Monday 28 March 2016

প্রতীক্ষা-


কি ভাবছ? ভাবছ বুঝি খুব জব্দ করলে?
ভাবছ সেই সাদাকালো নায়িকাদের মত নির্ঘাত গালে হাত দিয়ে বসে আছি,
তোমার প্রতীক্ষায়।
উদাস ভাবে উস্কে দিলাম নিভু নিভু হ্যারিকেন বাতি। 
ধুর! এত ভাবার সময় কই? কত ব্যস্ততা ।
কবেই বা ভেবেছ?
ভালবাসা তো নিছক জোনাকীর আলো, ক্ষণিকের চপলতা । নিছক কাঁধে মাথা রাখা, অবোধগম্য প্রলাপ বকা, অপরিণত মনের ছলনা। 
তারপর কি হল?
তীব্র অভিমান। 
আঃ। তারপর? 
কি জানি? গুলিয়ে গেল সবকিছু । মন জুড়ে শুধুই মনখারাপ। আহা বড় ব্যস্ত সে--। কে জানে হয়তো তারও মন---

২৮.০৩.২০১৬

হারিয়ে যাওয়া

হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা। 
হারিয়ে যাওয়া সোনা রোদ, খেলার মাঠ,
হারিয়ে যাওয়া যত খেলা, কুমীর ডাঙা, রুমাল চোর। 
হারিয়ে যাওয়া চেনা পথ, হারিয়ে যাওয়া গলির মোড়,
হারিয়ে যাওয়া স্কুল, সাদা শাড়ি লাল পাড়,
হারিয়ে যাওয়া যত শারদীয়া গোগোল, কর্ণেল, কিকিরা। 
হারিয়ে যাওয়া বইখাতা আর বন্ধু,
হারিয়ে যাওয়া লোডশেডিং আর মনকেমন করা অন্ধকার ,
হারিয়ে যাওয়া কালবৈশাখী আর হারিয়ে ফেলা বরষা,
হারিয়ে যাওয়া প্রথম ফুল, প্রথম বসন্ত । 
হারিয়ে গেল সবকিছু , সেই মনখারাপ আর ব্যর্থতা,
জীবন ঘোরে চক্রাকারে,হঠাৎ দেখা পথের বাঁকে,
দাঁড়িয়েছিলি কার তরে তুই?
তোরও বুঝি সব হারালো? সেই সোনা রোদ, লুকোচুরি, কুমীরডাঙা?
কিন্তু কেন আজ মনে হয়, সত্যিই কি সব হারালাম?
নাকি কিছুই হারায় না?
২৮.০৩.২০১৬

জানি দেখা হবে-


যখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে ক্লান্ত চাঁদ,
মোহন চাঁদনীর মৃদু আবেশে হঠাৎ করে চোখ মুদে নিওনের বাতি,
আকাশের বুকে ডানা খুলে উড়ে যায় দুটো নিশাচর,
যখন বাতাস বয়ে আনে সদ্য ঝরা বকুল ফুলের মেঠো সুবাস,
ঘুমন্ত শিশু পরম আশ্লেষে আঁকড়ে ধরে আমার হাত-
অদ্ভুত শিহরণে থিরথির কেঁপে ওঠে চরাচর,
জানি তুমি আসছ।
শুধু আমি জানি দেখা হবে

