Thursday, 3 September 2015

অনির ডাইরি ২৯শে অগস্ট ২০১৫-৩১ শে অগস্ট ২০১৫



আজ অত্যন্ত খুশির দিন  মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কলমের একটি আঁচড়ে  শৌভিকের বিডিও গিরি সমাপ্ত হল  ২০১৩  সাল থেকে শুরু হওয়া অবর্ণনীয় যাতনার আজ অবসান না আমাদের যৌথ সিদ্ধান্ত এই নিয়ে বিন্দুমাত্র  আদিখেত্যা আমরা করব না  তবু মন বারংবার স্মৃতিমেদুর হয়ে উঠছে 
  শ্বশুরমশাই এর কর্কট রোগ ধরা পড়ার পর ওণার সনির্বন্ধ অনুরোধে আইনানুগ বিবাহ চটজলদি সেরে ফেলা হলেও অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে আরো বেশ কিছুদিন পরে  বাবা তখনও জয়েন্ট সেক্রেটারী  আপতকালীন পরিস্থিতিতে প্রবেশনার শৌভিক বদলি হয়ে এল সিউড়ি থেকে আলিপুর আমি তখন এএলসি খড়্গপুর 

সপ্তাহান্তে দেখা হত  বিয়ের পরও ছয় মাস আলাদা আলাদা থাকা শৈবালদা তখন ডিএলসি খড়্গপুর ওণার অনুগ্রহে প্রতি শুক্রবার ২টা ২৫ এর খড়্পুর লোকাল ধরে টা নাগাদ সাঁতরাগাছি  সেখান থেকে হোয়াইট লাইনার ধরে ট্রাফিক জ্যাম না থাকলে সন্ধে  ৭টা নাগাদ এয়ারপোর্ট দুটো দিন কর্পূরের মত উবে যেত  রবিবার দুপুর থেকে শুরু করতাম কান্নাকাটি   সোমবার ভোরে যখন শৌভিক হাওড়াগামী ট্যাক্সিতে তুলে দিত, মনে হত সময় যেন ওখানেই থমকে  রয়ে গেল    আজও মনে আছে সেদিন মেদিনীপুরে চাইল্ড লাইনের কোন অনুষ্ঠান ছিল  অনুষ্ঠান শেষে দেবু সুকন্যার সাথে গাড়িতে ফিরছি শৌভিক ফোন করে জানালো ওর প্রথম পোস্টিং হতে চলেছে লালবাগ  মস্তকে বজ্রাঘাত  তখনও লালবাগে কোন আরএলও (Regional Labour Office ) ছিল না  বহরমপুরের এএলসি লালবাগের দায়িত্বভার সামলাতেন যদি কেঁদেককিয়ে বহরমপুর পাইও তবু একসাথে থাকা অসম্ভব সে যাত্রা শেষ মুহূর্তে জমা দেওয়া বিয়ের নথিপত্র আমাদের খণ্ডিত দাম্পত্যকে জোড়া লাগায়  শৌভিকের প্রথম পোস্টিং বিডিও খড়্গপুর পঞ্চায়েত্ সমিতি

 সবথেকে বেশি খুশি ছিলেন আমার শাশুড়ী মা  আমাদের  লালনীল সংসার হবে শৌভিক যোগ দেবার পর জানা গেল যে প্রাক্তন বিডিও  আপাতত কোয়ার্টার ছাড়তে অপারগ উনি পুরুলিয়া চলে গেলেও ওণার পরিবার এখানেই থাকবে অগত্যা শৌভিককে থাকতে হত বিডিও অফিস সংলগ্ন একটি ছোট্ট  ঘরে  জলচৌকির ওপর চিটচিটে বিছানায় আর আমি যথারীতি  ডেইলি পাষণ্ড   হাওড়া থেকে  খড়্গপুর  ভাবুন কি মর্মান্তিক ব্যাপার, রোজ আমার ট্রেন ওর অফিসের সামনে দিয়ে চলে যেত  তব একঝলক দেখা হত না আমরা ঠিক করলাম খড়্গপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকব  সেই মত বাড়ি খুজঁতে গিয়ে বৈদ্যুতিক ঝটকা খেলাম  খড়্গপুরের বাড়ি ভাড়া কলকাতার যে কোন সমৃদ্ধশালী এলাকার থেকে  কম তো নয়ই বরং বেশি  সময় কেটে যাচ্ছে হুহু করে  আমাদের এক বৃদ্ধ পিওন পরামর্শ দিল মন্দাকিনী লজে নৈশযাপনের  লিখতে গিয়ে আজ হাসি পেলেও সেই সময় প্রস্তাবটা আমাদের মনঃপূত হয়েছিল  ফোন করে বুক করাতে হত  এক রাতের ভাড়া পঞ্চাশ টাকা মাত্র একটা পুচকে ঘর  ঝুলপরা বাথরুম  একটা ১৪টিভি আর খাট বিছানা  আর কোন আসবাব ছিল কিনা মনে পড়ে না  যে বাচ্চা ছেলেটি  ঘর খুলতে আসত তাকে টাকা দিলে সে নিকটবর্তী কোন দোকান থেকে পরোটা আর ভাঁড় ভর্তি ঝাল আলুরদম এনে দিত  তারপর জগৎ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যেত ঘরটা  আমরা ছাড়া আর কাউকে কখনও দেখিনি নিজের বিবাহিত বরের সাথে লজে শিরশিরে  নৈশযাপন অনন্য অভিজ্ঞতা কজনের হয় বলুন?

