করে দি। আমি ডাক্তার চয়নিকা, ভগবান নই।”
অনেক কথা হল, তর্ক- বিতর্ক, খেলা, বিনোদন, রাজনীতি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা, হল না শুধু চয়নকে নিয়ে কোনো কথা। বহুদিন বাদে হাল্কা লাগছিল, আরও বসতে ইচ্ছে করছিল, ডাঃ সেন ও উঠতে বলছিলেন না। তবু উঠল ও। আরও পেশেন্ট অপেক্ষা করছে।  আসার সময় সুতপাদি বললেন, “ভালো থেকো চয়ন।” মাথা নেড়ে বেরিয়ে এল, ও।
হাল্কা লাগছিল। লিফটের লাইনে না দাঁড়িয়ে সিঁড়ি ধরল। পুরো দেওয়ালটাই স্বচ্ছ কাঁচের, বাইরে ঝকঝকে সোনা রোদ, নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘের নকশা সোচ্চারে ঘোষণা করছে মা আসছেন। মনটা আরও খুশিতে ভরে উঠল চয়নের। খুব ইচ্ছা করছিল একটা সিগারেট ধরাতে, নিদেন পক্ষে একটা বিড়ি হলেও চলবে, জোর করে নিজের অবুঝ মনকে শান্ত করে নীচে নেমে এল। দেরি হয়ে যাচ্ছে, অফিসে বলা আছে যদিও। একতলার ঝাঁ চকচকে ক্যাফেটেরিয়াটা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলো না, চয়ন। “ধুত্তোর, নিকুচি করেছে” বলে এক কাপ কফি আর বানানা ওয়ালনাট ব্রেড নিয়ে আরাম করে জানলার ধারে বসল।
সত্যি শরৎ কালের যাদু আছে, আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে কফিতে চুমুক দিচ্ছিল চয়নিকা, হঠাৎ বুক পকেটে মুঠো ফোনটা সজোরে কাঁপতে লাগল। এক পলকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল ওকে, নির্ঘাত অফিস। মুখটা মুহূর্তের জন্য তেতো হয়ে গেল। ধরবেই না আজ ও, যত পারে কাঁপুক। কিন্তু কম্পনের কি রকমফের আছে? তা না হলে এ কম্পন কেন এভাবে চয়নের শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ছে? স্থির থাকতে দিচ্ছে না ওকে, হঠাৎ এক জুয়া খেললতে ইচ্ছে করল চয়নের, চোখ বুজে আন্দাজে ফোনটা বার করে, কানে দিয়ে, বিপক্ষকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ও বলে উঠল, “ দোলা, আমি ভাল আছি রে।”
image courtesy Google

Monday 30 March 2015

Say No to Body Shaming

Do you know what "Body Shaming" is? Nothing but being extra judgemental about yourself. We spend all our life try to make every one happy but take ourselves for granted. Please don't. You are too fat? So? Lady you are gorgeous. No assets? Lady you are gorgeous too. You love to wear make up? Do it, if that makes you happy. You hate make up? Please don't. You don't have much hair left? Lady you are as feminine as any other girl. You want to hide your greys? Want to put on red lippie? Do it. Do not pay attention to negative people or gossip.
you are one of a kind. All you need is bit selflove. Love thyself. Pamper yourself. Trust me you have the time. Indulge yourself, you badly need it. Tomorrow is the new beginning.
 http://cdn2.blisstree.com/wp-content/uploads/2013/07/original.jpgImage Courtesy -Google

Tuesday 24 March 2015

মেয়েটা ভাল



‘ছেড়ে দিন। ডিভোর্স দিয়ে দিন। ও আর ফিরে আসবে না । আর এলেও এ সম্পর্ক কোনদিন ঠিক হবে বলে আপনার মনে হয়? ক্ষত থেকেই যাবে।’ আমার উগ্র ফেমিনিস্ট কান বিশ্বাস করতে পারছিল না, আমি? যে কিনা কথায় কথায় ‘ইউনিভার্সাল সিস্টারহুডে’র দোহাই দি, আমি এ মন্তব্য করছি, তাও এক জন মহিলার সম্বন্ধে?