কিছুটা ব্যক্তিগত


ডং । মেসেজ এল। বুবু দৌড়ে গেল, সৌর’র মেসেজ- মন খুশি খুশি হয়ে উঠল । খুলে দেখে,“ Nape Napier kvetch Krugman pooch jewel calc post psi petty”। এ কি লিখেছে রে বাবা। যা আঁতেল। জ্ঞান বৃদ্ধ একেবারে । নিজের বিদ্যে-বুদ্ধি নিয়ে মাঝেসাঝেই হীনমন্যতায় ভোগে বুবু , বিশেষত সৌরর পাশে। একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল,“ উত্তর আসবে না। তুমি আসবেই আমি জানি- কার লেখা?”বুবু পড়েছিল মহাফাঁপরে। গুটি কয়েক রবীন্দ্র সংগীত, এক আধটা নজরুল গীতি অবধি ওর দৌড়। এর বাইরে শুধু “যেতে পারি কিন্তু কেন যাব” আর “ ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত” এই দুটো কবিতা কার লেখা জানত। কপাল ঠুকে বলেই দিল “র-বী-ন্দ্র-নাথ ঠাকুর”। কিছুক্ষণ সৌর মৌন হয়ে বসে রইল। তারপর চশমাটা খুলে দু আঙুলে চোখ ঘষল, তারপর ক্লান্ত স্বরে বলল, “ কবির সুমন- যিনি এককালে সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে গান গাইতেন?” লজ্জায় বুবু প্রার্থনা করছিল, হে ধরণী দ্বিধা হও। জীবনে প্রথমবার এমন এক পুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি, যাকে দেখতে সুদর্শনই শুধু নয় মগজে যে ধুসর বর্ণের পদার্থটি আছে, সেটি বাস্তবিকই গ্রে ম্যাটার। অন্যান্য আবাল গুলোর মাথায় যা ছিল সেগুলো দেখতে গ্রে হলেও কি গন্ধ। দুদণ্ডেই বোঝা যায় মগজ ভরা গোময়। ওর স্তব্ধতাকে ভুল বুঝে কিনা জানি না, সৌর হাত পা নেড়ে বুঝিয়েছিল,“সুমন? গানওয়ালা? সেই যে প্রথমত আমি তোমাকে চাই?” লজ্জায় হড়বড় করে বুবু বলে উঠেছিল, “ হ্যাঁ ঐ গানটা শুনেছি। ক্যাসেটটা ছিল। ” বলেই বুঝেছিল ধরিত্রী দ্বিধা না হলেও ও নিজের কবর খুঁড়েই ফেলেছে। সম্পর্ক ছাড়ো নূন্যতম বন্ধুত্ব হওয়াও আর হল না। পরপর দু তিন দিন কেটে গেছে। কেউই ফোন বা মেসেজ করেনি। এমনও নয় যে ওরা রোজ কথা বলত, তবু মাঝেসাঝে বুবু হ্যাংলার মত কথা বলতে ফোন করত। ভদ্রতাবশতই হবে হয়তো সৌর ও করত, করে অবশ্য নিপাট জ্ঞান দিত।
যাই হোক আজ এই মেসেজটার মানে ও কিছুতেই বার করতে পারল না। নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশন সকলই ব্যর্থ হল। তবে কি অন্য কোন ভাষা? ধাঁধা? হ্যাঁ নির্ঘাত ধাঁধা । সমাধান করতে হলে সূত্র লাগবে । নিজেকে বোকা, গাধা ইত্যাদি গালি দিতে দিতে বুবু মেসেজ পাঠাল, “কিছুই বুঝলাম না। কি ছাতার মাথা লিখেছো? সূত্রটা কি?”
মেসেজ ডেলিভার হতেই, ফোনের ঘন্টি বেজে উঠল। সৌরর ফোন। কল্পচক্ষে বুবু দেখতে পেল, সৌর একই রকম ভাবে, দুআঙুলে চোখ টিপে একরাশ হতাশা নিয়ে ওকে ফোন করছে। কাঁপা কাঁপা হাত, কাঁপা কাঁপা বুকে ফোন ধরল বুবু, “ হ্যালো?”
ওদিক থেকে সৌরর প্রাণখোলা হাসি শোনা গেল,“ এর কোন মানে নেই। মনের খেয়ালে ফোনের চাবি গুলিতে আঙুল চালাচ্ছিলাম। যা লেখা হল পাঠিয়ে দিলাম। ”
ওঃ। শান্তিতেও যে দীর্ঘশ্বাস পড়ে আজই আবিষ্কার করল বুবু। সৌর থামেনি,“ মাঝে মাঝে আমার পছন্দের লোকেদের আমি ওমনি মেসেজ পাঠাই। ” পছন্দের লোক বলল কি? ঠিক শুনল কি বুবু?

প্রিয়সখা হে

কেমন আছ? নিশ্চয় খুউব ভাল?
কবিতা পড়?আজও? কার জন্য?
আজও কি জৈষ্ঠ্যর খর দুপুরে রৌদ্রস্নান কর? হাঁটতেই থাক প্রায় জনশূন্য রাজপথে?
কে সঙ্গ দেয়? সে? কালো হয়ে যাবার ভয় নেই বুঝি তার?
আর জোছনা রাত? মেঘলা দিন? প্রথম বরষা? শরতের দুপুর? শীতের মোহরকুঞ্জ? চড়কের মেলায়? স্মৃতির পাতায়? ভোরের স্বপ্নে?খোঁজ না বুঝি আমায়?
জানি খোঁজ না। কেউ খোঁজে না। আমিও না। শুধু জানতে বড় ইচ্ছা হয়, জান? আজও কি মনে পড়ে আমায়? আঙুলের খাঁজে বা পুরানো খাতার ভাঁজে, যেখানে লুকিয়ে আছি আমি।
শুকিয়ে আছে কবেকার ফুল---