  লা ডিসেম্বর ২০০৯ আমরা একসাথে থাকতে শুরু করলাম প্রাক্তন  বিডিও সাহেব সময়ের অনেক আগেই কোয়ার্টর খালি করে দেন  একটি ঢাউস ব্যাগ নিয়ে যখন দাশনগর থেকে ট্রেনে উঠলাম বাবার চোখ ছলছল করছিল সেদিন বিকাল বেলা বিডিও অফিসের ড্রাইভার শৈবালদা তাঁর দুধ সাদা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি করে আমাকে নিয়ে গেল কোয়ার্টরে নং জাতীয় ধরে বেশ খানিকটা গিয়ে, বাঁ দিকে নয়নমনোহর ইউক্যালিপ্টাসের জঙ্গল পেরিয়ে মাদপুর  গ্রাম  ততক্ষণে  সন্ধ্যা ঘনিয়েছেসভাপতি কাকলি ভুইঞ্যা সাউ অপেক্ষা  করছিলেন যুগলকে একত্রে শুভেচ্ছা জানালেন অতঃপর গৃহপ্রবেশের পালা  ছিমছাম একতলা বাড়ি আম বাগান দিয়ে ঘেরা  পাশেই পুকুর আর ধানক্ষেত একটু দূরেই রেললাইন নিরালা নিস্তব্ধতায় ঘেরা স্বপ্নপুরী
ঈশ্ অরকূট আর নেই  থাকলে  সেই সব মায়াবী দিনগুলির কিছু ছবি পুনরায় শেয়ার করতে পারতাম  সবুজ ধানক্ষেত, টলটলে ডোবা, ঘাড় বেঁকিয়ে  হেঁটে  যাওয়া  উদ্ধত হাঁস আর  ভীতু  ভীতু মুরগির  দল অগুনতি  রঙবেরঙের পাখি আসত  বারমাস কোকিল ডাকত  ভোরবেলা সেই তীক্ষ্ন সুরেলা  গান ঘুম ভাঙিয়েই ছাড়ত  রাতে উত্যক্ত  করত ব্যাঙ আর ঝিঝিপোকাদের সম্মিলিত কোলাহল বেশ শ্লথ গতিতে চলছিল জীবন  অজগ্রামে থেকেও যাবতীয় নাগরিক সুবিধা ভোগ করা  বিরাট একটি মাঠকে ডানদিক থেকে চক্রাকারে ঘিরে ছিল পর্যায়ক্রমে গ্যারেজ, ফুডের গুদাম, বিডিওর করণ, ডোবা যেখানে শৌভিক শখের এনআরএজিএ বিল্ডিংটা আর বানিয়ে আসতে পারেনি, আমাদের কোয়ার্টর, ক্যান্টিন, বিএসএনএলের অফিস আর ব্লক পশুচিকিৎসকের দপ্তর   অফিস চত্বর ফুলগাছ দিয়ে সাজাবার প্রস্তাব দিলেই  স্টাফেরা হাঁহাঁ করে উঠত  ইতিপূর্বে যতবার চেষ্টা করা হয়েছে টিকা নিতে আসা গরুর দল চেটেপুটে সাফ করে দিয়ে গেছে 
সন্ধ্যা নামলেই সব ফাঁকা   অফিসে অফিসে তালা  দূরে গেটের কাছে গ্যারেজের ওপর জয়েন্ট সাহেব থাকতেন  পাশে বড়বাবু আর ইন্সপেক্টর বিসিডব্লু  আর কোণাকুণি ন্যাড়া কোয়ার্টরে আমরা সেই সময় কিশনজীর দাপটে জঙ্গলমহল কাঁপছে  যৌথ বাহিনী সবে ঘুরিয়ে মারতে শুরু করেছে, খবর এল কিশনজী নাকি লুকিয়ে আছে মাদপুরেই থানা বহুদূর প্রায় ১৫ কিমি  তার ওপর থানায় গাড়ির তীব্র অভাব ছিল  পুলিশ আনতে হলে বিডিওকেই গাড়ি পাঠাতে হত আর বিডিও অফিসের নাইট গার্ড? ছিলেন তো  তাঁর নাম ছিল বলাই বাবু  রিটায়ার্ড পঞ্চায়েত্ কর্মী   সন্ধ্যা ঘনালে টর্চ, বালিশ আর বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে আসতেন ডিউটি  দিতে আজো মনে আছে সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরছি, বলাই বাবু গাড়ির জানলা দিয়ে মুণ্ড গলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,“ স্যার আপনি কবে ফিরবেন?”
কেন
এজ্ঞে একা থাকতে বড় ভয় করে

একরাতে হঠাৎ  থানা থেকে ফোন এল, গোপন সূত্রের খবর আজ রাতেই বিডিও অফিসে ডাকাত পড়বে  তখন রাত সাড়ে আটটা শৌভিকের কপালে গভীর ভাঁজ  পড়ল  থানা জানালো এই মুহূর্তে যথেষ্ট ফোর্স নেই  রাত এগারোটার আগে কিছু করা সম্ভব নয় একাধিকবার ফোন করার পর বলাই বাবুর সাড়া পাওয়া গেল, সব শুনে তার যা অবস্থা হল তা আর বলছি না  বিরক্ত শৌভিক শুধু বলল,“ তিন তলায় তালাচাবি দিয়ে বসে থাকুন  প্রসঙ্গত সিন্দুক ছিল দোতলায় গা ছমছমে নিস্তব্ধতা   পাল্লা দিয়ে ঝিঁঝির ডাক  খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠল  কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর শৌভিক বারন্দায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে আর আতঙ্কে আমি অবশ হয়ে যাচ্ছি  লোহার গেটে দাঁড়ালেই প্রথমেই ওকে দেখতে পাবে আর ভাবতে পারছিলাম না  শেষে অনেক ভাবনার পর শৌভিক স্থানীয় এক দোর্দোণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতাকে ফোন করল  তিনি তৎক্ষণাৎ প্রতিশ্রুতি  দিলেন পার্টির ছেলেদের পাঠাচ্ছেন  “কিচ্ছু চিন্তা করবেন না সার  আমরা আছিআছেন কিনা কিছুই বুঝিনি অবশ্য কাউকেই দেখতে পেলাম না  উৎকণ্ঠার প্রহর আর কাটেই না  শেষে প্রায় মাঝরাতে গাদা বন্দুকধারী  গোটা চার জওয়ান এসে হাজির  স্বস্তির শ্বাস নেবো কি, বলাই বাবু আর নামেও না, গেট খোলে না  বহু ফোন, পুলিশের জীপের হর্ণআমাদের সম্মিলিত চিৎকার , ঘটাং ঘটাং ইত্যাদির পর বলাই বাবুর বউ নেমে এসে গেট খোলে

 সে রাতেই শৌভিককে বললাম, “ বলাইকে কালই দূর করে দেবলাই বাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল বেশ কিছুদিন ধরেই  আমরা না থাকলেই সাধের আম গাছগুলি ফাঁকা হয়ে যেত  অফিস স্টাফেরা একবাক্যে বলাইকে দায়ী করত  ব্লকের যে মাসি আমাদের বাসন মাজতে আসত, তার বক্তব্যানুসারে বলাই তার মেয়েকে বিরক্ত করত এই নিয়ে দিনকয়েক আগেই বলাই বাবুর বউ খুব এক চোট হুজ্জতি করেছিল এসব নিয়ে পঞ্চায়েত্ সমিতিও খাপ্পা ছিল সুতরাং সরিয়ে দেওয়াই যায় শৌভিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“ পারলে এই দণ্ডেই  কিন্তু লোক কই?”
 লোক তো তৈরি  যেদিন আমাদের যুগলে গৃহপ্রবেশ হয়েছিল, সেদিনই তার সাথে আলাপ  শৌভিকই আলাপ করিয়ে দিয়েছিল,“এই যে এরাই আমায় বিগত এক মাস ধরে খাইয়ে পড়িয়ে রেখেছে নিমাইশম্ভু আর ইন্দ্র তিন ভাই, ক্যান্টিন চালায়  নিমাই লম্বা, রোগা, মুখভর্তি না কাটা আধপাকা দাড়িগোঁফ  শম্ভু মেজ  অতটা লম্বা নয়  গাঁট্টাগোট্টা   গোঁফ আছে আর ইন্দ্র নিতান্তই বাচ্ছা ছেলে  ছোট্টোখাট্টো  সর্বদা হাসিখুশি   কিন্তু হাবা যাইহোক আমার বরকে যে কি খাইয়ে রেখেছিল পরদিনই বুঝতে পারলাম  রান্নার  ব্যবস্থা তখনও হয়নি তাই সকালের খাবার ওরাই তিনভাই মিলে নিয়ে এল, লা ওপালার প্লেটে গরম ভাত, বাটিতে ডাল, পোস্তোর বড়া, মাছের ঝাল আর টমেটোর অম্বল

