Saturday 4 May 2019

চন্দ্রকান্তমণি

চন্দ্রকান্তমণি- (c) Anindita Bhattacharya

“দুধ ম্যাডাম”।
“  থ্যাঙ্কস্ এডওয়ার্ড। ” আশি বছরের মিস মার্থার দুচোখে ফুটে উঠল পরম বিশ্বাস। ফুটবে নাই বা কেন? বিগত ছাপ্পান্ন বছর ধরে এই একই রুটিন চলে আসছে। প্রতিরাতে আমি একগ্লাস উষৎ উষ্ণ দুধ এনে দি ম্যাডামকে।  দুধ ছাড়া ওণার ঘুম আসেনা। এই গডউইন কাসলের বিশ্বস্ত বাটলার আমি এডোয়ার্ড অস্টিন। ম্যাডামের সব অভ্যাস, পছন্দ, অপছন্দ আমার নখদর্পনে। ম্যাডাম আমায় চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন। কেনই বা করবেন না,বিগত ছাপান্ন বছরে একটাও অবিশ্বাসের কাজ করেছি আমি? আজ ছাড়া।
মাপ করে দেবেন ম্যাডাম। মাপ করে দেবেন মৃত শ্রী এবং শ্রীমতী গডউইন। ওণাদের পবিত্র আত্মা শান্তি পাক। ওণাদেরও পরম স্নেহভাজন ছিলাম যে আমি। গডউইনদের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে কবে যে ঝড়ে গেল যৌবন,তার হিসেব রাখিনি। আমি নির্লোভ বিশ্বস্ত বাটলার এডোয়ার্ড অস্টিন, আজ করে বসেছি এক চরম অন্যায়।কিন্তু আমি নিরুপায়।
যেদিন থেকে নতুন অথিতির প্রবেশ ঘটেছে এই গডউইন কাসলে, আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি।

মিঃ মার্কাস এসে যখন একান্তে কথা  বলছিলেন, ম্যাডামের উচিৎ হয়নি আমাকে ডাকা। কেন যে ডাকতে গেলেন। মিঃ মার্কাস মোটেই স্বচ্ছন্দ বোধ করছিলেন না। আমিও না। ম্যাডামের অনুরোধে ঢেঁকি গিললাম দুজনে। মিঃ মার্কাসের পরিচয়টা দিতে ভুলে গেছি বোধহয়, বয়স হলে এমনি হয়। মিঃ মার্কাস হলেন জেনকিন্স পরিবারের উকিল। জেনকিন্স আর গডউইনরা সম্পর্কে আত্মীয়। আত্মীয়তা যদিও বহুদূরের। তা জেনকিন্স পরিবারের শেষ উত্তরাধিকারী তথা ম্যাডামের কাজিন মিঃ উইলিয়াম জেনকিন্স সম্প্রতি মারা গেছেন। উইলের বয়স বেশী নয় কিন্তু। বছর ২৩-২৪। কি যে হয়েছিল, বোধহয় মানসিক বিষাদে ভুগছিলেন। ঠাকুরদার বিশাল দোনলা বন্দুকের নলটা গলার নলিতে ঠেকিয়ে টিপে দেন ট্রিগার। দুম্।
উইল একা নয়। জেনকিন্সদের বিষাদের ইতিহাস আছে বাবু। উইলের ঠাকুরদা মিঃ জেমস্ জেনকিন্স, উনি আর্মির বড় অফিসার ছিলেন। কর্মসূত্রে ওণাকে পাড়ি দিতে হয় সুদূর ভারতবর্ষ।  অনেক নেটিভ ভারতীয় রাজ্যের বিরুদ্ধে বৃটিশ আর্মিকে উনি নেতৃত্ব দেন। শত্রুপক্ষকে নির্দয় ভাবে কচুকাটা করার বদনাম বা সুনাম ছিল ওণার। ইন্ডিয়ান পুরুষ বা নারী ছিল ওণার দুচক্ষের বিষ।শিশু থেকে বৃদ্ধ,  পুরুষগুলোকে কচুকাটা করতেন, আর নারীদের-। এই বিরাশি বছর বয়সে এটুকু বলতে পারি, ভারতীয় নারীদের ওণার ছিটেফোঁটাও পছন্দ ছিলনা। তবে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্দয় ভাবে তাদের উপভোগ করার মধ্যে একধরণের পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিঃ জেমস্। বলতে পারেন জাতিশ্রেষ্ঠত্বের অহংকার তৃপ্ত হত ওণার।তবে অভিজাত বিজিত রমণী ছাড়া কাউকে স্পর্শ করতেন না তিনি। রাণী/বেগম বা রাজপরিবারের রমণীদের ধর্ষণ করে তীব্র জাতিশ্রেষ্ঠত্বের শ্লাঘা অনুভব করতেন তিনি। ওণার অত্যাচার আর নিষ্ঠুরতার গল্প ছিল কিংবদন্তী। পৌঁছেছিল খোদ ইংলণ্ডেশ্বরীর কানেও। কোম্পানী ওণাকে বাঁচাতে কম অর্থব্যয় করেনি। কিন্তু লাভ হয়নি। কথিত আছে একজাহাজ সোনা-দানা-হিরে জহরৎ নিয়ে ফিরে আসেন মিঃ জেমস্ জেনকিন্স। তারপরই কি যে হয়,বছর পাঁচেকের মধ্যেই ঐ একই দোনলা বন্দুক দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেন তিনি। ঠিক ঐ একই ভাবে। যেভাবে ওণার নাতি উইল শেষ করেছিল নিজেকে।
উইলের অবশ্য আত্মহত্যা করাটা অস্বাভাবিক না। চোখের সামনে রাতারাতি টাকার কুমির থেকে পথের ভিখিরি হয়ে গেল জেনকিন্স পরিবার।মিঃ জেমসের লুট করে আনা অত ভারতীয় ধনরত্ন যে কিভাবে নিঃশেষিত  হয়ে গেল তা আজও লণ্ডনের অভিজাতদের বিস্ময়।  কিভাবে যে এরা টাকা ওড়ায়,  তা আমার মত সাধারণ ইংরেজ বাটলার কল্পনাও করতে পারবে না। শুধু কি তাই? কতগুলো মৃত্যু ঘটল জেনকিন্স পরিবারে,গুণে শেষ করা যাবে না। বলতে গেলে সব অপঘাতে মৃত্যু।
এমনিতে যে জেনকিন্স আর গডউইন পরিবারের সম্পর্ক মধুর,তা বলা যায় না। বিগত শত বছরে কেউ কারো মুখ দেখেনি। কিন্তু জেনকিন্সদের আপন বলতে তিনকুলে আর কেউ নেই,তাই উইলের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি ম্যাডামের ভাগ্যে জুটেছে।

দাঁড়ান। দাঁড়ান। সম্পত্তি বলতে আপনারা কি ভাবছেন? বলেছি না জেনকিন্সরা কপর্দকশূন্য।সদ্য আত্মঘাতী উইলের বাড়িটাও বন্দক। আর ছাড়াবার সামর্থ্য গডউইনদের নেই। ম্যাডামও উকিল বাবুকে তাই বোঝাচ্ছিলেন। আমায় ডাকলেন সাক্ষ্য দিতে। শুঁড়ির সাক্ষী মদ্যপ আরকি।
উকিল বাবু বিরক্ত হয়ে উঠে গেলেন। যাবার আগে ম্যাডামকে একটা টিনের কৌটো আর একটা চিঠি দিয়ে গেলেন। পাতি গোল টিনের কৌটো। গায়ের রঙটাও উঠে গেছে। ম্যাডামের নির্দেশে আমিই খুললাম। খালি।
খালি তো হবারই কথা ম্যাডাম। উইল আপনার তুতো কাজিন হতেই পারে। তাই বলে সে যে পথের ভিখারি তা নিয়ে তো কোন দ্বিমত নেই?ফেলে দিতে চাইলাম কৌটোটা। নোংরা টিনের কৌটো। ইন্ডিয়ায় তৈরি।গায়ের লাল সোনালী হাতি ঘোড়া বিবর্ণ। রঙ চটা।  ম্যাডাম দিলেন না। পরের দিন আটেক শুধু ঐ কৌটো আঁকড়ে পড়ে রইলেন ম্যাডাম। না না ধারালো যন্ত্র দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করছিলেন কৌটোটাকে। করতে করতেই একদিন টপ করে খসে পড়ল ম্যাডামের কোলে। পায়রার ডিম?না না দরজার নবের মত প্রকাণ্ড একটুকরো পাথর। পূর্ণিমার চন্দ্রের মত সৌম্য তার কান্তি। মুহূর্তে ফায়ার প্লেসের আগুনে চকমক করে উঠল। ছিটকে বেরোল তার দ্যুতি। এক টুকরো দ্যুত্যি প্রতিফলিত হল মোর মুখমণ্ডলে। পলকে যেন প্রগাড় শান্তি নেমে এল মোর শিরা ধমনীতে। এই তো সে। আমার মোক্ষ।
ম্যাডাম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলেন। দেখছিলাম আমিও। ম্যাডাম যেই তাকে ড্রয়ারে রাখতে যাবেন,খপ করে চেপে ধরলাম ম্যাডামের হাত। না। না। না। এ পাথর,এই মণি শুধু এডোয়ার্ড অস্টিনের। জীবনে আমার এইরূপ দেখেননি ম্যাডাম।আমিওকি ম্যাডামের এইরূপ দেখেছি? দুই নরপিশিচের মত ঝাপটাঝাপটি করছিলাম আমরা। দুজনের মুখদিয়েই বেরোচ্ছিল রক্তজল করা আওয়াজ,“দেঁ-দেঁ-দেঁ। এই মঁণি আঁমার”। ডেইজি, ম্যাডামের সেক্রেটারি দৌড়ে এসেছিল আমাদের অতিপ্রাকৃত চিৎকারে। “এ কি?” চিৎকার করে উঠেছিল ডেইজি। পলকে যেই তাকালাম ডেইজিরর দিকে, আলগা হল মুঠি, খপ্ করে মণিটা কেড়ে নিলেন ম্যাডাম। আর তারপর পাশে রাখা ওয়াকিং স্টিকটা তুলে নিয়ে বসিয়ে দিলেন সপাৎ করে এক বাড়ি। মাথা কেটে ঝরঝর করে ঝরতে লাগল রক্ত। সম্বিত ফিরে পেলাম ম্যাডাম আর আমি। সামলে নিলাম দুজনেই। ছুটে বেরিয়ে গেলাম ম্যাডামের ঘর থেকে। পিছন পিছন দৌড়ে এল ডেইজিও।
এরপর কেটে গেছে একপক্ষ। নিজের ছন্দে ফিরেছে গডউইন কাসল। ম্যাডাম ক্ষমা করে দিয়েছেন আমাকে। ক্ষমা চেয়েওছেন। আমি শুধু জানতে চেয়েছি,“ওটা কি ছিল ম্যাডাম?ওটা কোথায়?” জবাবে ম্যাডাম বলেছেন,“ওটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না এডওয়ার্ড। খুব যত্নে রেখেছি ওকে। ও মণি আমার শেষ বয়সের পরম প্রাপ্য। জানো ভারতীয়রা কি বলে ওকে? চন্দ্রকান্তমণি। ”
চন্দ্রকান্তমণি! হ্যাঁ ঐ চন্দ্রকান্তমণি,  শুধুই এডওয়ার্ড অস্টিনের। বিগত একপক্ষ ধরে ফিসফিস করে কত কথা বলেছে সে আমার সাথে। ম্যাডাম ভাবছেন এডোয়ার্ড জানে না,চন্দ্রকান্তমণি কোথায় লুকানো আছে,কিন্তু ম্যাডাম জানেন না, চন্দ্রকান্তমণি স্বয়ং অহর্নিশ ঘোষণা করে চলেছে কোথায় আছে সে। আজ অমাবস্যা। ইন্ডিয়ান ফেরিওয়ালাটা বলছিল, এই অসুধের গুণ অমাবস্যায় ভালো খোলে। ম্যাডাম এখনও জানেন না, ৫৬বছরের বিশ্বস্ত এডওয়ার্ড ম্যাডামের দুধে মিশিয়েছে গুণে গুণে ছটা গুলি-। এডওয়ার্ড তো একটাই দিতে চেয়েছিল,চন্দ্রকান্তমণিই বলল,“আরো দে। আরো। আরো। আরো। ”
(চলবে?)
চন্দ্রকান্তমণি পর্ব-২

দুধের গ্লাস শেষ হতে না হতেই,ম্যাডামের মাথাটা হেলে পড়ল বালিশের ওপর। মুখমণ্ডল  থেকে ধীরে ধীরে মুছে গেল সজীবতার উষ্ণ লালিমা। ধিকিধিকি ফায়ার প্লেসের আগুন ছাড়া কেউ জানল না। বাইরে তখন ঝিরিঝিরি তুষারপাত হচ্ছে। আজ ঠাণ্ডাটা বড় জব্বর। পশমী কম্বল টেনে দিলাম,ম্যাডামের গলা অবধি। ফায়ারপ্লেসের আগুনের প্রশয়ে লুকোচুরি খেলছে আলোআঁধার। দেরাজের চাবি ম্যাডামের বালিশের নীচে থাকে। দেরাজের ভেতরে তন্নতন্ন করে খুঁজছি, কোথায় সে? জামাকাপড়ের  আবডালে লুকানো ফোকরে। নেই। বুকশেল্ফে মূল্যবান চামড়া দিয়ে বাঁধানো সোনার জলে নাম লেখা শতশত বই,টান মেরে মেরে ফেলে দিলাম মাটিতে। নেই। ম্যাডামের ডেস্ক তোলপাড় করে ফেললাম।  নেই।  সব টানা ড্রয়ার খুলে তছনছ করে ফেললাম। নেই । নেই নেই কোথাও নেই। আবেগে থরথর করে কাঁপছি আমি। হঠাৎ ম্যাডামের কাঁপা কাঁপা গলা ভেসে এল-“এডওয়ার্ড মণি খুঁজছ?ঐ মণি অভিশপ্ত।” চমকে তাকিয়ে দেখি, ম্যাডাম আবার পূর্ববৎ নির্জীব হয়ে পড়েছেন। ঝাঁপিয়ে পড়লাম। না। না। না। এভাবে আমাকে ফাঁকি দিতে দেবো না। বলো কোথায় আমার মণি? ম্যাডাম একই রকম নির্জীব হয়ে পড়ে রইলেন। নিষ্প্রাণবৎ। কিন্তু আমি জানি, সব ম্যাডামের অভিনয়। পাশ থেকে বালিশ তুলে চেপে ধরলাম ম্যাডামের মুখে,এতটুকু প্রতিবাদ করলেন না ম্যাডাম।শরীর ইতিমধ্যেই বরফের মত ঠান্ডা।  মৃতের আবার শ্বাস নেবার কি প্রয়োজন। কিন্তু এই মাত্র যে কথা বললেন ম্যাডাম?
পিছন থেকে চিৎকার করে উঠল এক মহিলাকণ্ঠ। চমকে তাকিয়ে দেখি ডেইজি। ম্যাডামের সেক্রেটারি। ডেইজি নীচের ঘরে শোয়। হয়তো আমিই মালপত্র টানাহেঁচড়া  করতে গিয়ে বেকার শব্দ করে বসেছি। ডেইজি চিৎকার করেই চলেছে, ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলাম ডেইজির দিকে। ঝলঝলে রাতপোশাক গুটিয়ে দৌড়ল ডেইজি, সমানে চিৎকার করছে বাঁচাও। বাঁচাও।
ইদানিং ম্যাডামের সব চিঠিপত্র,কাগজ,দস্তাবেজ সামলায় ডেইজি। নির্ঘাত মণিটা ওর হেফাজতেই আছে। মণি আমার চাই। মণি আমায় ডাকছে। সিঁড়ির বাঁকে ধরে ফেললাম ডেইজিকে, সপাটে এক চড়। ছিটকে নীচে পড়ল ডেইজি। সিঁড়ির রেলিংএ ঠকাস করে ঢুকল মাথাটা। ঘাড়টা কেমন যেন খড়ভরা পুতুলের মত বেঁকে গেল। চোখ খুলেই পড়ে রইল ডেইজিই লাশ। দুচোখে সীমাহীন আতঙ্ক। আমার বিরাশি বছরের বুড়ো শরীর এবার জবাব দিচ্ছে। হাপরের মত হাঁপাচ্ছি। হাঁটুগুলো এবার ভেঙে পড়বে মনে হচ্ছে। টলতে টলতে কোনমতে নামলাম,ডেইজির মৃত শরীরটাকে ডিঙিয়ে ঢুকলাম ওর ঘরে। এইঘরটা বেশ ঠাণ্ডা। ফায়ারপ্লেসের আগুন নিভু নিভু। হাঁপাতে হাঁপাতে তোলপাড় করছি ডেইজির  ডেস্ক। ডেইজির দেরাজ। তোরঙ্গ-।
এ বাড়ির বড় ঘড়িতে ঢং ঢং করে চারটে বাজল। আর কত খুঁজব তোকে মণি। পড়ে আছে দোতলা একতলায় দুদুটো লাশ। রীতিমত ভয় করছে এবার। আর তিন চার ঘন্টা পরেই ফর্সা হবে আকাশ। হয়তো রোদ উঠবে না। তাই বলে এবাড়ির দাসদাসীরা কাজে আসবে না? হঠাৎ মনে হল, ডেইজির শৌচালয়টা একবার দেখি-
একহাতে দেওয়াল গিরি নিয়ে ঢুকলাম ডেইজির শৌচালয়ে। সাবান রাখার জায়গায় একগাদা নুড়ি পাথর। কেন?