অনির ডাইরি ২১শে ফেব্রুয়ারি


সুপ্তোত্থিতা, ক্রন্দনরতা কন্যাকে স্কুলে পৌছান যে কি চাপ, তা কেবল ভুক্তোভোগীই বুঝবেন।  প্রত্যহই শব্দ প্রাবল্য ৬৫ডেসিবল অতিক্রম করে যায়। আমাদের ফ্ল্যাটের নীচেই থাকেন এক মালয়ালি আন্টি।  সাধারণত মালয়ালি আন্টি বললেই যা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, ইনি আদপেই তা নন অবশ্য। সত্তরোতীর্ণা কালো মেমসাহেব। অক্সিলিয়ামে পড়াতেন। এখনও মিডি ফ্রক পড়ে খটখট করে ঘুরে বেড়ান। ফড়ফড়  করে ইংরাজি বলেন, যার অধিকাংশই আমার বোধগম্যতার বাইরে।  তুত্তুরির চিৎকার  প্রায়শ ওণার প্রভাতী শান্তি বিঘ্ন করে। চটি  ফটফটিয়ে উঠে আসেন ওপরে, শান্তিবিনাশককে বিদেশী ভাষায় আদর করেন, চকলেট দেন, আর আমার কপালে জোটে খটমট ইংরেজী বকুনি।  মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয়, তুত্তরী বোধহয় মাকে নাস্তানাবুদ করার জন্যই ঐ প্রবল কান্নাকাটির আবহ তৈরি করে।
যাই হোক আন্টির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার একমাত্র উপায় যা আমি আবিষ্কার করতে পেরেছি, তা হল গল্প বলা।  গল্প শুরু করলেই তুত্তুরী চুপ। রোজ নতুন গল্প কোথা থেকে জোগাড় করি? উপেন্দ্রকিশোর বিগত দুই বছর ধরে আমার ত্রাতা।  কিন্তু ঐ গল্পে আর ভবি ভোলে না। গত সপ্তাহে শুরু করেছি বেতাল পঞ্চবিংশতি। সেই ছোট বেলায় দেখা বিক্রম অউর বেতাল অবলম্বনে। চরিত্রগুলির নাম মনে নেই, পড়ার অবকাশ কোথায় ? হাল্কা মনে আছে, অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্রে দীপিকা চিকলিয়া থাকত।  পরবর্তী  কালে যিনি রামানন্দ সাগরের রামায়নে সীতার চরিত্রচিত্রণ করেন।তাই এখনও অবধি বলা তিনটি গল্পেরই নায়িকার নাম দিয়েছি দীপিকা । তুত্তুরি অবশ্য ক্রমসন্দিহান হয়ে উঠছে, কিন্তু আমি নিরুপায় ।
যাই হোক প্রথম গল্পটি ছিল, এক নবোঢ়া তরুণীর গল্প, সদ্য বিবাহের পর শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় পর্যায়ক্রমে তার স্বামী এবং ভ্রাতা দেবী দুর্গার সম্মুখে স্বহস্তে  শিরশ্ছেদ করে  আত্মঘাতী  হয়। অন্তে মা দুর্গার আশির্বাদে মেয়েটি তার স্বামী এবং উভয়কেই বাঁচিয়ে তোলে কিন্তু হড়বড়ানিতে এর ধড়ে ওর মুণ্ডু লাগিয়ে বসে।
রাত্রে ঘুমোনোর  আগে সকালে বলা গল্পটি আবার শোনাতে হয়, শুক্রবার রাতে যখন শোনাচ্ছিলাম, শৌভিক বলল, “ এই লেজেন্ডটি নিয়ে টমাস মানের একটি গল্প আছে,‘ চেঞ্জ অব হেড’ বলে। সেইটা অবলম্বনে গিরিশ কারনাডের একটি  বিখ্যাত  নাটক আছে,‘ হয়বদন’। ”
“ হয়? বদন?”
“ হুঁ।  হয়। হয় মানে ঘোড়া। শঙ্খ ঘোষ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।  বাবার আছে।  তুই পড়তে চাইলে, খুব খুশি হবে। ”
 বলাই বাহুল্য , শ্বশুর মশাই খুশি হয়ে একটি নয় দু দুটি নাটক পড়তে দিলেন।  পাতলা চটি বই। এক নিশ্বাসে পড়লাম। কোন এক কাল্পনিক  নগরে দুই অভিন্নহৃদয়  বন্ধু থাকত, দেবদত্ত ব্রাহ্মণ পুত্র, গৌর বর্ণ, দোহারা পেলব চেহারা, নামী কবি।  কপিল কামারের ছেলে, বিদ্যাদেবীর সঙ্গে চিরবিবাদ।  কপিল কুস্তিগীর। ভাগ্যবৈগুন্যে দুই বন্ধু  একই নারীর প্রেমে পড়ে। পদ্মিনী নামী শ্রেষ্ঠীতনয়া।  কালক্রমে দেবদত্তের ঘরনী হয়।  কপিল সব মেনে নিয়েও নিজের মুগ্ধতা গোপন করতে পারেনা।  দেবদত্ত অসন্তুষ্ট হয়, কিন্তু পদ্মিনী কপিলের নীরব প্রেম উপেক্ষা করতে পারে না।  এক জটিল ত্রিকোণ তৈরি হয়।
গল্প এগোয়।  মা কালীর কাছে কোন এক কালে করা মানত চরিতার্থ করতে দেবদত্ত আত্মবলি দেয়। অনুসরণ করে কপিলও।  যথারীতি  পদ্মিনী যখন স্ব শিরশ্ছেদ  করতে যায়, মা কালী তাকে নিরত করেন এবং সুযোগ দেন দেবদত্ত এবং কপিলকে পুনরুজ্জীবিত করার। পদ্মিনী কপিলের বলিষ্ঠ দেহে দেবদত্তের মাথা জুড়ে দেয়, সচেতন ভাবে নাকি অবচেতনে তা পদ্মিনী নিজেও বোঝে না।
প্রাণ ফিরে আসার পর, দুজনেই পদ্মিনীকে নিজ স্ত্রী হিসাবে তথা পদ্মিনীর গর্ভজাত পুত্রকে নিজ সন্তান দাবী করে।  পদ্মিনী যদিও নব সুঠাম দেহী দেবদত্তকেই নিজ স্বামী হিসাবে গ্রহণ করে।
দিন যায়, নবদেহে দেবদত্তর সাথে পরমসুখে দিন কাটে পদ্মিনীর।  কিন্তু ধীরে ধীরে নতুন দেহেও পুরাণ দেবদত্ত প্রকট হয়ে উঠতে থাকে।  ছটফটিয়ে উঠতে থাকে পদ্মিনী, কপিলের জন্য।  অবশেষে একদিন শিশু পুত্রকে কোলে নিয়ে কুলত্যাগী হয় পদ্মিনী কপিলের জন্য।  কিন্তু কপিল কোথায় ? সেদিনের পর থেকে কেউ দেখেনি তাকে।
শেষটা বরং উহ্যই থাক।
htttp:amianindita.blogspot.in
#aninditasblog #anirdiary