          শ্রোতা হলেন সুব্রত বাবু। স্থান ভাষা ভবন, জাতীয় গ্রন্থাগার। ফেব্রুয়ারীর কলকাতা। ঝকঝকে নীল আকাশ, মিঠে রোদ, ফুরফুরে হাওয়া। সামাজিক সুরক্ষা মাস অর্থাৎ জানুয়ারী সবে শেষ হয়েছে। আমরা কে কেমন কাজ করেছি তারই পর্যালোচনা করার জন্য মাননীয় শ্রম মন্ত্রী দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত শ্রম কমিশনার এবং ইন্সপেক্টরদের মিটিং এ ডেকেছেন।
          সেখানেই বহুদিন বাদে সুব্রত বাবুর সঙ্গে দেখা। উনি এক কালে আমার ইন্সপেক্টর ছিলেন। বেশ কিছু বছর আগের কথা। তখনও পরিবর্তনের হাওয়া ওঠেনি। সিঙ্গুর- নন্দীগ্রাম তখনও নেহাতই শান্ত জনপদ। পশ্চিম বঙ্গের রঙ্গমঞ্চে তখনও কিষানজীর আবির্ভাব হয়নি। লেবার সার্ভিসে যোগ দেবার সাথে সাথেই পাঠিয়ে দিল পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তে এক ছোট্ট মহকুমার এ.এল.সি করে।
          রাঢ় বাংলা। লাল মাটির রুক্ষ দেশসহজ সরল মানুষ জন। অফিসে যোগ দেওয়া মাত্রই পরপর দুজন ইন্সপেক্টর অবসর নিলেন, যেন আমারই প্রতীক্ষায় ছিলেন। রয়ে গেলাম আমি, এক মহা ধুরন্ধর চোর আর্দালি আর এক আধপাগল নৈশ প্রহরী। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিছু দিন চলল। বেদম হবার আগেই  এক জন অবসর প্রাপ্ত করণিককে পেয়ে গেলাম। নামমাত্র মজুরীর বিনিময়ে সমর বাবু এসে হাল ধরলেন আমার অফিসের। এই স্থূলকায় বিরল কেশ ভদ্রলোকটিকে আমি আদর করে ডাকতাম বড়বাবু বলে।
          এমতবস্থায় একদিন কলকাতা থেকে বড় সাহেব ফোন করে সুখবর দিলেন, শক্ত-পোক্ত এক যুবক ইন্সপেক্টর  পাঠানো হচ্ছে, যাকে দেখলেই মনে হয় প্রচুর খাটতে পারে। পক্ষ কালের মধ্যেই সুব্রত বাবু এসে যোগ দিলেন। ভুমি পুত্র, জেলা সদরে বাড়ি। বেশ কালো, লম্বা, বৃষস্কন্দ, পেটানো চেহারা। ফুল হাতা শার্ট গুটিয়ে হাফ করে পরেন। দীর্ঘ দিন কোন দপ্তরে করণিক ছিলেন। যুবক নন, বয়স ৩৭ এবং অবিবাহিত।অ্যাডিশনাল কমিশনার সাহেব খুব ভুল কিছু বলেননি। প্রবল কর্মক্ষম বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হল।
সুব্রত বাবুকে নিয়ে প্রথম দিকে খুব সমস্যা হয়। তরুণী মহিলা অফিসারকে উনি আদপে পাত্তা দিতে চাইতেন না। সমর বাবু এবং আধপাগল নৈশপ্রহরীর সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করতেন। অতি দুর্মুখ, ঘোরতর কর্মবিমুখ এবং অসৎ ওনার সখা ছিল আমার চোর আর্দালি। প্রায় দিনই দুজনকে অফিসে পাওয়া যেত না। শক্ত হাতে হাল ধরলাম। আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠল। বেশ কিছুদিন গরম হাওয়া বইবার পর, আস্তে আস্তে উত্তাপ কমে এল। কিছু দিন বাদে সব ধামাচাপা পড়ে গেল। যদিও তিক্ততার রেশ টুকু এবং মনের কোনে অবিশ্বাস রয়েই গেল।
আবহাওয়া স্থিতিশীল হতেই বুড়ো সমর বাবু ঘটকগিরিতে নামলেন। আমি হাত জোড় করে অব্যাহতি চাইলাম। সৌর তখন প্রোবেশনে উত্তরবঙ্গে আছে। শীঘ্রই বিয়ে করতে হবে না হলে এক জেলায় দুজনের পোস্টিং অসম্ভব। অতএব আমি বাদ। বাকি রইলেন সুব্রত বাবু। উনি লজ্জায় বেগুনী হয়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন। দুজনে কোমর বেঁধে পাত্রী দেখতে লাগলেন। আমার অফিস প্রায় লাটে  ওঠে।
আরো তিনটে ঋতু কেটে গেল। আমার বিয়ে হয়ে গেল। কয়েক মাসের মধ্যেই সৌর বি.ডি.ও হয়ে এল আমার মহকুমায়। নতুন সংসার, পুরানো অফিস। মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলতে লাগলো আমাদের জীবন। কত শত নতুন অভিগতা, নতুন অনুভব। পাল্লা দিয়ে চলতে লাগলো পাত্রী খোঁজা। মাঝে মাঝে আওয়াজ দিতাম, কুমারটুলি তে বায়না দিতে যেতে হবে। মাতৃত্ব কালীন ছুটিতে যাবার মাস খানেক আগে সুব্রত বাবু এসে কার্ডটা দিলেন। স্থানীয় মেয়ে। বয়স ত্রিশ। বাবা সদরের নাম করা হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। মেয়েও পাশ দিয়েছে তবে প্রাকটিস করে না।
দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ফিরে এলাম। অফিসের অবস্থা যতটা ভয়াবহ হবে ভেবেছিলাম, দেখলাম তা নয়। সুব্রত বাবু বেশ খোশ মেজাজে আছেন। জিজ্ঞাসা করলাম, “কি সব ঠিক আছে তো?” উনি লাজুক হেসে বললেন, “ হ্যাঁ ম্যাডাম। আপনার আশীর্বাদে। তবে বাবা মা এর একমাত্র মেয়ে, কোনো কাজ শেখেনি। আমার বাবা আবার বাইরের লোকের হাতে খান না। মা ও খুব শুচিবায়ুগ্রস্ত , খিটখিটে প্রকৃ্তির, কাজের লোক টেকে না। ফলে মায়ের ওপর খুব চাপ পড়ে যাচ্ছে। ওকে কোনো কাজ করতে বললে ও করে বটে, তবে পুঙ্খনাপুঙ্খ লাগায় নিজের বাবা-মাকে। আর ওনারা এসে অশান্তি করেন। তবে বিশ্বাস করুন ম্যাডাম মেয়েটা খুব ভাল ”
সময়ের সাথে সাথে সুব্রত বাবুর বাড়ির অশান্তি বেড়েই চলল এবং তা আর বাড়ির চার দেওয়াল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। রেগে গিয়ে একবার উনি নিজের স্ত্রীর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন, যাতে শ্বাশুড়ি কুমন্ত্রণা দিতে না পারেন। ফলশ্রুতি ওনার শ্বশুরমশাই থানায় যেতে উদ্যত হন এবং আমাকে ফোন করে ওনাকে শায়েস্তা করার অনুরোধ করেন। সে যাত্রা কোনোমতে ওনাকে নিরস্ত করে সুব্রত বাবু কে হাফ ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠাই ফোন ফেরৎ দিতে। সমস্যা চরমে ওঠে যখন ডাক্তার জানান যে টেস্ট টিউব বেবি ছাড়া ওনাদের বংশ বৃদ্ধি সম্ভব নয় এবং খরচা সাকুল্যে চার লাখ। পি এফ থেকে দুলাখ লোনের জন্য আবেদন করে, বাকিটা সুব্রত বাবু ওনার স্ত্রীর গয়না বিক্রি এবং শ্বশুরের কাছে কর্জ করবেন বলে মনস্থ করেন।