সাথে একটা তরকারি  এটা বিডিও সাহেবের ইসস্পেশাল রান্না  পোস্তোর বড়াটা মুখে দিয়েই ঝটকা খেলাম  “একিরে এতো রসুনের গন্ধ  রসুনের খোলাও আছেশৌভিক মুচকি হেসে বলল, “সবে তো খাওয়া শুরুতরকারিটা মুখে দিয়ে আঁতকে উঠলাম,“এটা কি?” শৌভিক হাসি চেপে বলল,“ কেন? চিনতে পারছিস না?”
অখাদ্য  এটা কি?”
পেঁপে  পোস্তো ঐযে ক্যান্টিনের পাশে যে পেঁপে গাছ আছে, পেঁপের পোস্ত
বাপরে বাপ  কেন যে টিকা নিতে আসা গরুর  পাল পেঁপে  গাছ গুলোকে মুড়িয়ে খেত না কে জানে খেলে আমার পৈশাচিক আনন্দ হত  আর মাছ?দেশি রুই মাছের রিং পিসকে কড়কড়ে করে ভেজে রসুনগন্ধী ঝোলে ফোটানো   এক দুবার খেয়ে আমার মাছে ঘেন্না ধরে গিয়েছিল  সোমবার সকাল ৭টা১০ এর ট্রেন ধরে বেলা ৯টা নাগাদ পৌছতাম  এরপর আর রেঁধে খেয়ে অফিস যাবার অবকাশ থাকত না অগত্যা শম্ভু- নিমাই ভরসা  পইপই করে বলে আসতাম নিরামিষ রান্না করতে, কিন্তু বিডিও সাহেব আর ম্যাডামকে নিরামিষ খাওয়াতে ওদের তীব্র পাপবোধ হত  ফলতঃ দেশি রুই বাঁধা একবার বলে এলাম ডিমের ঝোল করতে এতে রসুন দিলেও সমস্যা  নেই  কত খারাপ আর করবে  খেতে বসে ভির্মি খেলাম  শৌভিকও আমার ওপর ক্ষেপে গেলওকে না জিজ্ঞাসা  করে নির্দেশ দেবার জন্য  কি দেখলাম? এক বাটি লালচে হলুদ ঝোল তাতে ভাসছে একটি ডিম এবং গুটিকয়েক ঝিঙে ক্যান্টিনের পিছনে যে একটি ঝিঙে গাছ হয়েছে আমি খেয়াল করিনি

 যাই হোক এই শম্ভু বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে বারবার অনুরোধ করছিল, নাইট গার্ডের পদটির জন্য ব্লকের এফ এবং অমল বাবু ছিলেন শৌভিকের ডান এবং বাঁ হাত দুজনে মিলে এই কুবুদ্ধিটা দিয়েছিলেনম্যাডামকে ধর ম্যাডামকে বললে সার না করবেননিযত বলতাম,“তা তুমিই বল
না আপনি বলেন ভয় করে
সেরাতে সত্যই বললাম  শৌভিক বলল,“জানি কিন্তু পারবে না

মুখে যাই বলুক অচীরেই বলাই বাবুর জায়গায় শম্ভু বহাল হল ঠিক এই সময়ই সপ্তাহখানেক ছুটি নিতে হল দিন দশেক পরে অফিস করে ফিরছি, দেখি আমার আগে আগেই বলাই বাবু তার বউ, টর্চ আর বালিশ নিয়ে ঢুকছেন  শৌভিক ফিরতেই জিজ্ঞাসা  করলাম,“বলাই বাবু আবার কি করতে এলেন?”
নাইটগার্ড ” 
 “শম্ভু?”
চাকরি ছেড়ে দিয়েছে
মানে? কেন?”
 “ বউকে ছেড়ে থাকতে পারছে না  বউও নাকি কান্নাকাটি করছে
ধপ্ করে বসে পড়লাম চেয়ারে খানিকপরে আবার জিজ্ঞাসা  করলাম,“হ্যাঁরে সত্যি বউ ছেড়ে থাকতে পারছে না? নিজের বউ? ” শৌভিকের সেই দমফাটা হাসি আজো মনে পড়ে
পুনশ্চ শম্ভু তখন মধ্যচল্লিশ তো বটেই
মন্দ কাটছিল না মাদপুর বাস সকালে কোকিলের ডাকে ঘুম ভাঙা থেকে  নিশুতি রাতে ঝিঝিপোকার ডাকে ঘুমিয়ে পড়া  মিনিট চার হাঁটলেই রেল লাইন, লাইন পেরোলেই বাজার  টাটকা সবজিদেশী মুরগির ডিম, হরেকরকম শাক একবার শৌভিককে ওর কোন স্টাফ এক ব্যাগ নিজের ক্ষেতের বাদশাভোগ চাল দিয়েছিল সে যে কি দেবভোগ্য বস্তু তা ভাষায় অপ্রকাশ্য   অনভিজ্ঞতা বশতঃ চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় চালের ভাত করেছিলাম  গোটা কোয়ার্টর সুরভিত হয়ে উঠেছিল অতি মূল্যবান বাসমতি চালেও কখনত্ত সে সুগন্ধ পাইনি  বাজার করে দিতেন শৈবাল দা  আমাদের শত অনুরোধেও উনি বেশি করে সব্জি বা মাছ আনতেন না  বললে বলতেন ,“ফ্রীজে রাখা মাছ সবজি খাবেননি স্যার ”   দৈবাৎ শৈবাল দা না থাকলে আমাদের ম্যান ফ্রাইডের নাম ছিল জামাই  কস্মিনকালে কোন স্টাফের তুতো  জামাই ছিল হয়তো, জামাই এর একটি জম্পেশ মুসলিম নাম ছিল যা দীর্ঘ আড়াই বছরে আমরা জেনে উঠতে পারিনি ব্লক অফিসের পাঁচিল ঘেষে ছিল জামাই এর ছোট্ট মণিহারি দোকান কিন্তু ব্লক অফিসের  সর্বঘটে জামাই ছিল কাঁঠালীকলা ট্যাঙ্কে জল নেই, পাম্প  চালাবে কে? লোডশেডিং, জেনারেটর চালাবে কে? ট্রাক থেকে  মাল নামাতে লোক ডাকবে কে? মোট কথা জামাইকে ছাড়া ব্লক অফিস কানা শুধু নয় নিতান্তই অক্ষম

কনকনে শীত  মনোরম পুষ্পশোভিত বসন্ত মাদপুর অপরূপা  নাম না জানা রঙ বেরঙের কত যে ফুল ফুঠত  শীতে যাত্রা হত দিন সাতেক আগে থেকে চলত তার ঘোষণা, সাথে তারস্বরে  বাজত বাংলা সমসাময়িক সিনেমার গান  একই গান বারবার লাগাতার সোহম-পায়েল বেশ কয়েকবার ঘুরে গেল, কখনও মাদপুর, কখনত্ত শ্যামচক, কখনত্ত বা বালিচক   সবথেকে বড় হাঙ্গামা হল যে বার বালিচকের ছেলে শ্রীযুক্ত দেবকুমার অধিকারী এলেন মাদপুরে সেবার উদ্যোক্তারা নাছোরবান্দা বিডিও সাহেবকে দেখতে যেতেই হবে যায়নি যদিও চোখের পলকে সপ্তাহ পার হয়ে যেত  শনিবার বিকাল থেকে নিস্তব্ধতা অসহনীয় হয়ে উঠত

