Sunday 25 June 2017

বাবার ডাইরি থেকে (টুকলি করা) ২৫শে জুন ২০১৭



ঝ         ভূত নিয়ে ভৌত তথ্য
        ———————————
বেশ কয়েক মাস পরিবেশ-পরিস্থিতি  আমার চিন্তা-চেতনা কে স্থবির জড়ে পরিণত করে দিয়েছে । বর্তমানের জমিতে  আর ভবিষ্যতের রূপরেখা দেখতে পাচ্ছি না । আমি এখন কিছুটা ভূতাবিষ্ট , অতীত রোমন্থনেই বেঁচে আছি ।
      ১১২ বছর আগে সাড়ে সাত বিঘার ‘ভূতের ভিটে’টা কিনে জঙ্গল সাফকরে আমাদের বর্তমান বাসস্থান টি বানান আমার ঠাকুর্দা । তিনি কিন্তু ভূতটাকে ভিটেছাড়া করেন নি ভূতটা ভীষণ মানুষ সংসর্গী  । জীবিত সবার সাথে সে মিত্রতা চায় । কিন্তু ভৌত-সামাজিক পদ্ধতি-প্রকরণ এত ভয়াবহ  যে সুরুতেই সবাই প্রচন্ড ভয়পেয়ে শতহস্ত দূরে পালায় তার কাছথেকে।
      চার পুরুষের প্রথম প্রজন্মে আমার ঠাকুমাই প্রথম ভূতটাকে বশ করেন। ঠাকুমা ‘তেনা’কে বলতেন ‘মাতুল’। ঠাকুর্দা মাতুল কে তোয়াক্কাই করতেন  না, তার কারণ তাঁর গুরুদেব শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব এই ভিটেতে ক্ষেত্রপাল ‘প্রথিত ’ করে দিয়েছিলেন ।  প্রসঙ্গত  ক্ষেত্রপালও নিরাবয়ব অশরীরী   কিন্তু সাত্বিক যেখানে মাতুল হচ্ছে কিছুটা রজ গুন সম্পন্ন ।
      আমাদের ৪পুরুষের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতিটি পর্যায়ে ১জনের সাথে ঐ অশরীরি ‘মাতুল’এর একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ  সম্পর্ক  স্থাপিত হয় !
     তথাকথিত  ১ম জন হলেন আমার ঠাকুরমা।  জবরদস্ত জাঁহাবাজ   মহিলা ! ঠাকুর্দা ছিলেন ঠাকুরমা থেকে ২০ বছরের বড়।  সারা মাস বিদেশী ‘হৌসে’ সাহেবদের ‘সেবা’করে ’ ,  ‘ইয়োরস মোষ্ট ওবিডিয়েন্ট সার্ভেন্ট ’  মাসান্তে দেড়-দিনের জন্য বাড়ি ফিরতেন । ফলশ্রুতি বছর শেষে  আমার বাপ-খুড়ো-জ্যাঠা- পিসির সংখ্যা একজন করে বাড়তো ।
      এদিকে  জেলিয়া-কৈবর্ত আর গো-পালক সম্প্রদায় পরিবৃত অঞ্চলে একক তরুণী  ব্রাহ্মণী ,সন্তান-সন্ততি, আটটি দুধেল গাই,ঢেকিতে ধান ভাঙা,যাঁতায় ডাল ভাঙা,  ফলের বাগান আর সবজির  ক্ষেতের তত্ত্ববধান সবই সামলাতেন দশজন পরিচারক /পরিচারিকার সহায়তায় । যে কোনো জটিল সমস্যাই তিনি অত্যন্ত সহজ সরল পদ্ধতিতে সমাধান করতেন তাঁর অনবয়ব ‘মাতুল’ এর সহায়তায়
     দ্বিতীয় প্রজন্মে আমার মেজপিসিমা ভূতাবিষ্ট হন । ছোটবেলা থেকেই তিনি দুর্বল - চিত্ত , নরম-মনা ,আদুরে ,ঘরকুনো  প্রকৃতির ছিলেন । তাই এবার তিনিই হলেন ভূতের সহজ ‘টারগেট’ ।  কিন্তু মাটির পাত্রে বাঘের দুধ রাখা যায় না,— দুর্ব্বল চিন্তা-চেতনার জন্য মেজপিসিমা আধার হিসাবে  খুবই ভঙ্গুর ছিলেন । ভৌতশক্তির সঞ্চারে তাঁর আভ্যন্তরীণ
বিস্ফোরণ ঘটলো । অধি-মনস্তত্ত্বিক  ক্ষমতার বিকাশ ঘটলেও তিনি পাগল হয়ে গেলেন। মস্তিষ্কের শৃঙ্খলা  (কো-অর্ডিনেশন অফ ব্রেন)ঠিক রাখার জন্য তাঁকে লাল চন্দন গাছের শিকড় বাটা খাওয়ানো হত । চতুর্দিকে পিসিমা  “কি ভয়ানক”,  “কি ভয়ঙ্কর”  দেখতেন ! প্রায়শ তিনি যা বলতেন তাই ঘটতো, বা যা ঘটতে চলেছে তার পূর্বাভাস দিতেন !
      আমার দাদা,আমি  আর ছোট ভাই ,আমরা তিনজন হ‘লাম এ পরিবারের তৃতীয়  পুরুষ মানে থার্ড জেনারেশন । তেলে সেজ বাতির বদলে ইলেকট্রিক  লাইট এসে গেছে ।  দাদা বাবার কাছে, ভাই মায়ের পাশে আর আমি শু‘তাম ঠাকুরমা সাথে ।  tokhon
ও পাখা/ফ্যান বাড়িতে আসে নি ।
       গ্রীষ্মকালে রাতে বাড়ীর কর্ত্তারা বাচ্ছাদের নিয়ে বিশাল দোতলার খোলা ছাতে বিছানাকরে শু‘তেন । মা-কাকিমারা নিচে যে যার ঘরে থাকতেন । ছাতের উত্তর-পূর্ব্ব কোনে ঠাকুরমার পূজার ঘর । আমি ছাড়া আর সবার কাছে ঘরটা ছিল দুষ্প্রবেশ্য । ঘরটার পশ্চিম দিকের দরজাটা খুললেই সামনে বিশাল ছাত ,আর ঠিক মাঝামাঝি  একটা তামার চাকতি বসানো আছে। তাতে কিছু তান্ত্রিক সিম্বল আর অজানা ভাষায় কোনো মন্ত্র লেখা আছে যা সময়ের সাথে সাথে এমন ক্ষয়ে গেছে যে আজ আর ঠিক পড়া যায় না । জায়গাটাকে
বলা হত ‘তিন ধারিয়া’ । (নীচের তিনটি দেওয়ালের সঙ্গম স্থল)
     শোনাকথা—এখানে প্রতি শনিবার মধ্যরাতে ঠাকুর্দা কষ্ঠি পাথরের পরাতে পাঁচসের চালের শিবাভোগ দিতেন — ঠাকুরমার কথা মোট ৫৭৬বার শিবাভোগ দিয়ে ঠাকুরদা তন্ত্রসিদ্ধ হয়েছিলেন।
      তিনধারিয়ার উপর বিছানা পেতে কেউ শুতো না কারণ সেটা খুব সুখকর ছিল না। ঐ বিশেষ তাম্রবিন্দুটা হল ভৌতিক শক্তির জ্বালামুখ । বড়দা শেষবয়সে সাধুসঙ্গ করতেন। ১৯৭৭এ জনৈক বিন্ধাচল ফেরত  তান্ত্রিককে তিনি বাড়ী নিয়ে এলেন । ছাতের ভূতের গল্প শুনে তিনি সবিদ্রূপে  আধখালি কারণের বোতলটি নিয়ে তিনধারিয়ায় বিছানা পেতে শুয়ে পড়লেন । তিনি দাদাকে আশ্বস্ত করলেন, বাকি বোতলটা খালি করেই তিনি ভূতটাকে বোতলে ভরে  নিয়ে,ছিপি এঁটে সকালে দাদাকে ফেরত দেবেন ।
      মাঝরাতে হুড়হুড় দুড়দুড় শব্দে সবাই জেগে উঠে দেখলো , রাত  প্রায় দুটো,দোতলার দালানে , সিদ্ধপুরুষ নাথবাবা ন্যাংটা,ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছেন, ক্রন্দনোদ্যত ।
     তাঁর বক্তব্যনুযায়ী মধ্যরাতের পর কোন একসময়  এক বিশাল বরফের লিঙ্গ ছাত
ভেদকরে তাঁর গুহ্যপ্রহার করেছে !

(To be continued)

No comments:

Post a Comment