অনির ডাইরি ২রা মার্চ ২০১৬


ইউটিউবে শর্ট ফিল্ম দেখাটা নেশার মত পেয়ে বসেছে। আড়াই মিনিট থেকে বড় জোর আধ ঘন্টার ব্যাপার। দৈনন্দিন ব্যস্ততার ফাঁকে এটুকু সময় তো নিজেকে দেওয়াই যায়। নানা বিচিত্র গল্প, অধিকাংশই অপেক্ষাকৃত সস্তা ক্যামেরায় তোলা, অপ্রয়োজনীয় সঙ্গীত অর্থাৎ ঝিনচ্যাক গান বা চটুল নৃত্য নেই। বেশির ভাগই অনামী শিল্পি কচিৎ নামী শিল্পিদের একঝলক।  আর হ্যাঁ সেন্সর বোর্ডের রক্তচক্ষু ও সম্ভবত নেই।
অজস্র শর্ট ফিল্মের মধ্যে একটির কথা অনেকদিন ধরেই বলব ভাবছি, নাম সম্ভবত ,“ ওহ মেহরুনী সোয়েটার”।
শৌভিক তখন ব্লক অর্থাৎ উস্তিতে থাকত।  ঐ লিঙ্কটা পাঠিয়েছিল।  দৈর্ঘ্য ছ-সাত মিনিট হবে। গোটা ফিল্ম জুড়ে উর্দু মিশ্রিত হিন্দিতে অদ্ভুত মাদকতা মিশিয়ে একজন ধারাভাষ্য দিয়ে চলে, বিষয় প্রেম। “প্রেম” কোথায়? চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে  ফেসবুক বা হোয়াটস্ অ্যাপে সামান্য বার্তালাপ। রেস্তোরাঁ  বা মাল্টিপ্লেক্সে দেখা, কিয়ৎক্ষণের নিভৃত আলাপচারিতা - ব্যাস আবার ব্যস্ত হয়ে পড়া রোজকার ইঁদুর দৌড়ে। প্রেমের সেই মাধুর্য, সেই রহস্যময়তা, অপার্থিবতা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। এই কনক্রীটের জঞ্জালে ভরা শহরে প্রেম আজ বড়ই যান্ত্রিক, বড়ই বিবর্ণ।
কিন্তু এই সাদাকালো রুক্ষ খরাগ্রস্ত শহরে বক্তা আচমকা একদিন সাচ্চা প্রেম অনুভব করতে পারলেন।  টাটকা গোলাপের মত রক্তিম সুগন্ধী প্রেম। অফিস টাইমের চরম ব্যস্ত রেলস্টেশনে  তিনি দেখতে পেলেন তাঁদের। এক পুরুষ ও এক নারী। রোজ ওঁরা  একই সময়ে স্টেশনে আসেন। পাশাপাশি  দাঁড়িয়ে থাকেন যতক্ষণ  না ট্রেন আসে। ট্রেনেও ওঁরা পাশাপাশি বসেন। ভদ্রলোক খবরের কাগজ খুলে বসেন, আর মহিলা সোয়েটার বুনতে থাকেন। কখনও অল্প ক্লান্ত হয়ে মাথা রাখেন ভদ্রলোকটির কাঁধে। কখনও অনুচ্চ স্বরে দাম্পত্যালাপ করতে থাকেন। নিতান্তই মামুলী থোড়বড়িখাড়া মার্কা কথা সব। নির্দিষ্ট    স্টেশনে দুজনে নামেন, বক্তার অপলক মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে হাত ধরাধরি করে মিশে যান ভিড়ের মধ্যে।