মনোরম  মাদপুর রাতারাতি ভোল বদল করল এপ্রিল থেকে  মার্চ মাসেও রাতে হাল্কা  গায়ের চাপা লাগত, হঠাৎ শুরু হল তীব্র দাবদাহ  ভয়াবহ চামড়া জ্বালানো রোদ সাথে মারাত্মক  আদ্রতা  দিন যাও বা ব্যস্ততার মধ্যে কেটে যেত,রাত কাটতেই চাইত না  কোয়ার্টর ছাড়ুন খোদ বিডিও অফিসেই কোন বাতানুকূল যন্ত্র ছিল না  কারণ আর কিছুই না, রেল লাইনের দিকে বিদ্যুত সরবরাহকারী এক অতি দুর্বল ট্রান্সফরমার বারংবার অনুরোধউপরোধ, চিঠি চাপাটি, ধমক, হুমকি সব ব্যর্থ বাতানুকূল যন্ত্র ছাড়ুন, ভোল্টেজের এত ভয়াবহ অবস্থা ছিল

যে  আমরা রীতিমত প্রার্থনা করতাম, যাতে রাতে লোডশেডিং হয়, ইনভার্টররের দৌলতে অন্তত পাখাটা তো জোরে ঘুরবে  শুধু গরম না সাথে দেখা দিল ভয়াবহ পোকামাকড়ের উৎপাত   বিভিন্ন আকৃতি এবং বর্ণের শয়ে শয়ে  পোকা  কেউ আসত ঝাঁক বেঁধে কেউ ছিল একাই একশ  সন্ধ্যাবাতি জ্বললেই ঝাঁকে  ঝাঁকে উড়ে আসত পাশের ধান ক্ষেত থেকে  প্রাণান্তকর গরমেও সব জানলা ঢেকে ফেলা হল হলুদ নাইলনের নেট দিয়ে  বারন্দার দিকের সব দরজা হয় বন্ধ রাখতে হত নতুবা বাতি নিভিয়ে নিকষ আঁধারে খুলতে হত  সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও তারা আসত বিশেষ করে রান্না করার সময় একাকী আমাকে আক্রমন করে তাদের যে কি অপরিসীম  উল্লাস হত তা আজো এক রহস্য

মনে আছে একবার রান্নাঘরে  ঢুকেই উচ্চঃস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে এসেছি, শৌভিক ইউটিউবে ভিভ রিচার্ডসের খেলা দেখছিলআতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে এল  পটল ভাজতে দিয়ে এক পলকের জন্য রান্নাঘর ছেড়ে এসেছি, ওমনি কোথা থেকে একটি মথ ঝাঁপিয়ে  পড়েছে গরম তেলে আত্মহত্যা করতে  গিয়ে দেখি পটল এবং মথ একসাথে পক্ক হচ্ছে!!
 শুধু পোকা কেন এত সুপুষ্ট টিকটিকি অন্য কোথাও খুব বেশি দেখিনি  টিকটিকিগুলির আজব বৈশিষ্ট্য ছিল, ঘরের এমন এক কোণায় গিয়ে দেহত্যাগ  করত, যে আমরা শত অন্বেষণেও হদিশ পেতাম না  শুধু গন্ধে গোটা বাড়ি করত  এছাড়াও ছিল ব্যাঙ  যখন তখন বিনানুমতিতে প্রবেশ করত এবং ব্যাপক লম্পঝম্প জুড়ত  হাওয়াই চপ্পল ফটফটিয়ে ব্যাঙ তাড়াতে শৌভিক বিশেষজ্ঞ  হয়ে উঠেছিল  সাপ অবশ্য প্রথম ঢুকেছিল আমি বদলি হবার পর

তবে নিঃসন্দেহে মাদপুরে ভিআইপি ছিল ধেড়ে ইঁদুর প্রায় ছুঁচোর সমান আকৃতি এবং বিডিও কে বিন্দুমাত্র  ভয় পেত না  শৈবাল দা খুঁজে  খুঁজে বিষ আনত,পরম যত্নে আমার বর কখনত্ত চানাচুর, কখনত্ত বা আটার গুলি দিয়ে তা মেখে টোপ ফেলত  সব চেটেপুটে সাফ করে দিলেও কিছু হত না  ওদের প্রিয় খাদ্য ছিল সাবান সুগন্ধী সাবান কিন্তু   কাপড়কাচা সাবান স্পর্শও করত না  এমনকি সাবান কেস বাদ যেত না মাঝে মাঝে গভীর রাতে খাটের ওপর দিয়ে শর্টকার্ট নিত  আমি কখনও অনুভব করিনি যদিও  শৌভিকের কষ্টকল্পিত হতেও পারে

 দেখতে দেখতে এসে গেল আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী   সপ্তাহের মাঝে তো আর এস ডিও বা ডিএলসি সাহেবের কাছে বেয়াড়া আবদার করা যায় না  অগত্যা অন্যান্য  দিনের মতই যে যার অফিস গেলাম  বন্ধু বান্ধব ,আত্মীয়-স্বজন  ফোনে শুভেচ্ছা  জানালেন ডিএলসি শৈবাল দা ঠাট্টার সুরে লেগপুল করলেন, কোথাও ঘুরতে যায়নি বলে  ঠাঠা রোদে কোথায় বা যেতাম? দুঃখী মনে কাজ করছি হঠাৎ শৌভিকের ফোন,“দূরঃ  জাহান্নামে যাক সব  চল কোথাও ঘুরে আসি রেডি থাক  আসছি
দুপুর তিনটে নাগাদ আমরা রওনা  হলাম ড্রাইভার শৈবাল দাকে বলা হল আজ আমাদের বিশেষ দিন একটা জম্পেশ জায়গায় নিয়ে চল  ধূধূ ফাঁকা রাস্তায় লাগাম ছেড়ে দৌড়ল গাড়ি  লাল মোরাম বিছানো পথ ধরে, ঘন নিরিবিলি ঝাউ আর ইউক্যালিপটাসের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, উচ্চাবচ কালভার্ট পেরিয়ে হারিয়ে যাওয়া  নির্বাক নিশ্ছিদ্র   ভালোলাগায় মন যখন কানায় কানায় ভর্তি  হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে শৈবাল দা বলল,“যান স্যার খুব ভাল লাগবেতৎকালীন মেদিনীপুরের সবথেকে বড় এবং জনপ্রিয় পার্ক, নাম ঝিলমিল অল্পবয়সীদের প্রিয় রোমান্টিক ডেসটিনেশন তবে আদপেই সেন্ট্রাল পার্ক সুলভ নয়  শৌভিক কিছুতেই নামবে না  বেচারা শৈবাল দা হতভম্ব   এমন সুন্দর পার্ক সাহেবের নাপসন্দ? আর আমি অসভ্যের মত হেসেই যাচ্ছিলাম

(চলি?)