আজো মনে আছে, সে দিনটা ছিল সুক্রবার।সুব্রত বাবুর স্ত্রী সকাল বেলা শ্বশুর- শ্বাশুড়িকে প্রণাম করে বরের সাথে বাপের বাড়ি গেলেন, বলে গেলেন,“রবিবার রাতে নিতে আসতে ভুলো না।”তারপর থেকে ওনাদের বার কয়েক দেখা হয়েছে মাত্র, শুধু আদালতে। শ্বশুর বাড়ি গেলে ওনাকে কুৎসিত ভাষায় অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বউ ফোন ধরে না। পরবর্তী কালে নম্বরও বদলে গেছে। কোন মধ্যস্ততাকারীকে ওনারা বাড়িতে ঢুকতে দেননি। সমর বাবু আর আমার দৃঢ় ধারণা ছিল কোন তৃতীয় ব্যক্তি আছে। কোন তৃতীয় কোণ। কিন্তু সুব্রত বাবু তা নস্যাৎ করে বারবার বলতে থাকেন, “না ম্যাডাম, মেয়েটা ভাল।”
ওনাকে মাঝপথে ছেড়ে আমি বদলী হয়ে আসি মহানগরে। তারপর তিন বছর কেটে গেছে। সমর বাবু ও রণে ভঙ্গ দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কেস আজো চলছে, এবং সুব্রত বাবু আমাকে আজো বললেন, “ ডিভোর্স দিয়ে দিলে আমি কি নিয়ে থাকব? আমার তো আর কিছু হবার বয়স নেই ম্যাডাম। আর বিশ্বাস করুন মেয়েটা খুব ভাল”।
 
image courtesy-Google

Friday 13 March 2015

এমনও বসন্ত দিনে......



মার্চ মাস। সবে দোল গেল। ভাল করে খুঁজলে এখনও কিছু বিচ্চু ছেলের গায়ে দোলের আবছা রঙ পাওয়া যাবে। রাস্তার ধারে ধারে পলাশ, কৃষ্ণ আর রাধাচূড়া সোচ্চারে ঘোষণা করছে এটা মধু মাস। বসন্ত এসেছে।
          চয়ন অর্থাৎ চয়নিকা আজ বেশ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেড়িয়েছে। সেক্টর ফাইভের নামজাদা বেসরকারি দপ্তর। সন্ধ্যা ৬ টা না বাজলে কেউ ছাড় পায় না। আর চয়নের মত সিনিয়র হলে তো রাত ৭.৩০ এর আগে অফিস ছাড়া অসম্ভব। প্রচণ্ড কাজের চাপ।আজ বিশ্রী রকম ঝগড়া করতে হল। কিছু করার নেই। দোলার জরুরী তলব। কোন কথা শুনতে চাইল না। দোলা অর্থাৎ দোলনচাঁপা অপেক্ষা করছে কলেজ স্ট্রীট কফি হাউসে। কি প্রয়োজন কে জানে? তবে চয়নকে আসতেই হবে।
          দৌড়তে দৌড়তে ৪টের সময় গিয়ে পৌছল চয়ন। বব কাট চুল, জিন্স, পাজ্ঞাবি আর ঢোলা শান্তিনিকেতনী ব্যাগে পাক্কা আতেল। গলায় সবসময় ক্যামেরা ঝোলে। দোলার নির্দেশ মত তিন তলায় উঠে দেখতে পেল ভ্রু কুঁচকে বসে আছে দোলা। ওরা একই  স্কুলে পড়ত। ভ্রু যুগল সোজা রাখলে দোলা রীতিমত সুন্দরী। প্রতিমার মতো মুখ। কাঁচা হলুদের মত গায়ের রঙ। ভারি চেয়ারা। লম্বা চুল। হাল্কা রঙের শাড়ি বা সালয়ার ছাড়া কিছু পড়ে না। চূড়ান্ত রক্ষণশীল এবং বদমেজাজি। নামি বাংলা কাগজের সাব-এডিটর। কিছু কবিতার বই ও বেড়িয়েছে। ওরা দুজনেই মধ্য ত্রিশ। অবিবাহিতা।
          চয়নের বিয়ের কথা কেউ ভাবে না। ওকে মেয়ে বলেই কেউ গণ্য করে না। চিরকালের ডানপিটে, পাড়ায় প্রচণ্ড জনপ্রিয় চয়ন। সবার বিপদে আপদে সব সময় হাজির। ওর এই ছেলেদের মত পোশাক আর হাবভাবের জন্য স্কুলে ওর নামে নানা রকম গুজব ছড়াত। সে সবে কান দেবার বান্দা চয়ন নয়। স্কুলে ওর প্রিয় বান্ধবী ছিল তিস্তা। হরিহর আত্মা যাকে বলে। মেয়েরা  ঠারেঠোরে দুজনকেই খোঁচা দিত। গুজবটা জমে ক্ষীর হবার আগেই জানা গেল যে, তিস্তার এক জন প্রেমিক আছে এবং চয়ন ওদের দূতী। স্কুল শেষ হতে না হতেই তিস্তা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বসলো সেই বাচ্চা প্রেমিক নয় বরং এক মধ্য বয়সী পুলিশ কনস্টেবলকে। চয়ন প্রতিজ্ঞা করলো আর তিস্তার মুখ দেখবে না। কিন্তু থাক সে এক অন্য গল্প।    
          মাঝখান থেকে চয়নের নামে গল্প গুলো বন্ধ হয়ে গেল। দোলা চিরদিনই ওর বন্ধু ছিল কিন্তু এই সময় ওদের সম্পর্ক আরও ঘণ হয়। স্কুলের শেষে শুরু হল জীবন সংগ্রাম।বাকি বন্ধুরা কে কোথায় ছিটকে গেল, কিন্তু ওদের বন্ধুত্ব আজো অটুট। তিস্তা ফিরে আসে এবং আজো ঘোরতর ভাবে উপস্থিত, কিন্তু চয়ন আর দোলার মাঝে ঢুকতে পারেনি।  অবশ্য নিন্দুকে বলে চয়ন হল দোলার তল্পিবাহক বা বাহিকা। দোলার জন্য পরীক্ষার আগে বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে নোট নিয়ে আসা,  চিকেন পক্সের দাগ তোলার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ আনা, দোলার সব কবিতা শুনে মতামত দেওয়া (যদিও সবাই জানে চয়ন কবি দেখলেই ভয় পায়), দোলার প্রিয় লেখকের বই পড়ে সুচিন্তিত মতামত দেওয়া (যদিও সবাই জানে চয়ন বই দেখলেই আতঙ্কে ভোগে), দোলার সাথে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়ে ফরাসী ফিল্ম দেখা ( সেবার চয়ন ঘুমিয়ে পড়েছিল) সবেতেই চয়ন।
চয়নের হবি ছবি তোলা। সবাই এক বাক্যে স্বীকার করে যে চয়নের মত দোলার ছবি কেউ তুলতে পারে না। চয়নের ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম ভর্তি দোলনচাঁপার সুগন্ধে। দোলার তা ঘোরতর নাপসন্দ। দোলা এক রহস্য যা চয়ন আনেক চেষ্টা করে ও সমাধান করতে পারে না। দোলা এই খুশি, ঝলমলে রোদ- ঝকঝকে নীল আকাশ, আবার পরক্ষণেই মুখ ভার- বজ্র বিদ্যুৎ সহ ভারি বৃষ্টিপাত। কড়া কড়া কথা, দাঁতখিঁচুনি, চোখের জল ।  মাঝে মাঝে দোলার ব্যবহার এত খারাপ হয় যে ওদের বন্ধুরা বলে, “ তুই কি ওর পাঞ্চিং ব্যাগ? ’’ চয়ন সাধারণত রাগে না। তবে রেগে গেলে গলতে চায় না। তখন দোলা শুরু করে তার বস্তাপচা প্যানপ্যানে আবেগের সুড়সুড়ি সাথে চোখের জল।। মাঝে মাঝে আত্মহত্যার হুমকিও দেয়। তখন চয়ন রেগে গিয়ে বলে, “ বিয়ে কর, করে বরকে জ্বালা। আমি আর নিতে পারছি না।” মাঝে মাঝে দোলার বাবা মা কেও বলতে ছাড়ে না,” কি করছ তোমরা? মেয়েটা বসে বসে বুড়ো হচ্ছে। বিয়ে দেবে না নাকি?’ অবশ্য এ গুরুদায়িত্ব চয়ন  স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। ওর সব বন্ধু, পরিচিতকে লাগিয়েছে দোলার জন্য সুপাত্র খুঁজতে। মধ্য তিরিশের উচ্চ শিক্ষিতা বাঙালী মেয়ের সুপাত্র পাওয়া দুষ্কর। তাও পাওয়া যায়। কিন্তু দোলার কাউকে পছন্দ হয় না। কি উন্নাসিক বাবা রে? এই নিয়েও ওদের বহু ঝগড়া হয়েছে। কি যে চায় দোলাটা??