ধুচ্ছি প্রতিটি পাথর। ডেইজির শৌচাগার কি অসম্ভব ঠাণ্ডা। বাইরে বোধহয় ঝড় উঠল, মেথর আসার দরজাটা ঠকঠকিয়ে চমকে দিল আমায়। মিথ্যা। মিথ্যা। সব মিথ্যা। এগুলো নিছক পাথর। আমার মণি কই? আমার চন্দ্রকান্তমণি? সে যে আমায় ডাকছে- আমার বুড়ো ধমনীতে তীব্র হচ্ছে রক্তের বেগ। টলতে টলতে রান্নাঘর থেকে বিশাল ছুরি নিয়ে ফিরে এলাম। ফেড়ে ফেলছি ডেইজির বালিশ- তোশক। নেই। নেই। তবে কি ম্যাডামের কাছেই? বেরোতে যাব, চোখ পড়ল মেজেতে পড়ে থাকা ডেইজির তোরঙ্গের ওপর। ভিতরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। তোরঙ্গটা বেশ পুরোনো, বিবর্ণ, চামড়া ফেটে গেছে কয়েক জায়গায়।  কিন্তু বেশ দামী চামড়া। এ জিনিস ডেইজির হতেই পারে না। অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা সেক্রেটারিকে ম্যাডামই দিয়েছিলেন দয়াপরবশ হয়ে। ভিতরে দামী শাটিনের আস্তরণ, দেওয়াল গিরির মরা আলোতেও ঝিলিক দিচ্ছে গোলাপী শাটিন। যদিও তাও ছেঁড়া। তাপ্পি মারা। কাঁপা কাঁপা হাত বোলাচ্ছি তোরঙ্গের শাটিনের আস্তরন বরাবর। কি যেন একটা আছে ভিতরে, গোল মত,দরজার নবের মত।
আমার মণি। বরফের মত শীতল। তবু তাকে ওষ্ঠে ছোঁয়ানো মাত্র উষ্ণতার স্রোত বয়ে গেল বুড়ো শরীরে। কি তীব্র মায়া। ম্যাডাম,ডেইজিকে মারতে এতটুকু হাত কাঁপেনি আমার। প্রয়োজনে আবার মারতে পারি। মরতেও পারি। দেওয়ালগিরির আলোতে কেমন যেন ম্রিয়মান লাগল মণিকে। কি হয়েছে রে মণি তোর? সেদিন তো রূপে ঝলমল করছিলি,আজ এমন শীতল কেন?
“কারণ সেদিন ছিল পূর্ণিমা। আর আজ অমাবস্যা। চন্দ্রের ক্ষয় এবং বৃদ্ধির সাথেই বাড়তে বা কমতে থাকে মণির দীপ্তি। তাই তো এর নাম চন্দ্রকান্তমণি-”।  কে যেন বলে উঠল পিছন থেকে। চমকে ফিরে তাকালাম, পিছনে দাঁড়িয়ে আব্দুল। এ বাড়ির মেথর বলতে পারেন। আব্দুল শৌচাগার সাফ করে, মাথায় করে বয়ে নিয়ে যায় বর্জ্য পদার্থ। পিছনের লোহার সিঁড়ি দিয়ে উঠে, চেম্বারপট সাফ করে, নীরবে নেমে যায়। মূল কাসলে কখনও প্রবেশ করে না। আজ এই ভোর রাতে আব্দুল,ডেইজির ঘরে কি করছে?নিশ্চয় শৌচাগারের মেথর দরজা দিয়ে ঢুকে এসেছে। বাগিয়ে ধরলাম ছুরি,দুটোকে নিকেশ করেছি। আর এটাতো কালো ইন্ডিয়ান। পুলিশ জানবে,অর্থের লোভে আব্দুলই মেরেছে, ম্যাডাম আর ডেইজিকে। আর বুড়ো এডওয়ার্ড মেরেছে আব্দুলকে- ।
(চলবে?)

No comments:

Post a Comment