Friday, 28 August 2015

অনির ডাইরি ২৭শে অগস্ট, ২০১৫


এই তো গতকালই এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল, “ আপেক্ষিক আবর্জনা” অর্থাৎ ভার্চুয়াল ট্রাশ নিয়ে, আমার বন্ধুটি তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিল। না সেই অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ বন্ধু না, ইনি রীতিমত সুন্দরী তরুণী । সোসাল মিডিয়া কাঁপানোর এই তো বয়স। কিন্তু আনন বই এ কোন এক সহকর্মীর অকারণ পিঠ চুলকনিতে আমার প্রিয় বন্ধুটি যৎপরনায় ক্ষুব্ধ । বন্ধুর ক্ষোভ প্রশমন করতে আমি নিজে ঐ স্টাটাস আপডেটটি পড়ে দেখলাম। বেশ গদগদে আবেগসিক্ত। আপাতদৃষ্টিতে উচ্চ প্রশংসাসূচক মনে হলেও অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য যে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাঁধানো তা আমার মত স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মহিলার পক্ষেও অনুমান করা দুষ্কর নয়।

মুস্কিল কি জানেন এই সোশাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে ব্যক্তিগত বলে আর কিছু রইল না। আজকাল বাস্তবিকই সকলের তরে সকলে আমরা। আমরা সবাই সেলিব্রীটি। আপনার অম্বল, গ্যাস, খোস পাঁচড়া, চুলকনি, উকুন সবই পাবলিক মায় ফ্রেন্ডস্ তো বটেই। যা ইচ্ছা লিখুন , গোটা দুই লাইক আর গোটা পাঁচেক কমেন্ট তো পাবেনই। পৃথিবীর তাবড় সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন আপনি এখানে । ব্যাপারটা বেশ উপভোগ্য কিন্তু । বোকা বোকা সহজ সরল স্টেটাস গুলি পড়তে মন্দ লাগে না। অন্তত তারা নিজেদের হৃদয়ের বদ্ধ দ্বার তো নিঃসঙ্কোচে উন্মোচন করছে। নির্বোধ হওয়াটা আদপে দোষের না।
এই ধরনের পোস্টগুলি আদৌ ট্র্যাশের পর্যায়ভুক্ত না। আপেক্ষিক আবর্জনাতুল্য স্টাটাস আপডেট গুলি দেখলে আগে আমার রাগ হত। আজকাল করুণা হয়। আমার বর্তমান শখ হচ্ছে এই ধরনের পোস্টের নিচে যে কমেন্টগুলি থাকে সেইগুলি পড়া। ব্যাপক রসের খোরাক। জনমানস বুঝতে হলে এর থেকে উন্নীত মাধ্যম আপনি পাবেন না। আজ সকালে এইরূপ একটি কবিতা আমার চিত্তহরণ করেছে। বিষয়বস্তু কুখ্যাত মাতৃভূমি এক্সপ্রেস। সারমর্ম হল, “ “যখনি নারী বিপদে পড়েছে, পাশে থেকেছি আমরা তাও তারা দিল না, ট্রেনের দুটি কামরা” ” ইত্যাদি । নিতান্তই বালখিল্যচিত । কবিতা বলে সম্বোধন করলে কবিতা ক্ষুণ্ণ হবে।

মোদ্দা কথা হল, হে নারীকুল, কি অসম্ভব আত্মকেন্দ্রিক তোমরা। মনে তো নয়, মামুলী ট্রেনে একটু স্থান চেয়েছিলাম, তাও দিলে না? অথচ আমরা তো তোমাদের সব বিপদে আপদে পাশে থাকি, তাও পারলে না এটুকু কষ্টস্বীকার করতে। এতো বড় অনাচার। সত্যি পড়ে আমার হৃদয় ভেঙে গেল। নীচে জনৈক ভদ্রলোক মন্তব্য করেছেন, “চূড়ান্ত অপারচুনিস্ট”। অপারচুনিস্ট অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধাভোগী। নারীদের জন্য সংরক্ষিত একটি গোটা ট্রেন। হজম করতে কি কষ্টটাই না হচ্ছে তথাকথিত প্রগতিশীল বাঙালিদের। কিছুদিন পূর্বে আর একটি অনুরূপ পোস্ট দেখেছিলাম, সেক্ষেত্রে একটি সদ্য চাকরি পাওয়া যুবক লেডিজ স্পেশালে চড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন, প্রথম দিন অফিস যাবার তাড়ায় ভুল করে ঐ ট্রেনে উঠে পড়ে ছেলেটি। যথারীতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং নগদ ৫০০ টাকা ঘুষ দিয়ে ছাড়া পায়। পুলিশ যখন পাকড়াও করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন ট্রেনে সওয়ার মহিলারা নানা কটু মন্তব্য শুনে ছেলেটির সাথে সাথে পাঠকও কেঁদে ভাসায়। পরিশেষে ছেলেটি প্রশ্ন করে যে এরা কি ভদ্র বাড়ির মেয়ে?

আচ্ছা ভদ্র বাড়ির মেয়ে বলতে ঠিক কী বলতে চেয়েছে, যারা লাল বাতি মহল্লায় থাকেন না? নাকি যে সব পরিবারে বেশ কয়েক পুরুষ ধরে বাগদেবীর আরাধনা হয়ে আসছে সেই সব বাড়ির মেয়ে? দ্বিতীয়টিই হবে আশা করি। তাই যদি হয়, তবে এই সব বাড়ির মেয়েরা কেমন হয়? শান্ত, সংযত, লাজুক পড়ে মার খাওয়া টিপিক্যাল অফিস যাত্রী, শিক্ষিকা বা কলেজে পড়া অবলা। ঠিক যেমন কামদুনির মেয়েটি ছিল? কিন্তু এরা কারা? এরা যেমন মার খায়, তেমনি সুযোগ পেলে মারতেও ছাড়ে না!! “ভদ্র বাড়ির মেয়ে” সংজ্ঞাটাই যেন পাল্টে দিয়েছে এই একটি ট্রেন।

ঐ দেখুন, কথা হচ্ছিল ভারচুয়াল ট্রাশ নিয়ে, আমি আবার মাতৃভূমে ঢুকে পড়লাম।  আসলে ঐ অসম সাহসী বীরাঙ্গনা গুলিকে ভোলা বেশ দুষ্কর ।  ছাপোষা লোকজন, কোথা থেকে এত সাহস পেল যে খালি হাতেই অপেক্ষাকৃত শক্তিধর শত্রুপক্ষের সাথে লড়ে গেল?

