- এতরাত্রে? একা?
- তাতে তোমার কি? যতঃ গায়ে পড়া পাবলিক।
-নাঃ আমার আর কি? ( কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধতার পর) তা হয়েছেটা কি? ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট?
-উফ্ ভগবান। ( উঠে স্থানবদল)
- কি? ব্যর্থ প্রেম না খারাপ রেজাল্ট?
- সেই আমার পিছন পিছন ?এখানেও এসে জুটেছো? এবার কিন্তু আমি পুলিশ ডাকব বলে দিলাম। তুমি বোধহয় জানো না আমি ক্যারাটে তে ব্ল্যাকবেল্ট।
- বাঃ। তা এত রাত্রে গড়ের মাঠে কেন?ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট?
- আরে বাপরে!!!! ছিনে জোঁক। দেখ ভাই আই অ্যাম নট ফিলিং ওয়েল। গিভ মি সাম স্পেস অর আইল বিট দা শিট আউটা ইউ।
--এত ইংরাজি বুঝি না বাপু। ইংরেজি গোটাটাই গোবিন্দর দেখে টুকেছিলুম । সে ব্যাটাচ্ছেলে ফেল করে গেল আর আমি করেগেলুম পাশ। জানো গোটা মহল্লায় কেবল আমিই পাশ দিয়েছিলুম। গোটা মহল্লায় বাবাঃ হুঁ।
-ওক্কে। গ্লাড টু নো দ্যাট স্যার্। নাউ প্লিজ লিভ মি এলোন।
- ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট? আমার রেজাল্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেত্ত, পাশ করা সত্ত্বেত্ত মা বলল,’ বিনয় বাবা চাকরী খোঁজ। দেখচিস তো, তোর বাপের শারীরিক অবস্তা কি করে আগে পরাব বলদিনি? দু দুটো সমর্থ বোন বাড়িতে বসে। ’ এত রাগ হল। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এলুম এই গড়ের মাঠে। ঘণ অন্ধকারে বসে রইলুম কতক্ষণ। খুব মনে পড়ছিল মায়ের কথা। কি সোন্দর দেখতে ছিল মা। আর খেটে খেটে কি হয়ে গেছে। আর পুঁটু আর ফুলি আমার দুই বোন ঠিক যেন ডল পুতুল গো। আর আমার পঙ্গু বাপ। কতবার মনে হল ফিরে যাই। কিন্তু তীব্র অভিমান পথ আটকালো। পড়তে দেবে না? আমায়? যাঃ। চাই না পড়তে। চাই না বাঁচতে। ঝুলে পড়লাম গলায় ধুতি জড়িয়ে। ঐখানে একটা তেঁতুল গাছ ছিল জানো ঐটাতে-
-ওঃ গস্। প্লিজ ম্যান আয়াম স্কেয়ার্ড।
- ব্যর্থ প্রেম নাকি খারাপ রেজাল্ট? আমার কথা শোনো বাড়ি ফিরে যাও। মরার পর বুঝেছিলুম কি ভুল করলুম। আমার শোক বাবা নিতে পারেনি। পনেরোদিনের মধ্যেই বাবাও--। মা দুই সমত্থ মেয়েকে কতদিন আগলাবে? ৪৬ এর রায়টে ছোটটাকে তুলে নিয়ে গেল মোছলমানেরা।
-রায়ট? কি যা তা বলছেন? ১৩৪৬? ১৪৪৬-- ইংরেজি মতে কোন সাল? কলকাতায় তো কোন রায়ট হয় নি।
-বুঝে গেছি ফেল করেছো। তাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছো। ১৪৪৬ আসতে এখনও ২৩ বছর বাকি আর ১৩৪৬ কেটে গেছে ৭৭ বছর আগে হুঁঃ।
- ওঃ। ১৯৪৬। ঐ ডাইরেক্ট অ্যাকশান ডে, নোয়াখালি এন্ড অল দ্যাট।
- এন্ড অল দ্যাট- উফ। যাক বাপু তোমার সাথে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তুমি ভালোয় ভালোয় বাড়ি যাও। আর দেরি কোর না। রাত বাড়লেই ওরা এসে হাজির হয়। ওরা আমায় ও ডরায় না। ছেলে মেয়ে বাছবিচার ও করে না। যা পায় ছিঁড়ে খায়।
- এই আমার সত্যি ভয় করছে। একদিকে ওদের ভয় আর একদিকে আপনার আষাঢ়ে গপ্প।
- যাক আপনি বলতে জানো তোমরা। যা বলেছি একবর্ণও মিথ্যা নয়। আমাদের ধর্মে বলে আত্মহত্যা মহাপাপ। সে যে কতবড় পাপ যে ভুক্তভুগী সে ছাড়া কেউ বোঝে না। এই ভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছি আজ ৭২ বছর ধরে। আমার কোথাও যাবার নেই। কোন মুক্তি নেই। বিগত ৭০ বছরে তোমার মত কতজনকে এই পাপ থেকে বিরত করেছি তার ইয়ত্তা নেই। তবু আমার মুক্তি হয়নি। ( দীর্ঘ নীরবতার পর ধরা গলায়) বাড়ি ফিরে যাও।
- একা যেতে ভয়- । বাবা - মা খুব মারবে-
- কেউ কিছু বলবে না। ফিরে যাও। আর বললেও মা- বাবার মুখনিঃসৃত বাণী অমৃতবৎ।
- ( ক্যাব বুক করাবার জন্য মোবাইল অন করল মেয়েটি। তৎক্ষণাৎ ফোন) (কাঁপা কাঁপা গলায় ফোন ধরল মেয়েটি ) হ্যালো মা।
(আর কথা বলতে পারল না। কাঁদতে লাগল। )
আমার ভুল হয়ে গেছে মা। চরম ভুল হয়ে গেছে। আমায় বাড়ি নিয়ে চল প্লিজ----
- মা বাবা আসছে আমায় নিতে।
-বলেছিলাম। আমি আসি।
- শুনুন। আপনার জন্য কিছু করতে পারি?
- এ কথা বহুবার শুনেছি। কেউ কথা রাখেনা। তবু যদি পার হাড়কাটা গলির ভিতরে একটা তিনতলা বাড়ি আছে। বিনু নিকেতন নামটা এখনও পড়া যায়। ওখানে বেবুশ্যেরা থাকে। বাড়ির বুড়ি মালকিনের বয়স ৮৫। নাম সুললিতা দেবী। খুব অসুস্থ । বেশি দিন বাঁচবে না। ওকে বলো, “ফুলিরে আমায় মাপ করে দিস। ”
https://www.facebook.com/amianindita.blogspt.in/
No comments:
Post a Comment