স্বপ্ন ৩ ২০শে অগস্ট ২০১৭
আমি দারুণ স্বপ্ন দেখি জানেন। সবদিন না অবশ্য, তবে যেদিন দেখি, মনে হয়ে টেকনিকালার সিনেমা দেখছি। আমার নিজস্ব সিনেমা। যা দেখার অধিকার আমি ছাড়া আর কারো নেই।
দেখলাম অফিসে আছি কিন্তু একদম কাজে মন নেই।উড়ু উড়ু মন। কোথাও গেলে হত। লোকজনও তেমন আসছে না। সুখেন বাবুকে বললাম,“যাবেন?”সুখেন বাবু ঘাড় মাথা নেড়ে বললেন,“না ম্যাডাম। আজ যেতে পারব না। দুটো হিয়ারিং আছে”। ধুত্তোর! প্রীতিকে বললাম চলো। একই জবাব,“ অনেক কাজ ম্যাডাম। আজ তো পারব না।” রমেশ?নাঃ রমেশ ও ব্যস্ত। সঞ্চিতা?কৌশিক? ধুর্ ধুর্। সবাই ব্যস্ত আজ?সুখেন বাবু গলা ঝেড়ে বললেন,“ছেড়ে দেন ম্যাডাম। কাল যাব সবাই মিলে না হয়?”
অসম্ভব। আজই যাব। কি তীব্র অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ছে আমার শরীর থেকে মাথায় বলে বোঝাই কি করে? গাড়িতে উঠে রাজীবকে বললাম,এমন কোন জায়গায় নিয়ে যেতে, যেখানে আগে যায়নি। রাজীব বিজবিজ করে বলল,“আজ না গেলে হত না ম্যাডাম?আজ দিনটা ভালো না তেমন। আকাশের অবস্থা দেখছেন না?” যাবই। যেতেই হবে।
যেখানে গাড়ি থেকে নামলাম, জঙ্গল মত। ঘড়িতে এখনও দুপুর। কিন্তু এখানে সন্ধ্যা নামছে। কোথায় যাব?রাজীব বলল,“ভিতরে একটা চবুতরা আছে। যেতে পারেন। তবে দিনটা ভালো না ম্যাডাম। জলদি ফিরবেন। ”
হাঁটছি। হাঁটছি। হাঁটছি। জঙ্গল যে গভীর তা নয়। তবে কোন আওয়াজ নেই। নিঝুম জঙ্গলে পাখপাখালির ডাকও শুনতে পেলাম না। নিজের হৃদপিণ্ডের ধক্ধক্ ছাড়া আর জুতোয় পাতা মাড়ানোর মশমশ ছাড়া কোন শব্দ নেই। অনেকটা ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলাম। একটা উঁচু সাদা চবুতরা। চতুর্দিকে চারটে সাদা উঁচু থাম। থামের মাথায় কড়িবরগার ছাদ। ব্যস্? আর খিছু নেই? আশ্চর্য।
দুধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে চবুতরার ছাদের নীচে গিয়ে দাঁড়ালাম। ছবি তুলব বলে ক্যামেরা খুঁজছি,হঠাৎ কে যেন বলে উঠল,“জুতো পরে?” আঁ করে চিৎকার করে উঠলাম। নিজের সেই আর্ত চিৎকার গোল হয়ে ঘুরতে লাগল জঙ্গলে। পিছন ফিরে দেখি, এক মহিলা। পরনে কালো জোব্বা,মাথায় সাদা চুল, বুকের ওপর এসে জড় হয়েছে। চুলের রঙ যত সাদা, উনি মোটেই অত বয়স্ক নন। ক্ষমা চেয়ে নামতে গেলাম, উনি নিজের হাত প্রসারিত করে আটকালেন। নিজেকে মুহূর্তের জন্য বন্দী বলে মনে হল। উনি করুণ সুরে বললেন,“থাক। এই হয়তো আমার প্রাপ্য। ” মানে?
ভয় করছে। কেমন যেন শীতল আতঙ্ক আমায় পেঁচিয়ে ধরছে, তবু কিছু বলতে হবে। না হলে এই শীতলতা আমায় জমিয়ে দেবে। গলা ঝেড়ে বললাম,“মাপ করবেন, এই চবুতরা--”।
উনি আমার অন্যমনস্কভাবে বললেন,“সমাধি। ”
কার? “চারজন মেয়ের। তারা খুব অন্যায় করেছিল। গর্হিত অপরাধ। যার শাস্তি জীবন্ত সমাধি। মা আর তিন মেয়ে। কিন্তু বিশ্বাস করো, তাদের খুব একটা দোষ ছিল না। সবথেকে মূল্যবান কি জানো? জীবন। যতক্ষণ জীবন থাকে, আমরা বুঝি না।”
এ আবার কি ধরণের ভীতিপ্রদ কথাবার্তা, এই প্রায়ান্ধকার ভৌতিক পরিবেশে। যতটুকু সাহস বাকি ছিল,বললাম “আসি। ”
“যাবে?কোথায় যাবে?” দ্রুত গতিতে হাঁটতে লাগলাম। সোজাই তো রাস্তা, গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আমার প্রতীক্ষায়। কিন্তু যতবারই হাঁটি, সেই চবুতরা, সেই উদাসীন রমণী। স্মিত হেসে প্রতিবার উনি আমাকে ডাকছেন, ইশারায় আমাকে ওণার পাশে বসতে বলছেন। আমি ঘোরতর আস্তিক। বিপদে ঈশ্বরই ভরসা, কিন্তু তাকেও ডাকতে পারছি না। ডাকতে চাইছি, কিন্তু পারছি না।
তৃতীয় বারে উনি উঠে এলেন, আমি প্রায় কাঁদব। ইশারায় ডাকলেন, ওণার পিছু নিতে বললেন, হাঁটছি। হাঁটছি। হাঁটছি।
এই তো আমার গাড়ি। কিন্তু এ কি অবস্থা। গাড়ির বনেট তুবড়ে গেল কি করে। কাঁচ ভাঙা কেন? আর পিছনের সিটে নিদ্রিতা মেয়েটি কে? আর এগোলাম না। জানি কি দেখতে চলেছি। খুব ছোট বেলায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রকম একটা গল্প পড়েছিলাম। উনি নাকি নিজেকেই দেখেছিলেন। ঘটনাটা নাকি সত্য এবং উনি তারপর বেশিদিন বাঁচেননি।
না। না। না। কিছুতেই না। হে ঈশ্বর, সহায় হও। এতক্ষণে সাড় এল শরীরে। ধড়মড় করে উঠে বসলাম, নিজের বিছানায়। যাক তাহলে স্বপ্নই ছিল। বড় এলইডি লাইটের আলো উছলে পড়ছে। ভয়ের কোন কারণ নেই। কিন্তু আমি একা কেন?শৌভিক কোথায়? তুত্তুরী? হঠাৎ মনে হল জানলায় কে যেন কটর কটর আওয়াজ করছে। পুরু পর্দার এপাশ থেকেও আমি দিব্যি বুঝতে পারছি, কে এটা। চিল চিৎকার জুড়লাম যতক্ষণ না ঘুমটা আবার ভেঙে যায়। এবার ভাঙলে আর ঘুমোচ্ছি না।
What ever I like...what ever I feel.... form movies to books... to music... to food...everything from my point of view.
Sunday, 20 August 2017
স্বপ্ন ৩
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment