দিন
কয়েক আগের
কথা,অফিস
যাচ্ছি, হঠাৎ মুঠো ফোনের তীব্র
আর্তনাদ । খুলে দেখি আমার
এক বয়স্ক
বন্ধু ।
না উনি
আদতে আমার
বন্ধু নন,
তবে কিছুদিন
হল এফ
বিতে আমার
ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন। যদিও পরিচয়
বহুদিনের ।যাই হোক
প্রাত:কােল
ওনার ফোন
পেয়ে মনটা
বেশ খুশি
খুশি হয়ে
উঠল। ওণার শানিত জিহ্বা
আর তীব্র
রসবোধের আমি
অন্ধ ভক্ত। এমন
সুচারু ভাষায়
ব্যঙ্গ
করতে আমি খুব কম লোককে
দেখেছি। তবে আমাকে অত্যন্ত স্নেহ
করেন। ফোন ধরতেই ওনার
আর্তনাদ ,“ এই ফেসবুক ডিলিট করে
কি করে?”
কি আবার
হল সকাল
বেলায়, গলায়
সামান্য উদ্বেগ
ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা
করলাম। ফেসবুক
যে ডিলিট
হয় না,
এ্যাকাউন্ট ডি-এ্যাকটিভেট করা যায়
এ গূঢ়
তথ্য দিয়ে
এই মুহূর্তে
কোন লাভ
নেই পরিষ্কার
বুঝলাম। উনি সদ্য সদ্য
এই অন্তর্জালে
জড়িয়েছেন এবং
আমি ওনার
স্নেহধন্য হবার এটাই মূল কারণ।
মাঝে মাঝেই পরশুরামের ভাষায় আমি ওণার
উৎকণ্ঠা পিসিমণি
(এ্যাগনি আন্ট)হই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ
যোগ্য যে
কিছুকাল
পূর্বে একদল বৃদ্ধ সমকামী
ওনাকে সাংঘাতিকভাবে
উত্যক্ত
করছিল। অনভিজ্ঞতা
হেতু উনি প্রথম দিকে পরিচিত অর্ধ-
পরিচিত , অপরিচিত
সকলের বন্ধুত্ব
স্বীকার করেছিলেন।
স্বপ্নেও ভাবেননি যে এই বৃদ্ধ বয়সে শয়ে শয়ে
প্রেম প্রস্তাব
পাবেন। তাও নানা বয়সের
পুঙ্গবদের থেকে। সৌজন্যবশতঃ
কিছু লোকজনকে মোবাইল নম্বর
প্রদান করে
অবস্থা আরো
সঙ্গিন করে
তোলেন। যখন ভয়াবহ হোমোফোবিয়ায়
ভুগতে শুরু
করেছেন সমস্ত
সঙ্কোচ ঝেড়ে
ফেলে উনি
আমার সাহায্য প্রার্থনা
করেন। অতঃপর
আমি যাই
এবং উকুন
বাছার মত
একটি একটি
করে সব
কটাকে ব্লক
করে কিছু
সেটিং পাল্টে
ওনাকে উদ্ধার
করি।
পুনরায়
ওনার এই
আর্ত চিৎকার শুনে প্রথমেই মনে
হল, এবার
কি বিষমকামীদের
উৎপাত ? আড়
চোখে পাশের
অবাঙালি সহযাত্রীটির
দিকে তাকালাম,
উনি মনোযোগ
সহকারে ম্যানেজমেন্টের
বইয়ে দাগ
দিচ্ছেন, যথাসম্ভব
সংযত হয়ে
বললাম,“ আবার
কি বাঁধিয়েছেন?”
উনি আশ্বস্ত
করে বললেন
না তেমন
কিছুই না,
তবে এই
উঠতি কবিকুলকে
উনি আর
নিতে পারছেন
না।
আশ্চর্য হলাম,
কবিতা তো
উনিও মন্দ
লেখেন না?
আজকাল ১৪
থেকে ৮৪
সবাই কবি
সৌজন্যে ফেসবুক।
ব্যাপারটা মন্দ নয়। কবিতা
লেখা বাঙালির
জাতীয় হবি।
আমার মত দুচারজন অশিক্ষিত অপোগণ্ড
ছাড়া ।
দেখুন মশাই
আমরা সাংঘাতিক
আবেগ প্রবণ
জাত। সেই আবেগ প্রকাশ
করার সহজতম
মাধ্যম কবিতা।
আমার অবশ্য আজন্ম কবিফোবিয়া
আছে। আমার প্রাক্তন সহকর্মী
শ্রীযুক্ত রক্তিম ইসলাম এবং বর্তমান
বন্ধু শ্রী
চিরন্তন ভট্টাচার্য
ব্যতীত বাকি
কবিদের আমার
রীতিমত ভয়
করে। আমি নিতান্তই ছাপোষা
মহিলা শ্রমিক
জটিল
কবিতা একেবারেই
বুঝি না। উপরিউক্ত
দুজনই বারংবার
বলেন যে
বুঝতে
হবে না কবিতা অনুভবের বস্তু
। ঘোরতর
সত্যি। রবি ঠাকুর থেকে
সুনীল শক্তি
এমনকি আধুনিক
শ্রীজাত এদের
কবিতা অনায়াসে
হৃদয়তন্ত্রে আলোড়ন তোলে। বিশেষ
কোন মুহূর্তে
মনে পড়েই
যায় অসম্ভব
অব্যর্থ শব্দের
মূর্ছনা। সাময়িকভাবে ভূলে যাই আমার
ডিমেনশিয়া আছে।
কিন্ত
মুশকিল হচ্ছে
তাদের নিয়ে
যাদের কবিতার
বিষয়বস্তু হচ্ছে ব্যর্থ প্রেম। কাঁহাতক
এই ব্যর্থ
প্রেমের গপ্প
শোনা যায়?