যাই হোক শেষ করার পূর্বে একটি অন্তিম আবর্জনার কথা বলি, জনৈক মধ্যবয়সী প্রৌঢ় লিখেছিলেন এবং আমার কোন বন্ধু শেয়ার করেন, পোস্টটি ছিল সেকালের মায়ের সাথে হাল আমলের মায়েদের তুলনা বিষয়ক।  বিষয়টি দেখেই আমি ভির্মি খাই। দেখুন মশাই আজকের কাগজে যে মহীয়সী মায়ের খবর তারিয়ে তারিয়ে পড়েছেন, তিনি ব্যতিক্রম ।তাঁর কথা বাদ দিন কিন্তু আপনি কি সত্যি মনে করেন হাল আমলের ফ্যাশানদুরস্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারি কর্মরতা মায়েদের মাতৃস্নেহ সাবেকী গৃহবধু মায়েদের থেকে  কম? ভদ্রলোক লিখেছেন সে যুগের মায়েরা নিজের খাবার প্রয়োজনে সন্তানদের খাইয়ে নিজেরা অভুক্ত  থেকে পরম আহ্লাদিত হতেন।  যা এযুগের মায়েদের থেকে  অপ্রত্যাশিত ।  পড়ে বুঝতে পারছিলাম না হাসব না গালি দেব। আসল কথা হল বুদ্ধিমতী কর্মরতা মায়েদের দশভূজা রূপটি ওণার কাছে ঠিক গ্রহণযোগ্য  নয়। নারী অবলা, অসূর্যস্পর্শা, গৃহকর্মনিপুনা হওয়াটাই কাম্য।  নারীর জীবন হবে রাঁধার পর খাওয়া  আর খাওয়ার  পর রাঁধা । স্বভাবে হবে স্বামীর উচ্ছিষ্ট ভোজী। চটরপটর চটি পরে ফটরফটর ইংরাজী বলা মেয়েরা মা হবার যোগ্যই না।
যাক গে।  বাবা বলে বিচারর আপনা আপনা।  তবু লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।  ভাবলাম আমার মত আরো কোন না কোন আধুনিকা মায়ের নিশ্চয় গায়ে লাগবে।  কেউ না কেউ তো প্রতিবাদ করবেনই।  দেখলাম অগুনতি লোক তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং প্রায় সকলেই ভদ্রলোককে সাধুবাদ জানিয়েছেন এরকম  একখানি যুগান্তকারী স্টেটাস লেখার জন্য। কে জানে আমি কোন ফরিস্তার প্রত্যাশী ছিলাম?
#Anirdiary #aninditasblog

Monday, 24 August 2015

অনির ডাইরি 23শে অগস্ট, 2015


দিন কয়েক আগের কথা,অফিস যাচ্ছি, হঠাৎ  মুঠো ফোনের তীব্র আর্তনাদ   খুলে দেখি আমার এক বয়স্ক বন্ধু না উনি আদতে আমার বন্ধু নন, তবে কিছুদিন হল এফ বিতে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন যদিও পরিচয় বহুদিনের যাই হোক প্রাত:কােল ওনার ফোন পেয়ে মনটা বেশ খুশি খুশি হয়ে উঠল  ওণার শানিত জিহ্বা আর তীব্র রসবোধের আমি অন্ধ ভক্ত এমন সুচারু ভাষায় ব্যঙ্গ  করতে আমি খুব কম লোককে দেখেছি  তবে আমাকে অত্যন্ত  স্নেহ করেন  ফোন ধরতেই ওনার আর্তনাদ ,“ এই ফেসবুক ডিলিট করে কি করে?” কি আবার হল সকাল বেলায়, গলায় সামান্য উদ্বেগ ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম  ফেসবুক যে ডিলিট হয় না, এ্যাকাউন্ট ডি-এ্যাকটিভেট করা যায় গূঢ় তথ্য দিয়ে এই মুহূর্তে কোন লাভ নেই পরিষ্কার বুঝলাম  উনি সদ্য সদ্য এই অন্তর্জালে জড়িয়েছেন এবং আমি ওনার স্নেহধন্য হবার এটাই মূল কারণ  মাঝে মাঝেই পরশুরামের ভাষায়  আমি ওণার উৎকণ্ঠা পিসিমণি (এ্যাগনি আন্ট)হই প্রসঙ্গত উল্লেখ যোগ্য যে কিছুকাল  পূর্বে একদল বৃদ্ধ  সমকামী ওনাকে সাংঘাতিকভাবে উত্যক্ত  করছিল  অনভিজ্ঞতা  হেতু উনি প্রথম দিকে পরিচিত  অর্ধ- পরিচিত , অপরিচিত সকলের বন্ধুত্ব স্বীকার করেছিলেন  স্বপ্নেও ভাবেননি যে এই বৃদ্ধ  বয়সে শয়ে শয়ে প্রেম প্রস্তাব পাবেন  তাও নানা বয়সের পুঙ্গবদের থেকে  সৌজন্যবশতঃ কিছু লোকজনকে  মোবাইল  নম্বর প্রদান করে অবস্থা আরো সঙ্গিন করে তোলেন  যখন ভয়াবহ হোমোফোবিয়ায় ভুগতে শুরু করেছেন সমস্ত সঙ্কোচ ঝেড়ে ফেলে উনি আমার সাহায্য  প্রার্থনা করেন  অতঃপর আমি যাই এবং উকুন বাছার মত একটি একটি করে সব কটাকে ব্লক করে কিছু সেটিং পাল্টে ওনাকে উদ্ধার করি

পুনরায় ওনার এই আর্ত চিৎকার  শুনে প্রথমেই মনে হল, এবার কি বিষমকামীদের উৎপাত ? আড় চোখে পাশের অবাঙালি সহযাত্রীটির দিকে তাকালাম, উনি মনোযোগ সহকারে ম্যানেজমেন্টের বইয়ে দাগ দিচ্ছেনযথাসম্ভব সংযত হয়ে বললাম,“ আবার কি বাঁধিয়েছেন?” উনি আশ্বস্ত করে বললেন না তেমন কিছুই না, তবে এই উঠতি কবিকুলকে উনি আর নিতে পারছেন না আশ্চর্য হলাম, কবিতা তো উনিও মন্দ লেখেন না? আজকাল ১৪ থেকে ৮৪ সবাই কবি সৌজন্যে ফেসবুক  ব্যাপারটা মন্দ নয় কবিতা লেখা বাঙালির জাতীয় হবি  আমার মত দুচারজন অশিক্ষিত অপোগণ্ড ছাড়া দেখুন মশাই আমরা সাংঘাতিক আবেগ প্রবণ জাত  সেই আবেগ প্রকাশ করার সহজতম মাধ্যম কবিতা  আমার অবশ্য আজন্ম  কবিফোবিয়া আছে  আমার প্রাক্তন সহকর্মী শ্রীযুক্ত রক্তিম ইসলাম এবং বর্তমান বন্ধু শ্রী চিরন্তন ভট্টাচার্য ব্যতীত বাকি কবিদের আমার রীতিমত ভয় করে  আমি নিতান্তই ছাপোষা মহিলা শ্রমিক জটিল  কবিতা  একেবারেই বুঝি না উপরিউক্ত দুজনই বারংবার বলেন যে বুঝতে  হবে না কবিতা অনুভবের বস্তু   ঘোরতর সত্যি  রবি ঠাকুর থেকে সুনীল শক্তি এমনকি আধুনিক শ্রীজাত এদের কবিতা অনায়াসে হৃদয়তন্ত্রে আলোড়ন তোলে বিশেষ কোন মুহূর্তে মনে পড়েই যায় অসম্ভব অব্যর্থ শব্দের মূর্ছনা  সাময়িকভাবে  ভূলে যাই আমার ডিমেনশিয়া আছে 
কিন্ত মুশকিল হচ্ছে তাদের নিয়ে যাদের কবিতার বিষয়বস্তু হচ্ছে ব্যর্থ প্রেম  কাঁহাতক এই ব্যর্থ প্রেমের গপ্প শোনা যায়? প্রাতঃকৃত করার মত কিছু লোকের কবিতা আসে, যেমন আমার গল্প আসে আর কি এবং তারা শুধু  একটি বিষয়েই গুচ্ছ গুচ্ছ কবিতা লেখেন  ভাই এত বিরহ তোদের? এত বেদনা  শয়ে শয়ে জীবনানন্দ   অথচ কারো জীবনে আনন্দ নাই ভাই রে আজ অবধি একটি  সফল প্রেমও করতে পারলি না? মুস্কিল হল এই নব্য কবিরা অধিকাংশই বিন্দুমাত্র সমালোচনা সহন করতে পারেন না  এক প্রাক্তন  আমলার কথা শুনলাম কিছুদিন আগে, উনিও উঠতি কবি, শয়ে শয়ে অনুরাগী   আমার দু একজন বন্ধু ওনার কিছু কবিতা শেয়ার করেন মাঝেসাঝে ,একেবারে অপাঠ্য যাইহোক শুনলাম উনি নাকি ওনার কবিতার সমালোচনা সহ্য করেন না  আহা আহা করলে ঠিক আছে অন্যথায় ওনার ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা হয় না  আমি একদা আমার এক পরিচিত কে প্রশ্ন করেছিলাম আপনি ভয়াবহ কবিতাটি কেন লাইক করলেন? অবশ্যই কবিতাটির কোন নিগূঢ় অর্থ আছে যা আমার মোটা মাথায় ঢুকছে না  যদি অনুগ্রহ করে উনি বুঝিয়ে  দেন  জবাবে উনি অট্টহাস্য করে বলেছিলেন উনি আদপে পড়েননি  তবে ওণার এককালীন বসের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই লাইক করেন

কবিতা লেখা  বা সমালোচনা সহ্য না করা কোনটাই গর্হিত  অপরাধ নয় তবে সমস্যা হয় তখনই যখন কিছু কবি অনবরতপোককরতে থাকেন   উদ্দেশ্য আপনি ওণার কাব্য পড়ুন এবং  লাইক করুন  শুধু লাইক করলে নিষ্কৃতি নেই  কমেন্ট দিন  আপনার সুচিন্তিত মতামত যা অবশ্যই প্রশংসা সূচক হতে হবে আমাদের মত পূরানো পাপীরা ব্যাপারে অভিজ্ঞ   এইরূপ কবিদের তৎক্ষণাৎ আনফ্রেন্ড করাই শ্রেয়

 মুস্কিল হল আমার এই বয়ঃজেষ্ঠ বন্ধুটি বেশ কিছু ব্যক্তিকে আনফ্রেন্ড করেও  উৎপাত বন্ধ করতে পারছেন না , প্রথমে কৈফিয়ৎ দাবী এবং তারপর অনুনয় বিনয় চলছেই  তিতিবিরক্ত হয়ে উনি এ্যাকাউন্টটাই উড়িয়ে  দিতে বদ্ধ পরিকর


বুঝলাম ওনার ডিজিটাল ডিটক্সিফিকেশন দরকার  দিব্যি অবসর জীবন উপভোগ করছিলেন হঠাৎ মুঠোয় আসা মুঠোফোনটি যত নষ্টের গোড়া  সম্পূর্ণ অন্য জগৎ এখানে মুখ এবং মুখোশ দুটোই ভিন্নরকম  অসহায় বৃদ্ধ এই ভিড়ে আরো অসহায় বোধ করছেন  ওনার সমবয়স্ক বন্ধু বান্ধব এই মায়াদুনিয়ায় কেউই নেই  আত্মীয় স্বজন থাকলেও নিজ নিজ পরিমণ্ডলে সীমিত   আসলে দুনিয়ায় তারা আপনার সমব্যথী হলেও মায়াময় জগতে সবাই নিজের প্রতিচ্ছবি উজ্জল করতে সদাব্রত   বড় নিঃসঙ্গ আমার বন্ধুটি  ধীরে ধীরে উনিও হয়তো মেতে উঠবেন, ফেসবুক ওনাকেও রেয়াত করবে না  তবু কিছুদিনের জন্য এই কুহকীর থেকে দূরে থাকাই বোধহয় শ্রেয়  একরাশ বিষাদ নিয়ে আজ মুছে দিলাম ওনার এ্যাকাউন্টটি  তবে হাল ছাড়ছি না  শীঘ্রই ফিরব আমরা

Wednesday, 19 August 2015

অনির ডাইরি ১৮ই অগস্ট ২০১৫

ভাগ্যে আজ ধর্মঘট ছিল, আমাদের মত কতিপয় বেতনভূক দাসানুদাস ছাড়া অধিকাংশ ডালহৌসী গামি বাবু ফোকটে ছুটি কাটাচ্ছিল তাই রক্ষা   না হলে আরো কিছু কটুকাটব্য শুনতে হত আর কি  কোনটাই অবশ্য প্রত্যক্ষ ভাবে  আমাকে উদ্দেশ্য করে নয়, তবে আমার জাতের জন্য তো বটেই  না না বাঙালি , ঘটী বা ভারতীয় নয় এছাড়াও আমার একটা জাত আছে   বুঝতে পারলেন না? আমি দাবী করছি যে আপনিও আজ বা গতকাল এই নিয়ে আপনার সুচিন্তিত এবং মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন  হতে পারে জাগতিক ব্যাপার স্যাপারে আপনি উদাসীন কিন্তু  গতকাল খড়দায় যা হয়েছে তা নিয়ে আপনার আদৌ মাথাব্যথা নেই এটা হজম করা বেশ কষ্টকর   একদঙ্গল মহিলা নিত্যযাত্রী এতবড় অবরোধ ঘটিয়ে ফেলল? কি মানা যায়? তাও বরাবরের মার খাওয়া অবলা সুলভ মিনমিনে প্রতিবাদ নয়, অহিংস উপবাস ধর্ণা নয় রীতিমত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই   পুরুষ সহযাত্রী দের বেধড়ক পেটানো  পুলিশ পড়ুন পুং পুলিশের ডান্ডা খেয়েও রণে ভঙ্গ না দিয়ে , শেষমেশ প্রবল পরাক্রান্ত ভারতীয় রেলকে মাথানত করিয়ে ছাড়ল!!! মশাই  এতো আদৌ সহজপাচ্য নয়  এতএব এর শবব্যবচ্ছেদ আসু প্রয়োজন