বক্তা ওদের নাম দেন মিঃ এবং মিসেস শর্মা। প্রতিনিয়ত ওঁদের দেখার জন্যই উনি ঐ ট্রেনে সওয়ারি করেন।
মাঝে কি হল, কিছুদিন মিঃ এবং মিসেস শর্মা এলেন না।  বক্তা  বিমর্ষ হয়ে পড়লেন, তবে কি ওরা পথ পাল্টালেন? রোজ চরম আশা নিয়ে বক্তা স্টেশনে পৌছন, রোজ ব্যর্থ হন। তবে কি হারিয়েই গেল, রাক্ষুসে শহর হজম করে ফেলল প্রেমকে?
 সপ্তাহ দুই বাদে হঠাৎ একদিন মিঃ শর্মাকে দেখতে পেলেন। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠলেন বক্তা, কিন্তু শ্রীমতী শর্মা কই? দুদিন-চারদিন-এক সপ্তাহ কেটে গেল। মিঃ শর্মা একাই আসেন। ট্রেনে ওঠেন।  কাগজ পড়েন। একাই নির্দিষ্ট স্টেশনে নেমে যান।  মিশে যান ভিড়ে।
সপ্তম দিনে বক্তা আর থাকতে না পেরে মিঃ শর্মা কে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে, “ শুনছেন? একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”
মিঃ শর্মা বিরক্তি নিয়ে বললেন “ তুমি সেই না? যে হাঁ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে?”
বক্তা সলজ্জ ভাবে বলেন,“ আজ্ঞে হ্যাঁ।  আচ্ছা উনি কোথায়? ওণাকে আজকাল দেখি না। ”
মিঃ শর্মা ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন,“ দেখ আমি খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি।  দয়া করে জ্বালিও না। ” কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে জানলা দিয়ে তাকিয়ে রইলেন, তারপর হড়বড় করে বললেন, “ ভীষণ জেদী ছিল।  ওর ক্যান্সার ধরা পড়েছিল।  ডঃ বলেই দিয়েছিলেন বড়জোর দুমাস। বলতাম আরাম কর, শুনতো কই? বলত যেকটা মুহূর্ত আছে, তা শুধুই আমার সাথে কাটাতে চায়। ঐ অসুস্থতা নিয়ে রোজ আমার সাথে যেত। আমি অফিসে ঢুকে গেলে ফিরে যেত। ”
হঠাৎ ধড়মড়িয়ে উঠে পড়লেন মিঃশর্মা।  ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে, মিঃশর্মা নেমে  মিশে যাচ্ছেন জনস্রোতে, আচমকা  বক্তা খেয়াল করলেন মিঃ শর্মার পরণে যে মেরুন সোয়েটারটা রয়েছে সেটা অর্ধসমাপ্ত। একটা হাত বোনা হয়ে ওঠেনি।  সেই মেরুন সোয়েটারটা যেটা মিসেস শর্মা বুনছিলেন।
#anirdiary #aninditasblog
http:amianindita.blogspot.in