তিন তলায় নির্দিষ্ট টেবিলে অপেক্ষা করছে দোলা। প্রায় বিবর্ণ একটা সুতির সালোয়ার পরেছে। লম্বা চুল বেণী বাঁধা। চয়ন টেবিলে ব্যাগ রেখেই পটাপট ওর ছহবি তুলতে তুলতে বলল, “বল? এত জরুরী তলব? বললাম অফিস ফেরত তোর বাড়ি হয়ে আসবো, তাও পছন্দ হল না।শালা তোর জন্য ঝগড়া করতে হল অফিসে।”
দোলা অন্যমনস্ক কি? বোঝা গেল না। এত জটিল ও। পরতে পরতে রহস্য। মৃদু হেঁসে বলল, “এই শেষ।”
চয়ন ওর সামনে মুখ খারাপ করে না। তাই সামলে নিয়ে কৌতুকের সাথে বলল, “মানে? হরিদ্বার যাচ্ছিস নাকি মামা?” দোলা চোখ পাকালো। চয়ন হাসতে হাসতে ক্যামেরাটা ব্যাগে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “নাকি বিয়ে করছিস?”
দোলা নিরুত্তর। চয়ন চমকে উঠলো। তাকালো দোলার দিকে। এক, দুই, তিন... কোনো কথা নেই। দোলা চোখ সরালো জানলার দিকে। ফাল্গুনের পড়ন্ত রোদ, গলা সোনার মত ছড়িয়ে আছে মাটিতে।
উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লো চয়ন, “শালা...এই আমি তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড? চুপচাপ গুপগাপ ??? এই জন্যই এত ডাকাডাকি? মিষ্টি খাওয়া। না দাড়া। ট্রিঙ্কাসে ট্রীট চাই।”
দোলা তাকালো ওর দিকে। চয়ন উত্তেজনায় ফুটছে। ওর আঙ্গুল গুলো নেচেই  যাচ্ছে টেবিলের ওপর । সব জানতে চায়। কে? কি করে? কবে থেকে? কত দূর গড়িয়েছে?
দোলা অদ্ভুত থেমে থেমে উত্তর দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন সুষুপ্তি আর জাগরণের মধ্যে আছে। “সুকান্ত। তোদের পাড়ায় থাকে।” আমি চাইনি। জানি না কেন?” দোলার কথা শেষ হবার আগেই চয়ন বলে উঠল, “ছাড় না মামু। এই ভাল” দীর্ঘশ্বাস চাপল কি কেউ? দু জোড়া কানই কি খাড়া হল? “সুকান্তদা কে চিনি। মাটির মানুষ। তোর কথায় কান ধরে ওঠবস করবে। আর” একটু থামল চয়ন “এবার আমার ছুটি।”
গলার স্বর কি পাল্টালো? তন্নতন্ন করে কি খুঁজছে ওরা একে অপরের অভিব্যক্তির গুলোতে? নাকি সবি মনের ভুল?