দেখুন আমার কথা শেষ হবার আগেই আপনি  আমায়  ভুল বুঝছেন  আমি হতভাগ্য স্বঘোষিত নারীবাদী হতে পারি, কিন্তু  যে কোন সংরক্ষণের আমি ঘোর বিরোধী আর পথঅরোধ ব্যাপারটাই আমার মতে বেআইনী হওয়া উচিৎ জানেন যখনই ফেসবুকে কোন মহিলা সংক্রান্ত খবর দেখি, শতকরা  নিরানব্বই ভাগ নারী নির্যাতন  ঘটিত হয় যদিও, আমি খবরের নীচের মন্তব্য গুলি পড়ি  কখনও পড়ে দেখেছেন? ব্যাপক রসের খোরাক মশাই   কোথাও  কোন অবলার ওপর কোন নরাধম অত্যাচার করেছে, দুই বাংলার কিছু পুরুষ ঝাঁপিয়ে  পড়ে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে  কি অদ্ভূত মানসিক মিল মশাই কে বলবে দুটি  আলাদা দেশের বাসিন্দা   কিছু লোক বলে, হায় কপাল তুই দিব্যি  ফূর্তি করে নিলি, আমার নম্বর যে কবে আসবে? এগুলো একেবারেই অর্বাচীন   লেখাপড়া জানা মধ্যবিত্ত  সম্প্রদায় আবার এর জন্য মেয়েদের  উদ্দামতা তথা শর্ট স্কার্ট ইত্যাদি পরাকে দায়ী করে যেন ধর্ষিতা মাত্রই স্বল্প পোশাকী হয় যাই হোক খড়দার ব্যাপারটা নিয়ে মন্তব্য গুলি পড়ছিলাম  বিশুদ্ধ দেশীয় মতামত একদল বলছে মুখে সমানাধিকারবাদ এর কথা বলে অথচ? হাসি পাচ্ছিল যে দেশটা আদ্যন্ত সংরক্ষণ নির্ভর  ক্রীমি লেয়ারে থাকা জনগন সামান্য সুযোগ হারাতে চায় না, প্রতিনিয়ত যেখানে সংরক্ষিত হবার জন্য আন্দোলন চলে, সেখানে গুটিকত মহিলার জন্য সংরক্ষিত একটা ট্রেন মেনে নিতে কি কষ্টই না হচ্ছে


দেখুন মশাই আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ সন্তান , জীবনেও কোন সংরক্ষণের সুবিধা পাইনি শুধু বাসের কিছু সিট আর লেডিজ কম্পার্টমেন্টের সুবিধা বাদে  তবে এই সংরক্ষণ যে কেন  তা নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন   শুধু দুটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলে শেষ করব মনে আছে কিছু  বছর আগে মেট্রো রেলের কিয়দাংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা  হয়  তার বিরুদ্ধে পুং যাত্রীরা অবরোধ করেননি  শুধু কুৎসিত  মন্তব্যই যথেষ্ট ছিল  অবলারা দিক মাড়ানো ছেড়ে দিয়েছিল  দ্বিতীয়টি হল লোকাল ট্রেনের একটি কামরা দিনের কয়েকঘন্টার জন্য মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার একটা চেষ্টা করা হয়  আমি তখন খড়্গপুর লোকালের নিত্যযাত্রী   সে তিক্ত  অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে আমি অপারগ  বার বার কি মার খাওয়া যায় বলুন?

Monday, 17 August 2015

অনির ডাইরি ১৪ই অগস্ট, ২০১৫



কতদিন পরে এলামপ্রায় তিন মাস  সেই দূষিত  বিষাক্ত  বাতাস  আর  পুতিগন্ধময় পথঘাট, নিয়ন্ত্রনহীন যানবাহনের বেয়াক্কেলে শোরগোল যদিও সম্পর্কে  মহানগরের বৈমাত্রেয় ভাই এঁদো গলি , কানাগলি, গাড়ি ঢোকে না, বিরক্তিকর কুকুরের বিষ্টা আচ্ছা আপনাদের মহল্লার সারমেয়কূল কি এতটাই পেটরোগা? প্যাচপ্যাচে কাদা,খানাখন্দ, জমা জল, বিপদসীমার ঠিক নীচে বয়ে চলা নর্দমা-- হোক না তাও তো আমার শহরব্রিজ টপকালেই যেন বাতাসে বাবার সিগারেটের  গন্ধ, নাগরিক  শোরগোলে কেমন যেন মিশে আছে মায়ের বকুনি  (কম খেয়েছি?)! ভেজা ভেজা পথঘাট না ঠাকুমার সদ্য ধোওয়া উঠোন! মাপ করবেন কুকুরেরগু’  টাকে মহিমান্বিত করার মত কিছু মাথায় আসছে না  তবে একথা স্বীকার  করতেই হবে আমাদের মহল্লার ছেলে মেয়র হবার পর কিন্তু অবস্থা অনেকটাই ভাল  কুকুরগুলো বেয়াড়া বেআদপ বদতমিজ হলে বেচারা সাফাই কর্মীদের কি দোষ? প্রাত:কালে প্রাতকৃত্য তাও বুঝি, সারাদিনে কত বার যাবিরে বাপ? রোজই কি তোদের পেট ছাড়ে? খাস তো ভাই  ডাল, ভাত, বাসি রুটি আর উচ্ছিষ্ট শাক চচ্চড়ি  বড়জোর মাছের কাঁটা আর রবিবার হলে মাংসের হাড়  তাতেই অ্যাসিডিটি  যখনই বেরোবেন দেখতে পাবেন একাধিক  কুত্তা ঘাস চিবোচ্ছে ওরা বাংলী মশাই   শুধু ভোরবেলা অর্ধ- চেনা লোক দেখলে মনে পড়ে যায় কোন এককালে ওরাও শ্বাপদ ছিল


কুকুর পুরাণ থাকুক  ফিরে আসি আমার শহরেবিরাট যৌথ পরিবার শরিকী বিবাদে ছিন্নভিন্ন, নিত্য অশান্তি, মনকষাকষি, বাবা মায়ের কর্ম ক্ষেত্রের লাগাতার টেনশন, ঝড়ের মত কেটে যাওয়া স্কুল জীবন, কত শত নষ্ট বসন্ত সাদা জামা লাল বেল্ট ছেড়ে শাড়ি স্কুল ছেড়ে কলেজ  প্রিয় বন্ধুর সাথে বিচ্ছেদ   ঠাকুমা দিদিমার হঠাৎ  করে হারিয়ে যাওয়া বেকারত্বের স্বাদ চাখা   মেরুদণ্ড ভেঙে পড়তে পড়তেও থমকান   বাবা বলত, “ যে সহে, সে রহে  মূল কথাটা যিনি বলেছিলেন তিনিও কিন্তু চাটুজ্জে ছিলেন চিরকাল অলস সংগ্রাম বিমুখ চুড়ান্ত  অমিশুক ঘরকুনো অনি কেমন যেন বদলে গেল  লড় নয়তো মর  জীবনের সোজা হিসাব   হঠাৎ  করে পাওয়া শ্রমিকত্ব জীবনের ভোলটাই পালটে দিল  আচমকা পরিচিত  অরকূট আর স্থানীয় দোকান থেকে রিটায়ার্ড বাবার কষ্ট সঞ্চিত অর্থে  কিনে দেওয়া রিলায়েন্স সিডিএমএ মোবাইল সুদ সমেত ফিরিয়ে দিতে লাগল একটা একটা করে হারানো  বন্ধু ছিন্ন বিছিন্ন যৌথ পরিবার স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেও কি করে জানি না মান অভিমান ভূলে একদিন মিলেমিশে  গেল  এই শহরেই প্রথম দেখা তার সাথে  প্রথম আলাপে যে নাক উচু করে বলেছিল,“ আপনাদের তো ডিপার্টমেন্টে পোস্টিং নেই?”  সে আদতে এই শহরেরই জাতক  এই শহরই তো শিখিয়েছে কিছুই হারায় না