প্রাতঃকৃত করার মত কিছু লোকের
কবিতা আসে,
যেমন আমার
গল্প আসে
আর কি
এবং তারা
শুধু
ঐ একটি
বিষয়েই গুচ্ছ
গুচ্ছ কবিতা
লেখেন। ভাই এত বিরহ
তোদের? এত
বেদনা। শয়ে শয়ে জীবনানন্দ
। অথচ কারো জীবনে
আনন্দ নাই। ভাই
রে আজ
অবধি একটি সফল প্রেমও করতে
পারলি না?
মুস্কিল হল
এই নব্য
কবিরা অধিকাংশই
বিন্দুমাত্র সমালোচনা সহন করতে পারেন
না। এক প্রাক্তন
আমলার কথা শুনলাম কিছুদিন আগে,
উনিও উঠতি
কবি, শয়ে
শয়ে অনুরাগী
। আমার দু একজন
বন্ধু ওনার
কিছু কবিতা
শেয়ার করেন
মাঝেসাঝে ,একেবারে অপাঠ্য । যাইহোক
শুনলাম উনি
নাকি ওনার
কবিতার সমালোচনা
সহ্য করেন
না। আহা আহা করলে
ঠিক আছে
অন্যথায় ওনার
ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা হয় না। আমি একদা আমার
এক পরিচিত
কে প্রশ্ন
করেছিলাম আপনি
ঐ ভয়াবহ
কবিতাটি কেন
লাইক করলেন?
অবশ্যই কবিতাটির
কোন নিগূঢ়
অর্থ আছে
যা আমার
মোটা মাথায়
ঢুকছে না।
যদি অনুগ্রহ করে উনি বুঝিয়ে দেন।
জবাবে উনি অট্টহাস্য করে বলেছিলেন
উনি আদপে
পড়েননি। তবে ওণার এককালীন
বসের প্রতি
কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই লাইক করেন।
কবিতা
লেখা
বা সমালোচনা সহ্য না করা
কোনটাই গর্হিত অপরাধ
নয়।
তবে সমস্যা
হয় তখনই
যখন কিছু
কবি অনবরত
‘পোক’ করতে থাকেন
। উদ্দেশ্য
আপনি ওণার
কাব্য পড়ুন
এবং
লাইক করুন। শুধু লাইক করলে
নিষ্কৃতি নেই।
কমেন্ট দিন। আপনার
সুচিন্তিত মতামত যা অবশ্যই প্রশংসা
সূচক হতে
হবে।
আমাদের মত
পূরানো পাপীরা
এ ব্যাপারে
অভিজ্ঞ । এইরূপ
কবিদের তৎক্ষণাৎ
আনফ্রেন্ড করাই শ্রেয়।
মুস্কিল
হল আমার
এই বয়ঃজেষ্ঠ
বন্ধুটি বেশ
কিছু ব্যক্তিকে
আনফ্রেন্ড করেও উৎপাত বন্ধ
করতে পারছেন
না।
, প্রথমে কৈফিয়ৎ
দাবী এবং
তারপর অনুনয়
বিনয় চলছেই।
তিতিবিরক্ত হয়ে উনি
এ্যাকাউন্টটাই উড়িয়ে দিতে বদ্ধ
পরিকর।
বুঝলাম
ওনার ডিজিটাল
ডিটক্সিফিকেশন দরকার। দিব্যি
অবসর জীবন
উপভোগ করছিলেন
হঠাৎ মুঠোয়
আসা মুঠোফোনটি
যত নষ্টের
গোড়া। এ সম্পূর্ণ অন্য
জগৎ এখানে
মুখ এবং
মুখোশ দুটোই
ভিন্নরকম। অসহায়
বৃদ্ধ এই
ভিড়ে আরো
অসহায় বোধ
করছেন। ওনার সমবয়স্ক বন্ধু
বান্ধব এই
মায়াদুনিয়ায় কেউই নেই।
আত্মীয় স্বজন থাকলেও নিজ নিজ
পরিমণ্ডলে সীমিত । আসলে দুনিয়ায় তারা
আপনার সমব্যথী
হলেও এ
মায়াময় জগতে
সবাই নিজের
প্রতিচ্ছবি উজ্জল করতে সদাব্রত । বড় নিঃসঙ্গ আমার
বন্ধুটি। ধীরে ধীরে উনিও
হয়তো মেতে
উঠবেন, ফেসবুক
ওনাকেও রেয়াত
করবে না।
তবু কিছুদিনের জন্য এই কুহকীর
থেকে দূরে
থাকাই বোধহয়
শ্রেয়। একরাশ
বিষাদ নিয়ে
আজ মুছে
দিলাম ওনার
এ্যাকাউন্টটি। তবে হাল
ছাড়ছি না।
শীঘ্রই ফিরব আমরা।
No comments:
Post a Comment